১৬ মে (রেডিও তেহরান): হাম সৃষ্টিকারী ভাইরাস দেহে পরীক্ষামূলক ভাবে ঢুকিয়ে দেয়ার পর রোগীর ক্যান্সার সেরে গেছে। রোগী দেহে ব্যাপক পরিমাণে হাম ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এ হাম ভাইরাসের কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। আর পরীক্ষা চালানো হয়েছিলো আমেরিকার মায়ো ক্লিনিকে। মায়ো ক্লিনিকের সাময়িকীতে এ সাফল্যের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।
মজ্জার ক্যান্সার, মাল্টিপল মাইলোমা'তে ভুগছিলেন এমন দুই রোগীকে এ পরীক্ষার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল। হাম ভাইরাস দেহে ঢুকিয়ে দেয়ার ছয় মাস পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ৪৯ বছর বয়সী স্টেসি আরহোল্টসের ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে গেছে। তার দেহে যে পরিমাণ ভাইরাস ঢোকান হয়েছিল তা দিয়ে ১০ কোটি মানুষের মধ্যে হামের সংক্রমণ ঘটান যেত। এদিকে, অন্য রোগী পুরোপুরি সেরে না উঠলেও হাম ভাইরাস তার দেহের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। দেহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উজ্জীবিত করে এমন ওষুধ এ জাতীয় ক্যান্সার চিকিৎসায় সাধারণ ভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এ ওষুধে সুফল পাওয়া গেলেও তা অব্যাহত থাকে না। শেষ পর্যন্ত ক্যান্সার এ ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং এ জাতীয় ক্যান্সার থেকে রোগীর সেরে ওঠার ঘটনা খুবই বিরল।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে হাম ভাইরাসহ যে কোনো ভাইরাস ব্যবহার করে চিকিৎসা করাকে ভাইরোথেরাপি বলা হয়। চিকিৎসার জন্য রোগী দেহে যে ভাইরাস ঢোকানো হয় তা ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকলাগুলোকে মেরে ফেলে। কিন্তু শরীরের সুস্থ কোষকলার কোনোই ক্ষতি করে না।
হাম ভাইরাস দিয়ে দুই রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মায়ো ক্লিনিকের মলিকিউলার মেডিসিনের স্টিফেন রাসেল। তিনি বলেন, ভাইরাস স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে ঢোকে এবং কোষকলা ধ্বংস করে। ভাইরাসের এই স্বভাবজাত ধ্বংস-ক্ষমতা ক্যান্সার নির্মূলে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন গবেষকরা। এরই মধ্যে হাম ভাইরাস ব্যবহার করে মস্তিষ্ক, ওভারি বা ডিম্বাশয়, ঘাড়ের ক্যান্সারসহ বিরল জাতের ক্যান্সার চিকিৎসার চেষ্টা চলছে।
১৯৫০এর দশক থেকে ভাইরোথেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে। জেনেটিক ভাবে পরিবর্তিত ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। তারা এ জন্য সাধারণ সর্দিজ্বর সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে শুরু করে অনেক প্রজাতির ভাইরাসই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এবারে হাম ভাইরাস ব্যবহারে যে সুফল পাওয়া গেছে তা সত্যিই তাক লাগানো।
ভবিষ্যতে ভাইরোথেরাপির সঙ্গে একযোগে আয়োডিন ১৩১ নামের তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগ করে রোগীর রেডিওথেরাপি করতে চাইছেন গবেষকরা। তারা দেখতে চাইছেন, একযোগে দুই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হলে রোগী দেহে তার কতোটা সুফল দেখা দেয়।#