বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

ইমামকুলের গৌরব হযরত জয়নুল আবেদিন আ

বিশ্ব ইতিহাস নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসহ মানবীয় মূল্যবোধের সবক্ষেত্রেই যাঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী তাঁদের মধ্যে হযরত আলী বিন হুসাইন (আ.) তথা ইমাম

সাজ্জাদের অবস্থান অত্যন্ত প্রজ্জ্বোল ও শীর্ষস্থানীয়।

সত্যিকারের ও উন্নত মানুষ গড়ার এই মহান সাধক ইমাম 'জয়নুল আবেদিন' বা 'খোদা প্রেমিকদের অলঙ্কার' হিসেবেও খ্যাত। মহান আল্লাহর দরবারে অত্যধিক সিজদায় মগ্ন থাকতেন

বলে ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)-কে বলা হত সাজ্জাদ।

নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা যেন তাঁর অনুপম চরিত্র এবং উচ্চতর খোদায়ী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার যাদুময় ছোঁয়ায় পেয়েছে চিরন্তন সৌন্দর্য ও অনির্বাণ প্রাণ। পবিত্র মদীনায় ৩৮ হিজরিতে

জন্ম নিয়েছিলেন হযরত হুসাইন বিন আলী (আ.) ।

এই মহাপুরুষের শুভ জন্মদিন বা ৫ ই শাবান উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি অজস্র মুবারকবাদ।

কারবালার বিশ্বনন্দিত মহাবিপ্লবের ঘটনায় ইমাম হুসাইন (আ.)'র একমাত্র যে পুত্র বেঁচেছিলেন তিনি হলেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। অর্থাত তিনিই ছিলেন বিশ্বনবী (স.)'র পবিত্র

বংশধারার বা আহলে বাইতের একমাত্র পুরুষ সদস্য যিনি কারবালার ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি ওই জিহাদে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি। আসলে

মহান আল্লাহ অলৌকিকভাবেই তাঁকে রক্ষা করেছিলেন মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং ইসলামের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভিত্তি রচনার জন্য।

সেযুগে উমাইয়া শাসকরা ইসলাম সম্পর্কে সৃষ্টি করেছিল নানা অস্পষ্টতা ও সন্দেহ। ফলে খাঁটি ইসলামের রূপ ও খাঁটি ধর্মমত তুলে ধরার গুরু দায়িত্ব পালন করেন ইমাম জয়নুল

আবেদিন (আ.)। পিতার শাহাদতের সময়ে ও নিজের বন্দী অবস্থায় এবং কারবালা বিপ্লবের পরবর্তী বছরগুলোতেও জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে কৌশলপূর্ণ সংগ্রাম জিইয়ে রেখে তিনি

মহান পিতা ইমাম হুসাইন (আ.) আদর্শকে জীবন্ত ও আরো প্রাণবন্ত করেন। এই মহান ইমাম ও তাঁর ফুপু হযরত যেইনাব (সা.) সাহসিকতাপূর্ণ নানা ভাষণ দিয়ে উমাইয়াদের

আসল চরিত্র তুলে ধরেছিলেন জনগণের কাছে।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর কাজ ও আচরণ ছাড়াও বেশ কিছু অনুপম দোয়ার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন গভীর খোদা-প্রেম, নৈতিকতা ও উন্নত আত্মার সৌন্দর্য।

মানুষের মধ্যে অনেকেই এই অস্থিরতায় ভোগেন যে, এই যে এত দোয়া করছি তা কেন কবুল হয় না? ইমামের কাছে ঠিক এমনই এক প্রশ্ন করেছিলেন বার বার প্রার্থনার পরও

দোয়া কবুল না হওয়ার ফলে হতাশ হয়ে পড়া এক ব্যক্তি এবং ওই ব্যক্তির বন্ধু। জবাবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছিলেন, "তোমরা কি সময় মত নামাজ আদায় কর, না দেরি

করে নামাজ পড়? তোমরা কি সত কাজের মাধ্যমে ও দরিদ্রদের দান-সদকা দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করছ? তোমরা কি বন্ধুদের সঙ্গে (ভেতরে-বাইরে) একই

রূপ বজায় রাখ ও তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ কর না? তোমরা কি কথা বলার সময় অশালীন ভাষা ব্যবহার কর না? তোমরা কি জাকাত দাও ও ঋণ শোধ কর?

তোমরা কি কঠোর হৃদয় নিয়ে ফকিরদেরকে বিমুখ করে দাও না? তোমরা কি ইয়াতিমদের সাহায্যে এগিয়ে যাও?"

এভাবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) যখন একের পর এক প্রশ্ন করে চললেন তখন নিরাশ হয়ে পড়া ওই ব্যক্তি লজ্জিত হয়ে বললেন, হে ইমাম, এসব ভালকাজের কিছুই আমি করি না।

তখন ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মুচকি হেসে বললেন, "তাহলে আল্লাহর কাছে কি আশা করছ? তোমাদের এই অবস্থা পরকালে তোমাদের জন্য সংকটের কারণ হওয়ার পাশাপাশি এই

দুনিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে যে কারণে তোমাদের দোয়াগুলো কবুল হয় না। তোমরা যদি আল্লাহর কথা শোন, তাহলে আল্লাহও তোমাদের কথা শুনবেন।"

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ইসলামের ইতিহাসের চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এ মহান ধর্মের সাংস্কৃতিক ও চিন্তাগত বিপ্লবের ভিত্তি গড়ার জন্য তুলে ধরেছিলেন খাঁটি ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের

নানা দিক। তাঁর প্রচারিত সেসব শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সংকলন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে "সহিফা-ই সাজ্জাদিয়া"। অনেকেই একে " আলে মুহাম্মাদের জাবুর" বলে থাকেন।

দোয়া ও আল্লাহর প্রতি মনের গভীর আকুতি এবং আবেদন-নিবেদনের আঙ্গিকে তুলে ধরা এসব বক্তব্যে রয়েছে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আর

সেগুলো সব যুগের মানুষ ও মুসলমানের জন্যই মহাকল্যাণের উৎস ও চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের দিক-নির্দেশক।

এ ধরণের শিক্ষামূলক দোয়া হৃদয়ঙ্গম করা আত্মগঠন, নফসের বা প্রবৃত্তির পরিশুদ্ধি এবং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক উচ্চতর লক্ষ্যগুলো উপলব্ধিসহ খোদাপ্রেমের অনুভূতি ও যুক্তি আয়ত্তের

জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এইসব দোয়ার আলোকিত প্রভাবে প্রভাবিত হওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন মুমিন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই সেসবের গভীর তাৎপর্য নিয়ে

চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করবেন।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর বিভিন্ন দোয়ায় মানুষকে এটা শেখাতে চেয়েছেন যে জীবনের সব পর্যায়েই আল্লাহর ওপর নির্ভরতা জরুরী। আল্লাহই যেন মানুষের সব ততপরতার মূল

অক্ষে বা কেন্দ্রে থাকেন। আল্লাহর প্রতি হৃদয়ে গভীর প্রেম বা ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অবশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁকে চেনাও জরুরি। আল্লাহকে

চেনা ও জানার মধ্য দিয়েই খোদা-প্রেমিকের যাত্রা শুরু হয়।

"সহিফা-ই সাজ্জাদিয়া"র প্রথম দোয়ায় আল্লাহর অনবদ্য ও অনুপম প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম বলেছেন, "তুমি সেই আল্লাহ দর্শকদের দৃষ্টি যাকে দেখতে পায় না, বর্ণনাকারীদের

চিন্তা বা কল্পনাশক্তি তোমার বর্ণনা দিতে অক্ষম। তুমি নিজ ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছ সৃষ্টি জগত ও সৃষ্টিকুল এবং তাদের সৃষ্টি করেছ নিজ ইচ্ছায়। অথচ এর আগে এসব

সৃষ্টির কোনো মডেল বা নমুনার অস্তিত্ব ছিল না।"

সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্বসহ মানুষের বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় স্থান পাওয়া ইমাম সাজ্জাদ (আ.)'র

দোয়াগুলো খুবই কার্যকর। বাবা-মা সম্পর্কে তাঁর দোয়ার একাংশে বলা হয়েছে: "হে আল্লাহ! আমার কণ্ঠ যেন বাবা মায়ের সামনে নীচ বা অনুচ্চ থাকে। আমার বক্তব্য যেন

তাদের জন্য হয় সন্তোষজনক। আমার আচরণ যেন তাঁদের সামনে বিনম্র থাকে; তাদের জন্য আমার অন্তরকে দয়ার্দ্র কর। আমি যেন তাঁদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেই এবং

আমাকে তাঁদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল করুন।"

"রিসালাতুল হুকুক" ইমাম সাজ্জাদ (আ.)'র আরেকটি অনন্য অবদান। এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। এসবের মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরের নানা

অঙ্গের অধিকার, নানা ধরণের ইবাদতের অধিকার; বাবা, মা, শিক্ষক, ছাত্র, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাই, উপকারকারী, সহচর, প্রতিবেশী, বন্ধু, অংশীদার, অর্থ, ঋণপ্রার্থী, শত্রু,

খারাপ লোক, ভিক্ষুক, দ্বীনী ভাই, একসাথে বসবাসকারী অধিকার এবং ইসলামের আশ্রয়ে থাকা কাফেরদের অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। যেমন, পেটের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি

বলেছেন: পেটকে হারাম খাবারে পূর্ণ করো না এবং উদর ভর্তি করে খেও না।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় সম্পর্কে বলেছেন, "আল্লাহকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করার উপায় হল, মানুষকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করা, সত্য কথা

বলা, সব সময় আল্লাহ যে আমাদের দেখছেন তা মনে রাখা ও নোংরা কাজ না করা এবং নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা।"

ইমামের দানশীলতা, সহিষ্ণুতা, মহত্ত্ব,উদারতা ও ক্ষমাশীলতা শত্রুকেও করত অভিভূত ও ঘনিষ্ঠ মিত্র।

ইমাম সাজ্জাদ বা জয়নুল আবেদিন (আ.)'র জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আরো একবার সবাইকে মুবারকবাদ। #

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদার ...
আবনা : ইয়েমেন আগ্রাসীদের ...
সিরিয়া- লেবানন অভিন্ন সীমান্তে ...
বাহরাইনে ইমাম হোসাইন (আ.)এর ...
পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ খ্রিস্টান ...
মোরায় কক্সবাজারে দুই শতাধিক ...
ক্যান্সার দিবস : যে লক্ষণগুলো ...
আনসারুল্লাহ'র দখলে সৌদি আরবের ...
২৮০ জন শরণার্থীকে সমুদ্রে ...
সন্ত্রাসবাদ রুখতে ঐক্যবদ্ধ ...

 
user comment