বাঙ্গালী
Tuesday 3rd of September 2024
0
نفر 0

১৫ই খোরদাদ বিপ্লবের প্রেক্ষাপট ও ইমাম খোমেনী (রহ.)'র নেতৃত্ব

১৯৬৩ সালের জুন মাসে সংঘটিত ১৫ই খোরদাদ আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত ইমামের নেতৃত্বে ইরানী জনগণের শ্লোগান ছিলো - 'না প্রাচ্য, না পাশ্চাত্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্র'। ১৫ই খোরদাদের বিপ্লবের দিন শাহের পেটোয়া বাহিনী কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে। ইমামকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। শাহ সরকার ভেবেছিলো, এর মাধ্যমে দেশে তার ইচ্ছা অনুযায়ী শান্তি অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি।

১৫ই খোরদাদসহ পরবর্তীতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আমাদের আরো একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। এখন থেকে একশ বছরেরও বেশী সময় আগে ইরানের তৎকালীন রাজা- মোযাফফার উদ্দীন শাহ কাজার জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে দেশ পরিচালনার জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের নির্দেশেনামায় স্বাক্ষর করেছিলেন। তার আগ পর্যন্ত রাজা বাদশাহদের মুখের কথাই ছিলো সংবিধান। ঐ ঘটনার তিন বছর পর অসুস্থ মোযাফফার উদ্দীন শাহ তার পুত্র মোহাম্মাদ আলী কাছে রাজতন্ত্রের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

এদিকে ততদিনে মোযাফফার আলী'র ফরমান অনুযায়ী নতুন সংবিধানের আওতায় নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু পার্লামেন্ট নতুন শাহ মোহাম্মাদ আলীর চাহিদামতো বিল পাশ না করায় তার নির্দেশে পার্লামেন্ট ভবন কামান দাগিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। মারা পড়েন অনেক জন প্রতিনিধি। মোহাম্মাদ আলী শাহের এই অমানবিক ও অসাংবিধানিক কাজের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। সে সময় যে শাহের বিরুদ্ধে যে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছিলো, শুধুমাত্র যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তাকে কঠোর আন্দোলনে পরিণত করা যায় নি।

ওদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঐ যুদ্ধে বিজয়ী পক্ষ বিশ্ব মানচিত্রকে নতুনভাবে নিজেদের মতো করে ঢেলে সাজিয়ে নেয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে মানচিত্র বদলের প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশী এবং এসব দেশে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। বহু দেশ এ সময় স্বাধীন হয়ে যায়। ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে ইরানও এ ধরনের আন্দোলন থেকে বাদ যায় নি। জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের ফলে ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে ইরানের তেল শিল্প জাতীয়করণ করা হয়। সে সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আলেম সমাজও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু সেই নেতৃত্বেও দৃঢ়তা না থাকার কারণে ১৯৫৩ সালের আগস্ট মাসে ইঙ্গোমার্কিন ষড়যন্ত্রে তৎকালীন নির্বাচিত ড. মোসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটে এবং জনগণের আন্দোলন আরেকবার অস্ত্রের জোরে দমন করা হয়। কিন্তু ঐ ঘটনার ১০ বছরের মাথায় তেহরান ও কোম শহরসহ সারাদেশে পুনরায় সরকার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এবারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইমাম খোমেনী (রহঃ) এবং তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৫ই খোরদাদের আন্দোলন সংঘটিত হয়।

ইমামের নেতৃত্বের গুণাবলী বর্ণনা করার সময় ইরানের জনগণ 'নবীর মতো নেতৃত্ব' হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। তিনি তাঁর ধর্মীয় প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দুরদৃষ্টির মাধ্যমে শুধু ইরান নয়, সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্য ও গোটা বিশ্বের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী নিজের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে কারারুদ্ধ অবস্থায় ইমামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনি কাদের সাথে নিয়ে বিপ্লব করতে চান? তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, এখন যারা দোলনায় শুয়ে আছে তারাই হবে একদিন আমার বিপ্লবের হাতিয়ার। বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। সে সময়কার শিশুরা যখন তারুণ্যে পৌঁছে, তখন তাদের নিয়েই ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ঘটেছিলো। আর এটিই ছিলো ১৫ই খোরদাদ আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি। #

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আগ্রাসন অব্যাহত; সৌদি ঘাঁটিতে ...
ইসরাইলকে দিয়ে ইয়েমেনে ২ নিউট্রন ...
আযানের মধুর ধ্বনিতে মুসলমান হলেন ...
পাকিস্তানে তত্পর আইএসআইএল ; ...
অবশেষে আত্মসমর্পণ করলেন পুজদেমন
৪১৮ যাত্রী নিয়ে প্রথম হজ্ব ফ্লাইট ...
পাকিস্তানের কুয়েত্তা শহরে ...
বাহরাইন সরকারকে অবশ্যই ...
সামেরা শহরে ৫ বিস্ফোরণ ; বদর ...
ইয়েমেনের জনগণের সমর্থনে লন্ডনে ...

 
user comment