বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ব

বায়াতের জন্য মহানবী(সাঃ)এর সাহাবী হযরত আলী(আঃ)এর হাতে আনসার ও মুহাজিরদের নযীরবিহী্ন আগ্রহ-উদ্দীপনা এবং সত্য ও ন্যায়পরায়নতার শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাঁদের আবেদনের ফলে ইমাম আলীকে(আঃ) শাসনভার নিতে হয়েছিল।
বায়তুল মাল বন্টনের ব্যাপারে ইমামের(আঃ) নীতি একটি দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে যে দলটি ন্যায়নীতি ও সুন্নাতের পুনর্জাগরনে অসন্তুষ্ট হয় এবং বৈষম্য,আত্নস্বার্থ ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা পুরন করাই ছিল যাদের লক্ষ্য।
ইমাম আলীকে(আঃ) তাঁর ৫ বছরের হুকুমতকালে ৩টি অবাধ্য দলের মোকাবেলা করতে হয়েছিল যাদের অন্যায় ছিল সীমাহীন।তাদের লক্ষ্য হযরত ওসমানের আমলের মতো হুকুমত ফিরিয়ে আনা,অনর্থক দান ও অপব্যায়,অযোগ্য ও স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিদেরকে প্রতিষ্টা করা,মুয়াবিয়ার মতো আগের অযোগ্য গভর্নরদের পুনর্বহাল করা ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না।
এ যুদ্বসমূহে-যাতে মুসলমানদের রক্ত ঝরেছিল,তাতে বদর ও ওহুদের একদল সাহাবীও ইমামের(আঃ) পাশে ছিলেন।অর্থাৎ যারা দ্বীন ইসলামের ইতিহাসের ষ্পর্শকাতর মুহুর্তগুলোতে মহানবীর(সাঃ) পাশে থেকে তরবারী চালিয়েছিলেন,এবার তাঁরা সত্যনিষ্ট খলিফাহ ও উত্তরাধিকারীর পক্ষে তরবারী চালিয়েছিলেন এবং ইমাম আলীর(আঃ) সমুন্নত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
ইমামের(আঃ) জীবনের যে মুল্যবান সময় মহানবীর(সাঃ) উম্মাতের হেদায়াত,প্রশিক্ষন ও ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা তা ইমামের(আঃ) পবিত্র উদ্দেশ্যের পথে বাধা সৃষ্টিকারী এ ৩টি দলকে দমন করতে ব্যয় হয়েছিল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইমাম(আঃ) তাঁর চুড়ান্ত লক্ষ্যে অর্থাৎ ইসলামী সুন্নাত ও মুলনীতি অনুসারে এক বিশ্বজনীন হুকুমত প্রতিষ্টার লক্ষ্যে উপনীত হবার আগেই তাঁর হুকুমতের ৫ বছর আলো বিকিরনের পর তা অস্ত গিয়েছিল এবং তাঁর শাহাদাতের পর ইসলামী হুকুমত রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রুপান্তরিত হয়েছিল,আর বনু উমাইয়াহ ও আব্বাসীয়রা হুকুমাতকে বংশপরম্পরায় নিজেদের হাতে হাত ঘুরিয়েছিল।ফলে হুকুমাতে ইসলামী মু'মিনদের অন্তরে একটি কামনা হিসাবেই থেকে গেল।
ইমামকে(আঃ) যে ৩টি দলের বিরুদ্বে যুদ্ব করতে হয়েছিল তারা ছিল যথাক্রমেঃ
১/নাকেছীন বা অঙ্গীকার ভঙ্গের দল।এদলের নেতা ছিলেন বিশেষ করে তালহা ও যুবাইর।
ইমাম আলী(আঃ) ক্ষমতায় আসার পর এ দলের দাপট শেষ হয়ে গিয়েছিল।তাই তারা মহানবীর(সাঃ) পত্নী হযরত আয়েশার সম্মানের আবরনে ও বনু উমাইয়ার অকুণ্ঠ সহযোগীতায় একটি ব্যয়বহুল সেনাবাহিনী গঠন করে বছরায় পৌছেন এবং শহরটি দখল করে নেন।ইমাম(আঃ) তাদের পশ্চাদ্বাবন করলেন এবং দু পক্ষের মধ্যে যুদ্ব বাধে।সেই যুদ্বে তালহা ও যুবাইর উভয়ে নিহত হন এবং তাদের বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।তাদের একদল বন্দী হয় যারা পরবর্তীতে ইমামের(আঃ) ক্ষমা লাভ করে।

২/ ক্কাছেতীন বা অত্যাচারী দল-যারা সত্যের পথ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।
এ দলের প্রধান ছিলেন মুয়াবিয়া-যিনি প্রতারনা,শঠতা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ২ বছর যাবৎ,বরং ইমামের(আঃ) জীবনাবসান পর্যন্ত তাঁকে ব্যাস্ত রেখেছিলেন এবং ইরাক ও শামের মধ্যস্থলে তার ও আলীর(আঃ) মধ্যে ছিফফিন যুদ্ব সংঘ্টিত হয়েছিল।এযুদ্বে প্রায় ১লক্ষ লোকের রক্ত ঝরেছিল।কিন্তু ইমাম(আঃ) তাঁর চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছেন নি,যদিও মুয়াবিয়া শামে কোন্ঠাসা হয়ে পড়েছিল।
৩/মারেক্কীন বা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া দল।
এ দলটি হল ইতিহাস বিখ্যাত খারজী দল।তারা সিফফীন যুদ্বের শেষ পর্যন্ত আলী(আঃ)এর পক্ষে ছিল এবং তাঁর পক্ষে লড়াই করেছিল,কিন্তু মুয়াবিয়ার শঠোতামুলক কাজের জন্য তারা নিজেদের ইমামের বিরুদ্বে চলে গয়েছিল এবং ৩য় দল হিসাবে ইমাম আলী(আঃ) ও মুয়াবিয়া উভয়ের বিরুদ্বেই দাড়িয়েছিল।ইসলাম,মুসলমান ও ইসলামী হুকুমতের ওপর এ দলের ক্ষতির ব্যাপকতা অন্য ২ দলের চেয়ে বেশী ছিল।আলী(আঃ) এ দলটির সাথে ‘নাহরাভান' নামক স্থানে যুদ্ব করেন এবং তাদের প্রায় নিশ্চিঞ্ছ করে দেন।ইমাম(আঃ) এরপর নিজেকে শামের ফাসাদের মুলোৎপাটনের জন্যে প্রস্তুর করে ফেলেছিলেন।ঠিক এ সময়ে তিনি খারেজীদের হাতে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন।আর সেই সাথে মানবতা এক অতি প্রিয় ও উদার মানুষকে হারালো।ইসলাম মহানবী(সাঃ)এর পর সবচেয়ে উপযুক্ত মানুষটিকে হারালো।
ইমাম(আঃ) এ রিদয় বিদারক ঘটনাগুলোর সম্মুখীন হওয়ার আগেই এ ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতেন।আর এ কারনেই ওসমানের নিহত হবার পর,বিল্পবীরা যখন হযরত আলী(আঃ)এর ঘরে ছুটে এলেন এবং তাঁর নিকট তাঁদের বায়াত গ্রহন করার জন্য আবেদন করলেন তখন ইমাম(আঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ
"আমাকে বাদ দাও এবং অন্য কারো নিকট যাও।কারন,আমরা এখন এমন ঘটনাবলীর সম্মুখীন যেগুলোর চেহারা বিভিন্ন; সে সব ঘটনা এমন যেগুলো অন্তরসমুহ এবং বিচার-বুদ্বি কখনোই সহ্য করতে পারে না"(তারীখে ত্বাবারী,৩য় খন্ড,পৃঃ১৫৬)।
ইমাম আলী(আঃ)এর নিকট এ রিদয়বিদারক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানার একটি উৎস ছিল মহানবীর(সাঃ) ভবিষদ্বানী।মুহাদ্দিসগন রাসুলের(সাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি আলী(আঃ)কে বলেছিলেনঃ
"হে আলী! তুমি নাকেছীন,ক্বাসেত্বীন ও মারেক্কীন দলের বিরুদ্বে যুদ্ব করবে" (মুস্তাদ্রাকুল ওয়াসায়েল,৩য় খন্ড,পৃঃ১৪০)।
এ হাদিসটি একাধিক রুপে হাদীস ও ইতিহাসের গ্রন্থসমুহে বর্নিত হয়েছে যার সবগুলোতেই একই বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে।আর এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সুষ্পষ্ট রুপে বর্নিত হয়েছে উপরে উল্লেখিত হাদিসটিতে।
এ রক্তাক্ত বেদনাদায়ক ঘটনাসমুহ সম্পর্কে কেবল আলী(আঃ)ই জানতেন না, বরং নাকেছীন দলের নেতারাও রাসুল্লালাহ (সাঃ) থেকে আলী(আঃ) এর বিরুদ্বে তাদের যুদ্বের কথা শুনেছিলেন।ইতিহাসে এদেরকে ‘আসহাবে জামাল' নামে উল্লেখ করা হয়েছে।মহানবী(সাঃ) স্বয়ং যুবাইর ও আয়শাকে এ সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।কিন্তু তারা সাময়িক পার্থিব ফিতনায় এমনভাবে নিমজ্জিত হয়েছিলেন যে, নিজেদেরকে আর কখনোই ফিরাতে পারেন নি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে,ইসলামের বিকাশের যুগে এবং সত্য যখন নিজ কেন্দ্র বিন্দুতে ফিরে এসেছিল,সেই মহান ব্যক্তি যখন খেলাফতের দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন যিনি ১ম দিন থেকেই নেতৃত্ত্ব ও কর্তৃ্ত্বের জন্য প্রশিক্ষিত ও লালিত-পালিত হয়েছিলেন,যখন প্রত্যাশা ছিল যে,ইসলামের এ সময়টিতে মুসলমানদের নসীবে ব্যাপক বস্তুগত ও আধ্যাত্নিক অগ্রগতি সাধিত হবে,ইসলামী হুকুমত পরিপুর্ন্রুপে ইমামের(আঃ) শক্তিশালী হাতে সেরুপে নবায়ন হবে যেরুপে তাঁর হুকুমাত ভবিষয়তের জন্যে এক সুষ্পষ্ট উদাহরন ও ব্যবস্থাপত্র হবে, ঠিক তখনই একদল সুবিধাবাদী সুযোগসন্ধানী ইমাম আলী(আঃ)এর বিরোধিতায় উঠে দাড়ালো এবং ইমামের বিরুদ্বে পতাকা উড়ালো।
ইমাম আলী(আঃ) তাঁর এক খোতবায় এ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আক্ষেপ করে বলেনঃ
" যখন দায়িত্ব হাতে নিলাম,তখন একদল আমার বায়াত ভংগ করলো,একদল আল্লাহর দ্বীন থেকে বের হয়ে গেলো,অপর একদল সত্যের পথ থেকে বের হয়ে গেল,যেন তারা আল্লাহর সে কথা শোনেনি যেখানে আল্লাহ বলেনঃ ‘পরকালের সেই গৃহ তো তাদের জন্য তৈরী করেছি যারা ধরনীর বুকে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্টার কামনা করে না এবং অনাচার করবে না। আর শেষ(সুখকর) পরিনতি তো কেবল তাদের জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করে'(সুরা আল-কাছাছঃ৮৩)।হ্যা,আল্লাহর শপথ,তারা শুনেছিল ও মুখস্থ করেছিল,কিন্তু পৃথিবী তাদের চোখে সুন্দর হয়ে দেখা দিয়েছে,আর পৃথিবীর চাকচিক্য তাদেরকে ধোকা দিয়েছে"( নাহজুল বালাগ্বাহ,খোতবাহ নং ৪)।
শিশু সুলভ অজুহাত!
অঙ্গীকার ভঙ্গকারী দল অর্থাৎ তালহাহ,যুবাইর ও তাদের অনুসারীরা ইমামের(আঃ) হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে বায়াত করলেও বিরোধিতার নিশান উড়ানোর সময় বলেন, "আমরা বাহ্যিকভাবে শুধু মুখে বায়াত হয়েছিলাম এবং কখনোই অন্তর থেকে বায়াত হই নি ও আলীর হুকুমতের প্রতি রায় দেই নি"।
ইমাম আলী(আঃ) তার এক বক্তব্যে এ কথার জবাবে বলেনঃ
"সে তার বায়াতের ব্যাপারে স্বীকার করেছিল,কিন্তু সে দাবী করেছিল যে,ভিতরে সে এর বিপরীত কিছু লুকিয়ে রেখেছিল।তাকে এব্যাপারে সাক্ষী আনা উচিত,নতুবা নিজ বায়াতে(অঙ্গীকারে) ফিরে আসাতে হবে"(নাহজুল বালাগ্বাহ,খোতবা # 8)।
নেফাক ও দ্বিমুখিতা
ত্বালহাহ ও যুবাইর ইমামের(আঃ) সম্মুখে গেলেন ও বললেনঃ " আমরা তোমার হাতে এজন্য বায়াত হয়েছি যে, কতৃ্ত্বের ক্ষেত্রে তোমার সাথে শরীক হবো"।
ইমাম (আঃ) তাদের শর্ত মিথ্যা প্রতিপন্ন করলেন এবং বললেনঃ "তোমরা আমার হাতে এ জন্য বায়াত হয়েছিলে যে,আমার অক্ষমতার সময় আমাকে সাহায্য করবে" (নাহজুল বালাগ্বাহ,কালামতে ক্কেছার# ১৯৮)।
ইবনে কুতায়বাহ তার "তারীখে খুলাফা" গ্রন্থে ইমাম আলী(আঃ)এর দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ " তুমি তো জানো কিসের ভিত্তিতে তোমার হাতে বায়াত হয়েছিলাম"?
ইমাম(আঃ) বললেনঃ " কেন,জানি;তোমরা আমার আনুগত্য করার ভিত্তিতে আমার হাতে বায়াত হয়েছো,যার ভিত্তিতে আবুবকর ও ওমরের হাতে বায়াত হয়েছিলে"।
যুবাইর ভেবেছিল যে, ইমাম(আঃ) তার উপর ইরাকের কতৃ্ত্ব অর্পন করবেন।অনুরুপভাবে তালহাহ ভেবেছিল যে,ইমাম(আঃ) তার হাতে ইয়ামানের দায়িত্ব ন্যাস্ত করবেন( তারীখে খুলাফা,মিসর থেকে মুদ্রিত,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯)।
কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্ব ও বায়তুল মাল বন্টনের ক্ষেত্রে ইমামের(আঃ) অনুসৃ্তনীতি তাদের বাসনা পুরনের পথ রুদ্ব করে দেয়।ফলে তারা মদীনা থেকে পলায়ন করে এবং ইমামের(আঃ) বিরুদ্বে চক্রান্তে লিপ্ত হয়।পলায়ন করার আগে যুবাইর কুরাইশের এক সাধারন সভায় বলেনঃ " এটা কি আমাদের জন্য উপযুক্ত? অথচ আমরা ওসমানের বিরুদ্বে সংগ্রাম করেছিলাম এবং তাকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিলাম,অথচ আলী ঘরে বসেছিলেন।যখন দাইত্ব হাতে নিলেন,তখন কতৃ্ত্ব অন্যদের হাতে অর্পন করলেন"( তারীখে খুলাফা,মিসর থেকে মুদ্রিত,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯)।

নাকেছীন দলের বিদ্রোহের কারন
ত্বালহাহ ও যুবাইর আলী(আঃ)এর হুকুমাতে কোন অঞ্চলের দায়িত্ব লাভে ব্যর্থ হয়ে হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন।অপরদিকে,মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে এ দুজনের নিকট প্রায় একই রকম পত্র এলো যাতে তিনি তাদেরকে আমিরুল মু'মিনিনরুপে সম্বোধন করেছিলেন এবং সেই সাথে উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি শামের জনগনের নিকট থেকে ঐ দু'জনের জন্যে বায়াত গ্রহন করেছেন।সুতরাং আবি তালিবের পুত্র কুফাহ ও বছরাহ দখল করে নেয়ার আগেই তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব শহর দু'টো দখল করে নেন।
মুয়াবিয়ার পত্রে তাদেরকে আরো বলা হয় যে, সর্বস্থানে তাদের শ্লোগান হবে এই যে,ওসমানের রক্তের বদলা নিতে চান এবং তারা যেন লোকদেরকে তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আহবান জানান।
এ সরলমনা সাহাবীদ্বয় মুয়াবিয়ার চিঠিতে প্রতারিত হন এবং সিদ্বান্ত নেন যে, মদীনা থেকে মক্কায় যাবেন এবং সেখানে যুদ্বের সাজসরঞ্জাম ও সৈন্য সংগ্রহ করে যুদ্বের প্রস্তুতি নেবেন।
তারা আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়ার চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য ইমামাএর(আঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ " বে;আয়াত ও হুকুমাতের ক্ষেত্রে ওসমানের অত্যাচার দেখেছো।সে বনু উমাইয়া ছাড়া অন্য কারো মতামতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতো না। এখন যেহেতু আল্লাহ তোমার নসীবে খেলাফত দিয়েছেন,সেহেতু আমাদেরকে বছরাহ ও কুফাহর কতৃ্ত্ব দান করো"।
ইমাম(আঃ) বললেনঃ "আল্লাহ তোমাদের নসীবে যা রেখেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকো;আমি এ ব্যাপারে চিন্তা করবো।জেনে রেখো,আমি সে সকল ব্যক্তিদেরকেই হুকুমাতের দায়িত্ব দেব যাদের দ্বীন ও আমানতদারি সম্পর্কে নিশ্চিত হবো এবং যাদের মন-মানসিকতা সম্পর্কে জানবো"।
উভয়েই এ কথা শুনে যারপরনাই হতাশ হলেন।তারা বুঝতে পারলেন যে তাদের দুজনের প্রতি ইমামের(আঃ) আস্থা নেই।সুতরাং তারা কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললেনঃ "তাহলে আমাদেরকে ওমরাহ করার জন্যে মদীনা ত্যাগ করার অনুমতি দাও"।
ইমাম(আঃ) বললেনঃ" ওমরার আড়ালে তোমাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে"।
তারা আল্লাহর নামে কসম করে বুঝালেন যে,ওমরাহ ছাড়া তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
ইমাম(আঃ) বললেনঃ"তোমরা ফাকি দেয়া ও বায়াত ভংগ করার চেষ্টায় আছো"।
তারা আবার কসম করলেন এবং আবার ইমামের হাতে বায়াত হলেন।
এ দু'জন ইমামের(আঃ) ঘর ত্যাগ করলে ইমাম উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ "তোমরা দেখবে যে,তারা দু'জন ফিতনায় নিহত হবে"।
উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ বললো" "তাদের সফরে বাধা দান করুন"।
ইমাম(আঃ) বললেনঃ " তাক্কদীর ও ক্কাযা বাস্তবায়িত হতেই হবে"।
ইবনে কুতায়বাহ লিখেছেনঃ
উভয়েই আলীর(আঃ) ঘর থেকে প্রস্থানের পর কুরাইশদের সমাবেশে বলেছিলেন ঃ এটাই কি আমাদের পুরস্কার ছিল যা আলী আমাদেরকে দিয়েছে!আমরা ওসমানের বিরুদ্বে বিদ্রোহ করেছিলাম এবং তাকে হত্যার ব্যবস্থা করেছিলাম,অথচ আলী নিজ ঘরে বসে ছিল;এখন খেলাফত লাভ করে সে অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিচ্ছে"।
ত্বালহাহ ও যুবাইর ইমামের(আঃ) ঘরে কসম করলেও,মদীনা থেকে বের হও্যার পর মক্কার পথে যার সাথেই দেখা হল তার কাছেই আলীর(আঃ) হাতে বায়াতের কথা অস্বীকার করেন(তারীখে ত্বাবারী,৩য় খন্ড,পৃঃ১৬৩;আল-ইমামাহ অয়াস সিয়াসাহ,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯;শ্রহে নাহজুল বালাগ্বাহঃইবনে আবিল হাদিদ,১ম খন্ড,পৃঃ২৩১-২৩২)।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শিয়া মুসলমানরা কি দৈনিক তিন ...
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের জন্ম ...
قرآن مجید میں حوادث کے جزئیات کیوں ذکر هوئے هیں ...
খলিফা ওমর বিন -আব্দুল আজী
নবী ও রাসূলের প্রয়োজনীয়তা
ভুলে যাওয়া ইতিহাস : ঘটনা প্রবাহ ...
ইসলামের পবিত্র চারটি মাস ও আমাদের ...
ইসলাম এবং বিশ্বজনীন শান্তি ও ...
কারবালার প্রেক্ষাপট : কীভাবে নবীর ...
হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ ...

 
user comment