লন্ডনে প্রকাশিত দৈনিক আল-হায়াতে এ ডাবল এজেন্টের সাক্ষাতকারের কিছু অংশ উল্লিখিত হয়েছে : (আল-কায়েদার বর্তমান নেতা) আইমান আল-জাওয়াহিরী চেচেনে ঢোকার সময় দাগেস্তান সীমান্তে গ্রেফতার হন। ঐ এজেন্ট দাগেস্তান পুলিশকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ প্রদান করেন বলে জানান। অবশ্য তার ভাষ্যমতে দাগেস্তান পুলিশ তাকে মুক্তির বিনিময়ে ১ লক্ষ ডলার দাবী করেছিল। অথচ দাগেস্তান পুলিশের এটা জানা ছিল না যে, তারা কাকে গ্রেফতার করেছে।
এজেন্ট আল-হায়াতকে দেয়া এ সাক্ষাতকারে চেচেন যুদ্ধ, এ যুদ্ধে সশস্ত্র গ্রুপের কমান্ডার খাত্তাবের ভূমিকা এবং নতুনভাবে কয়েকটি অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ শুরু করার বিষয়ে উসামা বিন লাদেনের প্রচেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন।
আল-কায়েদার সাথে চেচেনে'র সশস্ত্র যোদ্ধাদের সম্পর্ক কিরূপ ছিল -এ শীর্ষক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন : ১৯৯৬ সালের জুন মাসে উসামা বিন লাদেনের সুদান সফরের পূর্বে আইমান আল-জাওয়াহিরী আমাদের সাথে সাক্ষাত করে চেচেন যেতে চেয়েছিলেন। এ ছিল আল-জাওয়াহেরী'র সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত। আমাকে বলতেই হচ্ছে এ সাক্ষাত আমার মোটেও ভালো লাগেনি। কেননা সে ছিল অহংকারী এক ব্যক্তি।
আল-কায়েদা ও মিশরের ‘জিহাদে ইসলামি' গ্রুপে তার অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা তার এবং খাত্তাবের মাঝে একটি সাক্ষাতের আয়োজন করি। অবশ্য আল-জাওয়াহিরীর সাথে সাক্ষাতের কোন ইচ্ছা খাত্তাবের ছিল না। আল-জাওয়াহিরীর আযারবাইজানে অবস্থানের সময় আমরা দাগেস্তানী এক যুবকের সাথে যোগাযোগ করি -যে আমাদের ট্রাক চালক ছিল- এবং সীমান্ত রক্ষীদেরকে দেয়ার জন্য ১০ হাজার ডলার তাকে দেই। কিন্তু আল-জাওয়াহেরী সীমান্ত পার হওয়ার সময় গ্রেফতার হন এবং পুলিশ ঘুষ নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানতো না যে, তারা কাকে আটক করেছে -এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন : কেউই তাকে চিনতো না। আমরা আল-জাওয়াহেরী'র পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা চালাই। কেননা যদি তারা এ বিষয়টি টের পেত যে তিনি কে, তবে তারা মোটা অংকের ঘুষ দাবী করতো। অবশেষে দাগেস্তান পুলিশ আল-জাওয়াহিরীকে মুক্তির বিনিময়ে ১ লক্ষ ডলার দাবী করলেও আমরা ৪০ হাজার ডলারের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করতে সক্ষম হই। তিনি প্রায় ৭ সপ্তাহ আটক ছিলেন এবং এ সময় বহিঃবিশ্বের সাথে তার যোগাযোগ ছিল ছিন্ন এবং তিনি এ কথা জানতেন না যে, উসামা বিন লাদেন সুদান ত্যাগ করেছেন।
মুক্তি পেয়ে জাওয়াহিরী আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং উসামা বিন লাদেনের সাথে যোগ দেন। অবশ্য আটক থাকাকালীন সময়ে রুশ মাফিয়া গ্রুপের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন আল-জাওয়াহিরী। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, তিনি মাফিয়া এ গ্রুপের মাধ্যমে রাশিয়ায় নির্মিত তিনটি পরমাণু বোমা ক্রয় করেছিলেন যেগুলোকে আফগানিস্তানে স্থানান্তর করা হয়।
চেচেনের দ্বিতীয় যুদ্ধে বিন লাদেনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এ গোয়েন্দা বলেন : আল-কায়েদা ও খাত্তাবের মাঝে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্বে ছিল উসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ট এক সহযোগী ‘সাইফুদ্দীন আল-গামেদী'। চেচেনের প্রথম যুদ্ধ ১৯৯৪ সালে শুরু হয় এবং ১৯৯৬ সালে সন্ধী চুক্তির মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। তত্কালীন চেচেন প্রেসিডেন্ট সালিম খান ইয়ান্দারবায়েভ ১৯৯৬ সালে রাশিয়ার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েল্তসিনের সাথে সন্ধি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঐ চুক্তির ভিত্তিতে চেচেন স্বায়ত্ব শাসিত সরকার থেকে রুশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনে চলে আসে।
কিন্তু ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে খাত্তাব মুজাহিদদের একটি দলের সাথে দাগেস্তানে প্রবেশ করে রুশ একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ৬০টি ট্যাংক বিস্ফোরিত করে। এরপর রুশ সৈন্যদের সাথে রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষে রুশ বাহিনী'র ১ শ' সৈন্য নিহত হয়।