বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এর শাহাদাত

আজ ২৫শে শাওয়াল মহান ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এর শাহাদাত উপলক্ষে সকল মুসলমান ভাই-বোনদেরকে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।
রসূলে কারিম (সা) এর মহান আহলে বাইতের শ্রদ্ধেয় ইমাম, জ্ঞানের বিশাল সমুদ্র, ইসলামের বিকাশ ও উন্নয়নে যাঁর ছিল অসামান্য অবদান-তিনি হলেন ইমাম সাদেক (আ.)। ১৪৮ হিজরীর ২৫শে শাওয়াল ৬৫ বছর বয়সে তিনি এই পার্থিব জগতের মায়া ত্যাগ করে, সমগ্র বিশ্ববাসীকে বেদনাহত করে চলে যান পরকালের অনন্ত জীবনে। ইমাম সাদেক (আ.) এর মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলে খোদা (সা.) এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করার মধ্য দিয়ে ইমামের জীবন ও কর্মের কিছু দিক নিয়ে আজ সংক্ষিপ্ত আলোচনা শুরু করবো। হুজুরে পাক (সা.) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুহাম্মাদ বাকের (আ.) কে এমন একটি সন্তান দান করবেন যার কণ্ঠ হবে সদা সত্যনিষ্ঠ। তার নাম জাফর এবং সে সত্যবাদী ও যথার্থ কর্ম নিপুণ। যে তার সম্মানে আঘাত করবে সে যেন আমার ওপরেই অত্যাচার করলো এবং আমার সম্মানে আঘাত হানলো।'
আহলে বাইতের ইমামরা সবসময় রাজনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সর্বপ্রকার বৈরি পরিবেশের মধ্যেও তাঁরা চেষ্টা করেছেন দ্বীনের পতাকাকে উড্ডীন রাখতে। বিশিষ্ট চিন্তাবিদ শহীদ অধ্যাপক মোতাহহারী এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইসলামের মহান মনীষীগণ সর্বকালেই ইসলাম এবং মুসলমানদের কল্যাণ ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিবেচনায় রাখতেন। স্থান এবং কালের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁরা এমন আচরণ করতেন যা ইসলামের জন্যে কল্যাণ বয়ে আনে। সর্ব যুগেই তাদেঁর সংগ্রাম ছিল ভিন্ন ধরনের কৌশলপূর্ণ এবং তাঁরা পরিপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়েই সেইসব সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ইতিহাসের পরিক্রমার আমরা লক্ষ্য করবো, নবীজীর আহলে বাইতের ইমামগণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিচিত্র পরিবেশ-পরিস্থিতিতে সমকালীন শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন। বলা বাহুল্য আহলে বাইতের ঐ বিচিত্র সংগ্রাম কৌশল বর্তমান যুগের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দিয়েছে। ইমাম সাদেক (আ.) এর ইমামতকাল ছিল ৩৪ বছর। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে তিনি পাঁচজন উমাইয়া শাসক এবং দুইজন আব্বাসীয় শাসকের শাসনকাল দেখেছেন। বনী উমাইয়া এবং বনী আব্বাসের মধ্যকার মতানৈক্য চরমে ওঠার ফলে তিনি ইসলামকে শাসকদের সুপরিকল্পিত বিচ্যুতি থেকে বাঁচানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান। উমাইয়া শাসনের শেষ দিকে ইসলামী সমাজের অবস্থা একেবারে শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। উমাইয়া শাসকদের ক্ষমতার লিপ্সা আর স্বেচ্ছাচারিতা মানুষকে ভীষণরকম ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছিল। পুরো সমাজের ওপর দুর্নীতি আর দারিদ্র্য যেন জেঁকে বসেছিল। মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কে নৈতিকতা কিংবা আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি ম্লান হয়ে পড়েছিল।
কোরআন এবং হাদিসের যেসব মূল্যবান শিক্ষা মানবীয় পূর্ণতা বা উন্নয়নের সোপান হয়ে ওঠার কথা ছিল সেগুলো পরিণত হলো শাসকদের হাতের অস্ত্র বা হাতিয়ারে। অন্যদিকে মানুষের মাঝে দেখা দিলো বিচিত্র চিন্তাদর্শে বিশ্বাসের প্রবণতা ও বিচ্যুতি। এরকম এক সামাজিক পরিস্থিতিতে ইমাম সাদেক (আ.) তাঁর পিতা ইমাম বাকের (আ.) এর পর ঐশী আমানত তথা ইমামতের গুরুদায়িত্বভার নিজ কাধেঁ তুলে নিলেন এবং মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথ-নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব বা নেতৃত্বভার গ্রহণ করলেন। ওই পরিস্থিতিতে উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করাটাকে কল্যাণকর মনে করলেন না। প্রফেসর মোতাহহারী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ ইমাম সাদেক (আ.) যদি মনে বুঝতে পারতেন ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্যে তাঁর শহিদ হওয়াটাই উত্তম, তাহলে তিনি সংগ্রাম এবং শাহাদাতের পথই বেছে নিতেন। যেমনটি করেছিলেন ইমাম হোসাইন (আ.)। কিন্তু সেই যুগে সরাসরি সংগ্রাম করার চেয়ে চিন্তাদর্শ, জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণমূলক সংগ্রামই ছিল সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এবং উত্তম।

তাই তিনি সাদি এই পথটাকেই বেছে নেন। তাঁর সেই নির্বাচন যে কতো যুগোপযুগী ছিল তা বোঝা যায় আজকের পৃথিবীতে তাঁর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতার দিকে তাকালে। ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদাতের প্রভাব ইতিহাসের সর্বযুগেই যেমন অম্লান রয়েছে এবং থাকবে, ইমাম সাদেক (আ.) এর জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাবও তেমনি যুগ যুগ ধরে অম্লান থাকবে। কখনো কখনো জেহাদ এবং অভ্যুত্থান ইসলামের জন্যে উপকারী আবার কখনো কখনো নীরবতা কিংবা তাকিয়াহ নীতি অবলম্বন করাটাই ইসলামের জন্যে বেশি প্রয়োজনীয় ও উপযোগী হয়।

ইমাম সাদেক (আ.) সেই সময়ে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলোকে সমূহ বিচ্যুতির হাত থেকে রক্ষা করাটাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করেছিলেন। কেননা সে সময় বহু ধরনের মতবাদ এবং মাযহাব সমাজে প্রচলিত ছিল যেগুলো মানুষকে বিচ্যুতির পথে ঠেলে দিচ্ছিলো। ইমাম সাদেক (আ.) তাই এইসব মতবাদের মোকাবেলায় ফিকাহ, দর্শন, রাজনীতি, নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও কোরআনের তাফসিরের ভিত্তিতে মূল্যবান সব দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি মানুষকে চারিত্র্যিক পরিশুদ্ধতা এবং বিভিন্ন জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করতেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি বিজ্ঞ অসংখ্য ছাত্র তৈরি করে গেছেন যারা পরবর্তীকালে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। দ্বীনী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বলাবাহুল্য, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনকারী তিনিই। তাঁর ক্লাসে বহু দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে জমায়েত হতো। সে সময় প্রায় সকল সমাজেই জ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংলাপ বা বাহাসের আয়োজন করার প্রচলন ছিল। ইমাম সেসব সংলাপে অসাধারণ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সে কারণে সমকালীন বিশ্বে তাঁর নামটি ছিল সুপরিচিত।
ইমাম সাদেক (আ.) সবসময় চেষ্টা করতেন শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের কথা তাদের অন্যায়-অত্যাচারের কথাগুলো জনগণের সামনে ফাঁস করে দিতে। তিনি একবার বলেছিলেনঃ কেউ যদি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্যাতনকারী সুলতানের প্রশংসা বা গুণকীর্তন করে কিংবা তার সামনে বিনয় প্রকাশ করে বা তাকে কুর্নিশ করে তাহলে তার স্থান হবে দোযখের আগুণে ঐ জালেম সুলতানের সাথে। ইমাম সাদেক (আ.) আব্বাসীয় খলিফা মানসুরের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার কারণে মানসুর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে যদিও চাইতো চালাকি করে ইমামের ঘনিষ্ঠ হতে, কিন্তু ইমামের সচেতনতার কারণে তার সব কূটকৌশলই ব্যর্থ হয়ে যেত। এদিকে জনগণের মাঝে ইমামের অনুসারীদের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে লাগলো। এরফলে জনগণের মাঝেও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেলো। এই পরিস্থিতিতে খলিফা মানসুর ব্যাপক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো।

অবশেষে, ১৪৭ হিজরীর শাওয়াল মাসের ২৫ তারিখে খলিফা মানসুর তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজউন। তাকে মদীনার জান্নাতুল বাকী কবরস্তানে তার পিতার পাশে সমাধিস্থ করা হয়। জান্নাতুল বাকীতে প্রবেশের প্রারম্ভে ডান পাশে তার কবরের স্মৃতি এখনো চোখে পড়ে।


‘নভেম্বরের শেষে নামছে ইরানে তৈরি নতুন ডুবোজাহাজ'
১৯ আগস্ট (রেডিও তেহরান): ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল হাবিবুল্লাহ সাইয়্যেরি বলেছেন, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন ডুবোজাহাজ পানিতে নামাবে তেহরান।


তিনি জানান, ‘ফাতেহ' বা ‘বিজয়ী' নামের এ ডুবোজাহাজটির ওজন প্রায় ৫০০ টন। এটি হবে ইরানের আধা-ভারী শ্রেণির নতুন ডুবোজাহাজ।

হাবিবুল্লাহ সাইয়্যেরি বলেন, ইরান দুই দশক আগে ডুবোজাহাজ তৈরির প্রযুক্তি অর্জন করেছে এবং এরইমধ্যে গাদির নামের ডুবোজাহাজ নির্মাণ করছে।

 

ডেস্ট্রয়ার নির্মাণের কাজে ইরান অগ্রগতি লাভ করেছে উল্লেখ করে হাবিবুল্লাহ সাইয়্যেরি বলেন, বিশেষ করে অত্যাধুনিক ডেস্ট্রয়ার তৈরি করা মোটেও সহজ নয়।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরান সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘জামারান' ডেস্ট্রয়ার সাগরে নামায়। ১,৪২০ টন ওজনের ওই ডেস্ট্রয়ারে অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা ও অন্যান্য আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম রয়েছে।#

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদার ...
আবনা : ইয়েমেন আগ্রাসীদের ...
সিরিয়া- লেবানন অভিন্ন সীমান্তে ...
বাহরাইনে ইমাম হোসাইন (আ.)এর ...
পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ খ্রিস্টান ...
মোরায় কক্সবাজারে দুই শতাধিক ...
ক্যান্সার দিবস : যে লক্ষণগুলো ...
আনসারুল্লাহ'র দখলে সৌদি আরবের ...
২৮০ জন শরণার্থীকে সমুদ্রে ...
সন্ত্রাসবাদ রুখতে ঐক্যবদ্ধ ...

 
user comment