-রায়হান নেওয়ায
ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে আমাদের মধ্যে থেকে একটি বিশেষ শ্রেণী ধর্মদ্রোহিতার অতলে ডুবে যাচ্ছে এবং আরেকটি শ্রেণী উগ্রমৌলবাদী কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে জঙ্গীবাদী নামে কুখ্যাতি অর্জন করছে।কেউ কেউ জঙ্গীবাদীকেই জেহাদী নামে আখ্যায়িত করে ইসলামের অবমাননা করায় সচেষ্ট।কিন্তু জানার বিষয়টি হলো জঙ্গীবাদ ও জেহাদ আদৌ এক বিষয় নয়।
পৃথিবীর সকল ধর্মেই উগ্রমৌলবাদী ও জঙ্গীবাদী চেতনার লোক বিদ্যমান রয়েছে।ইউরোপে প্রোটেষ্ট্যান্ট ও ক্যাথলিকদের একে অপরের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়া উগ্রমৌলবাদী ও জঙ্গীবাদী তৎপরতার বহিঃপ্রকাশ।ভারতের আয়ুধিরায় বাবরি মসজিদ শহীদ করা ও বিভিন্ন শহরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন করা উগ্রমৌলবাদী ও জঙ্গীবাদীদের ঘৃণ্যতম কাজ বলে বিবেচিত হয়েছে।এছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশে মসজিদ ও মাজার বোমা হামলা করে অগণিত মানুষের প্রাণনাশ করাও উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদীদের নিকৃষ্টতম কাজ বলে কুখ্যাতি অর্জন করেছে।
সাম্প্রতিককালে লন্ডনে বোমা হামলা করে অগণিত মানুষের প্রাণনাশ করাও ঘৃণ্যতম জঙ্গীবাদী তৎপতাও বটে।কিন্তু জেহাদ এসব তৎপরতায় বিশ্বাসী নয়।আল্লাহপাকের দ্বীনকে অনুসরন ও অনুকরনের পথে যদি কেউ বাঁধা প্রদান করে এবং বাধা প্রদানকারীর রক্তপাত ছাড়াও অন্য কিছু বুঝে না এরুপ উগ্র তৎপরতায় উৎগ্রীব হয় তখন আল্লাহ পাকের দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুখোমুখী যে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া হয়,সে সংঘর্ষের নাম"জেহাদ"।বদর ও উহুদ এরুপ জেহাদের উজ্জল দৃষ্টান্ত।ইসলাম শান্তিপ্রিয় ধর্ম ও বিশ্ব শান্তির প্রতীক।বিধায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা তাঁর নিজ জন্মভূমি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছিলেন।যদি ইসলাম জঙ্গীবাদী তৎপরতায় বিশ্বাসী হতো তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত না করে কিছু লোকের হাতে হাতিয়ার উঠিয়ে দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতেন।কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ইসলাম জঙ্গীবাদী তৎপরতায় বিশ্বাসী নয়।বরং ইসলাম শান্তিবাদ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী।আমাদের সকলের জানা উচিৎ যে,ইসলামই একমাত্র দ্বীন,যা মানব জীবনের সকল সমস্যার নির্ভূল সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছে এবং মানুষের প্রতিটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের জন্য এমন স্থায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে,যার অশেষ নৈতিক মূল্যায়নও রয়েছে।একজন মানুষ সার্বক্ষনিক আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি সাওয়াব অর্জনেরও অধিকারী হতে পারে।অন্য ধর্মাবলম্বীগণ তাদের জীবনধারায় শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।আর আমরা ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী মুসলিম সম্প্রদায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আনুষ্ঠানিক আনন্দ উপভোগ করার মাধ্যমে ইবাদাতের সাওয়াব অর্জন করতে পারি এবং মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভেও সক্ষম হতে পারি।ইসলামী জীবনযাপনের ইহা এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রধান বৈশিষ্ট্য।তাইতো মহান আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে কারীমাতে ঘোষনা দিয়েছেন-"নিশ্চয় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের নিকট ইসলামই একমাত্র দ্বীন।"
এ পবিত্র আয়াত থেকে ইহাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে,ইসলাম ছাড়া সমস্ত ধর্মই বাতিল।জেনে রাখা উচিৎ যে,বাতিলকৃত ধর্ম সমূহের মধ্যে কিছু ইসলাম আগমনের পূর্বেই বাতিল বলে আখ্যায়িত হয়েছে।যেমন মুশরিকদের দ্বীন।আর কিছু ধর্ম ইসলাম আগমনের পর বাতিল বলে ঘোষিত হয়েছে যেমন-ইহুদিয়াত ও নাসরানিয়াত অর্থাৎ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালামের ধর্ম।সূর্যের উপস্থিতিতে যেরুপ প্রদীপের কোন প্রয়োজন নেই,ঠিক একই রুপ আল্লাহপাকের নিকট ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মেরও কোন প্রয়োজন নেই।তাইতো বাংলা কাব্য সাহিত্যের ইসলামী চেতনার বিশ্ব নন্দিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্যে লিখেছেন-
"দেশ কাল যুগ পাত্র ভেদিয়া হোক তার অভিযান
বিজয় পতাকা উড়ুক তাহার পরশিয়া আসমান"