জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ইরাকের মসুল, তেলআফার ও সানজার প্রদেশে আল-কায়েদা সমর্থিত তথাকথিত ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভান্ট বা আইএসআইএল'র জঙ্গী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা ইরাকের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে আইএসআইএল'র হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইরাকের সরকার ও জনগণের প্রতি আহবান জানান।
ইরাকের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে খুব শিগগিরি সেদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রতি আহবান জানাবে। ইরাকের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আসসৌদন বলেছেন, ইরাক পরিস্থিতির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে কেবল নিন্দা জ্ঞাপন ও বিবৃতি প্রকাশই যথেষ্ট নয়। সম্প্রতি ইরাকের কয়েকটি শহরে আইএসআইএল জঙ্গীরা যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, সংখ্যালঘু ইজিদি সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০টি শিশুকে আইএসআইএল জঙ্গীরা হত্যা করেছে।
এদিকে বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, আইএসআইএল জঙ্গীদের হামলার ভয়ে ইরাকের সানজার শহরের বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও সহায় সম্পদ ফেলে রেখে বিভিন্ন পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ইরাকি শিশু পরিবার ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে এবং তাদের খাদ্য ও পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, নেইনাভা প্রদেশের ইযাদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ৩৫ বছরের নীচের বহু নারী আইএসআইএল ও উগ্র তাকফিরি জঙ্গীদের পক্ষ থেকে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। জঙ্গীরা এসব নারীদেরকে হয় দাসী হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে অথবা জোর করে আইএসআইএল নেতাদের বিয়ে করতে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে।
ইরাকি সংসদে নারী প্রতিনিধি ওয়াইয়ান দাখিল সানজার শহরের জনগণের বিরুদ্ধে আইএসআইএল জঙ্গীদের জুলুম নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আইএসআইএল শিশু ও পুরুষদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করছে এবং ইজিদি সম্প্রদায়ের ৫০০'র বেশি মানুষকে তারা হত্যা ও তাদের ৫০০ নারীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এসব নারীদেরকে অপহরণ করে তারা তেলআফার শহরের জেলখানাগুলোতে আটকে রেখেছে। গত কয়েক মাসে আইএসআইএল'র এসব জঙ্গী কর্মকাণ্ড ইরাকের আল আনবার প্রদেশেও লক্ষ্য করা গেছে।
এসব জঙ্গীদের পেছনে বিদেশি বিভিন্ন মহলের সমর্থন রয়েছে যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরাককে অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত রাখা ও দেশটিকে ধ্বংস করা। কাতার ও সৌদি আরবের মত দেশগুলো গত কয়েক বছর ধরে এসব জঙ্গীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআইএল জঙ্গীদের হুমকির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে শত্রুর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। ইরাকের নতুন প্রেসিডেন্টও সেদেশে ইউরোপীয় প্রতিনিধিকে দেয়া সাক্ষাতে জঙ্গীদের মোকাবেলায় ইউরোপের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেছেন, আইএসআইএল জঙ্গীরা শুধু ইরাকের জন্যই হুমকি নয় বরং তারা একসময় ইউরোপের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
bdn24x7.com, বাংলাদেশনিউজ২৪x৭.কম, এসএস, জের, ০৭.০৮.২০১৪