মীর্যা সিকান্দার
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে হজ্ব একটি স্তম্ভ। গুরুত্বের দিক থেকে কালেমা/বেলায়াত, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত কোনোটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হজ্ব ও যাকাত ধনীদের ওপর ফরয। সম্বলহীনদের জন্য মহান আল্লাহ হজ্ব ও যাকাত ফরয করেননি।
হজ্বের আভিধানিক অর্থ সংকল্প। পারিভাষিক অর্থ হলো বাইতুল্লাহ অর্থাৎ কাবা ঘরকে যিয়ারত করা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা হজ্ব ফরয হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, "আল্লাহরই জন্য আল্লাহর ঘরের হজ্ব করা তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। যেসব লোক সেখানে যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে। (আলে ইমরান-৯৭)।
হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ্ব ফরয করেছেন, তখন আকরা ইবনে হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন : হে রাসূলুল্লাহ! প্রত্যেক বছরই কি হজ্ব ফরয? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি যদি এর জবাবে হাঁ বলি তবে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি ওয়াজিব হয়ে যেত, তবে তোমরা তদনুযায়ী আমল করতে না। আর করতেও পারতে না। হজ্ব মূলত একবারই ফরয। যদি কেউ অধিক করে তবে তা হবে নফল। (তিরমিযী)।
হজ্ব করার সামর্থ বলতে বুঝায় আর্থিক সঙ্গতি, শারীরিক সুস্থতা এবং অনুকূল পরিবেশ। তবে আর্থিক সঙ্গতি থাকলেও যদি শারীরিক সুস্থতা না থাকে তাহলে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানোর সুযোগ আছে। তাতে হজ্বের ফরয আদায় হয়ে যাবে। মহিলাদের আর্থিক সঙ্গতি, শারীরিক সুস্থতা ও অনুকূল পরিবেশের সাথে হজ্বের সফরে মহাররম পুরুষ সঙ্গে থাকা জরুরি বিষয়।
যিনি হজ্বব্রত পালন করেন তাকে আলহাজ্ব বা হাজী বলে। এটি নামের আগে বা পরে লাগাবার মতো কোনো খিতাব বা ডিগ্রি নয়। কিন্তু দেখা যায়, নামের আগে আলহাজ্ব না লিখলে এবং হাজী সাব বলে না ডাকলে অনেকে মনে কষ্ট পান। এটা ঠিক নয়।
হিজরী নবম সালে হজ্ব ফরয হয়েছে, এ মতটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য।
হজ্ব খুবই গুরুত্ববহ ইবাদত। সামর্থ্যশীল ব্যক্তিদের হজ্ব করার ব্যাপারে মোটেই গাফিলতি করা উচিত নয়। যথাসময়ে আদায় করে নেয়া দরকার।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহরই জন্য হজ্ব করলো এবং এ সময়ের মধ্যে স্ত্রী সহবাস ও কোনো ফাসিকী করল না, সে তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হবার দিনের মতোই (নিষ্পাপ) হয়ে গেল। হাদিসটি আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ্ব ও ওমরা পর পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর। কেননা, এ দু'টি কাজ দারিদ্র্য ও পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেয়, রেত যেমন লোহার মরিচা ও সোনা-রূপার জঞ্জাল দূর করে দেয়। (তিরমিযী, আবু দাউদ)।
আসলে মানুষ লোহা বা সোনার ন্যায় স্বভাবজাত নির্মল ও নিষ্কুলুষ। পরে পারিপার্শ্বিকতার কারণে তার ওপরে আবর্জনা জন্মে এবং সে আবর্জনার নিচে পড়ে আসল সত্তা হারিয়ে ফেলে। তার আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়ে পড়ে। রেত দিয়ে সোনা-রূপা ঘষা দিলে তার জঞ্জাল যেমন দূর হয় তেমনি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পুঞ্জীভূত ময়লা-আবর্জনা হজ্ব ও ওমরা রূপ রেতের ঘর্ষণে দূর হয়ে যায়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন আমল অধিক উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। জিজ্ঞেস করা হলো অতঃপর কি? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। জিজ্ঞেস করা হলো তারপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কবুল হওয়া হজ্ব।
হযরত আমের ইবনে রবীয়াতা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ওমরা হতে আরেক ওমরা পর্যন্ত এ দু'টির মধ্যবর্তীকালের সমস্ত গুনাহ ও ভুলত্রুটির জন্য তা কাফফারা। আর হজ্বে মাবরুরের একমাত্র প্রতিফল হলো জান্নাত।
সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি হজ্ব না করে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অভিশাপ দিয়েছেন।
হরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে লোক এমন সম্বল ও যানবাহনের অধিকারী হলো, যা তাকে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে আর তা সত্ত্বেও সে হজ্ব করল না, সে ইহুদি অথবা নাসারা হয়ে মরুক। তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এ কথাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবে বলেছেন : আল্লাহরই জন্য আল্লাহর ঘরের হজ্ব করা সেই লোকদের জন্য অবশ্য কর্তব্য, যারা সে পর্যন্ত পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য রাখে। (তিরমিযী, মসনদে আহমাদ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর এক ভাষণে বলেন, হে জনগণ! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ্ব ফরয করেছেন, যারা আল্লাহর ঘর পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। যে লোক এ সত্ত্বেও হজ্ব না করে, সে ইহুদি, খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজক হয়ে মরুক। তবে যদি কেউ রোগ কিংবা অত্যাচারী শাসকের বাধা প্রভৃতি কোনো অসুবিধার কারণে হজ্ব করা থেকে বিরত থাকে, তার কথা স্বতন্ত্র। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে লোক হজ্ব করবে না তার জন্য আমার শাফাআতে কোনো লাভ নেই। আমার ‘হাওযে' তার উপস্থিতি নেই। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, হযরত ওমর (রা.), হযরত আবু হুরায়রা (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত আমামাতা (রা.)। (কুরতুবী)।
আমরা হাদিসে দেখেছি হজ্ব জীবনে একবার ফরয। বাকি সব নফল। এ সত্ত্বেও আমাদের সমাজে কিছু বিত্তবান লোক আছেন যারা জীবনে দশ, পনর, বিশ এমনকি ত্রিশ-পঁয়ত্রিশবারও হজ্ব করেছেন। যদি তাদের কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, হজ্ব তো একবার ফরয, আপনি অধিকবার হজ্ব করলেন কেন? উত্তরে তারা বলে থাকেন, আল্লাহ ও রাসূলের টানই আমাকে বারবার ওদিকে যেতে বাধ্য করে। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি এত মহব্বত যার ইসলাম বিদ্বেষীরা তারই সামনে বারবার আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে নানাভাবে অবমাননা করছে সে ব্যাপারে একটু ভ্রƒক্ষেপও সে করে না। এ দেশে যারা ইসলামী আন্দোলন করছে টাকার অভাবে তারা এগোতে পারছে না। তারা এখানে টাকা দেবে না। অথচ এখানে অর্থ দান সব থেকে বেশি সওয়াবের। মুসলমানদের দুর্ভাগ্য এই যে, অধিকাংশ মুসলমান ফরয এবং নফলের পার্থক্য বোঝে না। সে কারণে কখনও ফরযের চেয়ে নফলের গুরুত্ব অনেক বেশি দিয়ে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সারা বছর ফরয নামায আদায় করে না অথচ শবে কদরে নফল নামায পড়তে পড়তে রাত অতিবাহিত করে। আমাদের চারপার্শ্বে বহু ফরয দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র রয়েছে। তা ফেলে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বার নফল হজ্ব করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। একবার হজ্ব করে বাকি চৌত্রিশ বারের টাকা দিয়ে অন্তত দশটি গরিব পরিবারকে দাঁড় করিয়ে দেয়া যেত। তাতে আল্লাহ বেশি খুশী হতেন, সওয়াবও বেশি পাওয়া যেতো। ঐ দশ পরিবারের সদস্যরা আজীবন প্রাণ খুলে দোয়া করতো। মুসলমানদের আরেকটি দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তারা যে সব ইবদাত করে তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তাদের সামনে থাকে না। সে কারণে কালিমার জিকির, নামায, হজ্ব ও যাকাত থেকে কোনো ফায়দাই তাদের অর্জন হয় না। ইবাদত থেকে সত্যিকারের ফায়দা অর্জন হলে সারাবিশ্বের মুসলমানদের এমন দুর্দশাগ্রস্ত হতে হতো না।
হজ্ব মুসলমানদের বিশ্ব সম্মেলন। কাবা ঘর বিশ্ব মুসলিমের মিলন কেন্দ্র। হজ্ব উপলক্ষে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে লাখ লাখ লোক এখানে সমবেত হয়। একসঙ্গে এত লোকের মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য আর কোনো জাতির নেই। এই কারণে ভিন্নধর্মী একজন জ্ঞানী লোক বলেছিলেন, যে জাতির বিনা নোটিশে নামাযের মাধ্যমে দিনে পাঁচবার একটা এলাকার লোক একত্রে মিলনের সুযোগ রয়েছে, সপ্তাহে জুমার নামাযে একটা বৃহৎ এলাকার লোক একত্র হয়ে থাকে, বছরে দুই ঈদে তার থেকে অনেকগুণ বেশি বড় এলাকার লোক একসাথে মিলতে পারে এবং বছরে হজ্ব উপলক্ষে সারা পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে লাখ লাখ লোক বিশ্ব সম্মেলনে হাজির হয়। এরপর সেই জাতি কেন বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে পারছে না আমার তা বুঝে আসে না। আর কেনইবা তারা এত অবহেলিত ও নির্যাতিত।
হজ্ব কিভাবে হজ্ব পালনকারীদের মধ্যে বৈপ্লবিক চেতনা সৃষ্টি করে একটু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলেই তা বুঝা যায়।
কাবাঘর তাওয়াবের মধ্যে বিশ্ব মুসলিম সংঘবদ্ধ হওয়ার এবং আল্লাহকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন আবর্তিত হওয়ার চেতনা নিহিত।
সাঙ্গ করতে গিয়ে সাফা ও মারওয়ার দৌড়াদৌড়ির কমধ্যে রয়েছে আল্লাহর রাজি খুশীর জন্য সবকিছু উৎসর্গ করার চেতনা।
আরাফাত, মুজদালিফা ও মিনার অবস্থানের মাধ্যমে নিজেকে এবং আল্লাহকে উপলব্ধি করার সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে বান্দার মধ্যে নিজেকে মহান মনিবের কাছে পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণের জযবা পয়দা হয়।
কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে শাইতন যে মানুষের চিরশত্রু সে কথাটি গভীরভাবে হৃদয়পটে অঙ্কিত হয়ে যায়। ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে হতে শাইতনকে বিতরণ এবং সর্বদা শাইতনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য জিহাদ ঘোষণা করা হয়।
জাবালে নূরে গিয়ে হাজীরা উপলব্ধি করেন এই সেই মহান পাহাড় যে পাহাড়ে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বিশ্বের ঘনঘোর অন্ধকার দূর করে আলোক উজ্জ্বল পৃথিবী গড়ার জন্য মহানবী (সা.) এর ওপর মহা পবিত্র আল কুরআন নাযিল করেছেন।
শাইতনের প্রতিনিধিরা আজ পৃথিবীকে কুরআনের সেই পবিত্র আলো থেকে বঞ্চিত করে সমগ্র পৃথিবীকে একটি অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করেছে। সর্বত্র চলেছে হানাহানি আর হাহাকার। কোথাও সামান্যতম শান্তি মিলার উপায় নেই। আবার যদি পৃথিবী জুড়ে কুরআনের আলো প্রজ্জ্বলিত করা যায় তবে পৃথিবীতে জান্নাতের ছায়া পড়বে। পরম শান্তি ও সখে মানুষ বাস করতে পারবে। যারা স্বচক্ষে জাবালে নূরকে দেখে এসেছে তাদের দিলে যদি কুরআন বিরোধী সমস্ত আইন বিধান উৎখাত করে কুরআনের বিধান কায়িমের জন্য মাল ও জান দিয়ে সংগ্রামের জন্য ময়দানে নামার জযবা পয়দা না হয় তবে বুঝতে হবে তাদের হজ্ব তাদের কোনো উপকার করতে পারেনি।
মদিনায় গিয়ে রাসূল করীম (সা.) এর রওজা জিয়ারতর তার প্রেমে হৃদয়-মন ভরে গিয়ে তার আদর্শের আলোকে জীবনের সবদিক পরিচালনার জযবা পয়দা হবার কথা। যার মধ্যে এ জযবা পয়দা হয় না তার জিয়ারতের কি মূল্য থাকতে পারে।
ওহুদ পাহাড়ে গিয়ে শহীদানদের (রা.) কবর দেখে তাদের ইসলামের জন্য ত্যাগ ও কুরবানীর কথা মনে উঠে অনেকেই চোখের পানি ছেড়ে দেন। তখন জিহাদের এমন জযবা সৃষ্টি হয় যে, কাফিরদের সামনে পেলে এখনি তাদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু দেশে ফিরে এসে জযবা হারিয়ে ফেললে হজ্ব থেকে যে বিরাট সম্পদ অর্জন করা হয়েছি তাকেই হারিয়ে ফেলা হলো।
বাইতুল্লাহ বা কাবা ঘরকে কেন্দ্র করেই বিশ্ব মুসলিম আবর্তিত হয়। তাই মুসলমানদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখান থেকেই গড়ে উঠা উচিত। হজ্ব মৌসুমে মাননীয় বাদশাহ প্রত্যেক মুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধান এবং সে দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদেরকে দাওয়াত দিয়ে এনে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারেন। আলোচনা সভায় প্রথমে কোন মুসলিম দেশ কি হালে আছে? কোন কোন দেশের ওপর ইহুদি নাসারা মুশরিক ও নাস্তিকগণ কি ধরনের জুলুম-নির্যাতন করছে এসব বিষয় আলোচনা হওয়ার পর। মুসলমানদের জানমাল ইজ্জত রক্ষায় কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া। ৫৭টি মুসলিম দেশ যদি একতাবদ্ধ হয়ে নির্যাতিত মুসলমানদের উপকার করতে চায় তাহলে যে কিছু করতে পারবে না এমনটি চিন্তা করা যায় না। তবে সব থেকে বড় সমস্যা হলো প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশের শাসকগণই ইহুদি ও নাসারাগণের আজ্ঞাবহ। তাদের অনেকেই নিজের জাতি ঈমান ও আকিদা বিশ্বাসের প্রতি ইহুদি নাসারাদের মতই বৈরি মনোভাবের। তাই সম্মিলিত চেষ্টা সাধনা চালালে একতাবদ্ধ করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। মুসলমানদের কল্যাণে ওআইসি গঠন হলেও এর অধিকাংশ সদস্য ইহুদি নাসারাদের আস্থাভাজন ও আশীর্বাদ পুষ্ট। সে কারণে ওআইসি জাতিসংঘের মতই তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই ওআইসিকে যদি সংস্কার করা সম্ভব হয় ভাল না হলে বিকল্প আরেকটি সংগঠন করতে হবে।
ইহুদি নাসারাদের দ্বারা পরিচালিত জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম, শান্তিবাহিনী এর কোনটাই মুসলমানদের কল্যাণের জন্য নয়। তাই ৫৭টি মুসলিম দেশ মিলে একটি মুসলিম জাতিসংঘ, মুসলিম ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, মুসলিম আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম এবং প্রত্যেক মুসলিম দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য নিয়ে একটি বিশ্ব মুসলিম শান্তি বাহিনী গঠন করতে হবে।
ইহুদি নাসারাগণ প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে বিশ্বের কাছে মুসলমানদের দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি রূপে চিহ্নিত করছে। মুসলিম আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে তার জবাব দিতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ইহুদি নাসারাগণ মুসলমানদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার চেষ্টায় আছে। আমাদের উচিত হবে ওদের সাথে কেন বন্ধ করে মুসলিম ব্যাংকের সাথে মেল করা। যখন কোনো মুসলিম দেশ ইহুদি নাসারা মুশরিকগণ আক্রমণ করবে বিশ্ব ইসলামী শান্তি বাহিনী মুসলমানদের পাশে দাঁড়াবে। আর সে কারণে খেয়ে না খেয়ে প্রত্যেকটা মুসলিম দেশকে ওদের আণবিক শক্তি মোকাবিলা করার মতো আণবিক শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে।
ঈমানী তাগদ বৃদ্ধি ও বিশ্বের নেতৃত্ব দেবার শক্তি অর্জনের জন্যই হজ্ব নামক এই মহা সম্মেলন।
ইসলামের প্রত্যেকটি কাজই একটা ইবাদত এবং প্রত্যেকটি ইবাদতই ইবাদতকারীকে অনেক উন্নত স্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম। যদি ইবাদতের উদ্দেশ্য লক্ষ্য সামনে রেখে যথাযথভাবে ইবদাত করা হয়। মূলত বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের মূল পরিকল্পনা হজ্বের সম্মেলনেই হওয়া দরকার।
শক্তি সামর্থ্য থাকতেই হজ্ব করা উচিত। কারণ হজ্বের হুকুম-আহকাম আদায় করা অতি কঠিন কাজ। বৃদ্ধ ও দুর্বল লোকদের পক্ষে তা যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া হজ্ব থেকে যে উপলব্ধি লাভ হয় বৃদ্ধকালে সে উপলব্ধিকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় না।