বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

(Q)পবিত্র ক্বোর্‌আন - (QM)ক্বোর্‌আনের প্রবন্ধ(রচনা সমূহ পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা


(Q)পবিত্র ক্বোর্‌আন - (QM)ক্বোর্‌আনের প্রবন্ধ(রচনা সমূহ

পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা


গত ২২ এপ্রিল ছিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। বিশ্বের পরিবেশ সুস্থ রাখা ও পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরে এ দিনটিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য জনগণকে সচেতন করতে বছরের একটি দিন বেছে নেয়া হয় ১৯৭০ সালে। সে মতে, ৩৮ বছর ধরে দিনটির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

চেতনার প্রকাশ, সম্পর্কের নবায়ন এবং আচরণের প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য বছরে বেশ কিছু দিবস উদযাপন করা হয়, যেমন‌ বাবা দিবস, মা দিবস, সহিষ্ণুতা দিবস, কন্যাশিশু দিবস, শ্রমিক দিবস ইত্যাদি।


ইসলামীশিক্ষা অনুযায়ী কোনো বিশেষ দিবস পালনের প্রয়োজন নেই। কেননা মুসলমানদের কাছে প্রতিদিনই মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা ও শ্রমিকদের সাথে সদাচার ও সৌজন্যের দিন। সবার প্রতি ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ কর্তব্য পালন ইসলামের পরিভাষায় হুকুকুল ইবাদ হিসেবে পরিচিত। সে মতে, এগুলো নৈতিকতা ও সচ্চরিত্রের আওতায় পড়ে। এসব নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব এতই যে, ইসলামে আল্লাহর ইবাদতগুলোর পাশাপাশি জোর দেয়া হয়েছে হুকুকুল ইবাদ বা মাখলুকাতের প্রাপ্য আদায়ের ওপর। আর একজন মানুষের জীবনে তার স্রষ্টার প্রতি করণীয় ও সৃষ্টি জগতের প্রতি কর্তব্য ছাড়া আর কী-ই বা থাকতে পারে! সুতরাং এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ কনভেনশন বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা ও সনদের চেয়ে মুসলিম উম্মাহর জন্য বেশি দাবি রাখে ইসলামের শিক্ষা। ভূগোলকের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য ইসলামে রয়েছে সার্বজনীন শিক্ষার গুরুত্ব। মানবজাতির পার্থিব ও পারত্রিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও সাফল্যের চূড়ান্ত নির্দেশনা গ্রন্থ কুরআন মজীদে এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের নমুনা রাসূলে পাক সাঃ-এর সুন্নাহে মানুষ, সৃষ্টিকুল, প্রকৃতি ও এসবের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সুস্পষ্ট করা হয়েছে পরিবেশ নীতি, যা পালন করা মানুষের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে গণ্য। পক্ষান্তরে তিন শতাব্দী ধরে যে চিন্তাধারা ও দর্শন আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, তাতে মানুষকে সাব্যস্ত করা হয়েছে সৃষ্টি জগতের কেন্দ্রবিন্দু এবং জ্ঞান লাভের সব মাধ্যমকে উপেক্ষা করে শুধু মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তিকে জ্ঞানের উৎস বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এমন একটি মানবগোষ্ঠীর উদ্ভব হলো, যারা স্রষ্টার সাথে কোনো সম্পর্ক স্বীকার করত না। এরা রাব্বুল আলামিনের সাথে বিদ্রোহ করে পৃথিবীতে নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করল। বুদ্ধিবৃত্তি ছিল মানুষের পথপ্রদর্শক এবং তার মনের বস্তুগত চাহিদা ছিল প্রধান প্রণোদক। প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ, তার উপকার লাভ এবং এ জন্য প্রাধান্য ও আধিপত্য বিস্তার হয়ে দাঁড়ায় মানুষের লক্ষ্যবস্তু। পাশ্চাত্যে এ চিন্তাধারার যাত্রা শুরু হয়েছিল রেনেসাঁ আন্দোলনের মাধ্যমে। এরই আওতায় প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞান পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ আন্দোলন সেই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পথ সুগম করে, যার ভিত্তি ছিল সপ্তদশ শতাব্দীর নতুন পশ্চিমা চিন্তাধারা ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ডেকার্তের চিন্তা দর্শন। তিনি সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে এমন চিন্তাধারা পেশ করেন যাতে অতিপ্রাকৃত কোনো প্রভাবকের স্থান ছিল না। ঠিক এ সময়েই গ্যালিলিও ও ক্যাবলার এমন জ্যোতির্বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটান যা ছিল নিরেট বস্তুগত। এসব চিন্তাধারা মানুষ ও সৃষ্টি জগতের মধ্যে গভীর সম্পর্কের সূত্র বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

ঠিক এ সময়েই ফ্রান্সিস বেকন ‘জ্ঞান বা বিজ্ঞানই শক্তি'‌ এই চিন্তাধারা পেশ করেন। এতে জ্ঞান, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যায়। ইউরোপে উদীয়মান নতুন পুঁজিপতি বুর্জোয়া শ্রেণী এটিকে মৌলিক বিশ্বাস ও যুদ্ধের ্লোগান হিসেবে গ্রহণ করে। তারপর শুরু হলো শিল্পবিপ্লব। এতে উৎপন্ন দ্রব্যের প্রাচুর্য দেখা দেয়। আস্তে আস্তে শিল্পের কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের বাজার অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শুরু হলো উপনিবেশ স্থাপনের পালা। মোট কথা, এভাবে গত তিন শ' বছরে মানুষের চিন্তাগত অগ্রগতি হলো ভেতর থেকে বাইরের দিকে। ফলে মানুষ তার আধ্যাত্মিক কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীন বস্তুতান্ত্রিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলো। এতে সৃষ্টিকুলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ল। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার হতে লাগল নির্বিচারে। শুধু অন্যান্য সৃষ্টি নয়, স্বয়ং মানুষকেও গোলাম করে রাখার জোর প্রচেষ্টা চলল। এতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হলো। পাশাপাশি পৃথিবীর পরিবেশের হলো অপূরণীয় ক্ষতি। পৃথিবী তার বুক চিরে মানুষের জন্য বের করে দিলো আল্লাহতায়ালার নেয়ামত রাজির ভাণ্ডার। মানুষ আপন মন-মস্তিষ্কের চাহিদা মেটাতে। সেখানে গড়ে তুলল গগনচুম্বি ভবনাদি। স্থাপনা ও তেলচালিত যানের সংখ্যা বাড়তে লাগল দিন দিন। কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ায় আবহাওয়া দূষিত হতে লাগল। তেমনি কলকারখানা ও মানুষের বর্জ্যে পানিও হয়ে গেল ব্যবহারের অনুপযোগী। বনভূমি উজাড় হওয়ায় এবং গাছপালা নিধনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আবহাওয়া দূষিত হওয়ার কারণে আকাশের ওজোন গ্যাসের স্তরে ফাটল সৃষ্টি হলো। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সবজি ও ফলমূলের মধ্যেও বিষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

আল্লাহতায়ালা বাতাসের মধ্যে গ্যাসের ভারসাম্য রেখেছেন। নাইট্রোজেন ৭৮, অক্সিজেন ২১ ও অন্যান্য গ্যাসের পরিমাণ শতকরা ১ ভাগ। অক্সিজেনের পরিমাণ যদি কম বা বেশি হয়ে যায়, তাহলে সৃষ্টিজগতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। কিন্তু মানুষ নিজেরাই এই বিপর্যয় ডেকে আনছে। গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য, আবহাওয়ায় কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইডের মতো মারাত্মক গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গাছপালা কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। কিন্তু গাছপালা লাগানো বা বনায়নের প্রতি উৎসাহ না দিয়ে বরং তা কেটে ফেলে সুউচ্চ ভবনাদি নির্মাণ করা হচ্ছে।

অতএব পৃথিবীর রক্ষা ও পরিবেশের নিরাপত্তা প্রযুক্তির সাথে নয়, বরং মানুষের আচরণের সাথে সম্পর্কিত। বাইরের সাথে নয়, ভেতরের সাথে এবং শরীরের সাথে নয় আত্মার সাথে সম্পর্কিত। পৃথিবীর সব বিপর্যয়ের মূলে রয়েছে মানুষের বস্তুতান্ত্রিকতা, যা স্রষ্টা ও ধর্মের সাথে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে জন্ম নিয়েছে। সুতরাং এ বিপর্যয় রোধ করার জন্য কোনো বস্তুতান্ত্রিক কর্মকৌশল কার্যকর হবে না। মানুষ যখন সদা সর্বত্র বিরাজমান সত্তা অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে সম্পর্ক কায়েম করবে, তখনই পৃথিবীর বিপর্যয় রোধ হবে।

ইসলামী জীবন দর্শনে পরিবেশ নৈতিকতার প্রথম কথা এই যে, আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিজগৎ ও এখানকার প্রতিটি বস্তু একটি বিশেষ মাত্রা, পরিমাণ ও অনুপাতে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের দায়িত্ব এই মাত্রা রক্ষা করা। এটি অনর্থক নয়। বরং এই অনুপাত ও ভারসাম্য রক্ষার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। মানুষের জন্যই সৃষ্টিজগতের এ ভারসাম্য মেনে চলা কল্যাণকর আর তা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। দ্বিতীয়ত, আল্লাহতায়ালা যত মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে একমাত্র মানুষেরই অনুভূতি শক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি রয়েছে। এ জন্যই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। জ্ঞানের কারণে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। এখন মানুষের কর্তব্য এসব যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিজগতের রহস্য ও গূঢ়তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা, কুরআন মাজিদের ৭৫৬টি আয়াতে আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শনাবলি নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। মানুষ এসব নিয়ে যখন চিন্তা গবেষণা করবে, তখন যেমন তার আল্লাহতায়ালার কুদরত ও অসীম ক্ষমতার প্রতি ঈমান মজবুত হবে, তেমনি মাখলুকাতের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের উপলব্ধি জন্ম নেবে এবং প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক সুন্দর হবে। তৃতীয়ত, সৃষ্টিকুলের রহস্য ও সূক্ষ্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করলে নিজের কর্তব্য স্থির হওয়ার সাথে সাথে কল্যাণ ও সাফল্যের পথ অবলম্বন করাও তার জন্য সহজ হবে। চতুর্থত, যে বুঝতে পারবে পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার মালিক আল্লাহতায়ালা। মানুষের কাছে তা আমানত মাত্র। এগুলো বিশেষ কোনো জাতি বা দেশের একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়, বরং পৃথিবীর সব মানুষ এমনকি অন্যান্য সৃষ্টিরও এতে প্রাপ্য রয়েছে। যে তা ব্যবহার করবে, তার দায়িত্ব সাবধানতা অবলম্বন করা। কেননা শুধু নিজেরা নয়, ভবিষ্যতের বংশধররাও যেন তা ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া উপকার লাভ করতে পারে সে দিকে লক্ষ রাখা মানুষের কর্তব্য। এ জন্য হাদিসে মরুভূমির গাছ কাটতে, পানির ঘাট নোংরা করতে, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে।

মোট কথা, পৃথিবীকে রক্ষা করার পূর্বশর্ত পৃথিবীর যিনি স্রষ্টা ও নিয়ন্তা, তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর বিধান পালনের অঙ্গীকার। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যই সব ক্ষেত্রে কল্যাণ ও মুক্তির একমাত্র উপায়। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন তা সত্য, সামষ্টিক জীবনেও তা অনস্বীকার্য। পৃথিবীর সব মানুষ যখন তা উপলব্ধি করবে, তখনই তাদের কল্যাণ সাধিত হবে। দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ মে ২০০৮

 


source : shiasearch.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)

 
user comment