আবনা : সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন চারজন বীরাঙ্গনা। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংগঠন ‘বীরাঙ্গনা ও মুক্তিযোদ্ধা' শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশবিক নির্যাতনের শিকার এ সব মায়েরা ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা বন্দুক দিয়া যুদ্ধ করছে, দ্যাশ স্বাধীন করছে। আমরা নিজের মান দিয়া দ্যাশ স্বাধীন করছি। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা সম্মান পায়। আমরা পাই না ক্যান?
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিবরণ দিয়ে সিরাজগঞ্জের রাজুবালা জানান, যুদ্ধের পর তার জীবনে আরও বিপর্যয় নেমে আসে। স্বামী মেনে নিলেও শ্বশুর-শাশুড়ি তার হাতের রান্না খেতেন না। স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তার নিঃসঙ্গ দিন কাটে মন্দিরে মন্দিরে।
সিরাজগঞ্জের আরেক বীরাঙ্গনা হাজেরা জানান, যুদ্ধের পর তাকে ঘরে তোলেন নি স্বামী। ছেলেমেয়েরাও মায়ের খোঁজ সেভাবে রাখেন না। পান না বয়স্কভাতা। এখন তার দিন কাটে রেলওয়ে স্টেশনের পাশে।
এদিকে আজ সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। সরকারি অনুষ্ঠনাদি ছাড়াও দেশব্যাপী রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ঊদ্যোগে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি।
আজকের বিজয় দিবসে সেদিনের রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুভূতি জানতে রেডিও তেহরানের পক্ষ থেকে তিনজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে তাদের হতাশার কথাই শোনা গেছে।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ মল্লিক জানান, সেদিন অশা করেছিলেন একটি সুন্দর দেশ হবে, মানুষের দু:খ-কষ্ট দূর হবে। তেমনটি হয় নি বলে দেশের বিবেকমান মানুষের চিত্তে আজ সুখ নেই। তিনি তার অভিমানের সাথে জানান,আজকে উপজেলা পর্যায়ে মুত্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে তিনি যান নি। কারণ, দেশে আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা তৈরি হয় নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে আজ দেখতে হচ্ছে সমাজে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট ।
১৯৭১ সালে বরিশালের পেয়ারাবাগানের গেরিলা যোদ্ধা হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে চান না সৈয়দ আবুল কালাম । বর্তমানে ঢাকা থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আবুল কালামও তার হতাশার কথা ব্যক্ত করে বললেন, তবুও মানুষ আশা করছে মুক্তিযুদ্ধের অকাঙ্খা আগামীতে হয়তো বা অর্জন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আজ শতকরা নব্বইভাগ মুসলমানদের দেশে তাদেরকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গিবাদী বা মৌলবাদী হিসেবে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবার, বীরাঙ্গনা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল দেশপ্রেমিক মানুষ চায় স্বাধীনতার সুফল যেন সবার ভাগেই জোটে। কোনো একটি বিশেষ দল বা গোষ্ঠী যেন তাকে কুক্ষিগত করে রাখতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধ যেন কোনো বিশেষ দলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের বিষয় না হয়। এটা যেন গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের অগ্রযাত্রার উদ্দীপনা শক্তি হয়ে থাকে।#
source : www.abna.ir