আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) : ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের উদ্যোগে পবিত্র মক্কা শহরে আয়োজিত ‘সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে পাঠ করা বিতর্কিত বিবৃতির বিরুদ্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপস্থিত অতিথিরা। কয়েকটি স্যাটালাইট চ্যানেল হতে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ‘শাইখ আব্দুল আযিয আলুশ শাইখ’ ও ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ‘ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন আত-তুরকি’ বক্তব্য রাখেন এবং শেষে সমাপনী বিবৃতি পাঠ করা হয়।
সম্মেলনস্থল থেকে আবনা প্রতিবেদক জানিয়েছে, ‘বালাগু মাক্কাতিল মুকাররামাহ’ শিরোনামে ঐ সমাপনী বার্তা পাঠের পর আমন্ত্রিত অতিথিদের অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সমাপনী বিবৃতি পাঠের পর, ফিলিস্তিনের ওয়াকফ বিষয়ক মন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে উঁচুস্বরে প্রতিবাদের সূরে বলেন : কেন বিবৃতিতে ইসরাইলের বিষয়ে কোন কথাই বলা হয়নি? ইসরাইল যে সকল সহিংসতা চালায় তা কি সন্ত্রাসবাদ নয়? এ সম্মেলনের শিরোনাম কি ‘সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা’ নয়?।
জায়নবাদী ইসরাইলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিপরীতে আরব ও ইসলামি দেশসমূহের নিরবতার নিন্দা জানিয়ে ‘শাইখ ইউসুফ আদিস’ বলেন : ‘কিছুদিন পূর্বে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরব ও ইসলামি দেশসমূহের নেতাদের নিয়ে ইসরাইলের বিষয়ে একটি বৈঠক আয়োজনের কথা উত্থাপন করলেও হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ব্যতীত অধিকাংশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি!’
ইউসুফ আদিস এমন অভিযোগ তোলার সাথে সাথে উপস্থিতদের অনেকে ‘আহসান্ত’ (শাবাশ) বলে তার কথা সমর্থন জানাতে থাকেন। সম্মেলনের সভাপতি ‘মুহসিন আত-তুরকি’ ইউসুফ আদিসের প্রতিবাদের জবাব দিতে গিয়ে বলেন : আমরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। আপনার মন্তব্য এ সম্মেলনের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা!
এর ধারাবাহিকতায়, আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রায় ১০ জন সমাপনী বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করেন। তাদের অর্ধেকেরও বেশী ইউসুফ আদিসের কথারই পূনরাবৃত্তি করেছেন। তারা এ সময় জায়নবাদী ইসরাইলের অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এ সম্মেলনের উদ্যোক্তা ও আয়োজনে সহযোগিতাকারীদের প্রতি আহবান জানান।
জর্ডানের সাবেক ওয়াকফ মন্ত্রী ও ইসলামি ফিকাহ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ‘ড. আব্দুস সালাম দাউদ আল-ইবাদি’ বলেন : আমি ইউসুফ আদিসের মন্তব্যের সমর্থন জানাই। ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের উচিত ফিলিস্তিনের বিষয়ে তাদের কর্তব্যের উপর আমল করা।
মক্কা সম্মেলনের সমাপনী বিবৃতির বড় অংশ জুড়ে ছিল সৌদি বাদশ ‘কিং সালমান’ ও সৌদি গ্রান্ড মুফতি ‘আব্দুল আযিয আলুশ শাইখে’র প্রশংসা। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, সন্ত্রাসবাদ দমনে সৌদি আরবের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে এতে (!) এবং এ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ দমনে অন্য দেশের উচিত সৌদি আরবকে ফলো করা!!
উল্লেখ্য, সৌদি আরব থেকে রপ্তানীকৃত ওয়াহাবি চিন্তাধারা থেকে উত্সারিত তাকফিরের (অন্যকে কাফের আখ্যায়িত করা) আগুনে পুড়ছে গোটা বিশ্ব। এমতাবস্থায় স্বয়ং সৌদি আরবই ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী’ এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে! গত রোববার ২২ ফেব্রুয়ারী মক্কায় সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এতে মিসরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড মুফতি ‘ড. আহমাদ তাইয়্যেব, সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ‘আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ এবং সৌদি আরবের রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিন্তাবিদগণ অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পক্ষ থেকে একটি টিমও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। মক্কার আমির ‘খালেদ আল-ফায়সাল বিন আব্দুল আযিয’ সৌদি বাদশার বার্তা এ সম্মেলনে পাঠ করে শোনান।
আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড মুফতির বক্তব্যে সালাফিদের উদ্ভট, বানোয়াট ও জাল রেওয়ায়েতের স্পষ্ট সমালোচনা ছিল এ সম্মেলনের ইতিবাচক দিক এবং সৌদি রাজবংশ ও মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের বংশের প্রশংসার মাহফিলে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ছিল এর অন্যতম নেতিবাচক দিক।
বলাবাহুল্য, সম্মেলনের উদ্যোক্তা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ, ইসলাম প্রচারে তত্পর বিশ্বের ইসলামি সংস্থামূহের অন্যতম বৃহত সংস্থা হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে তত্পর থাকা এ সংস্থাটি বিশ্বে সালাফি চিন্তাধারার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে সংস্থাটি ওয়াহাবিদের কবলেই রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় পবিত্র মক্কা শহরে অবস্থিত। সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি –সাধারণত যাকে আলুশ শাইখ পরিবার ও মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবে’র সন্তানদের মাঝ থেকে নির্বাচিত করা হয়- এ সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন।#