আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) : আজ (বৃহস্পতিবার) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মহান বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনি (রহ.)’র ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ ইমামের মাজার প্রাঙ্গনে বিশাল সমাবেশ হয়েছে। এ সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি। তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)’র ব্যক্তিত্ব ও চিন্তা-দর্শন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন- ইমাম খোমেনি (রহ.)’র চিন্তা-দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা। তিনি বলেন- ইমাম খোমেনি (রহ.) তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে, আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শয়তান। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে ইরানি জাতি শত্রুদের নানা হুমকি ও অবরোধ সত্ত্বেও ইমাম খোমেনি (রহ.)’র চিন্তা-বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শ আকড়ে ধরে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইমাম খোমেনি (রহ.) সব সময় নিজের অধিকার রক্ষা এবং জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের মজলুম জাতি তথা গোটা বিশ্বের মুসলমানদের অধিকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে গেছেন।
ইমাম খোমেনি (রহ.) ছিলেন এমন একজন নেতা যিনি প্রকৃত ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুদের ষড়যন্ত্রের ভবিষ্যত রূপরেখা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। তিনি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রকৃতি সবার কাছে স্পষ্ট করেছে। মার্কিন মদদপুষ্টরা যে ইসলামের কথা বলে সেটার সঙ্গে যে প্রকৃত ইসলামের কোনো মিল নেই তা তুলে ধরেছেন ইমাম খোমেনি (রহ.)। ইসলাম ধর্মের নামে যারা সাম্রাজ্যবাদের গোলামি করছে তাদের মুখোস উন্মোচন করেছেন তিনি। এর ফলে গোটা বিশ্বের মুসলমানেরাই ইসলাম ধর্মের প্রকৃত বার্তা সম্পর্কে সচেতন হয়েছে।
শত্রুদের ষড়যন্ত্রের গতি-প্রকৃতি উপলব্ধির মাধ্যমে তিনি মুসলিম বিশ্বের চিন্তাবিদদেরকে গোঁড়ামিপূর্ণ চিন্তার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলে গেছেন, যারা মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নির নামে অনৈক্য সৃষ্টি করে তারা শিয়াও নয়, সুন্নিও নয় বরং সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল।
কারণ তিনি জানতেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও মাজহাবগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টির মাধ্যমেই সবচেয়ে মারাত্মক আঘাত হানার চেষ্টা করবে। বাস্তবে সে পথেই এগোচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতিই তার প্রমাণ। সৌদি সরকারের মতো কিছু আঞ্চলিক সরকার মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির পরিবর্তে প্রতিনিয়ত ধর্মীয় ও মাজহাবগত বিরোধ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি ইরানি জাতির বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদের অব্যাহত শত্রুতার কারণ তুলে ধরে আজ বলেছেন, শত্রুরা ইরানের বিপ্লব ও ইসলামি শাসন ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চায়।
শত্রুদের নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের তথা বিশ্বের মজলুম জাতিগুলোর অধিকার রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বলদর্পিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আজ আরও বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেমন আইএসআইএল’র অপরাধ ও নৃশংসতার বিরোধিতা করছে ঠিক তেমনি আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ওপর মার্কিন পুলিশের হিংস্র আচরণের বিরোধী। একইসঙ্গে ইরান গাজায় ইহুদিবাদীদের জুলুম ও অবিচার এবং বাহরাইনে জনগণের ওপর দমন-পীড়ন ও ইয়েমেনে বোমা বর্ষণ তথা আগ্রাসনের বিরোধী।
বিপ্লব পরবর্তী গত ৩৭ বছরের ইতিহাসে ইরানের রাজনীতিতে সব সময় জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ছিল। এ সময়ের মধ্যে ৩০টির বেশি নির্বাচন হয়েছে এবং প্রতিটি নির্বাচনেই বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে বর্তমান যুগে ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতাই ফুটে ওঠেছে। ইমামের মৃত্যুর পর ২৭ বছর পার হলেও তার রাজনৈতিক চিন্তা-দর্শনের গুরুত্ব হ্রাস পায়নি বরং ক্রমেই তা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইমাম খোমেনি (রহ.)’র চিন্তা-দর্শনের আলোকে আজ দেশে দেশে ইসলামি জাগরণের সূচনা হচ্ছে।#
source : abna