বাঙ্গালী
Monday 2nd of September 2024
0
نفر 0

'সর্বোচ্চ নেতার চিঠি ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো'

বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. আহসান হাবীব ইমরোজ বলেছেন, পশ্চিমা যুব সমাজকে উদ্দেশ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর চিঠি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। চিঠিটি যেন ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
'সর্বোচ্চ নেতার চিঠি ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো'


বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. আহসান হাবীব ইমরোজ বলেছেন, পশ্চিমা যুব সমাজকে উদ্দেশ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর চিঠি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। চিঠিটি যেন ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।


 
 
তিনি বলেছেন, বস্তবাদি সভ্যতার সমস্ত সংকটের সমাধান রয়েছে ইসলাম। ইরানের রাহবার সেদিকেই যুবসমাজকে আহবান করেছেন। আমি মনে করি এর একটি যুগান্তকারী প্রভাব অবশ্যই থাকবে।
 
 
 
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন গাজী আবদুর রশীদ। পুরো সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো।
 
 
 
রেডিও তেহরান: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী পশ্চিমা যুব সমাজকে উদ্দেশ করে একটি বাণী দিয়েছেন। এতে তিনি ইসলাম থেকে পালিয়ে না গিয়ে বরং যুব সমাজকে ইসলাম বোঝার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ আহ্বান কতটা সময়োপযোগী?

 
 
ড. আহসান হাবীব ইমরোজ: আমি আমার আলোচনার শুরুতে রেডিও তেহরানের কোটি কোটি শ্রোতা এবং এই মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের প্রতি জানাই রাসূল (সা.) শেখানো সর্বোত্তম সম্ভাষণ আসসালামু আলাইকুম।
 
 
 
পশ্চিমা যুব সমাজকে উদ্দেশ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর চিঠি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। চিঠিটি যেন ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। কেননা মুসলিম সমাজ প্যারিসের ঘটনায় কিছুটা হীনমন্যতা হতচকিত ছিলেন। তারা যে মস্ত ষড়যন্ত্রের শিকার তা অনুধাবন করেছেন। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে যে বিদ্বেষ তৈরি হয়েছিল তারা এই চিঠির মাধ্যমে নতুনভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে।
 
 
 
ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া বা ইসলামকে ভুল বোঝার যে মানসিকতা পশ্চিমাদের রয়েছে তারা যদি সেখানেই থাকে তাহলে তারা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ইসলাম তাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আর সামগ্রিক বিচারে আমি মনে করি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার চিঠি পশ্চিমা যুবসমাজসহ বিশ্ব যুবসমাজের কাছে পূর্ণিমার চাঁদের মতো ভাস্বর হয়ে থাকবে।
 
 
 
রেডিও তেহরান: সর্বোচ্চ নেতা তার বাণীর শুরুর দিকে বলেছেন, পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও সরকারের নেতারা সচেতনভাবে রাজনীতির পথকে ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে আলাদা করে রেখেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার এই বক্তব্য কতটা বাস্তব?
 
 
 
ড. আহসান হাবীব ইমরোজ: ইরানের রাহবারের বক্তব্য বাস্তবসম্মত। কেননা আমরা লক্ষ্য করেছি ১৯৯২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পরই একটা শূন্য জায়গা তৈরি হয়। আর সেই শূন্য জায়গাটা পূরণ করার জন্য একটা ফরমায়েশি থিসিস আকারে Clash of civilization বা হান্টিংটনের 'সভ্যতার সংঘাত'-এর বিষয়টি আমাদের সামনে আসে। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের সামনে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত তথ্য তুলে ধরা হয়। তা থেকে এটা বোঝানো হয় যে, মুসুলমানরাই তাদের মূল শক্র। আর সেই মিথ্য তত্ত্ব ও তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে তারা ইসলামকে টার্গেট করে। আর সেই টার্গেটের ফলাফল পরে আমরা লক্ষ্য করেছি ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এখন সারা বিশ্বে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
 
 
 
শুধু তাই নয়, পশ্চিমা বিশ্ব রাজনীতি থেকে ন্যায়-নীতিকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তবে বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখি পাচঁশ'/হাজার বছর আগে পশ্চিমাদের তেমন কিছু ছিল না। তারা গোসল করতে জানত না, সাবানের ব্যবহার জানত না। তারা প্রাচ্য থেকে এসব শিখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজ তারা সেই প্রাচ্যকে লুণ্ঠনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এডওয়ার্ড সাইদ কিংবা নোয়াম চমস্কির লেখায় তাদের সেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশাগুলো আমরা বুঝতে পারি।
 
 
 
রেডিও তেহরান: আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মুসলিম বিশ্বের একজন অভিভাবক হিসেবে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিশ্বের যুব সমাজের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
 
 
 
ড. আহসান হাবীব ইমরোজ: আমি মনে করি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণী বিশ্বের যুব সমাজের ওপর যুগান্তকারী প্রভাব ফেলবে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর বয়স এখন ৭৫। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব রাজনীতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার সেই পর্যবেক্ষণ টেবিলে, লাইব্রেরিতে বা মঞ্চে বসে নয়; সরাসরি তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছয়বার জেল খেটেছেন। বিপ্লব পরবর্তীকালে এক বোমা হামলায় আহত হয়েছিলেন। রাজনীতির চিরায়ত যে পদ্ধতি সেটাকে তিনি গভীরভাবে অধ্যায়ন করেছেন। যার ফলে 'forbes' নামক পত্রিকায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীকে বিশ্বের ২১তম ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
 
 
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নরম ভাষায় যে চমৎকার বাণী দিয়েছেন আমি মনে করি পশ্চিমা যুব সমাজ তার সে বাণী গভীরভাবে উপলব্ধি করবে। কারণ সাম্য ও আত্মার প্রশান্তির জন্য এ চিঠির মর্মবাণী খুবই সময়োপযোগী। শুধু তাই নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ইসলামে। যে সমাধান ইসলামে রয়েছে তা বস্তুবাদি সভ্যতা কখনও দিতে পারবে না। আর ইরানের রাহবার সেদিকেই যুব সমাজকে আহবান করেছেন। আমি মনে করি এর একটি যুগান্তকারী প্রভাব অবশ্যই থাকবে।
 
 
 
রেডিও তেহরান:  সর্বোচ্চ নেতা তার বাণীতে সত্যিকার ইসলামকে বোঝা এবং তা অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যখন ইসলামের নামে আইএসআইএল, আল-কায়েদা, তালেবান ইত্যাদি নানা জঙ্গি সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে তখন তিনি এ আহ্বান জানালেন। আসলে ইসলামের সঙ্গে এসব সংগঠনের সম্পর্ক কতটা?
 
 
 
ড. আহসান হাবীব ইমরোজ: দেখুন! ইসলামের মহান বাণীকে কোনঠাসা করার জন্য, বিতর্কিত করার জন্য, পশ্চিমা নেতারা বারবার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কাছে যেহেতু ইসলামকে মোকাবেলা করার তেমন কোনো শক্তি নেই তাই তারা নানারকম ষড়যন্ত্রের সাহায্য নিয়েছে। আজকের এই আলকায়েদা প্রতিষ্ঠার সাথে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা সম্পৃক্ত ছিল। রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তাদের মোকাবেলায় আল কায়েদাকে তৈরি করেছে এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমেরিকা। পরবর্তীতে যখন আল কায়েদার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তখনই আল কায়েদাকে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে সাব্যস্ত করে ওই আমেরিকা। তারপর শুরু করে নতুন খেলা। তারা আল কায়েদা নিধনের নামে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ লুণ্ঠনের পাঁয়তারা করেছে। যারা গভীরভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের সবার জানা থাকার কথা।
 
সুতরাং আল কায়েদা, আইএসআইএলসহ এ ধরণের যেসব সংগঠন তৈরি হয়েছে তাদের সবার কাজ ইসলামকে বিতর্কিত করা। এ ব্যাপারে ফিডেল ক্যাস্ট্রোসহ বিশ্ব নেতারা যেসব কথা লিখেছেন তাতে আমেরিকার গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ আছে। তাদের সেসব লেখায় বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের নানা ঘটনায় আমেরিকা এবং ইহুদি লবির হাত রয়েছে। তারা ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য, সাধারণ মুসলমানদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এবং নরম মনের প্রাচ্যের যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা ইসলামের নামে বিকৃত এবং বীভৎস চিত্র তুলে ধরছে। যাতে করে এসব মানুষ ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারণা নিয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়। আমার মনে হয় রাহবারের চিঠির মাধ্যমে ভ্রান্তির বেড়াজাল কাটবে। যুব সমাজ নতুন করে ইসলাম শেখার জন্য কুরআন ও হাদিসের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবে।
 
    
 
রেডিও তেহরান: অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সর্বোচ্চ নেতার বাণী ইসলাম ও পশ্চিমা যুব সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। আপনার কি তাই মনে হয়?
 
 
 
ড. আহসান হাবীব ইমরোজ: ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণী ইসলাম ও পশ্চিমা যুব সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে বলে আমি মনে করি। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমান সভ্যতার অনেক কিছুর দাবিদার হলেও তারা সাম্য, শান্তি ও সমৃদ্ধির দাবিদার কখনও ছিল না বা হতে পারিনি। যারফলে তাদের একটা বিখ্যাত বইয়ের নাম হচ্ছে 'লা মিসারেবল'। বইটিতে মানুষের অভ্যন্তরণীর ক্রটি বিচ্যুতি, মানুষে মানুষে বিদ্বেষের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আর এসব বিদ্বেষ, অশান্তি ক্রটি বিচ্যুতির অবসান ঘটিয়ে শান্তি এনে দিয়েছে ধর্ম। অপর একটি বই 'আঙ্কেলস টম কেবিন'। এতে দাস প্রথার বিভৎস চেহারা তুলে ধরা হয়েছে। একজন সাধারণ দাস তার আত্মার প্রশান্তি দিয়ে সমাজকে আলোকিত করতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে ওই বইয়ে।
 
 
 
আসলে পশ্চিমারা কখনই সমাজ বিনির্মাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারেনি। কাজেই আমি মনে করি বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাহবারের চিঠির মাধ্যমে পশ্চিমা যুব সমাজ একটি সেতুবন্ধন খুঁজে পাবে। তারা দুনিয়ার সমৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মার প্রশান্তি এবং আখেরাতের মুক্তির ঠিকানা পাওয়ার জন্য ইসলামের কাছে আসবে। গত ফুটবল বিশ্বকাপের সময় প্রায় এক ডজন তরুণ ফুটবলার ইসলাম কবুল করেছে। পশ্চিমা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মেয়ে ইসলাম কবুল করছে। কাজেই তরুণরা তাদের নরম মনে ইসলামকে ঠাঁই দিচ্ছে। আর এতেই তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তারা পাগল হয়ে গেছে। আর তাদের সেই পাগলামির ফসল হচ্ছে নানারকম ষড়যন্ত্র।
 
 
 
আমরা লক্ষ্য করেছি বিশ্বের সুখি দেশগুলোর যে তালিকা করা হয়েছে তাতে বিশ্বের মোড়ল হিসেবে খ্যাত আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশগুলো সিরিয়ালে ৩৫/৪০ এর আগে আসতে পারেনি। তাদের মধ্যে শান্তি নাই। আর তাই শান্তির জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের দিকে আসবে। আর আমরা সেই প্রত্যাশা করি, ইসলাম একদিন সারাবিশ্বে একমাত্র ধর্ম হিসেবে একমাত্র আদর্শ হিসেবে প্রতিভাত হবে। আর তাতেই রাহবারের চিঠির স্বার্থকতা প্রমাণিত হবে।#


source : irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আগ্রাসন অব্যাহত; সৌদি ঘাঁটিতে ...
ইসরাইলকে দিয়ে ইয়েমেনে ২ নিউট্রন ...
আযানের মধুর ধ্বনিতে মুসলমান হলেন ...
পাকিস্তানে তত্পর আইএসআইএল ; ...
অবশেষে আত্মসমর্পণ করলেন পুজদেমন
৪১৮ যাত্রী নিয়ে প্রথম হজ্ব ফ্লাইট ...
পাকিস্তানের কুয়েত্তা শহরে ...
বাহরাইন সরকারকে অবশ্যই ...
সামেরা শহরে ৫ বিস্ফোরণ ; বদর ...
ইয়েমেনের জনগণের সমর্থনে লন্ডনে ...

 
user comment