আবনা ডেস্ক : আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, অনৈক্যের কারণেই মুসলমানেরা আজ নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং ইহুদিরা মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে রাখার সাহস পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিয়া-সুন্নিসহ সব ধরনের মতভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ ‘আল-কুদসের মুক্তি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সাম্প্রতিক অন্তরায়সমূহ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও আল কুদস কমিটির সভাপতি ড. শাহ কাউছার মুস্তফা আবুলউলায়ী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক ধর্মমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আল আজাদ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত হাফেজ মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর, মজিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, ইমাম হোসাইন অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান মাওলানা সাইয়্যেদ আফতাব হোসেন নাকাভী, আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ শওকত হোসেন, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক জামালউদ্দিন বারী প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মুনিম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আল কুদস কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, ইহুদিরা বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে রেখেছে। তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহতভাবে নির্যাতন ও হত্যা করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। তবে এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্ব ঐকমত্য রয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ইহুদিরা অথচ সুদীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে ইহুদীরা জবরদখল করে রেখেছে। অসহায় ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ তাদের আবাসভূমি ও আল-কুদস তথা বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে ইসরাইল গাযায় ২২ দিন ধরে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েও হামাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারেনি। হামাসের পাল্টা আক্রমণে ইসরাইলের মনোবলে ফাটল ধরে এবং তারা হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ছয় দিনের যুদ্ধেও তারা ফিলিস্তিনিদের কাবু করতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনী বায়তুল মুকাদ্দাস দখলের প্রতিবাদে প্রতি বছর রমজান মাসে আল কুদস দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সব ভেদাভেদ ভুলে মুসলমানেরা যাতে তাদের প্রথম কেবলা উদ্ধারে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন এটাই ছিল তার প্রত্যাশা। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব নানা মতভেদে বিভক্ত থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আমাদের আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা হলেই বিজয় অর্জন করা সম্ভব হবে।
নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, ইসরাইল পাশ্চাত্যের ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছে। ইহুদিবাদী ও তাদের দোসররা ফিলিস্তিনিদের নির্মমভাবে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। এত মুসলিম রাষ্ট্র থাকতেও আমরা এর প্রতিরোধ করতে পারছি না। কারণ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই।
তিনি বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদিদের কব্জা থেকে উদ্ধার করতে হলে আগে মুসলমানদের আত্মসমালোচনা করতে হবে। মতপার্থক্য থাকলেও নিজেদের মধ্যে সমিতির আকারে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।
ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের কারণেই আজ এত দুর্দশা সৃষ্টি হয়েছে। কুরআন হাদিস থেকে সরে যাওয়ার কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, আইএসআই, তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও একইভাবে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস সব মুসলমানের কাছে প্রিয়। এটি মুসলমানদের হক। কিন্তু ইহুদিরা দীর্ঘ সময় থেকে এটি দখল করে রেখেছে। আর সারা বিশ্বের মুসলমান চুপ করে বসে রয়েছে। এটি মেনে নেয়া যায় না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শাহ কাউছার মুস্তফা আবুলউলায়ী বলেন, মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ওআইসিকে ভূমিকা রাখতে হবে। ভাই-ভাইয়ের মধ্যের সঙ্ঘাত বন্ধ করে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।#
source : abna