বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

হযরত ইমাম হাদি (আ.) ছিলেন একজন পরিপূর্ণতম মানুষ

সমস্যা সংকুল এই পৃথিবীতে মানব জাতিকে যারা সঠিক পথের দিশা দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে ইমামগণ অন্যতম। আহলে বাইতের ইমামগণ ছিলেন আল্লাহ মনোনীত, তারা প্রত্যেকেই পরিপূর্ণতম মানুষ। তাঁদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, তাঁদের মন-মানসিকতা, পবিত্র জীবনাদর্শ ও উন্নত মানবিক সত্ত্বাই তা প্রমাণ করে। ইমাম হাদি (আ.) ও ছিলেন এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব।
হযরত ইমাম হাদি (আ.) ছিলেন একজন পরিপূর্ণতম মানুষ

সমস্যা সংকুল এই পৃথিবীতে মানব জাতিকে যারা সঠিক পথের দিশা দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে ইমামগণ অন্যতম। আহলে বাইতের ইমামগণ ছিলেন আল্লাহ মনোনীত, তারা প্রত্যেকেই পরিপূর্ণতম মানুষ। তাঁদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, তাঁদের মন-মানসিকতা, পবিত্র জীবনাদর্শ ও উন্নত মানবিক সত্ত্বাই তা প্রমাণ করে। ইমাম হাদি (আ.) ও ছিলেন এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব।
 
 
 
আহলে বাইতের অন্যান্য ইমামের মতো হাদি (আ.) ও ছিলেন রহমতের খনি, জ্ঞানের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এবং হেদায়েত ও পরহেজগারির মূল কাঠামো। তিনি সব সময় হাসিখুশি থাকতেন। প্রশান্ত চিত্তের অধিকারী ইমাম হাদি (আ.)‘র চাল-চলন ও আচার-আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করতো। তিনি খুব সাধারণ পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতেন। ইমামের পোশাক ও জায়নামাজ দেখলেই বোঝা যেত যুগের সর্বোত্তম এই ব্যক্তি কতটা সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইবনে শাহ্‌র অশুব, ইমাম হাদি (আ.)  সম্পর্কে বলেছেন, হযরত হাদি ছিলেন একজন পরিপূর্ণতম মানুষ। তিনি যে নবী পরিবারের সন্তান সেই ঐশ্বর্য তাঁর চেহারায় জ্বলজ্বলে ছিল, কেননা তিনি ছিলেন রেসালাতের বৃক্ষেরই ফল এবং নবীজীর খান্দানেরই মনোনীত।
 
 
 
পৃথিবীর অনেক ঘটনাকে আপাত দৃষ্টিতে অকল্যাণকর বলে মনে হলেও তা যে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে, সে কথা ইমামের বক্তব্যে সব সময় স্পষ্ট ছিলো।
 
 
 
একদিন খুব জটলার মধ্যে আহত এক ব্যক্তির জামা হঠাৎ পাশের একটা শক্ত স্থানে আটকে গিয়ে ছিড়ে গেলো। লোকটির মন-মেজাজ এমনিতে খারাপ ছিলো, জামা ছিড়ে যাওয়ায় তিনি আরও মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। তাই তিনি বলে উঠলেন, "আজ দিনটাই খারাপ"। পাশেই ইমাম হাদি(আ.)  ছিলেন। তিনি ঐ ব্যক্তির মন্তব্য শুনে নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? ঐ ব্যক্তি ইমামের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বললেন। ইমাম সব শুনে বললেন, আল্লাহতায়ালা কোন দিনকেই খারাপ করে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ মানুষকে তার কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত করবেন। ইমামের কথা শুনে ঐ ব্যক্তি তার ভুল বুঝতে পারলো। সে উপলব্ধি করলো, যা ঘটছে তা হয়তো এমন কোন কারণে ঘটানো হচ্ছে, যা চূড়ান্ত কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
 
 
 
ইমাম হাদি (আ.)’র জীবনকালে মুতাওয়াক্কিলসহ আব্বাসীয় খলিফাদের বেশ কয়েকজনের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছে। চিন্তা ও রাজনৈতিক দিক থেকে সেই সময়টা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। সমাজে শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
 
 
 
শাসক গোষ্ঠী ইমাম হাদি (আ.)‘র অস্তিত্বকে মেনে নিতে পাচ্ছিল না। একবার স্বৈরাচারী আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিলের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর ইমাম হাদি (আ.)‘র বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করলো। খলিফার কাছে আরও বেশি প্রিয় হবার বাসনায় ঐ ব্যক্তি বললো, ইমাম হাদি তার বাসায় অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে এবং তিনি খলিফা মুতাওয়াক্কিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। খলিফা নিরাপত্তা বাহিনীকে ইমামের বাড়ী-ঘর তল্লাশির নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তারা ইমামের বাড়ীতে অস্ত্র খুঁজে না পেয়ে ইমামকে ধরে নিয়ে গেলো। অবশ্য অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মুতাওয়াক্কিল ইমামকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এ ধরনের যেনতেন অজুহাতে ইমামকে হয়রানি করা হয়েছে, কষ্ট দেয়া হয়েছে।
 
 
 
এসব কারণে আব্বাসীয় শাসনের যুগ যতোই অতিক্রান্ত হচ্ছিল ততোই শাসকদের সম্মান ও মর্যাদা হ্রাস পাচ্ছিল। তাদের মর্যাদা হ্রাস পাবার পেছনে কারণ ছিল-সমাজে তাদের দুর্নীতি এবং তাদের শাসক হবার যোগ্যতাহীনতার ব্যাপারে জনতার মুখে মুখে রব ওঠা-যার ফলে মানুষ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।
 
 
 
অন্যদিকে,নতুন নতুন চিন্তাধারা আর বিকৃত বিশ্বাসের প্রচলনের কারণে মানুষের চিন্তারাজ্যে এবং বোধ ও বিশ্বাসে ভয়াবহ বিকৃতি জেঁকে বসেছিল। ইমাম হাদি (আ.) যদি এই দুঃসময়ে ইসলামের উন্নত নীতি-নৈতিকতার চর্চা ও বিকাশ না ঘটাতেন,তাহলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও নীতিমালাগুলো বিচ্যুতিতে ডুবে যেত। ইমাম হাদি (আ.) শুরুতে মদিনায় বসবাস করতেন। মদিনা ছিল মুসলিম বিশ্বের জন্যে ইসলামী বিধি-বিধান এবং জ্ঞানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর ইমাম জ্ঞানের এই কেন্দ্রটি পরিচালনা বা এর নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন।
 
 
 
মুতাওয়াক্কিলের শাসনামলে ইমাম হাদি (আ.)  বাধ্য হয়েছিলেন মদিনা ছেড়ে সামেরায় বসবাস করতে। কেননা মুতাওয়াক্কিল জনগণের মাঝে ইমাম হাদি (আ.)‘র প্রভাব প্রতিপত্তিকে ভয় করতো। তাই সে চাইতো ইমামকে জনগণের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে। এ কারণেই ইমামকে সে সামেরায় অর্থাৎ মুতাওয়াক্কিলের হুকুমতের কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সামেরা শহরেও ইমাম হাদি (আ.) কে লোকজন স্বাগত জানায় এবং মুতাওয়াক্কিল শত চেষ্টা চালিয়েও ইমামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা হ্রাস করতে পারেনি। ইমামের জনপ্রিয়তা হ্রাসের জন্য মুতাওয়াক্কিল নানা কৌশল ব্যবহার করেছ। একদিন মুতাওয়াক্কিলের নির্দেশে ইমাম হাদি (আ.)  কে এমন একটা মজলিসে আনা হলো যেখানে অনেক ধনীলোক এবং রাজদরবারের লোকজন উপস্থিত ছিল।
 
 
 
মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদি (আ.)  কে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বললো। ইমাম প্রথমে এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু মুতাওয়াক্কিল ব্যাপক পীড়াপীড়ি করে। অবশেষে ইমাম মজলিসের অবস্থা এবং সেখানে উপস্থিত লোকজনের বিষয়টি বিবেচনা করে অত্যাচারী শাসকদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতামূলক একটি কবিতা পড়েন। মানুষ সে যত বড় শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারীই হোক না কেন,তাকে যে মৃত্যুর কাছে পরাজয় মেনে নিতেই হবে, সে কথা ইমাম কবিতার ছন্দে উপস্থিত সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কাজেই ইমামের অর্থবহ ও শক্তিশালী বক্তব্য মজলিসে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয় এমনকি স্বয়ং স্বৈরাচারী শাসক মুতাওয়াক্কিলও ইমামের কবিতার বক্তব্যে আন্দোলিত হয়। অন্য একদিন মুতাওয়াক্কিল এক বিতর্কের আয়োজন করে। ইমামের সাথে বিতর্কের জন্য সে যুগের দুই বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তি ইয়াহিয়া বিন আকসাম ও ইবনে সেক্কিতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইয়াহিয়া বিন আকসাম প্রথমেই ইমামকে রাসূলদের মোজেজার ভিন্নতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। ইয়াহিয়া আকসাম বলেন, রাসুলদের মোজেজাগুলোর মধ্যে পার্থক্যের কারণ কি? মুসা (আ.) ‘র মোজেজা কেন লাঠি, ঈসা (আ.) ‘র মোজেজা কেন মানুষকে রোগমুক্ত বা পুনরুজ্জীবিত করা, আর কেনবাই হযরত মোহাম্মদ (আ.) র মোজেজা ছিলো কোরান?
 
 
 
ইমাম হাদি (আ.)  উত্তরে বললেন, মূসা (আ.) ‘র মোজেজা ছিলো লাঠি কারণ সে যুগের সমাজে জাদুর প্রভাব ছিলো সবচেয়ে বেশি। কাজেই মূসা (আ.)  তার লাঠি দিয়ে অন্য সকল জাদুকরের জাদুকে অস্তিত্বহীন করে দিয়ে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। ঈসা(আ.) ‘র মোজেজা ছিল বিশেষ রোগে আক্রান্ত রোগীদের রোগমুক্ত করা বা মৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জীবিত করা,কারণ সে সময় চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল, তা সে যুগের মানুষকে বিস্মিত করেছিল। সে কারণে ঈসা (আ.)  আল্লাহর নির্দেশে মৃত মানুষকে জীবিত করে এবং দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে তুলে মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতার কিয়দংশ প্রদর্শন করেছেন। আর হযরত মোহাম্মদ (সা:)র সময় কবিতা ও সাহিত্য মানুষের চিন্তা-চেতনায় প্রাধান্য বিস্তার করেছিল সে কারণে তিনি তার মোজেজা পবিত্র কোরানের মাধ্যমে তাদের চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তার করেন এবং নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারু ভাবে পালন করেন। ইমামের এই উত্তর শুনে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হয়। এরপর ইবনে সেক্কিত ইমামকে প্রশ্ন করেন। ইমাম ধৈর্যের সাথে সেসব প্রশ্নেরও উত্তর দেন এবং ঐ বিতর্কে বিজয় লাভ করেন।
 
 
 
ইমামের উপস্থিতিতে এ ধরনের প্রতিটি বিতর্কই পরিণত হতো মানুষের জন্য মূল্যবান শিক্ষার আসর। কাজেই ইমামের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই আরও বাড়তে থাকে। ফলে আরও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে আব্বাসীয়রা। এরই এক পর্যায়ে আব্বাসীয় খলিফার নির্দেশে ইমামকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। ইমামের শাহাদাতের খবরে গোটা মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। ইমাম হাদি (আ.)‘র জানাজা নামাজে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। ইরাকের সামেরায় অবস্থিত ইমাম হাদি (আ.)‘র মাজারে আজও প্রতিদিনই মানুষের ঢল নামে। মুসলমানরা মাজারে গিয়ে আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করে, অনুপ্রাণিত হয় রাসূল ও তার আহলে বাইতের পথ অনুসরণ করতে। আমরা সবাই ইমাম হাদি (আ.)‘র জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো-এই প্রত্যাশা রইল। #


source : irib
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে ...
কোমে হযরত ফাতেমা মাসুমার (আ.) জন্ম ...
শ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমাতুয ...
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
Apabila ada sebagian hukum Islam yang nampaknya bertentangan serta kontradiktif dengan ...
আবতার কে বা কা’রা?
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কতিপয় খুতবা ও ...
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...
ইহুদি ধর্ম

 
user comment