২১ নভেম্বর (রেডিও তেহরান): মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের 'প্রাণভিক্ষা'র আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ।
আজ (শনিবার) রাত পৌনে ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বাঁচার সর্বশেষ পথটিও বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান জানিয়েছেন, আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর হবে।
প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রাত সোয়া ৮ বঙ্গভবনে যান। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তারা সেখানে অবস্থানরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রেসিডেন্টের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকেঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও মো. আরিফ আবেদন দু টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মুহম্মদ জহিরুল হক প্রাণভিক্ষার ফাইলটি সচিবালয় থেকে আইনমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আবেদন দু টি নিয়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে তা প্রেসিডেন্টের দফতরে নিয়ে যান আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে কারাগারে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দু’জন হলেন- আশরাফ হোসেন ও তানভীর আহমেদ। তাদের কাছেই মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।
মুজাহিদ পরিবার ও জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
তবে মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই জাহান বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে মুজাহিদের প্রাণ ভিক্ষার যে প্রচার ও প্রকাশিত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মুজাহিদে ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেছেন, "তার বাবার প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আইনজীবীর সাথে কথা বলার আগে কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে তিনি আমাদের আগেই জানিয়েছিলেন। আমি মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।" জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।
প্রাণভিক্ষার আবেদন অবিশ্বাস্য: হুম্মাম
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, বাবা প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন এটা বিশ্বাস হয় না।
শনিবার বিকেলে বঙ্গভবনে দুই পৃষ্ঠার আবেদনপত্র নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যান হুম্মাম। তখন সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আবেদনপত্রে কী লেখা আছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হুম্মাম কাদের বলেন, তিনি (রাষ্ট্রপতি) যেন এটিকে মিস ট্রায়াল হিসেবে ঘোষণা দেন। যেন তার অ্যালিবি (Aibi) সাক্ষীর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে কোর্টে যাতে তাদের সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। প্রামাণিক দলিল গ্রহণ করা হয় এবং স্বচ্ছভাবে সত্যতা যাচাই করা হয়।
আবেদনপত্র প্রেসিডেন্ট গ্রহণ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো আবেদন সরাসরি রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেন না। তিনি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনটি পাঠাতে বলেছেন। কোন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে তা বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়নি উল্লেখ করে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, সম্ভবত আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
সালাউদ্দিন মার্সি পিটিশন করবেন না: গয়েশ্বর
এর আগে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘উনি মার্সি পিটিশন করবেন না বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ওনার স্ত্রী ও ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছি, উনি মার্সি পিটিশন করুক বা না করুক, ওনার পক্ষে আপনারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা? তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা মার্সি চান না, মার্সি পিটিশন চান না। শুধু আন্তর্জাতিক মহলে এ মামলার ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে যে কথা প্রকাশ হয়েছে, সে বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করতে চান।’
এসময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তার স্বামী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবার অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার। আজই এই চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেবেন তারা।
'২১ আগস্ট মামলা থাকায় দণ্ড কার্যকর হলে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন'
এদিকে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই জাহান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে সাংবিধানিক অভিভাবক মনে করেন আমার স্বামী। তার কাছেই সুবিচারই পাওয়া যাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
আজ শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মুজাহিদের স্ত্রী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় যদি অন্য কোনো মামলায় মুজাহিদের দণ্ড কার্যকর হয় তাহলে তা নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন হবে বলে যুক্তি দেখান।
সংবাদ সম্মেলনে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই জাহান বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ এখন শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় আলী আহসান মুজাহিদের বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে মামলাটিতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।
মুজাহিদের স্ত্রী জানান, গত ১৯ নভেম্বর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুজাহিদ জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের রায়ের কপি আসলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আইনি বিষয়ে লিখিতভাবে জানতে চাইবেন যে, ২১ আগস্ট মামলায় তার অবস্থান কী হবে।
লিখিত বক্তব্যে তামান্না-ই জাহান বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকাবস্থায় যদি অন্য কোন মামলায় কারো দণ্ড কার্যকর করা হলে সেটি হবে নাগরিকের অধিকার লংঘন। যেহেতু আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতিকে তার সাংবিধানিক অভিভাবক মনে করেন। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি নিজেই একজন আইনজীবী। তাই মুজাহিদের আইন ও সংবিধানিক অধিকার পেতে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মুজাহিদের স্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তি নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল
এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তার (মুজাহিদের স্ত্রী) এ বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। এক মামলায় দণ্ড কার্যকর হলে তার বিরুদ্ধে আর যে কয়টা মামলাই থাকুক না কেন সেগুলো অকার্যকর হবে। মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে কোনো প্রকার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে বিচারও চলে না।#
source : irib