আবনা ডেস্ক : কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে ইরাকে আজ (বৃহস্পতিবার) পালিত হয়েছে শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ)’র শাহাদতের চল্লিশা বা চেহলামের বার্ষিকী। গতকাল ইরানে পালিত হয়েছে এই মহান আরবাঈন বার্ষিকী।
৬১ হিজরির এই দিনে কারবালার বীরত্বপূর্ণ ট্র্যাজেডির পর ইয়াজিদ-বাহিনীর হাতে বন্দি ইমামের বোন হযরত জাইনাব সালামুল্লাহি আলাইহা ও নতুন ইমাম হযরত জাইনুল আবেদিন (আ.)সহ নবী-পরিবারের সদস্যরা সিরিয়া থেকে মদীনায় ফেরার পথে পবিত্র কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ)’র কবর জিয়ারত করেছিলেন।
অবশ্য এটাও বলা হয় যে বিশ্বনবী (সা)’র বিশিষ্ট সাহাবি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রা)একই দিনে তথা বিশে সফর সর্বপ্রথম ইমাম হুসাইন (আ)’র পবিত্র কবর জিয়ারতের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। তিনি এই উদ্দেশ্যেই মদীনা থেকে কারবালায় এসেছিলেন।
সেই থেকেই এই মহান দিনটির স্মরণে বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অনুরাগীরা শোক-প্রকাশে মশগুল হন এবং শোক মিছিলে অংশ নেন।
এ বছরও বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশের দুই কোটিরও বেশি মুসলমান ইমাম হুসাইন (আ)সহ কারবালার মজলুম মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পবিত্র এই শহরে সমবেত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিদেশী জিয়ারতকারীদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ বলে জানানো হয়েছে এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ হলেন ইরানি। অন্যদিকে ইরাকি জিয়ারতকারীদের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইরানি জিয়ারতকারীদের আপ্যায়নের জন্য ইরাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ইরানের ইসলামী সরকার। উল্লেখ্য, জিয়ারতকারীদের বেশিরভাগই ইরাকি জনগণের পক্ষ থেকে খাদ্য, পানীয় ও আবাসনসহ নানা সেবা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। ইমাম হুসাইনের (আ) প্রতি ভালবাসা এভাবে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও গভীর ভালবাসার বন্ধন গড়ে তুলেছে।
ইরাকে বাথিস্ট সাদ্দাম সরকারের পতনের পর ইমাম হুসাইন (আ)’র শাহাদতের চল্লিশা বা আরবাঈন অনুষ্ঠানে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই সমাবেশে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশে পরিণত হয়েছে।
ইরাকের বসরা, নাজাফ, হিল্লা ও বাগদাদসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পায়ে হেঁটে মুসলমানরা কারবালায় প্রবেশ করছেন এবং এর ফলে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে জনসমুদ্র। নাজাফ থেকে কারবালার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসীদের হামলার হুমকি সত্ত্বেও ইরাকের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আরও দূরের নানা শহর থেকে পায়ে হেঁটে শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কারবালায় পৌঁছেছেন।
এদিকে বাগদাদে আরবাঈনের শোক-প্রকাশকারীদের ওপর তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশের একটি বড় ধরনের হামলার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে ইরাকের একটি বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগ। সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোর জন্য ৫৮টি গাড়িতে বোমা পেতে রেখেছিল।
ইরাকে পাশ্চাত্যসহ বিদেশী মদদপুষ্ট তাকফিরি-ওয়াহাবিদের সন্ত্রাসী হামলার হুমকি সত্ত্বেও ইমাম হুসাইন (আ)’র শাহাদতের চল্লিশা বা আরবাঈন অনুষ্ঠান উদযাপনে দেশটির সেনা ও গণ-নিরাপত্তা বিভাগের সাফল্য এটাই প্রমাণ করেছে যে এই দেশটি নিজেই তার নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম এবং এ জন্য মার্কিন বা বিদেশী সহায়তার মুখাপেক্ষী নয়।
এ ছাড়াও কোটি কোটি মানুষের অংশগ্রহণে এই বিশাল শোক অনুষ্ঠান ও শোক সমাবেশ নিরাপদে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তা পবিত্র হজ পালনের সময় হজযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সৌদি আরবের রাজতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতাকেও আরও বড় করে তুলে ধরেছে।#
source : abna24