সত্তরটি গ্রাম সমেত নাজরান অঞ্চল হিজায ও ইয়েমেন সীমান্তে অবস্থিত। ইসলামের চূড়ান্ত পর্যায়ে আবির্ভাবকালে এ এলাকাটি হিযাজের একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। এ এলাকার অধিবাসীরা বিভিন্ন কারণে মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতা ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।১
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও ধর্মীয় কেন্দ্রসমূহের প্রধানদের কাছে চিঠি-পত্র প্রেরণের পাশাপাশি মহানবী (সা.) নাজরানের আর্চবিশপ আবু হারিসা-এর কাছে ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছিলেন২ :
“ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের প্রভুর নামে, (এ পত্রটি) মহান আল্লাহর নবী মুহাম্মদের পক্ষ থেকে নাজরানের মহামান্য আর্চবিশপের প্রতি। ইসহাক ও ইয়াকূবের প্রভুর প্রশংসা করছি এবং আপনাদের বান্দাদের (গায়রুল্লাহর) উপাসনা থেকে মহান আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। আপনাদেরকে গায়রুল্লাহর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহর আধিপত্যে (বেলায়েত) প্রবেশ করার আহবান জানাচ্ছি। আর যদি আপনারা আমার দাওয়াত গ্রহণ না করেন, তা হলে অন্ততঃপক্ষে ইসলামী সরকারকে কর (জিযিয়া) প্রদান করুন (যে, এ কর প্রদান করার দরুন আপনাদের জীবন ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে)। এর অন্যথা হলে আপনাদের প্রতি সমূহ বিপদ অর্থাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে।”৩
কিছু কিছু শিয়া ঐতিহাসিক সূত্রে আরো বেশি বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী (সা.) আহলে কিতাব-এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঐ আয়াতও৪ পত্রে লিখেছিলেন, যার মধ্যে এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি সবাইকে আহবান জানানো হয়েছে।
মহানবী (সা.)-এর প্রেরিত প্রতিনিধি দল নাজরানে প্রবেশ করে তাঁর পত্র নাজরানের প্রধান খ্রিষ্ট ধর্মযাজকের কাছে অর্পণ করেন। আর্চবিশপ ভালোভাবে পত্রটি পাঠ করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শসভার আয়োজন করেন। ঐ পরামর্শসভার একজন সদস্য ছিলেন শুরাহবিল, যিনি বুদ্ধিমত্তা, বিচারক্ষমতা ও দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি আর্চবিশপের উত্তরে বলেছিলেন : “আমার ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান খুবই কম। সুতরাং অভিমত ব্যক্ত করার অধিকার আমার নেই। আর যদি আপনারা অন্য কোন বিষয়ে আমার সাথে পরামর্শ করতেন, তা হলে আমি আপনাদের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পথের সন্ধান দিতাম।
কিন্তু অনন্যোপায় হয়ে একটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি যে, আমরা আমাদের ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে বহু বার শুনেছি যে, একদিন হযরত ইসহাকের বংশধারা থেকে নবুওয়াতের পদ ইসমাঈলের বংশধারায় স্থানান্তরিত হবে। আর ‘মুহাম্মদ’, যিনি ইসমাঈলের বংশধর, তিনিই যে সেই প্রতিশ্রুত নবী হবেন, তা মোটেই অসম্ভব নয়।”
এ পরামর্শসভা এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করে যে, নাজরানের প্রতিনিধি দল হিসেবে একদল লোক মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে যেসব বিষয় তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার দলিলস্বরূপ সেসব কাছে থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার জন্য মদীনায় যাবে।
তাই নাজরানবাসীর মধ্য থেকে ষাটজন সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে এ প্রতিনিধি দলের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনজন ধর্মীয় নেতা যাঁদের পরিচয় নিচে দেয়া হলো :
১. আবু হারিসাহ ইবনে আলকামাহ্ : নাজরানের প্রধান ধর্মযাজক বা আর্চবিশপ যিনি হিজাযে রোমের গীর্জাসমূহের স্বীকৃত প্রতিনিধি ছিলেন।
২. আবদুল মসীহ্ : নাজরানের প্রতিনিধি দলের নেতা, যিনি বিচার-বুদ্ধি, দক্ষতা, কর্মকৌশল ও ব্যবস্থাপনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
৩. আইহাম : যিনি ছিলেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং নাজরানবাসীর সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত।৫
প্রতিনিধি দল রেশমী বস্ত্র নির্মিত অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করে, হাতে স্বর্ণনির্মিত আংটি পরে এবং গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে অপরাহ্নে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে মহানবী (সা.)-কে সালাম জানায়। কিন্তু তিনি তাদের ঘৃণ্য ও অসংযত অবস্থা- তাও আবার মসজিদের অভ্যন্তরে,- দেখে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হন। তারা বুঝতে পারে, মহানবী (সা.) তাদের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু তারা এর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই তারা তৎক্ষণাৎ হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের এ ঘটনা সম্পর্কে জানালে তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে সমাধান আলী ইবনে আবী তালিবের হাতে রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ তাদের পূর্ব পরিচিত ছিলেন। প্রতিনিধি দল যখন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর কাছে গমন করে তাঁকে ঘটনা সম্পর্কে জানায়, তখন আলী (আ.) তাদেরকে বলেছিলেন : “আপনাদের উচিত আপনাদের এসব জমকালো পোশাক ও স্বর্ণালংকার পাল্টিয়ে সাদা-সিধাভাবে মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হওয়া। তা হলে আপনাদেরকে যথাযথ সম্মান করা হবে।”
নাজরানের প্রতিনিধি দল সাদামাটা পোশাক পরে এবং সোনার আংটি খুলে রেখে মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম জানালে তিনিও সম্মানের সাথে তাদের সালামের জবাব দেন এবং তারা যে সব উপঢৌকন এনেছিল, সেগুলোর কিছু কিছু গ্রহণ করেন। আলোচনা শুরু করার আগে প্রতিনিধিরা বলেছিল, তাদের প্রার্থনার সময় হয়েছে। মহানবী (সা.) তাদেরকে মদীনার মসজিদে নববীতে নামায ও প্রার্থনা করার অনুমতি দেন এবং তারা পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে।৬
নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনা
কতিপয় সীরাত রচয়িতা, মুহাদ্দিস (হাদীসবিদ) এবং ঐতিহাসিক মহানবী (সা.)-এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনার মূল বিষয় উদ্ধৃত করেছেন। তবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস এ আলোচনা এবং মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মুত্তালিব শাইবানীর৭ ‘মুবাহালা’ গ্রন্থ এবং হাসান ইবনে ইসমাঈলের৮ ‘যিলহজ্ব মাসের আমল’ গ্রন্থ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
তবে এ ক্ষুদ্র পরিসরে এ মহা ঐতিহাসিক ঘটনার সমুদয় দিক, যেসবের প্রতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় ঐতিহাসিক, এমনকি সামান্য ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন নি, সেসব উদ্ধৃত করা সম্ভব হবে না। আর তাই হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে মহানবী (সা.)-এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আলাপ-আলোচনা যা উদ্ধৃত করেছেন, তার অংশ বিশেষের প্রতি আমরা ইঙ্গিত করব।৯
মহানবী (সা.) : “আমি আপনাদেরকে তাওহীদী (একত্ববাদী) ধর্ম, এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি।” এরপর তিনি পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত তাদেরকে তেলাওয়াত করে শুনালেন।
নাজরানের প্রতিনিধিগণ : “আপনি যদি ইসলাম বলতে বিশ্বজাহানের এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকেই বুঝিয়ে থাকেন, তা হলে আমরা আগেই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলছি।”
মহানবী (সা.) : “ইসলামের (মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ) কতিপয় নিদর্শন আছে। আর আপনাদের কতিপয় কর্মকাণ্ড বলে দেয় যে, আপনারা ইসলামে যথাযথ বাইয়াত হন নি। আপনারা কিভাবে বলেন যে, আপনারা এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতকারী, অথচ আপনারা একই সময় ক্রুশের উপাসনা করেন এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকেন না, আর মহান আল্লাহর পুত্রসন্তানেও বিশ্বাস করেন?”
নাজরানের প্রতিনিধিরা : “আমরা তাঁকে (হযরত ঈসা মসীহ্) ‘আল্লাহ্’ বলে বিশ্বাস করি; কারণ তিনি মৃতদের জীবিত এবং অসুস্থ রোগীদের আরোগ্য দান করতেন এবং কাদা থেকে পাখি তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে দিতেন। আর এ সব কাজ থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি আল্লাহ্।”
মহানবী (সা.) : “না, তিনি মহান আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই সৃষ্টি, যাকে তিনি হযরত মারিয়াম (আ.)-এর গর্ভে রেখেছিলেন। আর মহান আল্লাহ্ই তাঁকে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।”
একজন প্রতিনিধি : “হ্যাঁ, তিনিই মহান আল্লাহর পুত্র। কারণ তাঁর মা মারিয়াম (আ.) কোন পুরুষের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই তাঁকে জন্ম দিয়েছিলেন। তাই অনন্যোপায় হয়ে বলতেই হয় যে, তাঁর পিতা হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্, যিনি বিশ্বজাহানের স্রষ্টা।”
এ সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরীল (আ.) অবতরণ করে মহানবী (সা.)-কে বললেন : “আপনি তাদেরকে বলে দিন : হযরত ঈসা মসীহর অবস্থা এ দিক থেকে হযরত আদম (আ.)-এর অবস্থার সাথে সদৃশ যে, তাঁকে তিনি তাঁর অসীম ক্ষমতা দিয়ে বিনা পিতা-মাতায় মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন।১০ তাই পিতা না থাকা যদি তিনি (ঈসা) যে খোদার পুত্র- এ কথার প্রমাণ বলে বিবেচিত হয়, তা হলে হযরত আদম (আ.)-কে এ আসনের জন্য অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা উচিত। কারণ হযরত আদম (আ.)-এর পিতা ছিল না, আর তাঁর মাও ছিলেন না।”
নাজরানের প্রতিনিধিরা : “আপনার বক্তব্য আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আর পথ হচ্ছে এটাই যে, একটি নির্দিষ্ট সময় আমরা পরস্পর মুবাহালা করব এবং যে মিথ্যাবাদী, তার ওপর লানত (অভিশাপ) দেব এবং মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করব।”১১
তখন ওহীর ফেরেশতা মুবাহালার আয়াত নিয়ে অবতরণ করে মহানবী (সা.)-কে জানান, যারা তাঁর সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং সত্য মেনে নেবে না, তাদেরকে মুবাহালা করতে আহবান জানাবেন এবং উভয় পক্ষ যেন মহান আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করেন যে, তিনি মিথ্যাবাদীকে স্বীয় দয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
فمن حاجّك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالوا ندع أبنائنا و أبنائكم و نسائنا و نسائكم و أنفسنا و أنفسكم ثمّ نبتهل فنجعل لعنة الله علي الكاذبين
“আপনার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্ক করে (এবং সত্য মেনে নিতে চায় না) তাকে বলে দিন : এসো, আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রসন্তানদের এবং তোমাদের পুত্রসন্তানদের, আমাদের নারীগণকে এবং তোমাদের নারীগণকে, আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে, অতঃপর আমরা (মহান আল্লাহর কাছে) বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর মহান আল্লাহর অভিশম্পাৎ করি।” (আলে ইমরান : ৬৩)
মুবাহালার প্রস্তুতি
নাজরানের প্রতিনিধিদলের সাথে মহানবী (সা.)-এর মুবাহালা করার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসের অত্যন্ত আকর্ষণীয়, তীব্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও আশ্চর্যজনক ঘটনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যদিও কতিপয় মুফাসসির ও সীরাত রচয়িতা এ মহাঘটনার যাবতীয় খঁটিনাটি দিক বর্ণনা এবং তা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন, তথাপি অনেকেই, যেমন আল কাশশাফ গ্রন্থে আল্লামা যামাখশারী১২ , তাফসীর গ্রন্থে১৩ ইমাম ফখরুদ্দীন আল রাযী এবং আল কামিল ফীত তারিখ গ্রন্থে১৪ ইবনে কাসীর এ ব্যাপারে লিখেছেন। আল্লামা যামাখশারী বলেন :
মুবাহালার মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে। আগে থেকেই মহানবী (সা.) ও নাজরানের প্রতিনিধি দল পরস্পর সমঝোতা করেছিলেন, মদীনা নগরীর বাইরে উন্মুক্ত মরু-প্রান্তরের কোন এক স্থানে ‘মুবাহালা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। মহানবী (সা.) সাধারণ মুসলিম ও নিজ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে কেবল চার ব্যক্তিকে এ ঐতিহাসিক ঘটনায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করেন। এ চার ব্যক্তি হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আ.), হযরত ফাতিমা (আ.), হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হুসাইন (আ.) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। কারণ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তখন এ চার জনের ঈমান অপেক্ষা পবিত্রতর ও দৃঢ়তর ঈমানের অধিকারী কোন মুসলমানই ছিলেন না।
মহানবী (সা.) তাঁর বাড়ি ও যে স্থানে ‘মুবাহালা’ অনুষ্ঠিত হবে, সে স্থানটির অন্তর্বর্তী দূরত্ব অতিক্রম করলেন। তিনি শিশু ইমাম হুসাইন (আ.)-কে কোলে১৫ নিয়েছিলেন এবং ইমাম হাসান (আ.)-এর হাত নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছিলেন। আর হযরত ফাতেমা (আ.) তাঁর পশ্চাতে এবং হযরত আলী (আ.) হযরত ফাতিমার পিছে পিছে হাঁটছিলেন। এ অবস্থায় তিনি মুবাহালার ময়দানের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। মুবাহালার ময়দানে প্রবেশের আগেই তিনি তাঁর সাথে মুবাহালায় অংশগ্রহণকারী সঙ্গীদের বলেছিলেন : “যখনই আমি দুআ করব, তখন তোমরাও আমার দুআর সাথে সাথে ‘আমীন’ বলবে।”
মহানবী (সা.)-এর মুখোমুখী হবার আগেই নাজরানের প্রতিনিধি দলের নেতারা একে অপরকে বলতে লাগল : “যখনই আপনারা মুহাম্মদকে প্রত্যক্ষ করবেন, তিনি লোক-লস্কর ও সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মুবাহালার ময়দানে আসছেন এবং আমাদের সামনে তাঁর পার্থিব জৌলুস এবং বাহ্যিক শক্তি প্রদর্শন করছেন, তখন তিনি ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী হবেন এবং তাঁর নবুওয়াতের কোন নির্ভরযোগ্যতাই থাকবে না। আর তিনি যদি নিজ সন্তান-সন্ততি ও আপনজনদের সাথে নিয়ে মুবাহালা করতে আসেন এবং সব ধরনের বস্তুগত ও পার্থিব জৌলুস থেকে মুক্ত হয়ে এক বিশেষ অবস্থায় মহান আল্লাহর দরগাহে প্রার্থনা করার জন্য হাত তোলেন, তা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তিনি একজন সত্যবাদী নবী এবং তিনি এতটা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান যে, তিনি কেবল নিজেকেই সম্ভাব্য যে কোন ধ্বংসের মুখোমুখী করতে প্রস্তুত নন, বরং তাঁর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদেরও ধ্বংসের মুখোমুখী দাঁড় করাতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।”
নাজরান প্রতিনিধি দলের নেতারা যখন পারস্পরিক আলোচনায় মশগুল, ঠিক তখনই চার জনকে সাথে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নূরানী মুখমণ্ডল হঠাৎ সেখানে আবির্ভূত হলো। স্মর্তব্য, ঐ চার জনের মধ্যে তিন জনই (হযরত ফাতিমা, ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন) ছিলেন তাঁর পবিত্র অস্তিত্ব-বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা। প্রতিপক্ষের সবাই তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিল। আর মহানবী (সা.) তাঁর নিজের সাথে তাঁর কলিজার টুকরা নিষ্পাপ আপনজনদের এবং নিজের একমাত্র কন্যাসন্তানকে মুবাহালার ময়দানে নিয়ে এসেছেন বলে তারা আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিজেদের হাতের আঙ্গুল কামড়াতে লাগল। তারা স্পষ্ট বুঝতে পারল, মহানবী (সা.) তাঁর আহবান ও দুআর ব্যাপারে দৃঢ় আস্থা পোষণ করেন। আর তা না হলে একজন দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তি তার আপনজনদের কখনোই আসমানী মুসিবত এবং মহান আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখী দাঁড় করাবেন না।
নাজরানের প্রধান ধর্মযাজক তখন বললেন : “আমি এমন সব পবিত্র মুখাবয়ব দেখতে পাচ্ছি যে, যখনই তারা হাত তুলে দুআ করে মহান আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে বড় পাহাড়কে উপড়ে ফেলতে বলবেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দুআয় সাড়া দান করা হবে। সুতরাং এসব আলোকিত মুখমণ্ডল এবং সুমহান মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির সাথে আমাদের মুবাহালা করা কখনই ঠিক হবে না। কারণ আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয় এবং স্রষ্টার শাস্তি ব্যাপকতা লাভ করে বিশ্বের সকল খ্রিষ্টানকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। তখন পৃথিবীর বুকে একজন খ্রিষ্টানও অবশিষ্ট থাকবে না।”১৬
মুবাহালা থেকে নাজরানের প্রতিনিধি দল বিরত
প্রতিনিধি দল অবস্থা প্রত্যক্ষ করে পরস্পর পরামর্শ করে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, তারা কখনই মুবাহালায় অংশগ্রহণ করবে না এবং প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জিযিয়া কর হিসেবে প্রদান করতে সম্মত হবে, যদি এ কর বাবদ ইসলামী হুকুমত তাদের জান-মাল সংরক্ষণ করে। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে তাঁর সম্মতির কথা জানিয়ে দেন এবং নির্ধারিত হয় যে, তারা (নাজরানবাসীরা) প্রতি বছর (জিযিয়া কর হিসেবে) কিছু অর্থ প্রদানের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এরপর মহানবী (সা.) বললেন : “মহান আল্লাহর শাস্তি নাজরানবাসীদের প্রতিনিধিদের মাথার ওপর ছায়া বিস্তার করেছিল। আর তারা যদি মুবাহালা ও পারস্পরিক অভিশম্পাৎ (মুলাআনাহ্) প্রদানের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত, তা হলে তারা তাদের মনুষ্যাকৃতি হারিয়ে ফেলত এবং মরু-প্রান্তরে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়, তাতে তারা দগ্ধ হতো। আর ইলাহী শাস্তি নাজরান অঞ্চলকে গ্রাস করত।”
হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হয়েছে : মুবাহালা দিবসে মহানবী (সা.) তাঁর চারজন সাথীকে একটি কালো বর্ণের চাদরের নিচে প্রবেশ করিয়ে এ আয়াত তেলাওয়াত করেছিলেন :
إنّما يُريد الله ليُذهب عنكم الرّجس أهل البيت و يُطهّركم تطهيرا
“হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তোমাদের থেকে সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে এবং পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” (সূরা আহযাব : ৩৩)
এরপর আল্লামা যামাখশারী মুবাহালার আয়াতের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন এবং আলোচনার শেষে লিখেছেন : মুবাহালার মহাঘটনা এবং এ আয়াতের বিষয়বস্তু ও মর্মার্থ ‘আসহাবে কিসা’ অর্থাৎ মহানবী (সা.) যাঁদেরকে তাঁর চাদরের নিচে স্থান দিয়েছিলেন, তাঁদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে বড় দলিল এবং ইসলাম ধর্মের সত্যতারও এক জীবন্ত সনদ।
সন্ধিপত্রের মূল পাঠ
নাজরানের প্রতিনিধি দল মহানবী (সা.)-এর কাছে তাদের বার্ষিক করের পরিমাণ সন্ধিপত্রে লিপিবদ্ধকরণ এবং মহানবীর পক্ষ থেকে নাজরান অঞ্চলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করারও আবেদন জানিয়েছিল। আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবীর নির্দেশে নিম্নোক্ত সন্ধিপত্র লিখেন:
“পরম করুণাময় ও চিরদয়ালু মহান আল্লাহর নামে। নাজরান অঞ্চল এবং তার উপকণ্ঠের অধিবাসীদের প্রতি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে (এ সন্ধিচুক্তি)। নাজরানবাসীদের সকল সহায়-সম্পত্তি সংক্রান্ত মুহাম্মদের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে এই যে, নাজরানের অধিবাসীরা প্রতি বছর দু’হাজার বস্ত্র- প্রতিটির মূল্য যেন ৪০ দিরহামের ঊর্ধ্বে না যায়, ইসলামী প্রশাসনের কাছে অর্পণ করবে। তারা এগুলোর অর্ধেক সফর মাসে এবং বাকী অর্ধেক রজব মাসেও প্রদান করতে পারবে। আর যখনই ইয়েমেনের দিক থেকে যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত হবে, তখন নাজরানের অধিবাসীরা ইসলামী হুকুমতের সাথে সহযোগিতা স্বরূপ ৩০টি বর্ম, ৩০টি ঘোড়া এবং ৩০টি উট ঋণ বাবদ মুসলিম সেনাবাহিনীর কাছে অর্পণ করবে এবং নাজরান অঞ্চলে এক মাস মহানবীর প্রতিনিধিদের আতিথেয়তা ও আপ্যায়নের দায়িত্ব তাদের ওপর ন্যস্ত থাকবে। যখনই তাঁর পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি তাদের কাছে যাবেন, তখন তারা অবশ্যই তাঁকে আপ্যায়ন করবে। নাজরান জাতির জান-মাল, ভূ-খণ্ড, এবং তাদের উপাসনাস্থলসমূহ মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের হেফাযতে থাকবে; তবে তা এ শর্তে যে, এখন থেকেই তারা সব ধরনের সুদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। আর এর অন্যথা হলে তাদের থেকে মুহাম্মদের দায় মুক্ত হয়ে যাবে এবং তাদের বরাবরে তাঁর আর কোন প্রতিশ্রুতি বহাল থাকবে না।”১৭
এ সন্ধিপত্র একটি লাল চামড়ার উপর লেখা হলে মহানবী (সা.)-এর দু’জন সাহাবী সাক্ষী হিসেবে এর নিচে স্বাক্ষর করলেন। অবশেষে মহানবী (সা.) সন্ধিপত্রের উপর মোহর অঙ্কিত করে তা প্রতিনিধি দলের নেতাদের হাতে অর্পণ করলেন। এ সন্ধিপত্র এক মহান নেতার চূড়ান্ত ন্যায়পরায়ণতার কথাই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে এবং মহানবীর হুকুমত যে বিশ্বের অন্য সকল অত্যাচারী সরকার ও প্রশাসনের মতো ছিল না, তা এ ঘটনা থেকে ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। উল্লেখ্য, এসব অত্যাচারী সরকার ও প্রশাসন প্রতিপক্ষের দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব থেকে অবৈধ ফায়দা হাসিল করে এবং তাদের ওপর বিরাট করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। অপর দিকে, ইসলামী হুকুমত (রাষ্ট্র) সব সময় শান্তি, ন্যায় এবং মানবীয় মূলনীতিসমূহ বিবেচনায় রেখে কখনই এসবের সীমারেখা অতিক্রম করে না অর্থাৎ এর বহির্ভূত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
শ্রেষ্ঠত্বের সনদ
মুবাহালার মহা ঘটনা এবং যে আয়াত এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছিল, তা সব সময় ও সকল যুগে শিয়া মুসলমানদের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরবের সর্ববৃহৎ সনদ বলে গণ্য হয়েছে। কারণ আয়াতের সকল শব্দ ও অংশ ব্যক্ত করে, মহানবী (সা.)-এর সঙ্গীগণ (হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন) শ্রেষ্ঠত্বের কোন্ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ আয়াতে হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হুসাইন (আ.)-কে মহানবী (সা.)-এর পুত্রসন্তান এবং হযরত ফাতিমা (আ.)-কে মহানবীর আহলে বাইতের সাথে সংশ্লিষ্ট ও এর অন্তর্ভুক্ত ‘একমাত্র নারী’ বলে উল্লেখ করা ছাড়াও স্বয়ং হযরত আলী (আ.)-কে ‘আনফুসানা’ অর্থাৎ ‘আমাদের নিজ সত্তা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বের এ সুমহান ব্যক্তিত্বকে মহানবী (সা.)-এর আত্মা (সত্তা) বলে গণ্য করা হয়েছে। যখন এক ব্যক্তি আধ্যাত্মিকতা ও শ্রেষ্ঠত্বের এমন পর্যায়ে উন্নীত হন যে, মহান আল্লাহ্ তাঁকে মহানবী (সা.)-এর আত্মা বলে অভিহিত করেন, তখন এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফযীলত ও মর্যাদা আর কী হতে পারে?
মুবাহালার এ আয়াত১৮ বিশ্বের সকল মুসলমানের ওপর আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয় কি? ইমামত ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সংক্রান্ত আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযীর কালামবিদ্যাভিত্তিক আলোচনা পদ্ধতি সবার কাছে স্পষ্ট। তিনিও (অন্য সবার চেয়ে হযরত আলীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে) শিয়া মুসলমানদের উপস্থাপিত যুক্তি উল্লেখ করে একটা নগণ্য আপত্তির অবতারণা করে এ বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনার ইতি টেনেছেন যে, তাঁর এ ধরনের আপত্তির জবাবও জ্ঞানীদের নিকট অজানা নয়।
আমাদের ইমামগণের বর্ণিত হাদীস ও রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা কেবল মহানবী (সা.)-এর সাথেই একান্তভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক মুসলমানই ধর্মীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে তার বিরোধী পক্ষের সাথে মুবাহালা করতে পারবে। হাদীস গ্রন্থসমূহে মুবাহালা পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত দুআর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।১৯
আল্লামা তাবাতাবাঈ-এর একটি সন্দর্ভে বর্ণিত হয়েছে : “মুবাহালা ইসলাম ধর্মের স্থায়ী মুজিযাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক মুমিন ইসলামের শ্রেষ্ঠ নেতা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলামের কোন একটি সত্য প্রমাণের ক্ষেত্রে বিরোধী পক্ষের সাথে মুবাহালায় লিপ্ত হতে এবং মুবাহালা করার সময় মহান আল্লাহর কাছে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দান এবং তাকে অপদস্থ করার জন্য দুআও করতে পারবে।২০
তথ্যসূত্র :
১. ইয়াকুত হামাভী তাঁর মু’ জামুল বুলদান গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ২৬৬-২৬৭ পৃষ্ঠায় নাজরানবাসীদের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার কারণগুলো বর্ণনা করেছেন।
২.‘ উসকুফ’ বা‘ আর্চ বিশপ’ শব্দটি গ্রীক‘ ইপেসকোপ’ শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী, তদারককারী, পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। আর এখন এ শব্দটি ধর্মযাজক বা পাদ্রীর চেয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের খ্রিষ্টধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক পদ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
৩. বিহারুল আনওয়ার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫
৪. আপনি বলে দিন : হে আহলে কিতাব! আমাদের ও তোমাদের মাঝে যে বিষয়টি অভিন্ন, সেই বিষয়ের দিকে তোমরা সবাই ফিরে আস। (সূরা আলে ইমরান : ৬৪)-এ আয়াতের মর্মার্থ, বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ২৮৭
৫. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৬
৬. সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯
৭. মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুহলুল ইবনে হুমাম ইবনে মুত্তালিব (জন্ম ২৯৭ হিজরী এবং মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী)
৮. দেখুন ইকবালুল আমাল, পৃ. ৪৯৬-৫১৩
৯. সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯
১০. সূরা আলে ইমরানের ৫৯তম আয়াত :
) إنّ مثل عيسي عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثمّ قال له كن فيكون(
“ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর কাছে ঈসার উপমা হচ্ছে আদমের উপমা সদৃশ; আদমকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং এরপর তিনি তাকে বলেছিলেন :‘ হয়ে যাও’ , আর সে হয়ে যায়।”
১১. বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৩২; তবে মুবাহালার সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং সীরাতে হালাবী থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা করার প্রস্তাব স্বয়ং মহানবীই দিয়েছিলেন। ঠিক একইভাবেتعالوا ندع أبنائنا ... (এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি এবং তোমরা তোমাদের সন্তানদের আহবান করো...)-এ আয়াত থেকেও এ বক্তব্যের সমর্থন মেলে।
১২. ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮২-২৮৩
১৩. মাফাতিহুল গাইব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৭১ ও ৪৭২
১৪. ২য় খণ্ড, পৃ. ১১২
১৫. কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : মহানবী (সা.), ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হাত ধরে রেখেছিলেন; আলী (আ.) মহানবীর সামনে এবং হযরত ফাতিমা (আ.) তাঁর পেছনে গমন করছিলেন। বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৩৩৮
১৬. ইকবালুল আমাল গ্রন্থে বর্ণিত আছে : মুবাহালার দিবসে যে স্থানে মুবাহালা অনুষ্ঠিত হবে, সে স্থানের চারপাশে বহুসংখ্যক আনসার ও মুহাজির সাহাবী উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু মহানবী (সা.) বাড়ি থেকে কেবল ঐ চারজনকেই সাথে নিয়ে বের হয়েছিলেন। আর মুবাহালার ময়দানে এই পাঁচ জন ছাড়া অন্য কোন মুসলমান উপস্থিত ছিলেন না। মহানবী (সা.) মুবাহালার ময়দানে প্রবেশ করে কাঁধ থেকে নিজ চাদর খুলে পরস্পর কাছাকাছি অবস্থিত দু’ টি বৃক্ষের উপর ছুঁড়ে দেন এবং তিনি যে চারজন সহ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তাঁদেরকে এ চাদরের ছায়াতলে স্থান দেন এবং নাজরানের প্রতিনিধি দলকে মুবাহালা করার আহবান জানান।
১৭. ফুতহুল বুলদান, পৃ. ৭৬
১৮. সূরা আলে ইমরান : ৫৯
১৯. অধিকতর অবগতির জন্য দেখুন নূরুস সাকালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯১-২৯২
২০. কতিপয় রেওয়ায়েতেও এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন : আল কাফী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫১৩-৫১৪