(বিশ্বনবী (সা) ও ইমাম জাফর আস সাদিকের (আ) জন্ম-বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ)
পূর্বাচলের দিগন্ত নীলে সে জাগে শাহানশাহের মত
তার স্বাক্ষর বাতাসের আগে ওড়ে নীলাভ্রে অনবরত ৷
ঘুম ভাঙলো কি হে আলোর পাখী ? মহানীলিমায় ভ্রাম্যমান
রাত্রি-রুদ্ধ কন্ঠ হতে কি ঝ'রবে এবার দিনের গান ?
এবার কি সুর ঘন অশ্রুর কারা তট থেকে প্রশান্তির ?
এবার সে কোন আলোর স্বপ্নে তাকাবে ক্ষুব্ধ প্রলয় নীর ?
এ বোবা বধির আকাশ এবার ভুলবে কি তার নীরবতাকে
সেই মুসাফির সুদুরচারীর সুগভীর সুরে দরদী ডাকে ৷
....
তুমি না আসিলে মধু ভান্ডার ধরায় কখনো হতনা লুট
তুমি না আসিলে নারগিস কভু খুলতনা তার পর্ণপুট
বিচিত্র আশা মুখর মাসুক খুলত না তার রুদ্ধ দিল
দিনের প্রহরী দিত না সরায়ে আবছা আঁধার কালো নিখিল ৷
....
“এখানে এখন রাত্রি এসেছে নেমে,
তবু দেখা যায় দূরে বহুদূরে হেরার রাজতোরণ,
এখানে এখন প্রবল ক্ষুধায় মানুষ উঠেছে কেঁপে
এখানে এখন অজস্র ধারা উঠেছে দুচোখ ছেপে
তবু দেখা যায় দূরে বহুদূরে হেরার রাজতোরণ । ”
(ফররুখ আহমদ)
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। পবিত্র কুরআনের ভাষায়- রাহমাতুললিল আলামীন। ব্যথিত মানুষের ধ্যানের ছবি ও মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত এই মহামানবের যথাযথ মর্যাদা ও সবগুলো গুণ তুলে ধরা তাঁর কাছাকাছি পর্যায়ের কোনো মহামানবের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। কারণ, বিস্ময়কর সৌন্দর্যে ভরা সব শব্দ-ভাণ্ডার উজাড় করা যেতে পারে, কল্পনার ফানুসগুলো চিরকাল উড়ানো যেতে পারে, কিন্তু খোদার প্রিয়তম হাবিবের জয়গান ও গুণ-কীর্তন যতই গাওয়া হোক না কেন তা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
তাই যুগে যুগে এই মহামানবের জয়গান গেয়ে নবী-রাসুল এবং আল্লাহর মহান ওলি, জ্ঞানী-গুণী ও নবী-প্রেমিক কবি-সাহিত্যিকরা নিজেদের ধন্য করলেও তাঁকে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে না পারার বেদনা রয়েই গেছে সবার মধ্যেই। তাই বাংলাদেশের জাতীয় কবি গেয়েছেন: তোমার নামে এ কী নেশা হে প্রিয় হজরত! যত ডাকি তত কাদি মেটে না হাসরত আমার মেটে না হাসরত। কিংবা লিখেছেন, 'মুহাম্মাদ নাম যতই জপি ততই মধুর লাগে নামে এমন জাদু আছে কে জানিত আগে'।
বলা হয় বিশ্বনবীকে (সা) সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করতেন না অন্য কিছুই। অন্য কথায় মহানবী (সা)-কে ছাড়া সৃষ্টি জগত হত অর্থহীন। আল্লাহ নিজেই ও তাঁর ফেরেশতারা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রসূল হযরত নবী করীম (দ) এর প্রতি দরুদ পাঠান। মহানবী (সা)-কে ভালোভাবে চেনা গোটা মানবজাতির জন্যই অতি জরুরি। কারণ, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত মানবতার মুক্তি রয়েছে বিশ্বনবীকে ভালভাবে জেনে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার মধ্যেই।
দুঃখজনকভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র প্রকৃত মর্যাদা ও পরিচয় সম্পর্কে যুগে যুগে নানা বিভ্রান্তি এবং ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে পণ্ডিত নামধারী এক শ্রেণীর ব্যক্তি। মুনাফিক কিংবা অসচেতন এই ব্যক্তিরা বলেন, মানুষের মধ্যে বিশ্বনবী (সা) ধর্মীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী হলেও দুনিয়াবি কোনো কোনো বিষয় বা দুনিয়ার সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন না। বরং অন্য কেউ কেউ এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের চেয়েও বেশি জ্ঞান রাখতে পারেন। অথচ পবিত্র কুরআনে মহানবীকে স্পষ্টভাবেই ‘উসওয়াতুন হাসানা’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের জন্য সব ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠ আদর্শ হলেন বিশ্বনবী (সা)। যে কোনো মহৎ মানবীয় গুণ যা মানুষের মধ্যে থাকা সম্ভব তা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছিল বিশ্বনবী (সা)’র মধ্যে।
আসলে বিশ্বনবী (সা) ছিলেন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহান আল্লাহর মনোনীত সর্বকালের সেরা শিক্ষক। আর এ জন্য তিনি নিজেই সবার আগে অর্জন করেছিলেন সর্বোত্তম চরিত্র।
ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব হিসেবে বিশ্বনবী (সা) ছিলেন সবচেয়ে বেশি মানব-দরদি ও দয়ালু। কিন্তু তাঁর এ বৈশিষ্ট তাঁকে ন্যায় বিচার থেকে বিরত রাখেনি। বার বার ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ইহুদিদেরকে তিনি কঠোরতম শাস্তি দিয়েছিলেন। জালিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি ছিলেন অবিচল ও কঠোর।
আমানতদার বা আল-আমিন ছিলেন বলে মহানবীর শত্রু বা বিরোধীরাও তাদের সম্পদের আমানত বিশ্বনবীর কাছে রাখতে দ্বিধা বোধ করত না।
বিশ্বনবী (সা) দারিদ্রকে ভালবাসতেন এবং একে তাঁর গর্ব বলে উল্লেখ করতেন। তিনি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরতেন না, কিন্তু তিনি কখনও অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকতেন না। ছেঁড়া ও তালিযুক্ত পোশাক পরলেও কখনও ময়লা পোশাক পরেননি। পরিপাটি থাকা ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল তাঁর স্বভাব। তিনি সুগন্ধি ও মেহেদি ব্যবহার করতেন।
মহানবীর সঙ্গে দশ বছর ছিলেন এমন একজন খাদেম বলেছেন, আমি মাঝে মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও কখনও মহানবীকে রাগ করতে দেখিনি। তিনি শিশুদের গভীরভাবে ভালবাসতেন ও এমনকি তাদের সঙ্গে কৌতুকও করতেন। মহানবী ব্যক্তিগত কাজ ছাড়াও ঘরের অনেক কাজও নিজেই করতেন যাতে স্ত্রী ও খাদেমের ওপর অবিচার না হয়।
একবার মহানবী (সা)’র কাছে প্রচুর স্বর্ণ ও গয়না আসল। তিনি তার সবই দান করে দেন মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় তহবিল তথা বায়তুল মালে। বিশ্বনবীর কয়েকজন স্ত্রী এইসব স্বর্ণ থেকে কিছু অংশ তাদেরকে দিতে অনুরোধ জানান। মহানবী এ অনুরোধের কারণে এত বেশি অসন্তুষ্ট হন যে তিনি এক মাস ধরে স্ত্রীদের কাছ থেকে দূরে থাকেন। তিনি কেবল এই শর্তেই ওই স্ত্রীদের আবারও সঙ্গ দিতে রাজি হন যে তাঁরাও মহানবীর দরিদ্র জীবনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেবেন। তিনি মৃত্যুর সময় কোনো সম্পদ রেখে যাননি। জিবরাইল (আ) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীর সমস্ত ধন-সম্পদের চাবি বিশ্বনবীর হাতে তুলে দিতে আসলে তিনি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ন্যায়বিচারের ব্যাপারে কখনও আপোষ করেননি মহানবী। অমুসলিমদের ওপর মুসলমানরা কখনও অবিচার করলে বিশ্বনবী সেই মুসলমানদের শাস্তি দিতেন। বিশ্বনবীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতাও ছিল সবার চেয়ে বেশি। নানা গোত্রের সঙ্গে সন্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাই এর প্রমাণ। আরবের সদা-বিবদমান গোত্রগুলোকে তিনি ইসলামের ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বিশ্বের বড় বড় রাজা-বাদশাহর কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ তাঁর অনন্য কূটনৈতিক প্রজ্ঞার স্বাক্ষর। সামরিক কৌশল প্রণয়নেও তিনি ছিলেন সর্বকালের সেরা কমান্ডার।
শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয়ের জন্য সামরিক অভিযানের ব্যাপারে তিনি এত বেশি গোপনীয়তা অবলম্বন করেছিলেন যে মুসলিম বাহিনী মক্কার প্রায় দ্বারপ্রান্তে আসার পরই মক্কার কাফিররা এ বিষয়ে অবহিত হয়।
শান্তির সম্ভাবনা থাকলে যুদ্ধ করতেন না বিশ্বনবী (সা)। মহানবীর বেশিরভাগ জিহাদই ছিল প্রতিরক্ষামূলক বা শত্রুদেরই চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং এসব যুদ্ধে বহু অঞ্চল মুসলমানরা জয় করলেই খুব কম মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এইসব যুদ্ধে। মুসলমানদের আগে আক্রমণ করতে দেননি তিনি। শত্রুরা চুক্তি লঙ্ঘন না করলে তিনি ওয়াদা ও চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। এসবই বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য ।
বিশ্বনবী (সা) সবচেয়ে জ্ঞানী, খোদাভীরু ও রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ছিলেন সবচেয়ে বেশি বিনয়ী ও সবচেয়ে মিশুক প্রকৃতির। মহানবী (সা) মজলিসের মধ্যে বিশেষ আসনে বসতেন না, বরং সবার পেছনে বসতেন। ফলে অপরিচিত কেউ বুঝতে পারত না যে কে আল্লাহর রাসূল। ভ্রমণের সময়ও তিনি এমন সাদামাটা বাহনে চলতেন ও এমনভাবে হাঁটতেন যেন তিনি ছিলেন অন্যদের মতই সাধারণ মানুষ। তাঁর সামনে সম্মান দেখিয়ে কেউ দাঁড়াক সেটা তিনি চাইতেন না। তিনি মাটিতে বসতেন ও মাটিতে বসে খাবার খেতেন। তাঁর হাসিতে যেন মুক্তো ঝরতো। কিন্তু তিনি কেবলই মুচকি হাসি হাসতেন।
মহানবীর (সা) কোনো পাপ না থাকা সত্ত্বেও তিনি রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদতেন। নামাজ পড়তে পড়তে তাঁর পা ফুলে যেত। মহানবীর স্ত্রীরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন: আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?
মহানবী মানব-প্রেমিক ছিলেন বলেই মানুষের হেদায়াত বা সুপথ থেকে দূরে থাকার বিষয় তাঁকে খুবই কষ্ট দিত। কারণ, তিনি ভাবতেন যে অমুসলমানরা পরকালে কষ্ট পাবে। মহান আল্লাহ এ জন্য সুরা তাহায় বলেছেন, নিজেকে নিঃশেষ করার জন্য তো আমি তোমার কাছে কুরআন নাজিল করিনি।
মহানবী (সা) আল্লাহর দরবারে ২৫ বার তওবা বা ইস্তিগফার করা ছাড়া কোনো মজলিস থেকে বের হতেন না। মহানবী পবিত্রতম মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নানা শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে মেলামেশার প্রেক্ষাপটে মনের মধ্যে কখনও কখনও সামান্যতম মলিনতার আবরণ জমার আশঙ্কায় প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বার ক্ষমা চাইতেন।
মহানবীর কোনো কোনো স্ত্রী বলেছেন, আমরা মহানবীর সঙ্গে কথা বলতাম ও তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কিন্তু এ অবস্থায় নামাজের সময় হলে খোদার প্রেমে তাঁর অবস্থা এমন হত যেন তিনি আমাদের কখনও চিনতেন না এবং আমরাও উনাকে চিনতাম না!
মহানবী (সা) আল্লাহর রাসূল ও রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও জনগণের সেবা করতেন। সাধারণ জনগণের চেয়েও বেশি সাদামাটা বা দারিদ্রের জীবন যাপন করতেন তিনি।
বিশ্বনবী (সা) কপটতা, কুসংস্কার বা ভুল ধারনাকে পশ্রয় দিতেন না। তাঁর ছেলে মারা যাওয়ার পর সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। অনেকেই ভাবল প্রকৃতি শোকাচ্ছন্ন হয়েছে। কিন্তু মহানবী বললেন তাঁর ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশ্বনবী রাজনীতিকে ধর্মের নীতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ধর্ম থেকে থেকে রাজনীতিকে আলাদা করেননি। তিনি রাষ্ট্র গড়েছেন ও রাজনৈতিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসবই করেছেন তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। ইসলামের জন্য মহানবী নিজের সব কিছুই কুরবান করেছেন।
মহানবী (সা) ছিলেন সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর সদস্য। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া গরিবরাই ছিল তাঁর অনুসারী। দরিদ্রদের নিয়েই তিনি ইসলামী বিপ্লব ও সামাজিক পরিবর্তন সাধন করেছেন। ধনী ও পুঁজিবাদী শ্রেণী ছিল তাঁর বিপ্লবের বিরোধী।
মহানবী (সা) দেখতে খুব সুন্দর বা সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন কিনা তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাঁর আত্মা আর অন্তর ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে কোমল ও উদার।
বিশ্বনবী (সা) মানব জাতিকে পরিপূর্ণতম ধর্ম উপহার দিয়ে গেছেন এবং তাঁরই ওপর নাজিল হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি মহাগ্রন্থ কুরআন।
তিনি মুসলমানদের বলে গেছেন: যাতে তোমরা বিভ্রান্ত না হও সে জন্য আমি তোমাদের জন্য দু’টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি- একটি পবিত্র কুরআন ও অন্যটি আমার আহলে বাইত।... এ দু’টি হাউজে কাউসারে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরস্পর থেকে পৃথক হবে না। (মুসলিম ও তিরমিজি)
তিনি তাঁর পবিত্র আহলে বাইতকে উম্মতের নাজাতের তরী বলেও উল্লেখ করেছেন। হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ) ছিলেন বিশ্বনবীর পবিত্র আহলে বাইতের এমনই এক মহান সদস্য। তিনি ৮৩ হিজরির ১৭ ই রবিউল আউয়াল মদীনায় ভূমিষ্ঠ হন। কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের নানা নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে তিনি প্রকৃত ইসলামের ক্রমবিকাশ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মহান দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ফেকাহ ও ইসলামী দর্শনসহ ইসলামী নানা জ্ঞানের ক্রমবিকাশ ও উন্নয়নও তাঁর অন্যতম মহৎ অবদান।
আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত ইমাম আবু হানিফা বলেছেন,
'যদি জাফর ইবনে মুহাম্মাদের সান্নিধ্যের ঐ দু’বছর না থাকত তবে নোমান তথা আবু হানিফা ধ্বংস হয়ে যেত। মানুষের মধ্যে (মত) পার্থক্যের বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি সর্বাধিক জ্ঞান রাখেন। ' তিনি আরও বলেছেন, আমি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে জ্ঞানী কোন ব্যক্তিকে দেখিনি।
মালিকি মাজহাবের প্রধান ইমাম মালিক ইবনে আনাস তার শিক্ষক ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.) সম্পর্কে বলেছেন,
‘জ্ঞান, ইবাদত ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হতে শ্রেষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে কোন চোখই দেখেনি, কোন কানই শোনেনি এবং কোন মানুষই কল্পনা করেনি।’
ইমাম জাফর সাদিক (আ) ৩৪ বছর ধরে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেয়ার পর ১৪৮ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মানসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।
এই মহান ইমামের একটি স্মরণীয় উপদেশ উদ্ধৃত করে শেষ করব আজকের এই বিশেষ আয়োজন:
‘জেনেছি যে আমার কাজ অন্য কেউ করবে না, তাই সচেষ্ট হলাম।
জেনেছি যে আল্লাহ আমায় দেখছেন, তাই লজ্জা করতে শিখলাম।
জেনেছি যে আমার রিজিক অন্য কেউ খাবে না, তাই প্রশান্ত হলাম।
জেনেছি যে অবশেষ আমাকে মরতে হবে, তাই প্রস্তুত হলাম।’ #
source : abna24