২১ ডিসেম্বর (রেডিও তেহরান): সুরা আ’রাফের ২০১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: 'যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদের কাছে শয়তান আসার সাথে সাথেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে (ফলে তারা সত্যের পথ দেখতে পারেন)।'
এ আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী খোদাভীরু ব্যক্তিরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে বিচক্ষণতা বা দূরদৃষ্টি লাভ করেন, ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণায় তারা প্রভাবিত হন না। শয়তান মানুষের চিন্তা ও আত্মাকে বার বার কুমন্ত্রণা দেয়ার মাধ্যমে তাকে কাবু করার বা তার মধ্যে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিন্তু খোদাভীরু মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণার মুখে আল্লাহকে ও তাঁর অশেষ নেয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করেন। এ সময় আল্লাহর অনুগ্রহে ওই খোদাভীরু ব্যক্তির অন্তরের চারপাশ থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণার ফাঁদগুলো বিলুপ্ত হয়। ফলে তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় সত্যের পথ।
শয়তানের কুমন্ত্রণা মানুষের মনের চোখের ওপর পর্দা ফেলে। ফলে চলার পথে বাধা ও গর্তগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। অন্য কথায় এ সময় সঠিক ও ভুল পথের মধ্যে তারতম্য করতে পারে না মানুষ। কিন্তু আল্লাহর স্মরণ মানুষকে যোগায় বাস্তবতাকে বোঝার ও দেখার শক্তি। এভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণার ফাঁদগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় খোদাভীরু মানুষ।
ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে যে কোনো সামাজিক পরিস্থিতিতে যে কোনো বয়সের মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হতে পারে। অনেক সময় মানুষ নিজেই এটা টের পায় যে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাকে অপরাধের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে বা মন্দের দিকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। বর্তমান যুগে অসংখ্য প্রচারযন্ত্রের অনৈতিক প্রচারণার প্রভাবে নানা ধরনের অসৎ তৎপরতা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সমাজে। এইসব প্রচারণা বা কুমন্ত্রণা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাই নানা ধরনের কলুষতা ও বিচ্যুতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার একমাত্র উপায় হলো তাকওয়া বা খোদাভীতির অস্ত্রে সুসজ্জিত হওয়া।
সংযম ও সতর্কতা এবং আল্লাহর আশ্রয় বা সহায়তা কামনার পাশাপাশি অতীত ও বর্তমানের বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের ভুলের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেয়া বা এ ধরনের মারাত্মক ভুলের পরিণতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আর গবেষণা করা শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কিছু মোক্ষম উপায়। কুরআন ও হাদিসসহ ইসলামী নানা বর্ণনায় আল্লাহকে স্মরণের নানা কল্যাণকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা মন্ত্রণার মোকাবেলায় কোনো মানুষের প্রতিরোধ শক্তি যদি দুর্বল থেকে যায় তাহলে প্রতিরোধ যুদ্ধে তার পরাজয় অনিবার্য। এভাবে শয়তানের কাছে পরাজিত ব্যক্তি পাপ ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের মন্ত্রণা হচ্ছে এমন এক ধরনের জীবাণুর মত যা সুযোগ পেলেই দুর্বল ঈমানদার বা সরলমনা মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খুব সহজেই তাকে কাবু করতে সক্ষম হয়। ফলে এইসব মানুষ গোনাহর শিকার হয়।
কিন্তু যাদের ঈমান সুদৃঢ় ও সুস্থ মনের অধিকারী তারা এইসব জীবাণুকে খুব সহজেই তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। আর খোদাভীতিই মানুষের ঈমানকে করে সুদৃঢ়। এভাবে খোদাভীতি ও আল্লাহর স্মরণ মানুষকে যোগায় শয়তানের মন্ত্রণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রবল শক্তি। অন্যদিকে দুর্বল ঈমানদার বা পাপী ব্যক্তি শয়তানের কুমন্ত্রণার ফাঁদে বন্দী হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহর কাছে আমরা গভীর চিন্তাভাবনার শক্তি বা দূরদৃষ্টি এবং কুরআনের শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালনার তৌফিক কামনা করছি।
সুরা আ’রাফের ১৫৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
"সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য করে এ রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর (নাম ও বৈশিষ্ট্য) সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন, নিষেধ করেন অসৎকাজে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুগুলো এবং তাদের ভারী বোঝা নামিয়ে দেন ও বন্দীত্ব বা বন্ধনগুলো অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিরাজ করছিল। সুতরাং যারা এ নবীর উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং তাঁর সাথে অবতীর্ণ করা নূরের অনুসরণ করেছে, প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল।"
উল্লেখ্য, এতক্ষণ যে আয়াতের অর্থ শুনলেন তা থেকে জানা যায় ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে যে মহানবী (সা.)'র শুভাগমনের ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্যও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাওরাতে এ সম্পর্কে এসেছে: "তাঁর নাম হবে আহমাদ, তিনি মৃদু মিষ্টি হাসির অধিকারী, জিহাদ করবেন, উটে আরোহণ করবেন, কাঁধে চাদর থাকবে এবং অদূর ভবিষ্যতে তাঁর বংশে বারোজন মহামান্য ব্যক্তির জন্ম হবে। আর আমি তাঁকে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন জাতির জন্য বিলম্বিত করবো।" (তাওরাত, বিশরাতে মিসলিয়া, আরবি অনুবাদ দ্রষ্টব্য)
তাওরাতের এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে এটাও সুস্পষ্ট যে, বিশ্বনবী (সা.)'র প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্তের সংখ্যা হবে ১২ জন এবং তাঁরা মহানবীরই বংশধর হবেন।
বিশ্বনবী (সা.)'র আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন বিশ্বের প্রায় সব বড় নবী ও রাসূলগণ। হযরত ঈসা (আ.)'র কাছে অবতীর্ণ আসমানি কিতাব ইঞ্জিলেও বলা হয়েছে: শেষ নবী (সা.)'র নাম হবে আহমাদ। বার্নাবাসের বাইবেলসহ প্রাচীন অনেক বাইবেলে এ কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।
এবারে একটি ভিন্ন প্রসঙ্গের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সুরা আ'রাফের ১৪২ নম্বর আয়াতের একাংশে এসেছে: মুসা তাঁর সহোদর হারুনকে বলল: "তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব কর।"
মহান আল্লাহর সঙ্গে একান্ত যোগাযোগের উদ্দেশ্যে হযরত মুসা (আ.) যখন চল্লিশ দিনের জন্য নিজ জাতির অবস্থান থেকে দূরে যাওয়ার বা তুর পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি তাঁর উম্মতকে খলিফা তথা স্থলাভিষিক্তবিহীন অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া সমীচীন মনে করেননি। তাই মহানবী (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত নিজ উম্মতকে নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় রেখে যাবেন-এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? অথচ অনেকেই এটা প্রচার করেছেন যে, বিশ্বনবী (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত বা খলিফা নিয়োগের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা বা স্পষ্ট বক্তব্যই রেখে যাননি!!! #
source : irib