বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

হুসাইনি বিপ্লবের প্রশংসায় মনীষীদের অম্লান মন্তব্য

বিভিন্ন যুগে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত মনীষী, নেতা এবং নানা ধর্ম ও মতের অনুসারী খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.) ও আশুরা বিপ্লব সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ মতামত ব্যক্ত করেছেন। এইসব বক্তব্য ও মন্তব্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু উক্তি বা মন্তব্য এবং আশুরা সংক্রান্ত কিছু ইসলামী বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হল:

** হযরত আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), ঈসমাইল (আ.), মুসা (আ), জাকারিয়া (আ.) ও দাউদ (আ.)সহ অতীতের সকল বড় নবী-রাসূলের কাছে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছিল এবং তাঁরা ভবিষ্যতের ওই ঘটনা শুনে কেঁদেছিলেন বলে ইসলামী বর্ণনা রয়েছে।

** সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানব জাতির মুক্তির দিশারী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.):
 
তিনি বলেছেন, হুসাইন আমা থেকে ও আমি হুসাইন থেকে। বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, তাঁকে মহান আল্লাহ ওহির মাধ্যমে জানিয়েছেন যে শাহাদতের মাধ্যমে হুসাইন (আ.) এমন এক মর্যাদা পাবেন যে তার কাছাকাছি যাওয়া অন্য কারো জন্য সম্ভব হবে না"। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে হুসাইনের (আ.) শাহাদতের ব্যাপারে এমন ভালবাসা আছে যে, তার উত্তাপ কখনও প্রশমিত হবে না।" যারা হুসাইনের জন্য কাঁদবে তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদও দিয়ে গেছেন বিশ্বনবী (সা.)।

** আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.):
তোমার প্রশংসা হে কারবালার মাটি! তুমি একদল লোকের সাহচর্য পাবে যারা কোনো হিসাব ছাড়াই বেহেশতে প্রবেশ করবে।
তিনি আরো বলেছেন: হায় আমার কাছে আবু সুফিয়ান (ইয়াজিদের দাদা) ও হারব কি চায় যে তারা একদল শয়তান হয়ে অবিশ্বাসের বন্ধু হয়েছে? হে আবা আবদিল্লাহ (ইমাম হুসাইন-আ.)! ধৈর্য ও সহনশীলতায় অবিচল থেকো। তোমার বাবা সব দেখতে পাচ্ছেন যা তোমার ওপর আপতিত হবে।

আলী (আ.) কারবালার ঘটনার বহু বছর আগে কারবালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আশুরার দিন যা ঘটবে তা নিয়ে এত কেঁদেছিলেন যে তাঁর পবিত্র দাড়ি ভিজে গিয়েছিল। সঙ্গী ইবনে আব্বাসও সে সময় কেঁদেছিলেন।

হযরত ফাতিমার (সা.) ওসিয়ত

** পরপারে পাড়ি জমানোর প্রাক্কালে ফাতিমা জাহরা (সা.) ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন নিজের মেয়ে জয়নাব (সা.)-কে: হুসাইন যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যুদ্ধে যাবে তখন তাঁর গলায় একটি চুম্বন দিও। জয়নাব (সা.) মায়ের সেই ওসিয়ত পালন করেছিলেন।

** হুসাইন (আ.)-কে সম্বোধন করে হযরত ইমাম হাসান (আ.) বলেছেন:

আমার ওপর যা ঘটবে তা হলো প্রাণনাশক বিষ, কিন্তু আমার দিনগুলোর কোনোটিই তোমারগুলোর মত হবে না। আমাদের নানার অনুসারী হবার দাবিদার ত্রিশ হাজার লোক একত্রিত হবে তোমাকে আক্রমণ করতে ও তোমার রক্ত ঝরাতে এবং পবিত্রতা নষ্ট করতে ও তোমার নারীদের আর শিশুদের বন্দি করতে। তোমার তাঁবুগুলোও তারা লুট করবে। সে সময় আল্লাহর গজব বনি উমাইয়ার ওপর নাজেল হবে, আকাশ থেকে রক্তের বৃষ্টি ঝরবে এবং সব কিছুই তোমার জন্য বিলাপ করবে, এতই বেশি যে বনের হিংস্র পশুরা ও নদীর মাছও তোমার দুঃখ-কষ্টের জন্য কাঁদবে।

*** কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.):

যখন কুরাইশরা পূজা করত দুই মূর্তি লাত ও উজ্জার তখন আমার বাবা নামাজ পড়েছেন দুই কিবলার দিকে ফিরে। আমার বাবার হলেন সূর্য, মা হলেন চাঁদ, আর আমি এক নক্ষত্র, দুই চাঁদের সন্তান।... আমার নানা আল্লাহর রাসূল –সবার চেয়ে সম্মানিত।.. আমরা সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর বাতি। ..আমরা কাউসারের ওপর কর্তৃত্ব রাখি।..দুর্ভোগ তোমাদের ওপর হে আবু সুফিয়ানের পরিবারের অনুসারীরা, যদি তোমরা অধার্মিকও হয়ে থাক ও কিয়ামতকে ভয় না পাও, অন্ততঃ স্বাধীন চিন্তার অনুসারী হও।
তিনি আরো বলেছেন: "(সাধারণ) জনসাধারণ দুনিয়ার গোলাম। তারা ধর্মকে জিহ্বার মধ্যেই সীমিত রাখে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জানে যে এ ধরনের ধর্ম চর্চা তাদের জীবনে কোনো ক্ষতি বয়ে আনবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ধর্মের চারপাশে ঘুরাফেরা করবে। কিন্তু যখন তারা কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হয় তখন খুব কম সংখ্যকই ধর্মের পথে অবিচল থাকে।"
ইমাম আরো বলেছেন, যারা আমাদের সাহায্যের ডাক শুনতে পেয়েও আমাদের সাহায্য করছে না, তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। (যারা ইমামকে ও তাঁর পরিবার এবং সঙ্গীদের হত্যায় জড়িত ছিল বা এ কাজে সহায়তা করেছে তা অবস্থা কি হবে তা এ বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়।)

বালক বীর হযরত কাসিম বিন হাসান (আ.):

'ন্যায় ও সত্যের পথে মৃত্যু বরণ আমার কাছে মধুর চেয়েও মিষ্টি'
 
কারবালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহীদ হযরত সাঈদ বিন আবদুল্লাহ হানাফি (রা.):
 
আশুরার পূর্বরাতে ইমামের পক্ষ থেকে পালানোর অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও  বললেন, প্রিয় ইমাম ! খোদার কসম আপনাকে রেখে আমরা কোথাও যাবো না । আপনার জন্যে যদি নিহত হই এবং জীবন্ত দগ্ধ হই এবং তা যদি ৭০ বারও হয় তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না । আপনি মরে যাবেন আর আমরা বেচে থাকব এ কি করে হয় !
 
কারবালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহীদ যুহাইর ইবনে কাইন (র.):
 
 আশুরার পূর্বরাতে ইমামের পক্ষ থেকে পালানোর অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও  উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মহানবীর প্রিয় সন্তান, আপনি ও আপনার পরিবারকে রক্ষার জন্যে আমাকে যদি হাজারবারও মেরে ফেলা হয় তাহলেও আমি আপনাকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করব ।

হযরত জয়নাব বিনতে আলী (আ.):

"কারবালায় যা কিছু দেখেছি (ইমাম শিবিরের দিক থেকে ও ইয়াজিদ শিবিরের মোকাবেলায়) তাতে সৌন্দর্য বা সর্বোত্তম বিষয় ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি।"
তিনি ইয়াজিদের দরবারে বলেছেন:
"যদিও ঘটনাচক্রে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাকে খুবই তুচ্ছ ও নীচ মনে করি এবং তোমাকে কঠোরভাবে তিরস্কার করছি ও অনেক বেশি নিন্দা করছি, কিন্তু (আমার ভাইয়ের হত্যার কারণে মুসলমানদের) দৃষ্টিগুলো অশ্রুসজল আর হৃদয়গুলো কাবাবের মত দগ্ধীভূত।"

ইয়াজিদের দরবারে হযরত আলী ইবনে হুসাইন আল জয়নুল আবেদিন (আ.):

আমি হুসাইনের সন্তান যাকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমি আলীর সন্তান যিনি মুর্তাজা (অনুমোদনপ্রাপ্ত), আমি মুহাম্মদের সন্তান যিনি বাছাইকৃত, আমি ফাতিমাতুজ জাহরার সন্তান, আমি সিদরাতুল মুনতাহার সন্তান, আমি শাজারাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় গাছের সন্তান, হযরত খাদিজা (সা.)’র সন্তান আমি, আমি এমন একজনের সন্তান যিনি তাঁর নিজের রক্তে ডুবে গেছেন, আমি এমন একজনের সন্তান যার শোকে রাতের আঁধারে জিনেরা বিলাপ করেছিল, আমি এমন একজনের সন্তান যার জন্য শোক প্রকাশ করেছিল পাখিরা।
আল্লাহর কসম এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই যার প্রপিতামহ হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.), কেন এ লোকগুলো আমার পিতাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে এবং আমাদেরকে রোমানদের মত বন্দী করেছে?...অভিশাপ তোমার (ইয়াজিদ) ওপর যেদিন আমার প্রপিতামহ ও পিতা তোমার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন।

হযরত আলী (আ.)’র বিধবা স্ত্রী উম্মুল বানিন (সা.):

(তিনি ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)'র সত ভাই ও কারবালায় তাঁর প্রধান সেনাপতি হযরত আবুল ফজল আব্বাস (রা.)’র মাতা।)
ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদতের খবর শুনে তিনি বলেছিলেন:
আমার হৃদয়ের সব ধমনী ছিঁড়ে গেছে। আমার সব সন্তান এবং নীল আকাশের নীচে থাকা সব কিছু ইমাম হুসাইন (আ.)’র জন্য কুরবানি হোক।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাক্বির (আ.):

তিনি বলেছেন, রাসূলে খোদার (সা.) কবর জিয়ারত এবং ইমাম হুসাইন (আ.) ও শহীদদের কবর জিয়ারত মক্ববুল বা কবুল হয়েছে এমন হজের ও রাসূল (সা.)'র সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।(মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল। প্রথম খণ্ড, পৃ-২৬৬ এবং কামেল আজ জিয়ারত, পৃ-১৫৬)
ইমাম বাক্বির ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)'র বর্ণনা অনুযায়ী কেউ বেহশতবাসী হতে চাইলে মজলুমের ( ইমাম হুসাইন-আ.) জিয়ারত যেন ত্যাগ না করেন।

* বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.):

"প্রতিটি ময়দানই কারবালা ও প্রত্যেক দিনই আশুরা।"
নবীগণ ও ফেরেশতারা সব সময়ই ইমাম হুসাইন (আ.)'র মাজার জিয়ারতের জন্য মহান আল্লাহর অনুমতি নেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তাঁদের একদলের জিয়ারত শেষ হলে আরেক দল জিয়ারত করতে আসেন।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম মুসা কাজিম (আ.):

মহান আল্লাহ একমাত্র কারবালার মাটিতে আমাদের তথা বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের অনুসারী ও বন্ধুদের জন্য রোগের শাফা বা আরোগ্য রেখেছেন, অন্য সব মাটি খাওয়া হারাম (এমনকি যদি তা আমার কবরের মাটিও হয়)।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.) তাঁর সাহাবী রাইয়ান ইবনে ইবনে শাবিবকে বলেছিলেন:
 
হে ইবনে শাবিব! আইয়ামে জাহিলিয়্যার যুগ তথা অজ্ঞতার যুগেও লোকেরা মহররম মাসে দমন-পীড়ন চালাত না এবং যুদ্ধ ও সংঘাতে লিপ্ত হত না। এসব ছিল সে সময় নিষিদ্ধ। অথচ (ইয়াজিদের যুগে) মুসলমানরাই এ পবিত্র মাসের ও তাদের নিজ নবী (সা.)’র প্রতি মর্যাদা দেখায়নি (কারবালার ঘটনা প্রবাহের সময়)। তারা এই মাসেই নবী(সা.)’র বংশধরকে হত্যা করেছে। .... আল্লাহ তাদের কখনও ক্ষমা করবেন না।
হে ইবনে শাবিব! তুমি যদি কাঁদতে চাও, তাহলে হুসাইনের (আ.) জন্য কাঁদ যাকে হত্যা করা হয়েছিল ভেড়ার মত (তাও পানি না দিয়ে)। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে। তাঁর সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল এমন ১৮ ব্যক্তিকে বিশ্বে যাদের সমকক্ষ আর কেউ ছিল না। সাত আকাশ ও সাত জমিন তাঁর শাহাদতে শোক প্রকাশ করেছে।
হে ইবনে শাবিব! যদি তুমি ইমাম হুসাইন (আ.)’র জন্য এমনভাবে কাঁদ যে তোমার গণ্ডদেশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তাহলে আল্লাহ তোমার সব ছোট বড় গোনাহ মাফ করবেন তা সেইসব গোনাহর সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন।
হে ইবনে শাবিব! যদি তুমি নিষ্পাপ অবস্থায় মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাও তাহলে ইমাম হুসাইন (আ.)’র মাজার জিয়ারত করতে যাও।
হে ইবনে শাবিব! যদি তুমি বেহেশতে আমাদের সঙ্গে উচ্চ মর্যাদা নিয়ে থাকতে চাও তাহলে আমাদের দুঃখে দুঃখী এবং আমাদের সুখে সুখী হও।
 
শহীদ মুখতার সাকাফি (র.):
 
ইমাম হুসাইন (আ.)'র প্রধান ঘাতকদের প্রায় সবাইকে হত্যার পর তিনি বলেছিলেন : গোটা কুরাইশ জাতিকে হত্যা করা হলেও ইমাম হুসাইন (আ.)'র চারটি আঙ্গুলের ক্ষতিপূরণ বা বদলা নেয়া হবে না।  

ইমাম শাফেয়ীর (র.) শোকের কবিতা :

"আমার বেদনার প্রতিক্রিয়ায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে গেল এবং আমার নিদ্রা হরণ করে নিল, এরপর নিদ্রা যে কতদূর?.... কে আমার বাণীকে হুসাইনের কাছে পৌঁছে দেবে?... আলে মুহাম্মাদের (মুহাম্মাদের বংশধরদের) জন্য দুনিয়া প্রকম্পিত হবে, যেহেতু অচিরেই তাঁদের (বেদনার) কারণে পাহাড়গুলো বিগলিত হবে... মুহাম্মাদের বংশধরদের জন্য ভালবাসা যদি গুনাহ হয়ে থাকে তবে এ হচ্ছে সেই গোনাহ যা থেকে আমি কখনও তওবাহ করব না। কিয়ামতের দিন তারাই আমার শাফায়াতকারী যেদিন আমার গোনাহর পরিমাণ হবে অনেক বেশি; সেদিন তাঁরাই হবেন আমার সাহায্যকারী।"

* খাজা মুইনউদ্দিন চিশতি (র.)'র কবিতা:

হুসাইন (আ.) (মুহাম্মদী) ধর্মের কর্ণধার বাদশাহ তুল্য, ধর্ম বলতে হুসাইনকেই বোঝায়, তিনি হলেন ধর্মের আশ্রয়। শির উতসর্গ করলেন কিন্তু বাইআত হলেন না ইয়াজিদের হাতে। তাই বাস্তবিকই বলা যায়, হুসাইন লা-ইলাহা ভিত্তিমূল। হে নবী-দুলাল, তোমার মস্তকেই নবির মুকুট শোভা পায়, হে সম্রাট, তোমার তরবারি নবীর (সা.) ন্যায়-বিচারের প্রতীক। .. যে কাজ কোনো নবীরা করার সুযোগ পায়নি, খোদার কসম, হুসাইন তুমি সে কাজ করেছ। (দিওয়ানই খাজা মুইনউদ্দিন চিশতি)

* বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স:

যদি ইমাম হুসাইন পার্থিব কামনা বাসনার জন্য যুদ্ধ করতেন তাহলে তিনি তাঁর বোন, স্ত্রী ও শিশুদের সঙ্গে আনতেন না। তিনি শুধু ইসলামের জন্যই ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

* ইংরেজ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল:

আল্লাহর প্রতি ইমাম হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের ঈমান ছিল মজবুত। তারা দেখিয়ে গেছেন যে, যেখানে সত্য ও মিথ্যা মুখোমুখি সেখানে সংখ্যার আধিক্য কোনো বিচার্য বিষয় নয়। ইমাম হুসাইন (আ.) মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন তা আমাকে বিস্মিত করেছে।

* বিখ্যাত ইংরেজ প্রাচ্যবিদ অ্যাডওয়ার্ড ব্রাউন:

এমন কোনো অন্তর পাওয়া যাবে কি যে, যখন কারবালার ঘটনা সম্পর্কে শুনবে অথচ দুঃখিত ও বেদনাহত হবে না? এমনকি কোনো অমুসলিমও এই ইসলামী যুদ্ধকে ও তাঁর পতাকাতলে যে আত্মিক পবিত্রতা সাধিত হয়েছে তা অস্বীকার করতে পারে না।

* ইংরেজ ঐতিহাসিক ও পার্লামেন্ট সদস্য এডওয়ার্ড গিবন:

সেই সুদূর অতীতের সেই পরিবেশে ইমাম হুসাইনের মৃত্যুর করুণ দৃশ্য পাষাণতম পাঠকের হৃদয়েও জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি।

* মার্কিন ঐতিহাসিক ওয়াশিংটন আরভিং:

ইমাম হুসাইন ইয়াজিদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু ইসলামের নেতৃত্ব ও আন্দোলনমুখি দায়িত্বভারের কারণেই ইয়াজিদকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। ইমাম বনি উমাইয়ার কবল থেকে ইসলামকে মুক্ত করার জন্য অচিরেই যে কোনো কষ্ট ও নিপীড়নকে বরণ করে নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। শুষ্ক মরু প্রান্তরের প্রখর সূর্য তাপের নীচে এবং আরবের উত্তপ্ত বালুরাশির মাঝে হুসাইনের আত্মা অবিনশ্বর হয়ে আছে।

* ইংরেজ ঐতিহাসিক ফ্রেডরিক জেমস:

ইমাম হুসাইন ও অন্যান্য বীর শহীদদের শিক্ষা হল, দুনিয়ায় চিরন্তন করুণা ও মমতার মূল নীতি বিদ্যমান যা অপরিবর্তনীয়। অনুরূপভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, যখন কেউ এই গুণগুলোর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং এ পথে অবিচলতা দেখাতে সক্ষম হবে তখন এইসব মূলনীতি দুনিয়ায় চিরন্তন ও চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক টমাস মাসারিক:

* আমাদের পাদ্রিরাও হযরত মাসিহর (ঈসা- আ.) শোক-গাঁথা বর্ণনার মাধ্যমে লোকদের প্রভাবিত করেন। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)’র অনুসারীদের মধ্যে যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায় তা হযরত মাসিহ’র অনুসারীদের মাঝে পাওয়া যাবে না। আর এর কারণ মনে হয় এটাই যে, ইমাম হুসাইন (আ.)’র শোকের বিপরীতে ঈসা (আ.)’র শোক যেন বিশালদেহী এক পর্বতের সামনে ক্ষুদ্র এক খড়কুটোর সমান।

বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও পর্যটক মরিস ডু কিবরি:

ইমাম হুসাইন (আ.)’র শোক মজলিসে বলা হয় যে, তিনি মানুষের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ইসলামের উচ্চ মহিমাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জান, মাল ও সন্তানদেরকে উতসর্গ করেছেন। তিনি ইয়াজিদের সাম্রাজ্যবাদ ও ছল-চাতুরীকে মেনে নেননি। তাই আসুন, আমরাও তাঁর এ পন্থাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি এবং সাম্রাজ্যবাদীদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হই। আর সম্মানের মৃত্যুকে অবমাননার জীবনের ওপর প্রাধান্য দেই।

জার্মান প্রাচ্যবিদ মরবিন :

ইমাম হুসাইন (আ.) প্রিয়তম স্বজনদেরকে উতসর্গ করা এবং নিজ অসহায়ত্ব ও সত্য পন্থাকে প্রমাণিত করার মাধ্যমে দুনিয়াকে ত্যাগ ও আত্মোতসর্গের শিক্ষা দিয়েছেন এবং ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের নামকে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর বিশ্বে একে উচ্চকণ্ঠী করেছেন। ইসলামী জগতের এই সাহসী সেনা দুনিয়ার মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, অত্যাচার, অবিচার ও নিপীড়ন স্থায়ী নয়। আর অত্যাচারের ভিত বাহ্যিক দিক থেকে যত মজবুতই হোক না কেন, সত্যের বিপরীতে তা বাতাসে উড়ন্ত খড়কুটোর মত।

প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ নিকলসন:

বনি উমাইয়া ছিল অবাধ্য ও স্বৈরাচারী। তারা ইসলামের বিধিবিধানকে উপেক্ষা করেছে এবং মুসলমানদের লাঞ্ছিত করেছে। আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, ইসলাম আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব শাহানশাহীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং ধর্মীয় শাসন শাহী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ইতিহাস ন্যায্যত নির্দেশ করে যে, হুসাইন (আ.)’র রক্তের দায় বনি উমাইয়ার উপরে।

ইংরেজ প্রাচ্যবিদ স্যার পার্সি সয়েক্স:

সত্যিকার অর্থে এ মুষ্টিমেয় কয়েকজন যে সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা এমন উন্নতমানের ছিল যে, এ দীর্ঘ শতাব্দীকাল ধরে যারাই এ ব্যাপারে শুনেছে মনের অজান্তেই প্রশংসায় মুখ খুলেছে। হাতে গোনা এ কয়েকজন সাহসী পুরুষ কারবালার প্রতিরক্ষাকারীদের মত নিজেদের সমুন্নত নামকে চিরকালের জন্য অক্ষয় করে রেখেছেন।

খ্রিস্টান গবেষক অ্যান্টন বারা :

যদি হুসাইন (আ.) আমাদের খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে হতেন তাহলে প্রত্যেক দেশেই তাঁর জন্য পতাকা উড়াতাম এবং প্রত্যেক গ্রামেই তাঁর জন্য মিম্বার স্থাপন করতাম। আর মানুষকে হুসাইন (আ.)’র নামে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাতাম।

মিশরের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা মরহুম মুহাম্মাদ জগলুল পাশা:

ইমাম হুসাইন (আ.) এ কাজের মাধ্যমে নিজের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ফরজ পালন করেছেন। এ ধরনের শোক মজলিসগুলো মানুষের মধ্যে শাহাদতের মন মানসিকতা গড়ে তোলে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে তাদের অভিপ্রায়কে বলীয়ান করে।

খ্রিস্টান পণ্ডিত ও সাহিত্যিক জর্জ জুরদাক:

ইয়াজিদ যখন ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উতসাহিত করত এবং রক্তপাত ঘটানোর নির্দেশ দিত তখন তারা বলত, কতো টাকা দেবেন? কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গীরা তাঁকে বলতেন, আমরা আপনার সঙ্গে রয়েছি। আমাদেরকে যদি সত্তুর বারও হত্যা করা হয় তবুও পুনরায় আপনার পক্ষে যুদ্ধ করতে ও নিহত হতে চাইব।

** ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা মহাত্মা গান্ধী:

আমি মনে করি ইসলাম তরবারির জোরে নয়, বরং ইমাম হুসাইন (আ.)'র চরম বা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলেই বিকশিত হয়েছে।
ইমাম হুসাইনের মহত আত্মত্যাগের ব্যাপক প্রশংসা করছি এ কারণে যে তিনি মৃত্যু ও পিপাসার যাতনা সয়ে নিয়েছিলেন নিজের জন্য, নিজ সন্তানদের জন্য এবং নিজ পরিবারের জন্য, আর এই সবই সয়েছেন যাতে জালেম শাসকের কাছে নত হতে না হয়। মজলুম হওয়া অবস্থায় কিভাবে বিজয় অর্জন করতে হয় আমি তার শিক্ষা পেয়েছি ইমাম হুসাইনের কাছে।
ভারত যদি একটি বিজয়ী রাষ্ট্র হতে চায় তাহলে তাকে ইমাম হুসাইনের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
ইমাম হুসাইনের ৭২ জন সেনার মত সেনা যদি আমার থাকতো তাহলে আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের স্বাধীনতা এনে দিতে পারতাম।

* রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:

ন্যায়বিচার ও সত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অস্ত্র ছাড়াই বিজয় আসতে পারে জীবন উতসর্গ করার মাধ্যমে ঠিক যেভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইমাম হুসাইন।
ইমাম হুসাইন মানবতার নেতা
ইমাম হুসাইন শীতলতম হৃদয়কেও উষ্ণ করেন।
হুসাইনের আত্মত্যাগ আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে তুলে ধরে।

* কাজী নজরুল ইসলাম:

"খাতুনে জান্নাত মা আমার হাসান হোসেন চোখের জল"
" আঁজলা ভরে আনলো কি প্রাণ কারবালাতে বীর শহীদান?"
"হাসানের মত পিব পিয়ালা সে জহরের
হোসেনের মত নিব বুকে ছুরি কহরের
আসগর সম দেব বাচ্চাদের কুরবান
জালিমের দাদ নেব দেব আজ গোরজান
সখিনার শ্বেত বাস দেব মাতা কন্যায়
কাশিমের মত দেব জান রুধি অন্যায়
মহরম কারবালা কাঁদো হায় হোসেনা
দেখ মরু সূর্য এ খুন যেন শোষে না" (মহররম)
….
...(যদি) হাসান হোসেন হেসে হেসে নাচত আমার বক্ষে এসে
চোখে আমার বইত নদী পেয়ে সে নেয়ামত.... (ইসলামী গান)
বহিছে সাহারায় শোকের লু হাওয়া
দুলে অসীম আকাশ আকুল রোদনে
নুহের প্লাবন আসিল ফিরে যেন / ঘোর অশ্রু শ্রাবণ-ধারা ঝরে সঘনে
.. কাঁদে গিরিদরী মরু বনস্থালী / কাঁদে পশুপাখী তরুলতার সনে
... বিশ্ব যাবে মুছে মুছিবে না আঁসু/ চিরকাল ঝরিবে কালের নয়নে
.... আসমান ও জমিন রহিবে যতদিন /সবে কাঁদিবে এমনি আকুল কাঁদনে (কাওয়ালি: শোকের লু হাওয়া)

* কবি ফররুখ আহমদ :

জীবন দিয়ে যে রাখলো বাঁচায়ে দ্বীনি ইজ্জত বীর জাতির/দিন শেষে হায় কাটলো শত্রু সীমার সে মৃত বাঘের শির।
তীব্র ব্যথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তাচলে,/ডোবে ইসলাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে,
কলিজা কাঁপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহু সফেন/ওঠে আসমান জমিনে মাতম; কাঁদে মানবতা: হায় হোসেন। হায় হোসেন। (কবি ফররুখ আহমদের ‘শহীদে কারবালা ‘থেকে)
 
ইরানি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর আলি শরিয়তি:

আমি সেইসব মানুষের ব্যাপারে বিস্মিত যারা নানা রকম জুলুম সয়ে নিচ্ছেন অথচ স্বাধীন জীবন যাপনকারী হুসাইনের জন্য কাঁদছেন?
 
মহাকবি ডক্টর ইকবাল :

(কারবালা ও আশুরা সম্পর্কিত বহু চমতকার মন্তব্য দেখা যায় ইকবালের নানা কবিতায়। তার কবিতা হতে এখানে দুটি মন্তব্য তুলে ধরা হল:)
হুসাইনের তরবারি ছিল 'লা' বা না যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর এই তরবারি দিয়ে তিনি কুফুরিকে বা ঈমানহীনতাকে ধ্বংস করেছেন। কারবালায় তিনি তাওহিদের চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। এটা আমাদের মুক্তির শ্লোগান। আমরা আসলে হুসাইনের কাছ থেকে তাওহিদের শিক্ষা পেয়েছি। ....
রাজ-রাজড়াদের যুদ্ধের মাধ্যমে যে শান-শওকত অর্জিত হয় তা কখনও স্থায়ী হয় না। সিরিয়া ও বাগদাদের সিংহাসনগুলোর অহংকার বা গরিমা আজ আর নেই। কেউই এখন আর (স্পেনের রাজাদের রাজধানী) গ্রানাডার শান-শওকতের কথা স্মরণ করে না। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) লা ইলাহা ইল্লাহ'র যে সুমহান আহ্বান জানিয়ে গেছেন কারবালায় তা আজও আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এবং আমাদের হৃদয়গুলোকে শিহরিত করছে।

মিশরীয় পণ্ডিত আল্লামা তানতাভি:

হুসাইনি কাহিনী স্বাধীনচেতাদেরকে আল্লাহর রাহে আত্ম-কুরবানি করতে মানুষকে প্রেরণা যোগায়। আর মৃত্যুকে সর্বোত্তম কামনায় পরিণত করে। তখন শাহাদতের জন্য একে-অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে।

মরহুম মুফতি শফি (র.):

পবিত্র আহলে বাইতের মুহাব্বাত ঈমানের অংশ বিশেষ। ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ওপর নিপীড়নমূলক ঘটনা এবং হৃদয়বিদারক শাহাদত যার অন্তরে শোক ও বেদনা সৃষ্টি করে না, সে মুসলমান তো নয়ই, মানুষ নামেরও অযোগ্য।

মাওলানা মোহাম্মাদ আলী জওহার:

‘কাতলে হুসাইন আসল মে মারগে ইয়াজিদ হ্যায়, ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালা কে বাদ।’
অর্থাত হুসাইনের নিহত হওয়ার ঘটনা আসলে ইয়াজিদেরই মৃত্যু, ইসলাম প্রতিটি কারবালার পর পুনরুজ্জীবিত হয়।
 
শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারি (র.):
 
ইমাম হুসাইন (আ.) নিজের বাণীকে  (রাজা-বাদশাহদের মত) না পাথরের ওপর রং-কালি দিয়ে লিখেছেন, না খোদাই করে রেখে গেছেন। তিনি যা কিছু বলেছেন তা (আজো) বাতাসে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং মানুষের কানে ঝংকৃত হয়। তা লোকদের হৃদয়-পটে এমনভাবে লিপিবদ্ধ হয় যে তা কখনও হৃদয়-পট থেকে মুছে যায়নি। তিনি এ সত্যের ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। তিনি তাঁর সামনে থাকা ভবিষ্যতকে সঠিকভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন। আর তা হল, এরপর আর কেউই হুসাইনকে হত্যা করতে পারবে না এবং তিনি আর কখনও নিহত হবেন না।
ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর মহান সঙ্গীদের মধ্যে সমন্বিত হয়েছিল প্রেমিক ও সংস্কারকদের যুক্তি। একজন সংস্কারক ও একজন আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী প্রেমিকের ব্যক্তিত্ব যখন একদেহে লীন হয়ে যায় তখন সেখানে জন্ম নেয় একজন শহীদ। ইমামের শহীদ সঙ্গীরা ছিলেন এই প্রক্রিয়ারই ফসল। ইমাম হুসাইন (আ.) তো তাদেরকে রাতের আঁধারে আত্মীয়দের হাত ধরে একে-একে পালিয়ে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ইমামের সঙ্গে থেকেই শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করতে চেয়েছেন। ইমাম অবশ্য এটাও বলেননি, অসম জিহাদের জন্য কারবালায় তাঁর সঙ্গে থেকে লড়তে আগ্রহী সঙ্গীদের অবস্থান করা হবে বোকামি, হারাম বা আত্মঘাতী ততপরতা মাত্র। তাঁদের কেউ কেউ ইমামের জন্য ৭০ বার কেউ কেউ হাজার বার শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা বলে গেছেন।
 
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনী (রহঃ):
 
তিনি বলেছেন, 'আমাদের যা কিছু অর্জন করেছি, তার সবই পবিত্র আশুরা ও শাহাদাতে কারবালা থেকে'-অর্থাত্‍ আমরা যা যা ভাল জিনিস পেয়েছি, নতুন সমাজ গড়েছি, বিশ্বের বুকে নতুন করে মহানবী (সাঃ) আনীত প্রকৃত ইসলামকে পেয়েছি-তার সবই শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাত থেকেই পেয়েছি ৷
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইমাম খোমেনী (র.) বলেছেন: আমাদের যা কিছু অর্জন তার সবই মহররম ও সফর মাসের অর্জন।
ইমামদের ও বিশেষ করে সাইয়্যেদুশ শুহাদা ও মজলুমদের নেতা আবা আবদিল্লাহ হুসাইন (আ.)’র শোক অনুষ্ঠানের প্রতি সম্মান দেখাবেন। (মহান আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, নূরনবী এবং সকল সালেহ বান্দার পূর্ণ দরুদ ও সালাম তাঁর পবিত্র ও নির্ভীক রুহের ওপর বর্ষিত হোক।) কারবালার প্রেরণাদায়ক ঐতিহাসিক মহাঘটনার স্মৃতিচারণের জন্য ইমামদের নির্দেশনাবলী জনগণের স্মরণ রাখা উচিত। নবী(সা.)’র আহলে বাইতের দুশমনদের ওপর যেসব ধিক্কার ও অভিশাপ আপতিত হয়েছে সেসব আসলে যুগ যুগ ধরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগুলোর বীরত্বপূর্ণ প্রতিবাদ। আপনাদের জানা উচিত উমাইয়্যাদের (তাদের ওপর আল্লাহর লা’নত) অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধিক্কার, নিন্দাবাদ ও অভিশাপের কথা। যদিও তারা এখন পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, তবুও এই ফরিয়াদ ইঙ্গিত বহন করে বর্তমান দুনিয়ার জালিমদের বিরুদ্ধে মজলুম জনতার আর্ত চিতকার। এ জুলুম বিধ্বংসী ফরিয়াদকে সংরক্ষণ করা জরুরি। ইমামদের (আ.) স্মরণে শোকগাথা ও প্রশংসাসূচক কাব্যগুলোতে প্রতিটি যুগের জালিমদের হাতে সংঘটিত অত্যাচার ও দুঃখজনক ঘটনাগুলো জোরালোভাবে আলোচিত হওয়া উচিত। আর বর্তমান যুগ হচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া ও তাদের দোসরদের, বিশেষ করে আল্লাহ পাকের পবিত্র হারামের প্রতি বিশ্বাসঘাতক সৌদি রাজবংশের (তাদের ওপর আল্লাহ ও তার ফেরেশতা ও রাসূলগণের লা’নত বর্ষিত হোক) হাতে মুসলিম বিশ্বের নির্যাতিত হওয়ার যুগ। আহলে বাইতের স্মরণে রচিত শোকগাথা ও প্রশংসাসূচক কাব্যগুলোতে বর্তমানকালের এ সকল অত্যাচারীর অত্যাচার ও দুঃখজনক ঘটনাগুলোও জোরালোভাবে স্মরণ করা এবং তাদের প্রতি অভিশাপ ও ধিক্কার দেয়া উচিত। (হযরত ইমাম খোমেনী-র.’র ওসিয়তনামা ‘অন্তিম বাণী’)
 
প্রথম দিন থেকেই ইমাম হুসাইন (আ.)’র  উত্থানের বা জিহাদের লক্ষ্য ছিল ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, ভালো কিছুর বাস্তবায়ন সহজে হয় না, কিন্তু মন্দের চর্চা হয় সহজেই। নিষিদ্ধ বিষয়ের চর্চাই সমাজের সব অনিষ্টের কারণ। তাই সমাজের সব খারাপ ও শয়তানি কাজের মূলোতপাটন ও জালিমের শাসন উতখাত করা ছিল ইমাম হুসাইন (আ.)’র লক্ষ্য।...
 
শহীদদের নেতা দেখলেন যে আদর্শ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ইমাম হাসান ও আমিরুল মুমিনিন ইমাম আলী (আ.)’র জিহাদ এবং পৌত্তলিক ও জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে নবীগণের সংগ্রাম কোনো দেশ বা ভূখণ্ড দখলের সংগ্রাম ছিল না। কারণ, তাঁদের কাছে সারা দুনিয়ারও কোনো মূল্য ছিল না।... কুফা ও কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.)’র জিহাদ ছিল জুলুম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের সংগ্রাম। ...মুসলিম জাতিকে পুনর্গঠিত করতে ও ইয়াজিদের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করতে শহীদদের নেতা জেগে ওঠাকে দায়িত্ব মনে করলেন। নিজের ও নিজ সন্তানের রক্ত দিলেন এবং ইসলামের জন্য নিজের সব কিছুই দিলেন। ...নবী-রাসূলদের মত তিনিও জানতেন সমাজের সংস্কারের জন্য ব্যক্তি স্বার্থ কুরবানি দিতে হয়, তা সেই স্বার্থ যত বড়ই হোক না কেন।
 
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা হযরত  আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী:
 
আশুরার পুণ্য-স্মৃতি নিছক একটি স্মৃতির বর্ণনা ও রোমন্থন নয়, বরং তা হচ্ছে এমন এক ঘটনার বর্ণনা যার রয়েছে অগণিত দিক ও মাত্রা। এইসব বিষয়ের আলোচনা অপরিসীম আধ্যাত্মিক আশীষ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আর এ জন্যই ইমামদের যুগে ইমাম হুসাইন (আ.)’র জন্য কাঁদা ও কাঁদানোর এক বিশেষ স্থান বা মর্যাদা ছিল।  কেউ যেন না ভাবেন যে, চিন্তা ও যুক্তি-প্রমাণ থাকতে আবার কান্নাকাটি ও পুরনো সব আলোচনার দরকার কী? না, এটা ভুল। এসব কিছুরই নিজ নিজ গুরুত্ব রয়েছে। এমন অনেক বিষয় আছে যা ভক্তি ও ভালবাসা দিয়ে সমাধান করতে হয়। সেখানে যুক্তি ও প্রমাণই যথেষ্ট নয়। .. .. ইমাম হুসাইন (আ.)-কে সবচেয়ে নিঃসঙ্গ ও প্রবাসী অবস্থায় জিহাদ করতে হয়েছিল। নিজের চোখের সামনে কুরবানি করতে হয়েছে সন্তান, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় এবং তিনি জানতেন শাহাদতের পরও ঘটবে কতসব বর্বরতা! ...সর্বপ্রথম শোকগাথা ও ফরিয়াদ জানালেন বোন জয়নাব (সা.):
‘হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! আকাশের ফেরেশতারা আপনার ওপর দরুদ পাঠায়, এ হলো আপনার হুসাইন, রক্ত-রঞ্জিত- কর্তিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, লুণ্ঠিত পাগড়ী (রাসূলের প্রদত্ত) ও বস্ত্র’-এভাবেই ঘটনা সবার কাছে প্রচার করা হয়।  তিনি ঘটনা তুলে ধরেন কুফায়, সিরিয়ায় ও মদীনায়। অথচ ইয়াজিদি গোষ্ঠী এ ঘটনাকে গোপন রাখতে চেয়েছিল।.. শোকানুষ্ঠান এক মহানেয়ামত। এ নেয়ামত ইতিহাসে এমন কাজ করেছে যে যুগে যুগে জালিম শাসকরা আশুরা ও ইমাম হুসাইন (আ.)’র মাজারকে ভয় পেয়ে এসেছে। সেই উমাইয়া যুগ থেকে এ ভয় আজো অব্যাহত রয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবই এর প্রমাণ।
 হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন ইতিহাসের এক অনন্য অত্যুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব এবং নবীপ্রেম ও খোদাপ্রেমের পরিপূর্ণ আদর্শ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, হযরত হুসাইন বিন আলী (আ.) আরওয়াহুনা ফাদা (তাঁর জন্য আমাদের আত্মাগুলো উতসর্গ হোক) বিশ্বের পবিত্র তথা নিষ্পাপ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সূর্যের মতই অনন্য, প্রোজ্জ্বল।  নবী-রাসূল, আউলিয়া, ইমাম, শহীদ ও সালেহীনদের (উচ্চ পর্যায়ের সতকর্মশীল) কথাই ধরুন। তাঁরা যদি আকাশের চাঁদ ও তারকা হয়ে থাকেন তবে এই মহামানবের অনন্যতা সেখানে সূর্যের মতই জ্বলজ্বল।... হুসাইন বিন আলী (আলাইহি সাল্লাত ওয়া সাল্লাম) এক পরিপূর্ণ আদর্শ। কারণ, তাঁর মধ্যে আত্মকেন্দ্রীকতা, আমিত্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, গোত্রগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থান্ধতাও দেখা যায় না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে,   লক্ষ পূরণের জন্য ‘উপযুক্ত সুযোগ বা সময় চিহ্নিত করা’ ছিল  হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র অসংখ্য মহতী গুণের মধ্যে অন্যতম প্রদীপ্ত গুণ। ইমাম লক্ষ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত সুযোগ বা সময় চিহ্নিত করতে ভুল করেননি। উপযুক্ত সুযোগ বা পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া মাত্রই তা বুঝতে পেরেছেন তিনি এবং (ধর্মকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য চরম আত্মত্যাগের) সেই মহিমান্বিত লক্ষ্য পূরণ করেছেন।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বিশ্বাস করেন, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র অসংখ্য মহতী গুণের মধ্যে তিনটি বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যই এক মহান বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য ছিল অতি জরুরি। এ তিনটি গুণ হল, আন্তরিকতা, মহান আল্লাহর ওপর গভীর বিশ্বাস ও আস্থা এবং সুযোগ চিহ্নিত করা।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র আরো কিছু অত্যুজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন: তাঁর ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক হল জিহাদ, শাহাদত ও সেই প্রবল ঝড় যা তিনি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাসে। সেই ঝড় মুসলমানদেরকে ও মানবতাকে দিয়ে গেছে কত মহাকল্যাণ ও বরকত যা চিরকাল টিকে থাকবে। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক হল আধ্যাত্মিক ও এরফানি দিক যা আমরা লক্ষ করি আশুরা ও কারবালার মহাবিপ্লবের ঘটনায়। ... সেই প্রথম মুহূর্ত থেকে এ মহান ইমাম যখন কারবালার তপ্ত মরুতে পা রাখেন তখন থেকে সেই শেষ সময় পর্যন্ত তিনি বলেছিলেন: হে খোদা! আমি তোমার মাধ্যমে নির্ধারিত আমার তকদিরে বা ভাগ্যে যা ঘটছে তাতে সন্তুষ্ট এবং আমি তোমার নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করছি। তিনি সব সময়ই আল্লাহকে স্মরণ করেছেন, আল্লাহর প্রতি চরম বিনম্র থেকেছেন এবং কেবল আল্লাহর ওপরই ভরসা করেছেন।
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র ধৈর্য প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন: ধৈর্য মানে কেবল এটা নয় যে, মানুষকে নির্যাতন করা হলে বা তার সন্তানদেরকে নিজের সামনেই নির্যাতন বা হত্যা করা হলে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, অবশ্য এটাগুলো প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এমন সব কুমন্ত্রণা ও পরামর্শ উপেক্ষা করা যা বাহ্যিক দিক থেকে কারো কারো কাছে যৌক্তিক মনে হলেও আসলে তা সেই সংগ্রামের তথা বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের পথ অব্যাহত রাখতে মানুষকে বাধা দেয়। ইমাম (আ.)-কেও অনেকেই বলেছিল: জনাব! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? নিজেকেও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এবং পরিবারকেও! অনেকেই ইমামের (আ.) সঙ্গে দেখা করে তাঁকে প্রতিরোধের নীতির জন্য সমালোচনাও করেছেন। এই পরামর্শদাতা ও তিরস্কারকারীরা অসত বা সাধারণ মানুষও ছিলেন না। তাদের কেউ কেউ ছিলেন ইসলামের গণ্যমান্য ব্যক্ত্বিত্ব। কিন্তু তারা ভুল বুঝেছিলেন। মানবীয় ভুল তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই তারা চেয়েছিল হুসাইন বিন আলী (আ.)-কেও সেই দুর্বলতার শিকার করতে। কিন্তু ইমাম ধৈর্য ধরেছিলেন এবং সেইসব ভুল পরামর্শ বা কুমন্ত্রণার কাছে নতি স্বীকার করেননি। যারাই ইমামের সঙ্গে থেকে গিয়েছিলেন তারা সবাই এই আধ্যাত্মিক ও আত্মিক সংগ্রামে বিজয়ী হয়েছিলেন।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে সে সময় যারা উচ্চতর গুণ ও হীনতম নিচু স্বভাবের মধ্যে আধ্যাত্মিক সংগ্রামে বিজয়ী হয়ে বিবেক বা বুদ্ধিমত্তাকে অজ্ঞতার ওপর প্রাধান্য দিতে পেরেছিলেন-এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল খুবই কম বা মুষ্টিমেয়। কিন্তু এই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিরা সেই মর্যাদার লড়াইয়ে অবিচল থাকার ব্যাপারে  চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়ায় শত শত ও  হাজার বছর পরও তাঁরা হয়ে আছেন মানুষের জন্য আদর্শ। মানব জাতি তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে ও তাঁদেরই পথ অনুসরণ করছে।  ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, সেই মহামানবরা যদি ওইসব উচ্চতর গুণকে নিজেদের মধ্যে নীচ স্বভাবের মোকাবেলায় বিজয়ী করতে না পারতেন তাহলে ইতিহাসে উচ্চতর বা মহতী গুণের বৃক্ষ শুকিয়ে মরে যেত। (রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়
পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন একটি অকাট্য ...
পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ
রজব মাসের ফজিলত ও আমলসমূহ
তাসাউফ : মুসলিম উম্মাহর সেতুবন্ধন
শাবে জুম্মা
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
‘ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিপ্লবই ...

 
user comment