আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা-: ইয়েমেনের উপর সৌদি হামলার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ মুভমেন্টের নেতা বলেছেন: যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও জায়নবাদী ইসরাইলের সহযোগিতায় সৌদি আরব ও তার মিত্ররা প্রতিবেশি দেশ ইয়েমেনের উপর হামলা চালিয়েছে।
আব্দুল মালে হুথি তার বক্তব্যে সৌদি আরবকে বর্তমান সময়ের কারুন বলে আখ্যায়িত করেন।
সৌদি আরব প্রতিবেশির অধিকার রক্ষা করেনি এবং অন্যায়ভাবে ইয়েমেনের উপর হামলা চালিয়েছে –এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সহযোগিতায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
আনসারুল্লাহ মুভমেন্টের প্রধান এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা জানিয়ে বলেন: আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি শুধুমাত্র শক্তিধর দেশগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে মাথা ঘামায়। জাতিসংঘের সনদ নির্যাতিত মানুষের জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং তা শুধুমাত্র দাম্ভিক ও স্বৈরাচারী সরকারগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।
আব্দুল মালেক হুথি বলেন: এ আগ্রাসনের জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় এবং সকল আইন ও নীতিগত বাধা সরিয়ে ফেলা হয়, যাতে ইয়েমেনের বেসামরিক জনগণ হত্যার বিষয়টি স্বাভাবিক দেখায়।
এ সময় তিনি ইয়েমেনের জনগণের বিষয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ’র অবস্থানের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য ভাড়া করার মাধ্যমে সৌদি আরব কথিত যে জোট গঠন করেছে তা শুধুমাত্র ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনকে আঘাত ও ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন: মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর প্রতি আস্থাশীল ইয়েমেনের জনগণ অত্যাচার ও অপমানকে সহ্য করবে না।
তার সংযোজন: এ আগ্রাসন থেকে সৌদি আরব কোনভাবেই লাভবান হয়নি। এ হামলা থেকে তারা সুফলের চেয়ে কুফলই বেশী পেয়েছে।
তিনি তার বক্তব্যের অপর অংশে বলেন: আগ্রাসন সমাপ্ত করার প্রচেষ্টা ফলপ্রসু হবে বলে আমি আশাবাদি। যুদ্ধের সমাপ্তি ইয়েমেনের জনগণের অন্তরের চাওয়া। যদি এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে আমরা আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত এবং আগ্রাসন অব্যাহত থাকার ক্ষেত্রে এর মোকাবেলা আমাদের নিকট বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী।
সৌদি কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে আনসারুল্লাহ মুভমেন্টের নেতা বলেন: ইসলামের কোলে ফিরে আসুন। যা কিছু আপনারা করছেন মার্কিনীরা ও ইসরাইলিরা সেগুলোতে আপনাদের কল্যাণ চায় না।
আলে সৌদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বৃথা এ কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিন। কেননা আগ্রাসনের সময় যতবেশি দীর্ঘ হবে এর নেতিবাচক প্রভাব সৌদি আরবের উপর ততটাই বেশী পড়বে।
ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে গত শুক্রবার তিনি এ ভাষণ দেন।
এদিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রায় প্রতি শুক্রবারের মত গত শুক্রবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আগ্রাসন বিরোধী জনসমাবেশ ও গণ-মিছিল। লাখ লাখ জনতা মার্কিন ও সৌদি সরকার এবং ইসরাইল-বিরোধী শ্লোগান দেন। গত পরশুও (শুক্রবার) সেখানকার সড়কগুলো ছিল প্রতিবাদী জনতায় ভরপুর। লাখ লাখ ইয়েমেনি সমবেত হন সানার সাবায়িন স্কয়ারে। রাজধানী সানা ছাড়াও ইয়েমেনের অন্যান্য শহরগুলোতেও সৌদি আগ্রাসন বিরোধী ব্যাপক গণ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ছিল ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর প্রথম বার্ষিকী। সানায় প্রতিবাদী ইয়েমেনিদের হাতে ছিল দেশটির জাতীয় পতাকা এবং জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ আবদুল মালিক হুথির ছবি। রিপোর্ট আইআরআইবির।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে অন্তত নয় হাজার ৪০০ ইয়েমেনি নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী নিহতদের অন্তত সাড়ে তিন হাজারই বেসামরিক নাগরিক। নিহত শিশু ও নারীর সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও ২৫ লাখ ইয়েমেনি হয়েছে গৃহহারা ও শরণার্থী এবং প্রায় ২ কোটি ইয়েমেনি হয়েছে খাদ্যসহ নানা ধরনের জরুরি ত্রাণ সাহায্যের মুখাপেক্ষী।#
source : abna24