আবনা ডেস্ক : নাইজেরিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের আত্মঘাতী বোমা হামলায় গত বছরজুড়ে শিশুদের ব্যবহার বেড়েছে। সংগঠনটির হয়ে যত আত্মঘাতী হামলা হয়েছে তার প্রতি ৫টির ১টি হামলা চালিয়েছে শিশুরা।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ‘ইউনিসেফ’ প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া ও চাদে হামলা চালানো শিশুদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই মেয়ে এবং তাদের অনেককে হামলা চালানোর আগে মাদক সেবন করিয়ে তারপর শরীরে বিস্ফোরক বেল্ট বেঁধে দেওয়া হয়।
সন্ত্রাসী দল বোকো হারাম মূলত ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া ও চাদে সক্রিয়। ২০১৪ সালে বোকো হারাম চারটি হামলা চালালেও ২০১৫ সালে গোষ্ঠীটির হামলার সংখ্যা ১১ গুণ বেড়েছে। অর্থাৎ, গত বছর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৪টি হামলা চালিয়েছে বোকো হারাম।
দুইবছর আগে নাইজেরিয়ার চিবুক শহরে একটি আবাসিক স্কুল থেকে দুইশতাধিক মেয়েকে অপহরণ করে বোকো হারাম। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয় এবং ‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস’ নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু এতো দিনেও অপহৃত মেয়েদের কেউই ফিরে আসেনি।
ওই ঘটনার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে জাতিসংঘ ‘বেয়ন্ড চিবুক’শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অপহরণ করা ছেলে শিশুদের বোকো হারামের যোদ্ধা বানানো হয় এবং পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে তাদের নিজ পরিবারে হামলা চালাতে বাধ্য করা হয়।
মেয়ে শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে বোকো হারাম যোদ্ধাদের বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী যে অপহরণের শিকার হয়েছিল এবং বর্তমানে সন্তানসহ নাইজেরিয়ার একটি ক্যাম্পে বসবাস করছে সে ইউনিসেফকে জানায়, মৃতুর হুমকি দেওয়ার পরও সে বোকো হারাম যোদ্ধাদের বিয়ে করতে রাজি হয়নি।
“বিয়ে করব না বলে জানিয়ে দেওয়ার পর তারা রাতে আমার কাছে আসতে শুরু করে। তারা আমাকে একটি ঘরে প্রায় একমাস আটকে রাখে এবং আমাকে বলে, তুমি এটা পছন্দ করছ, নাকি করছো না আমরা এরই মধ্যে তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছি।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মঘাতী হামলায় ক্যামেরুনের শিশুদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এমনকি আট বছরের শিশুদের দিয়েও আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সেখানে আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কয়েকটি সম্প্রদায় শিশুদের তাদের নিরাপত্তায় হুমকি হিসেবেও মনে করতে শুরু করেছে। শিশুদের প্রতি এই অবিশ্বাস ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।”
বোকো হারাম এর অর্থ পশ্চিমা শিক্ষা নিষিদ্ধ। জঙ্গি এই গোষ্ঠীটি প্রায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনে প্রায় দুই হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, ধ্বংস করা হয়েছে, লুটপাট চালানো হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বা গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া, যুদ্ধের কারণে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
source : abna24