নাম : হোসাইন (আল্লাহর আদেশক্রমে নির্ধারিত তৃতীয় ইমাম )।
ডাকনাম : আবু আবদিল্লাহ।
উপাধি : খামেসে আলে ‘আবা,সিবত,শহীদ, ওয়াফী,যাকী।
পিতা : হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আ.),
মাতা : হযরত ফাতেমা (আ.)।
জন্ম তারিখ : শনিবার, ৩ শাবান ৪র্থ হিজরী।
জন্মস্থান : মদীনা। বয়সকাল : ৫৭ বছর।
শাহাদাতের কারণ : ইয়াযীদ ক্ষমতাসীন হবার পর ইমাম হোসাইন তাকে অযোগ্য বলে মনে করতেন বিধায় তার হাতে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। আর ইয়াযীদের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য আল্লাহ তা’আলার হুকুমে মদীনা থেকে মক্কায় , এরপর কুফা ও কারবালার দিকে রওয়ানা হন। তিনি তার সহচরবৃন্দসহ তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইসলামের দুশমনদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।
তার হত্যাকারী : সালেহ ইবনে ওয়াহা মুযনী,সিনান ইবনে আনাস ও শিমর ইবনে যিলজওশন (তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক)।
শাহাদাত বরণের দিন : ১০ মুহররম শুক্রবার, ৬১ হিজরী।
শাহাদাত ও দাফনের স্থান : কারবালা (বর্তমান ইরাকে অবস্থিত)।
ইমাম হোসাইন নবী করীম (সা.)-এর বরকতপূর্ণ জীবনকালে শৈশবের ৬ বছর অতিবাহিত করেন।
তিনি ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিত্ব । হযরত নবী করীম (সা.) ও আলী (আ.)-এর বীরত্ব তার মধ্যে সমাবিষ্ট ছিল । আল্লাহ তা’আলা তার মাযারের মাটিতে রোগমুক্তি এবং মাযারের অভ্যন্তরকে দোয়া কবুলের স্থানে পরিণত করেছেন।
পয়গাম্বর (সা.) তার সম্পর্কে বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন।’ পয়গাম্বর (সা.) তার এবং তার বড়ভাই ইমাম হাসান (আ.) সম্পর্কে বলেছেন : ‘আমার দুই সান্তান হাসান ও হোসাইন উম্মতের সর্দার। তারা দায়িত্ব গ্রহণ করুক বা না করুক।’ ৫০ হিজরীতে ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাত বরণের পর তিনি উম্মতের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আমীর মু’আবিয়া ২০ বছর যাবৎ জুলুমপূর্ণ শাসন ও হত্যাকাণ্ড বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন পরিচালনার পর ৬০ হিজরীতে মারা যান। তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে কৃত চুক্তির বরখেলাফ করে স্বীয় সন্তান ইয়াযীদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন। ইয়াযীদ ছিল দুশ্চরিত্র, মদ্যপায়ী ও ইসলামবিরোধী । সে প্রকাশ্যে ইসলামের পবিত্র বিধি- বিধানের অবমাননা করতো এবং মদপান করতো।
ইমাম হোসাইন (আ.) প্রথম থেকেই ইয়াযীদের বিরোধিতায় আত্মনিয়োগ করেন। ইয়াযীদ ক্ষমতায় বসেই মদীনার গভর্নরের কাছে লেখা একটি পত্রে আদেশ করে, ‘হোসাইনের কাছ থেকে আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ কর। যদি সে রাজি না হয় তাহলে হত্যা কর।’ ইমাম কিছুতেই ইয়াযীদের বাইয়াত করতে রাজি ছিলেননা । তাই তিনি মদীনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। সংবাদ পেয়ে কুফার লোকেরা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে অসংখ্য পত্র লিখে। পত্রে তাকে কুফা আসার অনুরোধ জানায়। ইমাম হোসাইনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফায় প্রেরণ করেন। প্রথমে কুফার হাজার হাজার লোক মুসলিম ইবনে আকীলের সঙ্গে যোগ দেয় । কিন্তু ইয়াযীদের পক্ষ হতে কুফার গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কুফায় প্রবেশ করলে কুফার লোকেরা প্রতারণাপূর্ণ নানা চালে ধোকায় পড়ে যায় এবং শপথ ভঙ্গ করে মুসলিম ইবনে আকীলকে নিঃসঙ্গ করে ফেলে।
ইবনে যিয়াদ ছিল ধোকাবাজ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক । শেষ পর্যন্ত ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকীলকে বন্দি করে শহীদ করে। কুফার লোকেরা যে সময় মুসলিম ইবনে আকীলের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল সে সময় মুসলিম ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নিকট একটি পত্র লিখেন এবং তাকে সংবাদ দেন যাতে তিনি কুফায় আগমন করেন। ইমাম হোসাইন ও তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কুফার কাছাকাছি পৌছেই তিনি কুফার জনগণের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ ও মুসলিম ইবনে আকীলের শহীদ হওয়ার সংবাদ পান।
উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মুসলিমকে শহীদ করার পর কুফার ওপর পূর্ণ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহীকে ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সঙ্গীদের ওপর নজরদারি করার জন্য প্রেরণ করে । এরপর ওমর ইবনে সা’দকে ৩০ হাজার সৈন্যসহ কারবালায় প্রেরণ করে । সে ওমর ইবনে সা’দকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে,যদি সে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করে তাহলে তাকে রেই শহরের গভর্নর করা হবে। রেই শহরের গভর্নরের পদ পাওয়ার লোভে কারবালায় আসার পর ওমর ইবনে সা’দ ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গীদের অবরোধ করার জন্য নির্দেশ দেয় এবং তাদের পানি সংগ্রহের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা ছিলেন তখনকার দিনের সবচেয়ে সাহসী পুরুষ। তাদের সংখ্যা ছিল অনুর্ধ্ব ৭২ জন । তারা ১০ মুহররম তারিখে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা হোসাইন (আ.)-এর প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে মর্যাদার সাথে শাহাদাত বরণ করেন।
কারবালার যুদ্ধ যদিও সময়ের বিচারে খুব সংক্ষিপ্ত ছিল এবং কেবল একদিন অর্থাৎ ১০ মুহররম সকাল থেকে আসরের সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, কিন্তু এর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বীরত্ব, আত্মত্যাগ,ঈমান ও ইখলাস (নিষ্ঠা)-এর পরাকাষ্ঠা ।
কারবালার ঘটনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় তুল্য । যেখানে দুগ্ধপোষ্য শিশু হতে শ্মশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধ লোকও মানবজাতির সামনে মানব মর্যাদা ও স্বাধীন চেতনার শিক্ষা দেন। যেখানে ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সহচরদের পবিত্র ইসলামকে নতুন জীবন দান করে,আর উমাইয়্যা বংশের নষ্ট চরিত্রের শাসকদের পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
ইমামের বিনয় ও নম্রতা
ইমাম হোসাইন (আ.) একবার কিছু সংখ্যক গরীব লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা একটি কুড়েঘরে বসে কিছু একটা খাচ্ছিলো। তারা ইমাম হোসাইনকে অনুরোধ জানালো তাদের সাথে খাবারে অংশ গ্রহণের জন্য । তিনি তাদের দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং বললেন যে,আল্লাহ তা’আলা অহংকারীদের ভালোবাসেন না। খাবার গ্রহণের পর ইমাম তাদের দিকে ফিরে বললেন : ‘আমি আপনাদের দাওয়াত গ্রহণ করেছি, এখন আপনাদের পালা । ’তারাও ইমামের দাওয়াত গ্রহণ করলো এবং ইমামের বাড়িতে গেলো । তিনি তার খাদেম রুবাবকে নির্দেশ দিলেন যাতে বাড়িতে যা কিছু সঞ্চিত আছে সব তাদের দিয়ে দেন।
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আদর্শ জীবন
আল্লাহ তা’আলা যখন মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেন এবং পথ ও পথচলা নির্ণয়ের জন্য তাকে হুজ্জাত হিসাবে নির্ধারণ করেন তখন তিনি তারই আলোকে উম্মতের আত্মগঠন,আল্লাহর বন্দেগী ও জীবনের পূর্ণতা অর্জনের জন্য যে আদর্শের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে দেন । হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ছিলেন এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ । কাজেই তার কাছ থেকে শুধু বীরত্ব,আত্মত্যাগ,জিহাদ ও জুলুম নাশের আদর্শ নয়;বরং আল্লাহর ইবাদাত,দানশীলতা, পৌরুষ, উদারতা, কুরআনের প্রতি হৃদ্যতা ও মানুষের প্রতি মর্যাদা দানের শিক্ষাও আমাদের নিতে হবে।
নামায বন্দেগীর চুড়ান্ত শিখর
ইমাম হোসাইন (আ.) আশুরার রাতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, একাগ্রতায় ইবাদাত,কুরআন তেলাওয়াত ও নামাযের জন্য দুশমনের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন । আশুরার দিন যখন প্রচণ্ড লড়াই চলছিল,তার মধ্যেও তিনি যোহরের নামাযের জন্য দড়িয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের এ শিক্ষা দেন যে, তিনি দীনের জন্য এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রাণ দিয়েছেন ।
আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট
আল্লাহর বন্দেগীর পূর্ণতা হচ্ছে সন্তুষ্টির মধ্যে । ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (আ.) কারবালার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার সময় আশা প্রকাশ করেন যে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য যা ইচ্ছা করেছেন তা শুভ ও কল্যাণকর হবে । তা বিজয় লাভ হোক কিংবা শাহাদাত বরণ । যখন তিনি শাহাদাত বরণ করেন তখনও তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল এবাক্য: ‘তোমার সন্তুষ্টির প্রতি সন্তুষ্ট, আর তোমার আদেশের সামনে সমর্পিত’ । এটি বন্দেগীতে ইখলাস, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা এবং তার জিহাদ ও শাহাদাত আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে । তিনি বহুবার বলেছেন : ‘আমাদের আহলে বাইতের সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত ।’
ধৈর্য ও অবিচলতা
সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হোসাইন ছিলেন দুঃখ-মুসিবত, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, তারবারির আঘাত, আপনজন হারানোর বেদনা ও সন্তানদের শাহাদাত বরণের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও অবিচলতার পরাকাষ্ঠা। তিনি আশুরার দিন ‘সাবরান বানিল কেরাম’ (হে সম্মানিত বংশ! ধৈর্যধারণ কর) উক্তির দ্বারা আপন সঙ্গীদেরকে জিহাদের কষ্ট ও তারবারির আঘাতের ওপর অবিচল থাকার আহবান জানান।
আশুরার দিন আপন সন্তান আলী আসগারকেও ‘ইয়া বুনাইয়া ইসবির কালীলান’ (হে বৎস ! একটুখানি ধৈর্য ধারণ কর) বলে ধৈর্য ধারণের আহবান জানান । আপন বোনকেও সেই রক্তলাল দিনে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেন।
মহত্ব
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহত্ব ও বদান্যতা লোক মুখে প্রসিদ্ধ ছিল। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)- এর বর্ণনা মোতাবেক ইমাম হোসাইন (আ.) খাদ্য ও পানীয়ের বোঝা নিজেই বহন করতেন । তিনি অনাথ,গরীব ও বিধবা নারীদের ঘরে নিজেই বোঝা বহন করে নিয়ে যেতেন। এর ফলে তার কাধের ওপর দাগ পড়ে গিয়েছিল।
বস্তুত মানবপ্রেম, দুঃখী মানুষের প্রতি মমতা, বিনয়, নম্রতা ও মানবীয় সংবেদেনশীলতা শিখতে হবে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর কাছ থেকে।
আধ্যাত্মিক চেতনা
আল্লাহর ভয়, অশ্রুসজল নয়ন, দোয়া ও প্রার্থনার অবস্থায় থাকা, আল্লাহর প্রশংসায় রত থাকা এবং আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরা জীবন,রাতে ও দিনে একাগ্র চিত্তে বেশি বেশি নফল ইবাদাত,পায়ে হেটে বারে বারে হজ্বে গমন করা,শ্রদ্ধেয়া নানী খাদিজা (আ.)-এর কবর যিয়ারত করা, তার জন্য দোয়া ও কান্নাকাটি করা, জাবালে রহমতের পাদদেশে দড়িয়ে প্রেমাসক্ত হৃদয়ে তন্ময়ভাবে মোনাজাত,আর আরাফাতের ময়দানে তার খাস মোনাজাত যা সবচেয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধ মোনাজাত হিসাবে প্রসিদ্ধ- এসব কিছুই তার অতি উচ্চতর আধ্যাত্মিক চেতনা,ভাবধারা ও বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক।
আল্লাহ প্রেম
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি অন্তরের ভালোবাসা ও আসক্তি ।
বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম হোসাইন (আ.) শাহাদাতের মুহূর্তের দিকে যতই এগিয়ে গেছেন তার চেহারা ততবেশি উজ্জল হয়েছে এবং তা আল্লাহর প্রতি সাইয়্যেদুশ শুহাদার ভালোবাসার আরেকটি প্রমাণ। কেননা, তিনি মিলনের মাধ্যমে বিচ্ছেদের অবসান দখতে পাচ্ছিলেন, তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন।
এ মনোভাব ও প্রেমাসক্তি নিঃসন্দেহে হোসাইন (আ.)-এর বন্ধুদের মাঝেও দৃশ্যমান ছিল।
আল্লাহর যিকির
আল্লাহর স্মরণের যে মনিমুক্তা তা একটি খোদায়ী সাওগাত।
হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ছিলেন আল্লাহর যাকের (নিত্য স্মরণকারী) বান্দা । সব সময় আল্লাহর যিকির তার মুখে এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা তার অন্তরে জাগরুক ছিল। শান্তিতে,দুঃখে,সমস্যায় ,আরামে আল্লাহর স্মরণেই তার মনের প্রশান্তি ছিল ।
তিনি কেবল আশুরার দিন সকালেই ‘হে আল্লাহ! সকল কঠিন মুহূর্তে তুমিই আমার একমাত্র নির্ভরতা’ বলে আর্তি জানাননি;কেবল আশুরার দিন প্রতিটি আক্রমণ রচনায় ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা’ বলেই আল্লাহর সাথে তার হৃদয়ের সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি করেছেন তা নয়;বরং সবসময় ‘আল্লাহ আকবার’, ‘আল হামদুলিল্লাহ ’আলা কুল্লি হাল’ প্রভৃতি বাক্যদ্বারা আল্লাহর প্রশংসায় রত থাকতেন । দুঃখ-মুসিবতের সময় পাঠ করার যে যিকির ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ তা তিনি বিভিন্ন সময়ে,বিশেষ করে মক্কা থেকে কারবালা পানে যাবার সময় বার বার উচ্চারণ করেছেন। ইমাম হোসাইন (আ.)-এর দৃষ্টিতে কুফা বাহিনী যাদেরকে সেই জঘন্য অপরাধ সংঘটনের জন্য জমায়েত করা হয়েছিল তাদের সবচেয়ে বড় দৃর্ভাগ্য ছিল তারা আল্লাহর স্মরণকে ভুলে গিয়েছিল। তিনি যখন দেখলেন যে,তারা কিছুতেই হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করছে না এবং তাকে হত্যা করার জন্য বদ্ধপরিকর, তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন : ‘শয়তান তোমাদের ওপর জেকে বসেছে,মহান আল্লাহর স্মরণকে ভুলিয়ে দিয়েছে।’
মোটকথা, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আধ্যাত্মিকতা,আল্লাহর প্রতি নিবিষ্টতা ও রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী হতে আমাদের আদর্শ গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে শিক্ষা,জ্ঞানচর্চা,ছেলে- মেয়েদের শিক্ষা দান, মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ, গরীবের জন্য দরদ, দানশীলতা, ত্যাগ, মানবপ্রেম,দুঃখী মানুষের দুর্দশা লাঘব প্রভৃতি ক্ষেত্রেও তাকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সর্বকালের সব জায়গার সব মানুষের জন্য আদর্শ । যুদ্ধের ময়দানে যেমন,তেমনি শান্তির সময়ও। বিশ্বাস ও আচরণের আঙিনায় যেমন,তেমনি দুশমনের সাথে শত্রুতার বেলায়ও। সততা, পবিত্রতা, বীরত্ব, সাহসিকতা, শাহাদাত পিয়াসা, ইবাদাত- বন্দেগী ও কান্নাকাটি সর্বাবস্থায় তিনি মানুষের জন্য আদর্শ ।
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পথ চলার আদর্শ আমাদের সব সময়ের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক ।
source : alhassanain