আবনা ডেস্ক: তাবলিগ জামাতে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল। তিনি প্রশ্ন করেছেন, তাবলিগ জামাতের মাধ্যমে আমাদের দেশে অনেক বিদেশি আসেন। তাদের কি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়? রাষ্ট্র বা গোয়েন্দাবাহিনীর কি জানা আছে, তাবলিগ জামাতে এসে কেউ বাংলাদেশে রয়ে গেল কি না?
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিষয়ে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে এমএ আউয়াল বলেন, ‘তাবলিগে আসা বিদেশি মুসল্লিদের নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সকল বিদেশির চলাফেরা তদারকি করতে হবে।’
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার প্রসঙ্গে আউয়াল বলেন, ‘গুলশানের হলি আর্টিসান ও শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এই জঙ্গিবাদ কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়। একটি বৈশ্বিক সমস্যার চেহারা পেয়েছে। এই জঙ্গিবাদের পেছনে বিদেশের বা দেশের যেসব গোষ্ঠী জড়িত, সেগুলো ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’র লড়াইয়ের কথা বললেও আদতে সেটি নয়।’
কওমি মাদ্রাসায় কোনো জঙ্গি নেই- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ১৪ দলীয় জোটের শরিক এ দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলশান হামলার পর বলেছিলেন, কওমি মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি হয় না। তো এর কারণ কি? কারণ কি এই যে, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার জঙ্গিরা কেউ মাদ্রাসায় পড়েনি? বা কেউ মাদ্রাসার ছাত্র না? সম্ভবত, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুলে গেছেন আফগানিস্তান ফেরত কওমি মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীই বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ (হুজি) প্রতিষ্ঠা করেছে। মুফতি হান্নান, মাওলানা ফরিদ এরা কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি।’
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা বর্তমান জঙ্গিবাদীদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সত্যতাকে অস্বীকার করছি না। কিন্তু আপনাকে সমাধানের পথে আসতে হলে এর গোঁড়া চিহ্নিত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জঙ্গিবাদের গোঁড়া ধরতে ভুল করেছেন। ২০০১ সালে নড়াইল ২ আসন থেকে উপ নির্বাচনে জয়ী হওয়া মুফতি শহিদুল ইসলাম এমপির বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গিবাদের অভিযোগ ছিল। চট্টগ্রামের মুফতি ইজহার, তার ছেলে হারুন ইজহার, সিলেটের কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান বুলবুলি হুজুরও আফগানিস্থানে ‘জেহাদ’ করে এসেছেন। এখন তারা কোথায় অবস্থান করছেন তা আমরা জানতে চাই। তাদের ২৪ ঘণ্টার খোঁজখবর কি রাষ্ট্রের কাছে আছে?’
পিস টিভি বন্ধ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভারতের অধিবাসী জাকির নায়েকের পিস টিভি বাংলার অন ইয়ার বন্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে দিলেই হবে না। তার আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বহু স্কুল পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোর খোঁজখবর নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পিস স্কুল নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সংবাদ আমরা পড়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পিস টিভি বন্ধ হয়েছে তবে ইন্টারনেটে তার আদর্শের বইপত্র নজরদারিতে আনতে হবে।’
এসময় তিনি কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় গুলশান-বারিধারা, বনানী থেকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারাসহ সব রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার দাবিও জানান এমএ আউয়াল। পাশাপাশি নর্থ-সাউথ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনালসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজ, কওমি মাদ্রাসাসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এম.পি। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, শাহ মিরান আল কাদেরী, যুগ্ম মহাসচিব ডা. সৈয়দ আবু দাউদ মসনবী হায়দার, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হাছান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলী ফারুকী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমুখ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।#
source : abna24