আবনা ডেস্ক: ইরানের প্রভাবশালী আলেম ও জুমা নামাজের অস্থায়ী খতিব আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আহমাদ খাতামি বলেছেন, ইরান তুরস্কে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার যে নিন্দা জানিয়েছে তার অর্থ তুর্কি প্রেসিডেন্টের অন্যায় আচরণগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া নয়।
তিনি আজ তেহরানের জুমা নামাজের খোতবায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, জনাব এরদোগান রুশ বিমান ভূপাতিত করার জন্য রাশিয়ার সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আরও দু’টি ক্ষমা প্রার্থনা তার পক্ষ থেকে বকেয়া রয়ে গেছে।
খাতামি বলেছেন, বিশ্বের সমস্ত স্থানে দায়েশ বা তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসের শিকার মুসলমানসহ সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেও এরদোগানকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, একমাত্র এরদোগানের সরকারই দায়েশকে জায়গা ও অফিস দিয়েছে এবং তাদের জন্য সীমান্তে ছোট ছোট বাজার তৈরি করেছে ও দায়েশের চুরি-করা তেল পানির দরে কিনে অর্থ লুটের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন দায়েশের কারণে তুরস্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেখে তুর্কি সরকার কিছুটা অনুতপ্ত হয়েছে, কিন্তু কেবল এই অনুতাপই যথেষ্ট নয়, তুর্কি সরকারকে অবশ্যই ক্ষমাও চাইতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খাতামি বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যাপারে কপটতাপূর্ণ তথা মুনাফিকসুলভ আচরণের জন্য এরদোগানকে আরও একটি ক্ষমা চাইতে হবে, কারণ তিনি একদিন ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান আবার অন্য দিন ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
আয়াতুল্লাহ খাতামি তার এসব মন্তব্যের আগে তুরস্কের কথিত সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বলেছেন, ইসলামী ইরান প্রথম থেকেই এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে, কারণ তা ছিল বলদর্পি পদক্ষেপ।
তিনি বলেছেন,' এ নিন্দার অন্যতম অর্থ হল, আমরা জনগণের ভোট ও তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা যেমনিভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত তুর্কি সরকারকে উৎখাত প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই তেমনি সিরিয়ার জনগণের ভোটে নির্বাচিত আসাদ সরকারের প্রতিও সম্মান জানাই। মোটকথা আমরা ফিলিস্তিন ও বাহরাইনসহ সর্বত্র জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা জানাই, কারণ এটা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান নীতি।'
তিনি ইসলামী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে জাতিসংঘ-মহাসচিব বান কি মুনের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে অবিচারপূর্ণ বলে অভিহিত করে বলেছেন, তার দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে বান কি মুন ও পরমাণু-সমঝোতার কোনও সম্পর্ক নেই।
ইরানের প্রভাবশালী এই আলেম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমেরিকার কর্মকর্তারা তাদের পক্ষ থেকে পরমাণু বিষয়ে চুক্তি ও প্রতিশ্রুত ভঙ্গ করার কথা স্বীকার করলেও এবং পরমাণু-সমঝোতা বিরোধী ৫০টি প্রস্তাব ও বিল মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা সত্ত্বেও জাতিসংঘ মহাসচিব এসব বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখেন, কিন্তু ইরানের বেলায় তিনি বলেন, ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।
জনাব খাতামি আরও বলেছেন, যে মহাসচিব ইহুদিবাদীদের প্রভাবে ইরান বিরোধী ও নানা ধরনের অন্যায্য রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন তার কাছ থেকে এ ছাড়া আর অন্য কিছু তো আশা করা যায় না!
তেহরানের জুমা নামাজের অস্থায়ী খতিব বলেছেন, "জাতিসংঘে নিযুক্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতিনিধি নিজেই স্বীকার করেছেন যে,' বান কি মুন আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন' এবং আমরা ইরানিরাও এটা জানি যে সৌদি সরকার অত্যন্ত হিংস্র কায়দায় শিশুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বান কি মুন সৌদি সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারগুলোর তালিকা থেকে খারিজ করে দিয়েছেন! তাই বান কি মুনের কাছ থেকে আর কিইবা আশা করা যায়?"
আয়াতুল্লাহ খাতামি বলেন, পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়ে এ ধরনের শয়তানি মোকাবেলার একমাত্র পথ হল প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তিনি বলেন, ইরানি জাতি প্রতিরোধে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং ইরান এখনও চুক্তি ও অঙ্গীকারের ওপর অবিচল রয়েছে, অন্যদিকে ওরা যদি অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে তাহলে ইরানের সরকার ও জনগণ এমন কাজ করবে যে তারা অনুশোচনা করবে। #
source : abna24