আবনা ডেস্ক: গরু নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড চলছে বৃহত গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে। কিছু রাজ্যে গোমাংস নিষিদ্ধের পাশাপাশি চলছে গরু নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ভারতে বহুযুগ ধরেই গরুকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই বিশেষ দৃষ্টির সঙ্গে কোথাও যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, আবার কোথাও যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক হিসেব নিকেষ। তবে দেশটির উত্তরাংশে সম্প্রতি গরু নিয়ে দলিত শ্রেণির উপর ব্রাহ্মণ শ্রেণির অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায় হরিয়ানার বেশ কিছু দলিত পরিবার ইতোমধ্যে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম ধর্মে দিক্ষীত হয়েছেন। অবশ্য এমন ঘটনা এবারই যে প্রথম তা নয়, এর আগেও অনেকবার এমন ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেছে।
উচ্চবর্গীয় ব্রাহ্মনদের কাছে জীবিত গরু যেমন দেবতা সমতুল্য, কিন্তু ওই গরুই মারা গেলে সেই গরুকে ছুতে পর্যন্ত পারে না তারা বিধি নিষেধের কারণে। মৃত গরু সৎকারের কাজটি এতোদিন ধরে ভারতের দলিত শ্রেণির হিন্দুরাই করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলিত শ্রেণির উপর অকশ্য নির্যাতনের প্রতিশোধ স্বরুপ মৃত গরু সৎকার থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে দলিতরা। তাদের বক্তব্য হলো, যে গরুর জন্য তাদের এতো নির্যাতন সইতে হচ্ছে, সেই গরুকে ব্রাহ্মনরাই সৎকার করুক।
ঐতিহাসিকভাবে মৃত গরু সৎকারের এই কাজটি দলিতরাই করে থাকে। বিশেষ করে দরিদ্র চামার শ্রেণিই এই কাজের জন্য নিয়োজিত হয়। ভারতের বর্ণ বৈষম্যের ইতিহাসে সর্বদাই সমাজের সকল নিচু কাজ করতে হয় দলিতদের। দেশটির এমন একটা প্রান্ত পাওয়া যাবে না যেখানে দলিতরা সম্মানের সঙ্গে বেঁচে আছে। তবে পশ্চিমবাংলার কিছু অঞ্চলে অবশ্য দলিত শ্রেণিরা বৈষ্ণব ধর্মের বাতাবরণে ভিন্ন জীবনযাপন করছেন। যদিও এই বৈষ্ণব দলিতরাও কিন্তু নিজেদের সীমানার বাইরে যে মর্যাদা পান তাও নয়।
গুজরাটের দলিতরা মৃত গরু সৎকার না করায় বেশ ঝামেলাতেই আছে সেখানকার ব্রাহ্মনেরা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, সুরেন্দরনগরের বাসিন্দা দলিতরা গরু সৎকার না করায় আজ কয়েকদিন ধরে মাঠে মৃত গরু একই অবস্থায় আছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, গুজরাটে প্রায় এক কোটি গরু ও মহিষ রয়েছে। ওই অঞ্চলে দিনে গৃহপালিত পশু মৃত্যুর হার দশ শতাংশ। অর্থাৎ হিসেব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন গুজরাটে ২৫০০ পশু মারা যাচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এখন কথা হলো, অন্তত এক সপ্তাহও যদি দলিতরা তাদের কাজ বন্ধ করে রাখে তবে গোটা রাজ্যের কি অবস্থা হতে পারে।
source : abna24