আবনা ডেস্ক: গত ৮ জুলাই কাশ্মিরে হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার পর থেকে সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত ৬৭ জন নিহত এবং কয়েক হাজার বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নিহত বুরহান ওয়ানিকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়ে তার নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘বড় সাফল্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও নিহত বুরহান ওয়ানিকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যা দিয়েছে তার মা-বাবা।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বুরহানের মা মহিমুনা ওয়ানি এবং বাবা মুজাফফর ওয়ানি বলেছেন, ‘ছেলে শহীদ হওয়ায় আমরা খুশি।’
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বুরহানের মা মহিমুনা বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুতে দুঃখ হলেও সবচেয়ে বড় কথা হল, কাশ্মিরে জুলুম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমার ছেলে কাশ্মিরের স্বাধীনতার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। ও খুব শালীন, ভদ্র এবং কোমল হৃদয়ের ছেলে ছিল। সহিংসতায় তার কোনো বিশ্বাসই ছিল না।’
বুরহান ওয়ানি
মহিমুনা ওয়ানি ছেলের জিহাদে যাওয়ার কথা মেনে নিলেও এ নিয়ে তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জিহাদ তো আমাদের জন্য ফরজ। যখন দুনিয়া থেকে কেউ চলে যাবে তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করবেন আমার জন্য কী করেছ? যখন বেটা জওয়ান হয়ে ওঠে আমরা তাকে আল্লাহ্র রাস্তায় যেতে দিয়েছি। বুরহান যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে তখন বলবে যখন আমি ১৫ বছরের ছিলাম তখন আমি ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। আমি আমার জীবন দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে চলে যাওয়ার কষ্ট তো আছেই। এক ছেলে আগেই চলে গেছে, এবার অন্যজনও বিদায় নিয়েছে। কিন্তু পাক্কা মুসলমান তো সেই যে আল্লাহ্কে ভালোবাসে। যারা তা করে না, তারা সম্পূর্ণ মুসলিম নয়। তারা মুমিন হতে পারে না।’
তিনি ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, ‘আমরা ছেলে হারিয়েছি, কিন্তু আল্লাহ সঙ্গে আছেন। আল্লাহর ওপর আমাদের পূর্ণ ভরসা রয়েছে। ২০১০ সালে যখন উপত্যকায় বিক্ষোভ হয়েছিল, তখন ছেলের ফোন এসেছিল। সেসময় আমি নামাজ পড়ার জন্য যাচ্ছিলাম। তখন ও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, মা, আমার জন্য তুমি কী দোয়া করবে? আমি বলেছিলাম আল্লাহ ছেলেকে ভালো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য সাহায্য করুন। তখন সে আমাকে বলেছিল, আল্লাহর কাছে দোয়া করো যে আমার ছেলে যেন মুজাহিদ হতে পারে।’
বুরহান ওয়ানির বাবা মুজাফফর ওয়ানি বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হওয়ায় আমি খুব খুশি। মানুষ যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতেই স্পষ্ট তাকে সবাই কত ভালোবাসত। সে যে ইস্যুতে নিজের জীবন দিয়েছে, সেজন্য যেকেউ নিজের জীবনের নজরানা পেশ করছে।’
মুজাফফর ওয়ানি মনে করেন, কাশ্মিরি জনতা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
মহিমুনা ওয়ানির অভিযোগ, ‘এখানে এমন কোনো তরুণ নেই যাকে সেনারা পেটায়নি। অনেক নারী বিধবা হয়েছেন, তাদের স্বামী নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনা বেড়ে চলাতেই আমরা একত্রিত হয়ে সকলেই আজাদির জন্য ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছি।’
source : abna24