আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল-উজমা খামেনেয়ী গতকাল (মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) সকালে ইরানি সামরিক বাহিনীর এয়্যারফোর্স এবং এয়্যার ডিফেন্স কমান্ডের স্টাফদের মাঝে প্রদত্ত ভাষণে বলেন: যদি আল্লাহর প্রতি আস্থার ছায়ায় যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবে তা মহান আল্লাহর সাহায্য আগমনের কারণ হয়। আর যদি বড় শয়তান আমেরিকার আস্থার ছায়ায় ও বস্তুবাদী শক্তি নির্ভর যুক্তি ভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া হয়, তবে তা মানুষকে মরীচিকার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
তিনি বলেন: যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য আগত প্রেসিডেন্ট নিজের বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে, ইরানের ইসলামি সরকার দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের যে সকল ফাসাদ ও দূর্নীতির কথা বলে আসছে, তা প্রকাশ ও জনগণের সামনে স্পষ্ট করেছে। ইরানের জনগণ আসন্ন ২২ বাহমানের (১১ ফেব্রুয়ারি; ইসলামি বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী) র্যা লীতে তার এ সকল পদক্ষেপ ও হুমকির জবাব দেবে।
১৯ বাহমান ১৩৫৭ (৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯) সালে বিমান বাহিনীর সদস্যদের ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর সাথে বাইয়াতের ঘটনাকে ইসলামি বিপ্লবের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে এ দিবসে ভাষণ প্রদান কালে তিনি বলেন: সংস্কার ও অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল ও আশাবাদী হয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর বিপরীতে যদি যদি তাগুতি শক্তিগুলোর -বিশেষ করে শয়তান-এ আকবর তথা বড় শয়তান-এর ছত্রছায়ায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তবে পরিণতিতে মরীচিকার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
কূটনীতি ও দেশ পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যৌক্তিকতা ও বিচক্ষণতা অপরিহার্য –এ কথা উল্লেখ করে ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন: তাগুতি শক্তিগুলোর প্রতি আস্থাশীল হওয়া এবং যারা ইসলামি সরকার ও ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরোধী তাদের প্রতি আশাবাদী হওয়াটা বিরাট ভুল। কেননা এ কাজের মাধ্যমে দেশের কোন কল্যাণ হয় না।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী’র সংযোজন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, ওবামা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কেন কৃতজ্ঞ থাকবো? না আমরা কখনই তার প্রতি কৃতজ্ঞ নই। এই সরকারই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ও ইরানি জাতিকে পঙ্গু করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পঙ্গু করা, কিন্তু তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছায় নি। আর কখনই পৌঁছাবে না এবং কখনই কোন শত্রু ইরানকে পঙ্গু করতে পারবে না। কৃতজ্ঞ থাকার কথা বলেন। না কৃতজ্ঞ নই, কেন কৃতজ্ঞ থাকবো? আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে? দায়েশ সৃষ্টির কারণে? মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগানোর কারণে? সিরিয়াতে আগুন জ্বালিয়েছেন, ইরাকে আগুন লাগিয়েছেন। কেন কৃতজ্ঞ থাকতে হবে? ১৩৮৮ (ফার্সী) সালের নির্বাচন পরবর্তী ফেতনা সৃষ্টির প্রতি সমর্থনের কারণে? একদিকে আমাকে চিঠি দিয়ে আন্তরিকতা ও ভালবাসা প্রকাশ করেন এবং সহযোগিতার কথা বলেন, অন্যদিকে প্রকাশ্যে ফেতনা সৃষ্টিকারীদেরকে সমর্থন জানান, আর বলেন: আমরা তোমাদের সাথে আছি। তারা দেশের অভ্যন্তরে ফেতনা সৃষ্টি করতে চায়। দু’মুখো চেহারা; সেই মখমলের দাস্তানা যা তারা লোহার থাবা’র উপর পরেছে। যা সম্পর্কে আমি বারবার সতর্ক করেছি। আমরা কৃতজ্ঞ নই। আমরা জানি, তারা কি করছিলেন, আমরা বুঝি যে, তারা করছিলেন। তিনি আমাদেরকে তার (ওবামার) প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার কথা বলেন এবং বলেন, ‘আমাকে ভয় করো’। না, আপনাকেও আমরা ভয় পাই না।
তিনি আগামী শুক্রবার (২২ শে বাহমান) উপলক্ষে আয়োজিত দেশব্যাপী গণর্যা লীর কথা উল্লেখ করে বলেন: জনগণ ২২ বাহমান রাস্তায় নেমে এ সকল মন্তব্য ও হুমকির জবাব দেবে।
তিনি পরিহাসের সূরে বলেন: আমরা অবশ্য সদ্য আগত এ ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তিনি আমাদের কষ্ট কমিয়ে দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চেহারা প্রকাশের মাধ্যমে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে মার্কিন সরকারের ফাসাদ ও দূর্নীতির বিষয়ে যা কিছু বলে আসছে তার প্রমাণ দিয়েছেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন: নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্বকীয়তার মুখোশ উন্মোচিত করে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করেছেন।
৫ বছরের শিশু আটকের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের একটি অংশ বলে আখ্যায়িত করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন: ইমাম খোমেনি’র উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, তিনি বার বার নিজের বক্তব্য ও লেখায় যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতেন। আর শত্রুর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে অবগত জনগণ ও কর্মকর্তাদেরকে বড় শয়তানের প্রতি আস্থা না রাখার প্রতি আহবান জানাতেন। মহান আল্লাহর দিদার লাভকারী সেই প্রিয় ব্যক্তিত্বের কথাগুলোর সত্যতা আজ সকলের সামনে স্পষ্ট।
ইরানের ৩ বাহিনীর প্রধান তার ভাষণে, বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা –বিশেষতঃ ১৩৫৯ সালের (সৌরবর্ষ) অভ্যূত্থান নিস্ক্রিয় করণ, ওয়াল ফাজ্র-৮ ও কারবালা-৫ অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং মেজর জেনারেল শহীদ সাত্তারির অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা তার বক্তব্যের শেষে এ মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক এ পথ অব্যাহত রাখার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: গত প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, বর্তমান প্রজন্মও ঐ আমানতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে এবং ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনে এ পথ অব্যাহত রাখবে।#