আবনা ডেস্ক : আইনি লড়াইয়ের মুখে পড়ছে ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞা। ট্রাম্পের এ নতুন আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। স্থানীয় সময় গত সোমবার নতুন এ নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়। খবরে বলা হয়, মার্কিন মুলুকে ৬টি মুসলিম দেশের অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের নতুন আদেশ জারির পরপরই এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে লড়াই চালানোর ঘোষণা দেয় অধিকার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। সংগঠনটির অভিবাসী অধিকারবিষয়ক প্রজেক্টের পরিচালক ওমর জাদওয়াত একে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আগের নিষেধাজ্ঞা থেকে অনেক সরে এলেও, এখনো এটা মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। যা মার্কিন আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে তহবিল সংগ্রহের আহŸান জানিয়েছে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল রাইটসের অ্যাটর্নি নূর জাফর বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার মতে, এটা এদেশ থেকে মুসলিমদের তাড়ানোর একটা কৌশল। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানো জরুরি। ট্রাম্পের মুসলিম অভিবাসী বিরোধী আগের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালতের আদেশে সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়ে যায়। নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির পরে তিনি বলেন, নতুন নির্বাহী আদেশ সূ²ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, এ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন মার্কিন রাজনীতিকরাও। সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চাক শুমার এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা থেকে ক্ষুদ্র একটি অংশ সরিয়ে নিলেও তা নিষেধাজ্ঞাই থাকে। এমন ভয়াবহ নির্বাহী আদেশের ফলে আমরা আরো অনিরাপদ হয়েছি। এটা মার্কিন মূল্যবোধের পরিপন্থি। এটা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। এ নিষেধাজ্ঞাটিকে বিদ্বেষপূর্ণ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির প্রধান টম পেরেজ বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করাটা পার্টির সদস্যদের দায়িত্ব।
নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের যেসব নাগরিকদের বৈধ ভিসা নেই, তারা আগামী ৯০ দিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেই হিসেবে আগের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ইরাক। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকেনি দেশটি। আগের নিষেধাজ্ঞার মতোই শরণার্থী গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে তা ১২০ দিনের জন্য। নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবেন সংশ্লিষ্ট ৬টি মুসলিম দেশের গ্রিন কার্ডধারীরা। আসছে ১৬ মার্চ থেকে এ নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হবে। গত ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার অন্তত ৯০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে যেকোনো দেশ থেকে আসা শরণার্থী গ্রহণ ১২০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের এ আদেশ ঘোষণার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিড়ম্বনার শিকার হতে থাকেন নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন সাত দেশের নাগরিকরা। এমনকি গ্রিনকার্ড থাকা সত্তে¡ও অনেককে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। কোনো কোনো বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাধারী সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের আটকের ঘটনাও ঘটে। নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে ও পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আদালতে তোলা হলে ২৭ জানুয়ারি এ আদেশের বিরুদ্ধে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেন ফেডারেল আদালত। স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে জরুরি আপিল করেন ট্রাম্প। তার এ আপিল আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। এবার নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন ট্রাম্প। অপর এক খবরে বলা হয়, আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহের আহŸান জানিয়েছে। বিবিসি, আল-জাজিরা, ফোর্বস।