বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে এই বিশ্বপ্রকৃতি

আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে এই বিশ্বপ্রকৃতি

বিশিষ্ট মুসলিম চিন্তাবিদ আল্লামা শামসুদ্দিন হানাফি বলেছেন, আলীর বক্তব্য পূত-পবিত্র এবং সততাপূর্ণ। তিনি প্রজ্ঞাময় কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের জন্যে আল্লাহ তাঁকে সম্মান এবং মর্যাদা দান করেছেন। আলীর বক্তব্য যারই কানে পৌঁছে সে-ই বিস্মিত হয় এবং প্রত্যেক বক্তাকেই আলীর প্রতি বিনয়ী ও বিনম্র করে তোলে। আলীর বক্তব্যের কাছে নিজেদের অগ্রগামিতা যেন অপহৃত হয়ে যায়।
পাঠক ! আজকের আসরে আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে এই বিশ্ব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
সুন্দর এই বিশ্বজগত আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামতে পূর্ণ। মানুষ এইসব নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়। আমরা যদি একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে,এই বিশ্বকে ঘিরে মানুষের রয়েছে বিচিত্র আশা-আকাঙ্ক্ষা,চাওয়া-পাওয়া এককথায় ব্যাপক আকর্ষণ। মানুষের ব্যাপক গবেষণার ফলে বিশ্বের সূক্ষ্ম অণূ-পরমাণু আবি®কৃত হয়েছে। এইসব গবেষণায় পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে যে অবিশ্বাস্যরকম শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে বিশ্ব নিরর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। আর মানুষকেও খামোখাই পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি।
আলী (আঃ) বিশ্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আল্লাহর নিদর্শন বলে মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন,পৃথিবীর সকল কিছুই মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষের উচিত প্রকৃতির যথার্থ ব্যবহার করা। আল্লাহর অলি-আউলিয়া বা ধর্মীয় মনীষীগণও প্রাকৃতিক সম্পত তথা আল্লাহর নিয়ামতগুলোকে সৎ ও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। হযরত আলী (আঃ) চেষ্টা করেছেন পুকুর থেকে পানি তুলে খেজুর বাগান তৈরি করতে যাতে মানুষ সেগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। পৃথিবীর সাথে মানুষের সম্পর্ককে আলী (আঃ) তুলনা করেছেন একজন ব্যবসায়ীর সাথে বাজারের সম্পর্ক কিংবা একজন কৃষক এবং কৃষিক্ষেতের সম্পর্কের সাথে। একইভাবে যে ব্যক্তি এই পৃথিবীতে কাজ করবে আখেরাতে তার ফল সে পাবে। আলী (আঃ) এ বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করে বলেন, পৃথিবী মানুষের সামনে দুটি বিপরীতমুখি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। প্রথমত এই পৃথিবী মানুষকে পরিত্রাণ দেয়। দ্বিতীয়ত পৃথিবী মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে যায়।
আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীটা ঈমানদারদের জন্যে একটি উত্তম স্থান। তিনি মনে করেন দুনিয়া মানুষের জন্যে স্থায়ী কোনো বাসস্থান নয় বরং এটা মানুষের জন্যে একটা ক্রসিং-পয়েন্ট এবং পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে লাফ দেওয়ার মঞ্চ। তিনি বলেন-পৃথিবী তার জন্যে সরল-সত্য যে তাঁর বক্তব্যের ব্যাপারে বিশ্বস্ত। পৃথিবী তার জন্যে উপযুক্ত বাসস্থান যে এখান থেকে পারাপারের কড়ি সঞ্চয় করে। পৃথিবী হলো আল্লাহর বন্ধুদের জন্যে ইবাদাতের স্থান,ওহী নাযিলের স্থান এবং অনন্ত বেহেশত প্রত্যাশী বা আল্লাহর রহমত প্রার্থীদের জন্যে বিনিময় বা লেন-দেনের স্থান। তো,দুনিয়াকে তাহলে কে খারাপ বলতে পারে?
নাহজুল বালাগায় আলী (আঃ) এর এই দৃষ্টিভঙ্গি কথোপকথনের ভঙ্গিতে এসেছে। সেখানে এক ব্যক্তি দুনিয়াকে ধিক্কার দেয় আর আলী (আঃ) তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়। কবি আত্তার এই বিষয়টিকে মুসিবাৎ নমেহ-তে কবিতার মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেঃ
آن يكي در پيش شير دادگر
ذم دنيا كرد بسياري مگر
حيدرش گفتا كه دنيا نيست بد
بد تويي-زيرا كه دوري از خرد
ন্যায়পরায়ন সিংহ আলীর সামনে সে
পৃথিবীকে দিয়েছে ধিক্কার প্রচুর,তবে
তার হায়দার বলেন পৃথিবী নয় মন্দ
মন্দ তো তুমি, জ্ঞান থেকে দূরে অন্ধ
হযরত আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে ব্যক্তির ঈমান নেই তার জন্যে এই পৃথিবী ভয়াবহ এক নরক যা কেবল তার জন্যে ধ্বংসেরই দ্বার খুলে দেয়। এই সমস্যা এমন সময় দেখা দেয় যখন মানুষ পার্থিব এই জগতের মোহে পড়ে যায়। মানুষ যদি নিজের ব্যাপারে সতর্ক না হয় এবং এই বিশ্বজগত সম্পর্কে সচেতন না হয়,তাহলে পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নেবে এবং ক্ষণিকের পথ চলার অঙ্গন এই বিশ্ব তার সামনে ভিন্ন লক্ষ্য তৈরি করবে। এরকম অবস্থায় একজন মানুষ পৃথিবীর মোহজালে আটকা পড়ে যায়। এই মোহ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। একেই বলে দুনিয়াপূজা,যার বিরুদ্ধে ইসলাম সংগ্রাম করতে বলে। আলী (আঃ) ও মানুষকে এ ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
‘ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিপ্লবই ...
ফিলিস্তিনি বালিকা
পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...
ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে কখনও ...
নেয়ামতের হাত ছড়া হওয়ার কারন
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম

 
user comment