আবনা ডেস্ক: ভারতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বুলন্দশহরে হিন্দু যুবা বাহিনীর বিরুদ্ধে একজন প্রৌঢ় মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
এই সংগঠনটি রাজ্যের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাতে গড়া। খবর বিবিসি বাংলা'র।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে এক হিন্দু মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার জেরে মঙ্গলবার একদল লোক গুলাম আহমেদের ওপর চড়াও হয়। কিন্তু তিনি যখন তাদের গতিবিধি সম্বন্ধে কিছু জানাতে পারেননি, তখন তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
উত্তরপ্রদেশে যে হিন্দু যুবা বাহিনীর একচ্ছত্র দাপট, তাতে তাদের প্রধান দুটি এজেন্ডা হল 'গো-হত্যা' আর 'লাভ জিহাদ' প্রতিহত করা। ওই রাজ্যে তারা যেমন গরু-মোষের চালান রুখছে, তেমনি ঝাঁপিয়ে পড়ছে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে প্রেমের ঘটনা ঠেকাতেও।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এন সিং বলেন, 'ওই মুসলিম যুবক ও হিন্দু যুবতীর পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এই হামলার কিছুটা সম্পর্ক তো ছিলই। তবে মেরে ফেলার ঘটনাটা হঠাৎই ঘটে গেছে। গুলাম আহমেদকে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা ওদের ছিল না।'
হামলাকারীরা হিন্দু যুবা বাহিনীর সদস্য কিনা, পুলিশ তা নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যরা আঙুল তুলেছেন বাহিনীর দিকেই। বাহিনীর অজ্ঞাত ছয়জন সদস্যের বিরুদ্ধে তারা এফআইআর করেছেন।
তবে বুলন্দশহরে হিন্দু যুবা বাহিনীর বিভাগীয় প্রধান নগেন্দ্র তোমার দাবি করেছেন, তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ সদস্যরা এমন হিংসায় জড়াতেই পারেন না। কেউ জড়িত তাহলে বাহিনী তাদের সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করবে।
গুলাম আহমেদের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'লোকটা আমায় কিছু না-বলে চলে গেল! বলেছিল চা বসাও তো একটু, দুধ না থাকলে আমি দুধ নিয়ে আসছি। কিন্তু লোকটা আর ফিরলই না। আমায় এভাবে একা ফেলে কীভাবে চলে গেল...।'
নিহতের বাড়ির সামনে ২৪ ঘণ্টার পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। কিন্তু গুলাম আহমেদের পরিবার তাতে আদৌ আশঙ্কামুক্ত হতে পারছে না। তারা প্রথম সুযোগেই ভিটে ছেড়ে শহরে পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করছেন।
গুলাম আহমেদের বড় ছেলে ইয়াসিন বলেন, 'এই পুলিশ পাহারা আর কতদিন? দু-চারদিন বাদে এরা চলে গেলেই তো নির্ঘাত আবার হামলা হবে। আমরা খুব ভয় পেয়ে গেছি, জানের ভয়। তাই ঠিক করেছি যেখানে পারব চলে যাব- শহরে একটা ঝুপড়ি বানিয়ে থাকব। দরকারে ফুটপাথেই শোবো। প্রাণ তো সবারই প্রিয়, তাই না?'
যে যুবক-যুবতীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার সূত্র ধরে তার বাবাকে মেরে ফেলা হল, তিনি তার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না বলেও দাবি করেন ইয়াসিন।
তিনি বলছেন, 'শুধু মুসলিম বলেই তার ওপর হামলা হয়েছিল। উনি একজন ভোলাভালা বৃদ্ধ মানুষ, উনি কী জানবেন বলুন তো?'