বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

যিয়ারতে আশুরার গুরুত্ব

যিয়ারতে আশুরার গুরুত্ব


যিয়ারতে আশুরার গুরুত্ব

    Email

0 বিভিন্ন মতামত 0.0 / 5

প্রবন্ধ ›
দোয়া এবং শিষ্টাচার ›
দোয়া এবং জিয়ারত    

প্রকাশিত হয়েছে
    2016-12-22 12:34:08

শহীদদের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর যিয়ারতের১ জন্য অনেক রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে প্রসিদ্ধ আশুরার যিয়ারতের ক্ষেত্রে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এবং ইমাম বাকির (আ.)-এর নিকট থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বাকির (আ.) তাঁর একজন সাহাবী আলকামা ইবনে মুহাম্মাদ হাদরীকে এ যিয়ারতটি শিক্ষা দিয়েছেন। যেহেতু এ যিয়ারতটি ইসলামের প্রকৃত ধারার চিন্তার প্রকাশক,সত্য নীতি-আদর্শের ধারক এবং দিকনির্দেশক সেহেতু এতে আশ্চর্য রকমের শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। যেহেতু যিয়ারত বিষয়বস্তু এবং দিকনির্দেশনার দৃষ্টিতে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল ও প্রভাবসম্পন্ন সেহেতু ইমামগণ তাঁদের সাহাবীদের যিয়ারত পড়ার ধরন শিক্ষা দিয়েছেন এবং এই গঠনমূলক কাজে বিশেষ দিকনির্দেশনা ও গুরুত্ব দান করেছেন।

যে সকল যিয়ারতনামা পবিত্র ইমামদের নিকট থেকে আমাদের নিকট পৌঁছেছে সেগুলোতে উচ্চতর শিক্ষা রয়েছে,যেমন : যিয়ারতে জামেয়ে কাবীরা,যিয়ারতে আশুরা,যিয়ারতে আলে-ইয়াসিন,যিয়ারতে নাহিয়ে

মুকাদ্দাসাহ। যিয়ারতে আশুরা ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রকৃত ধারার ইসলামী চিন্তা,মৌলিক বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শের প্রকাশে গঠনমূলক প্রভাবের কারণে এ যিয়ারতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইসলাম থেকে বিচ্যুত বনি উমাইয়ার পথের সাথে প্রকৃত ইসলামের পার্থক্যের রেখা এ যিয়ারতে টেনে দেওয়া হয়েছে। এ যিয়ারত থেকে অর্জিত বিশেষ কিছু ফলাফল ও শিক্ষার বিষয় নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১. পবিত্র আহলে বাইতের পরিবারের সাথে আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও তাঁদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক বৃদ্ধি করা : তাঁদের প্রতি ভালোবাসার কারণে যিয়ারতকারীরা তাঁদেরকে নিজেদের আদর্শ রূপে গ্রহণ করে ও তাদের চিন্তা,দর্শন ও কর্ম-পদ্ধতির ক্ষেত্রে তাঁদের মতো হওয়ার চেষ্টা করে। যেভাবে যিয়ারতে আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে,আমাদের জীবন ও মৃত্যু যেন তাঁদের জীবন-মৃত্যুর মতো হয়।

 اللهم اجعل محیای محیا محمد و آل محمد و مماتی محمد و آل محمد

‘হে আল্লাহ! আমার জীবনকে মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের জীবনের অনুরূপ কর এবং আমার মৃত্যুকে মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের মৃত্যুর মতো কর (তাঁদের ন্যায় মৃত্যু দান কর)।’

আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি এই ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থেকে উৎসারিত; তাঁদের ঐশী রঙে রঙিন হওয়া এবং ¯ষ্টার সাথে সম্পর্কিত হওয়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য। এ কারণে তাঁদের যিয়ারত পছন্দনীয় ও কাঙ্ক্ষিত এবং নৈকট্য অর্জনের উৎস।২ এ কারণে যিয়ারতের একাংশে আমরা পড়ি :

 اللهم انی اتقرب الیک بالموالاة لنبیک وال نبیک

‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নবী ও তাঁর পরিবারের বন্ধুত্বের উসিলায় আপনার নৈকট্য কামনা করছি।’

২. যিয়ারতকারীদের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদের মানসিকতা সৃষ্টি: এ যিয়ারতে আহলে বাইতের প্রতি যুলুমকারীদের প্রতি অভিশাপ,লানত দেওয়ার পুনরাবৃত্তির ফলে যিয়ারতকারীদের অন্যায়ের প্রতিবাদী হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। সত্যের অনুসারী ও আহলে বাইতের বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ধর্মীয় ভিত্তিকে শক্তিশালী করে। ঈমান (আল্লাহর রাস্তায়) ভালোবাসা ও ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু কি?

 هل الایمان الا الحب والبغض

প্রকৃত ঈমানদার অন্যায়-অবিচারের বিপরীতে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে না,সত্যের পক্ষ অবলম্বন করে ও এর সঙ্গী হয়।

 یا ابا عبدالله انی سلم لمن سالمکم و حرب لمن حاربکم

‘হে আবা-আবদিল্লাহ! যে আপনার সাথে সন্ধি করে আমিও তার সাথে সন্ধি করি এবং যে আপনার সাথে যুদ্ধ করে আমিও তার সাথে যুদ্ধ করি।’

৩. বিচ্যুত পথ থেকে দূরে থাকা : এ যিয়ারতে অন্যায়-অত্যাচারের উৎসের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে :

فلعن الله امة اسست اساس الظلم و لعن الله امة دفعتکم عن مقامکم و ازالتکم عن مراتبکم التی رتبکم الله فیها

‘আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক উম্মতের ঐ সকল ব্যক্তির ওপর যারা যুলুম ও অত্যাচারের ভিত্তি স্থাপন করেছে ও আপনাদেরকে আল্লাহর দেওয়া পদ থেকে অপসারণ করেছে এবং আপনাদের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।’

আশুরায় যে অন্যায়-অবিচার সংঘটিত হয়েছে,ইতিহাসের গভীরে এর উৎস রয়েছে। ইমাম হোসাইন (আ.)-এর প্রতি যুলুম,সার্বিক অন্যায়-অবিচারের জগতের বলয়ের একটি বলয় মাত্র যা খিলাফতের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

৪. শিক্ষা গ্রহণ,হেদায়াতের আদর্শকে আদর্শ হিসেবে নির্ধারণ : যিয়ারতে বর্ণিত হয়েছে :

فاسئل الله الذی اکرمنی بمعرفتکم و معرفة اولیائکم ورزقنی البرائة من اعدائکم، ان یجعلنی معکم فی الدنیا و الآخرة و ان یثبت لی عندکم قدم صدق فی الدنیا و الآخرة

‘(হে নবীর আহলে বাইত!) আমি আল্লাহর কাছে কামনা করছি-যিনি আপনাদের ও আপনাদের বন্ধুদের সাথে পরিচিত করিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন এবং আপনাদের শত্রুদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার তাওফীক দান করেছেন-দুনিয়াতে ও আখেরাতে আপনাদের সাথে থাকার সৌভাগ্য দান করুন। আর তিনি যেন দুনিয়াতে ও আখেরাতে আপনাদের পথে (সকল ক্ষেত্রে) আমার পদক্ষেপকে দৃঢ় রাখুন।’৩

যিয়ারতকারী সত্যের জ্ঞান অর্জন ও অন্যায়কারীদের পরিচিতি লাভ করার পর তাদের কাছে থেকে দূরে সরে আসে। দৃঢ়তার সাথে পবিত্র আহলে বাইতের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকার এবং তাঁদের নির্দেশ অনুসারে আমল করার শপথ নেয় এবং এর মাধ্যমে নিজেকে দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করে। হেদায়াতের আদর্শকে অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন তাঁদেরকে নিজের জীবনের আদর্শরূপে নির্ধারণ করে ও তাঁদের সাথে একই পথে পা বাড়াতে চায়।

৫. আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ ও শাহাদাত বরণ করার মনোবল বৃদ্ধির সংস্কৃতির প্রসার।

৬. পবিত্র আহলে বাইতের মতাদর্শ,পথ এবং উদ্দেশ্য উজ্জীবিতকরণ।

পাদটিকা:

১. যিয়ারত বলতে এখানে যিয়ারতনামা বুঝানো হয়েছে যা কোন পবিত্র ও সম্মানীয় ব্যক্তির, বিশেষত মহানবী (সা.) ও তাঁর বংশধর ইমামদের রওযায় গিয়ে পাঠ করা হয়। তবে মূল অর্থে যিয়ারত হলো তাঁদের কবরের নিকট সালাম দানের জন্য উপস্থিত হওয়া- যা একটি মুস্তাহাব আমল। এ কারণে আহলে সুন্নাতের আলেমরাও সমবেতভাবে ও একাকী আল্লাহর ওলীদের যিয়ারতে যেতেন।- ইবনে হাজার আসকালানী, আত-তাহযিবুত তাহযিব, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৯; ইবনে হিব্বান, আস-সিকাত, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৭। রাসূল (সা.)-এর সাহাবারা তাঁর রওযা যিয়ারতে যেতেন। দ্রষ্টব্য: যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৮; ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২১৪; আল-মুগনি, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৬; শারহে মুয়াত্তায়ে মালিক, লাখনাভী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৪৮; উসদুল গাবা, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৮; তারীখে দিমাশক, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৩৭; নাইলিল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৮০।

২. মহান আল্লাহ মুমিনদের ওপর মহানবী (সা.)-এর রক্তসম্পর্কীয় বংশধরদের প্রতি ভালোবাসাকে ফরয করেছেন এবং এ কর্মকে পুণ্যকর্ম বলে অভিহিত করেছেন। (সূরা শুরা : ২৩) তাই যিয়ারতের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ আল্লাহর নৈকট্যের কারণ।

৩. কেউ মহান আল্লাহর সাহায্যকারী হতে হলে অবশ্যই প্রথমে তাকে তাঁর নবী ও তাঁর উত্তরাধিকারী নেতাদের সাহায্যকারী ও সঙ্গী হতে হবে। যেমনভাবে ঈসা (আ.) বলেছেন : ‘কে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে?’ (সূরা ছফ : ১৪) অর্থাৎ ঈসা (আ.)-এর সাহায্যকারী হওয়ার মাধ্যমেই কেবল কেউ আল্লাহর সাহায্যকারী হতে পারে। তাই তাঁর পছন্দনীয় ও মনোনীত ব্যক্তিদের সঙ্গী হয়েই তাঁর পথের সৈনিক হওয়া সম্ভব। এধরনের ব্যক্তিদেরই তিনি পবিত্র কোরআনে ‘সাদিকীন’ বলে অভিহিত করে মুমিনদেরকে সবসময় তাঁদের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা তাওবা : ১১৯) যিয়ারতের এ অংশটি এ নির্দেশেরই বাস্তবায়ন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমাতুয ...
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
Apabila ada sebagian hukum Islam yang nampaknya bertentangan serta kontradiktif dengan ...
আবতার কে বা কা’রা?
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কতিপয় খুতবা ও ...
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...
ইহুদি ধর্ম
দুই নামাজ একসাথে পড়ার শরয়ী দললি
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...

 
user comment