আবনা ডেস্ক: লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, দক্ষিণ লেবাননে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্ব মুক্ত করার লড়াইয়ে শুধুমাত্র ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও সিরিয়ার সরকার সাহায্য করেছিল। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, সে সময় বিশ্বের কোনো দেশ ইসরাইলের দখলদারিত্ব মুক্ত করার লড়াইয়ে সাহায্য করে নি।
দক্ষিণ লেবানন মুক্ত করার ১৭ বছরপূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক ভাষণে সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ এ কথা বলেন। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় হারমাল শহর থেকে জাতির উদ্দেশে তিনি এ ভাষণ দেন। হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, হিজবুল্লাহ এখন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বাকি বিশ্ব কিংবা দেশের ভেতর থেকে কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিষয়ে সারা পৃথিবীর অভিন্ন অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সে সময় ইসলামি সম্মেলন সংস্থা, আরব লীগ কিংবা জাতিসংঘ অথবা আমেরিকা কেউ লেবাননকে সাহায্য করে নি। একমাত্র ইরান ও সিরিয়া সে সময় হিজবুল্লাহকে সাহায্য করেছিল। হাসান নাসরুল্লাহ আরো বলেন, ইসরাইল-বিরোধী লড়াইয়ে হিজবুল্লাহ শুধুমাত্র লেবাননের সাবেক প্রেসিডেন্ট এমিল লাহুদ, স্পিকার নাবিহ বেরি ও প্রধানমন্ত্রী সেলিম আল-হোসের সময় সাহায্য পেয়েছে। ২০০০ সালে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই ও বিজয়ের পেছনে বড় কারণ ছিল লেবাননের সেনাবাহিনী এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। লেবাননের ভূখণ্ড দখলে রাখার ১৫ বছরে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লেবাননের জনগণের শক্তভাবে দাঁড়ানোর প্রশংসা করেন হিজবুল্লাহ মহাসচিব।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে কয়েকটি মুসলিম দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ওই সম্মেলনে যেসব কথা বলা হয়েছে এবং যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কোনো প্রভাব লেবাননের ওপর পড়বে না কারণ নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের ভেতরে নানা ইস্যুতে ভালো সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রিয়াদ সম্মেলনে লেবাননের সরকারি প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ ও আল-মুস্তাকবাল দলের পক্ষ থেকে রিয়াদ ঘোষণার প্রশংসা করা সম্পর্কে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণ করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছি তবে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে নয়। রিয়াদ ঘোষণা হিজবুল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং লেবানন পরিস্থিতির ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।”
হিজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, রিয়াদ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণা সম্পর্কে মুসলিম নেতাদেরকে কোনো কিছু জানানো হয় নি এবং তারা এ ঘোষণাকে আমলে নেবেন না। তিনি বলেন, রিয়াদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়ছিল শুধুমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্টকে খুশি করার জন্য এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, প্রতিবেশী ইরাক ও সিরিয়ার প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোকে হুমকি দেয়ার জন্য।
রিয়াদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে সৌদি শাসকদের পক্ষ থেকে দাওয়াত দেয়া প্রসঙ্গে হিজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, এই ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বার বার ইসলাম ও আরব জাতিগুলোকে অসম্মান করে কথা বলেছেন। সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার কারণে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ার কারণে রিয়াদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দাওয়াত দিয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, সারা দুনিয়া জানে যে, সৌদি আরব বিশ্বে তাকফিরি মতবাদের সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। সৌদি সমর্থিত এই সন্ত্রাসীরা এখন সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাদের ধ্বংসযজ্ঞ একক কোনো দেশ কিংবা মুসলিম বিশ্বে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা পশ্চিমা দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ বলেন, সৌদি আরব বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের মূল কেন্দ্র। আল-কায়েদা, তালেবান ও দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়ে এ দেশটিই দায়ী। সৌদি আরবের ওয়াহাবি মতবাদ মুসলিম বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতা ও গোলযোগ উসকে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে ইরান সমর্থন দেয় বলেই সৌদি আরব তেহরানকে একঘরে করার চেষ্টা করছে।
হাসান নাসরুল্লাহ তার ভাষণে বাহরাইনের গণ-আন্দোলন এবং দেশটির রাজতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এছাড়া, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেন প্রসঙ্গেও তিনি বক্তব্য রাখেন।#