পবিত্র কোরআন থেকে জানা যায় যে,পরজগতের অস্তিত্বলাভ শুধুমাত্র মানুষের নবজীবন লাভের সাথেই সম্পর্কিত নয়। বরং মূলতঃ এ পার্থিব জগতের সকল নিয়মের পরিবর্তন ঘটে এবং অপর এমন এক জগৎ এক নতুন নিয়ম-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রকাশ লাভ করে,যে জগৎ আমাদের ধারণাতীত এবং স্বভাবতঃই এ জগতের বিশেষত্ব সম্পর্কে আমাদের কোন সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে পারে না। তখন সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ ছিল সকলেই একইসাথে জীবন লাভ করে এবং স্বীয় কৃতকর্মের ফল লাভ করে। আর বৈভব বা শাস্তির অধিকারী হয়।
যেহেতু এ আলোচনা সংশ্লিষ্ট আয়াতের সংখ্যা ব্যাপক এবং এগুলোর আলোচনার জন্যে বিস্তৃত সময়ের প্রয়োজন,তাই কেবলমাত্র ঐ আয়াতগুলোর অন্তর্গত বিষয়সমূহকে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করেই তুষ্ট থাকব।
পৃথিবী,সমূদ্র ও পর্বতসমূহের অবস্থা :
পৃথিবীতে এক মহা ভূকম্পনের সৃষ্টি হবে:পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا
যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে।(যিলযাল-১)
يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَّهِيلًا
যেদিন পৃথিবী পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে বহমান বালুকাস্তুপ। (মুযাম্মিল-১৪)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। (হাজ্জ-১)
পৃথিবীর ভূঅভ্যন্তরে যা কিছু আছে বের করে দিবে।পবিত্র বোরআনে এরশাদ হয়েছে :-
وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
সে তার বোঝা বের করে দেবে।(যিলযাল-২)
وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শুন্যগর্ভ হয়ে যাবে।(ইনশিক্বাক-৪)
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে ।মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন :-
إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا
যখন পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে।(ফাজর-২১)
وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً
এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে।(আল হাক্বা-১৪)
সমূদ্রসমূহ বিভক্ত হয়ে পড়বে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:-
وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।(তাকভির-৬)
وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।(ইনফিতার-৩)
পর্বতসমূহ গতিশীল ও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে এবং বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে,অতঃপর ধুনকৃত তুলার রূপ ধারণ করবে অতঃপর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং গগনচুম্বী পর্বতসমূহ মরিচীকায় রূপ নিবে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :-
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا
যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।(কাহ্ফ-৪৭)
الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّـهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُونَ
যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে,আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ,তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।(নাহল-৮৮)
وَتَسِيرُ الْجِبَالُ سَيْرًا
এবং পর্বতমালা হবে চলমান।(তুর-১০)
وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে। (তাকভির-২)
وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً
এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে।(আল হাক্বা-১৪)
وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا
এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।(ওয়াকিয়াহ-৫।)
يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَّهِيلًا
যেদিন পৃথিবী পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে বহমান বালুকাস্তুপ।(মুযাম্মিল-১৪।)
تَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ
পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত।(মায়ারিজ-৯)
تَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنفُوشِ
পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।(ক্বারিয়াহ-৫)
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا
তারা আপনাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করা। অতএব,আপনি বলুনঃ আমার পালনকর্তা পহাড়সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন।(তোহা-১০৫-১০৭)
وَإِذَا الْجِبَالُ نُسِفَتْ
এবং যখন পর্বতমালাকে উড়িয়ে দেয়া হবে ।(মুরসিলাত-১০)
وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا
এবং পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে।(নাবা-২০)
وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا
এবং তার উপর যাকিছু রয়েছে,অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। (কাহ্ফ-৮)
আকাশ ও নক্ষত্রসমূহের অবস্থা :
চন্দ্র সূর্য বৃহদাকার নক্ষত্রসমূহ,যাদের কোন কোনটি আমাদের সূর্যের লক্ষ লক্ষগুণ বৃহৎ ও উজ্জ্বল তাদের সকলেই নির্বাপিত ও তিমিরে পরিণত হবে। ঐগুলোর গতির শৃংখলা বিনষ্ট হবে।
মহান আল্লাহ পাক তার কালামে মজীদে বলেছেন :-
وَخَسَفَ الْقَمَرُ
চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।(আল ক্বিয়ামাহ-৮।)
إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে ।(তাকভির-১)
وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে ।(তাকভির-২)
وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে ।(ইনফিতার-২।)
এছাড়াও আরো বলা হয়েছে চন্দ্র ও সূর্য একাকার হয়ে যাবে এবং যে আকাশ এ পৃথিবীর উপর সুরক্ষিত ও দৃঢ় ছাদ সদৃশ তা দুর্বল,প্রকম্পিত ও বিদীর্ণ হবে এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে,কুণ্ডলাকৃতি হয়ে পরস্পর ছড়িয়ে পড়বে আকাশের জড় উপাদানগুলো গলিত ধাতুর রূপ ধারণ করবে এবং বিশ্বের সর্বত্র ধুম্রাচ্ছন্ন ও মেঘাচ্ছন্ন হবে ।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন :-
جُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে (আল ক্বিয়ামাহ-৯।)
وَانشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَاهِيَةٌ
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।(আল হাক্বা-১৬।)
فَإِذَا انشَقَّتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ
যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে। (আর রাহমান-৩৭)
وَانشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَاهِيَةٌ
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।(আল হাক্বা-১৬)
السَّمَاءُ مُنفَطِرٌ بِهِ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولًا
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে। তার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। (মুযাম্মিল-১৮)
وَإِذَا السَّمَاءُ فُرِجَتْ
যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে।(মূরসিলাত-৯)
وَفُتِحَتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا
আকাশ বিদীর্ণ হয়ে;তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে।(নাবা-১৯)
إِذَا السَّمَاءُ انشَقَّتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ।(ইনশিক্বাক-১)
إِذَا السَّمَاءُ انفَطَرَتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে।(ইনফিতার-১)
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ ۚ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا ۚ إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব,যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম,সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত,আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।(আম্বিয়া-১০৪)
وَإِذَا السَّمَاءُ كُشِطَتْ
যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে।(তাকভির-১১)
يَوْمَ تَكُونُ السَّمَاءُ كَالْمُهْلِ
সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত।(মায়ারিজ-৮)
وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَاءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَائِكَةُ تَنزِيلًا
সেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং সেদিন ফেরেশতাদের নামিয়ে দেয়া হবে।(ফুরকান-২৫)
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ
অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন,যখন আকাশ ধূয়ায় ছেয়ে যাবে। (দূখান-১০)
মৃত্যু ঘন্টা :
আর এ ধরনের পরিস্থিতিতেই মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠবে। সকল জীবিত অস্তিত্বেরই মৃত্যু ঘটবে এবং প্রকৃতি ভুবনে আর কোন জীবনের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। আর ভয়-ভীতি ও অনিশ্চয়তার ছায়া সকল মানুষের উপর নেমে আসবে কিন্তু তারা ব্যতীত,যারা বাস্তবতা ও অস্তিত্বের রহস্য সম্পর্কে অবগত এবং যাদের আত্মাগুলো প্রভুর জ্ঞান ও প্রেমের গভীরে নিমজ্জিত।
মহা গ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে :-
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّـهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে,তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।(যুমার-৬৮)
فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ
যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার।(আল হাক্বা-১৩)
مَا يَنظُرُونَ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُونَ
তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে,যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে। (ইয়াসীন-৪৯।)
وَيَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّـهُ ۚ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ (৮৭) وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ۚ صُنْعَ اللَّـهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ ۚ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ (৮৮) مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ خَيْرٌ مِّنْهَا وَهُم مِّن فَزَعٍ يَوْمَئِذٍ آمِنُونَ (৮৯)
যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে,অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন,তারা ব্যতীত নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যারা আছে,তারা সবাই ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তাঁর কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়। তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর,অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর প্রযুক্তি,যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ,তিনি তা অবগত আছেন। যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে,সে উৎকৃষ্টতর প্রতিদান পাবে এবং সেদিন তারা গুরুতর অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে।
জাগরণতুর্য এবং পুনরুত্থানের সূচনা :
অতঃপর অমর এ চিরন্তনতার অধিকারী অপর এক জগৎ অস্তিত্ব লাভ করবে,ধরিত্রীর রূপ ঐশী জ্যোতির আলোকে আলোকিত হবে,জাগরণতুর্য উচ্চনিনাদে বেজে উঠবে,সকল মানুষ (এমনকি সকল পশু-পাখীও) এক মুহূর্তের মধ্যে পুনর্জীবন লাভ করবে,হতভম্ভ ও হতচকিত পঙ্গপাল ও প্রজাপতির মত দ্রুত গতিতে প্রভুর দিকে ধাবিত হবে এবং সকলেই এক মহা ময়দানে উপস্থিত হবে । এমতাবস্থায় অধিকাংশেরই দাবী থাকবে যে,বারযাখে তাদের অবস্থান হয়েছিল একঘণ্টা,একদিন অথবা কয়েকদিন।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে:-
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّـهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন এ পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে অন্য পৃথিবীতে পরিণত করা হবে এবং একইভাবে আকাশমণ্ডলীকেও এবং তারা (সকল মানুষ) অদ্বিতীয় মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। (ইব্রাহীম-৪৮)
وَمَا قَدَرُوا اللَّـهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে,তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।(যূমার-৬৭)
أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا لَـٰكِنِ الظَّالِمُونَ الْيَوْمَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
সেদিন তারা কি চমৎকার শুনবে এবং দেখবে,যেদিন তারা আমার কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ জালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে।(মারিয়াম-৩৮)
لَّقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَـٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ
তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ণ।(ক্বাফ-২২)
وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
পৃথিবী তার পালনকর্তার নূরে উদ্ভাসিত হবে,আমলনামা স্থাপন করা হবে,পয়গম্বরগণ ও সাক্ষীগণকে আনা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে-তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।(যূমার-৬৯)
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّـهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে,তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।(যূমার-৬৮)
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।(কাহ্ফ-৯৯)
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا
যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে।(নাবা-১৮)
فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ فَإِذَا هُم بِالسَّاهِرَةِ
অতএব,এটা তো কেবল এক মহাগর্জন,তখনই তারা ময়দানে আবির্ভূত হবে।(নাযিয়াত-১৩-১৪)
فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ فَإِذَا هُمْ يَنظُرُونَ
বস্তুতঃ সে উত্থান হবে একটি বিকট শব্দ মাত্র-যখন তারা প্রত্যক্ষ করতে থাকবে।(সাফফত-১৯)
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُم مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
ভূমণ্ডলে বিচরণকারী যত প্রাণী এবং নিজ ডানাদ্বয়ে ভর দিয়ে উড়ে বেড়ানো যত পাখি রয়েছে তারাও তোমাদের মতই জাতি বিশেষ। আমরা এ গ্রন্থে (কুরআনে) কোন কিছইু লিপিবদ্ধ করতে অবহেলা করিনি (সমস্তই লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত রয়েছে); অতঃপর তাদেরকে (পশু হোক বা পাখি) তাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হবে। (আনআম-৩৮)
وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে।(তাকভির-৫)
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا
এবং যেদিন আমরা পর্বতসমূহকে গতিশীল করব এবং তুমি ভূম-লকে দেখবে প্রকাশিত (ও সমতল); আর আমরা তাদের সমবেত করব,তাদের একজনকেও অব্যাহতি দেব না। (কাহ্ফ-৪৭)
وَلِلَّـهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়সমূহ আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট এবং নির্দিষ্ট সময়ের (কিয়ামতের) আদেশ তো কেবল চক্ষুর নিমিষের ন্যায় অথবা তা অপেক্ষাও নিকটতর; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বক্ষম। (নাহল-৭৭)
وَمَا أَمْرُنَا إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ
আমার কাজ তো এক মুহূর্তে চোখের পলকের মত।(ক্বামার-৫০)
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا
যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে।(নাবা-১৮)
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْوَعِيدِ
শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।(ক্বাফ-২০)
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ
যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতংগের মত।(কারিয়াহ-৪)
خُشَّعًا أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُّنتَشِرٌ
তাদের চোখ অবনত অবস্থায়,তারা বেরিয়ে আসতে থাকবে কবর থেকে যেন তারা ছড়িয়ে পড়া পঙ্গপাল ।(ক্বামার-৭)
يَوْمَ تَشَقَّقُ الْأَرْضُ عَنْهُمْ سِرَاعًا ذَٰلِكَ حَشْرٌ عَلَيْنَا يَسِيرٌ
যেদিন ভূমন্ডল বিদীর্ণ হয়ে মানুষ ছুটাছুটি করে বের হয়ে আসবে। এটা এমন সমবেত করা,যা আমার জন্যে অতি সহজ।(ক্বাফ-৪৪)
يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَىٰ نُصُبٍ يُوفِضُونَ
সে দিন তারা কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হবে,যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে।(মায়ারিজ-৪৩)
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।(ইয়াসীন-৫১)
إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمُسْتَقَرُّ
আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে।(আল ক্বিয়ামাহ-১২)
إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمَسَاقُ
সেদিন,আপনার পালনকর্তার নিকট সবকিছু নীত হবে।(আল ক্বিয়ামাহ-৩০)
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।(কাহ্ফ-৯৯)
اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۗ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّـهِ حَدِيثًا
আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কেয়ামতের দিন,এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে!(নিসা-৮৭)
رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না।(আলে ইমরান-৯)
لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন। এর আগমনে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেদের কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,তারাই বিশ্বাস স্থাপন করে না।(আনআম-১২)
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ذَٰلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ
নিশ্চয় এতে এক নিদর্শন রয়েছে তার জন্য যে পরকালের শাস্তির ভয় করে। এটা সেই দিন,যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে;এটা সেই দিন যেদিনকে সকলেই প্রত্যক্ষ করবে। (হুদ-১০৩)
يَوْمَ يَجْمَعُكُمْ لِيَوْمِ الْجَمْعِ ذَٰلِكَ يَوْمُ التَّغَابُنِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّـهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তিনি (মানুষকে) সমবেত করার (কিয়ামত) দিন তোমাদের সমবেত করবেন,সেদিন লোকসানের দিন। যে কেউ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তিনি তার মন্দগুলোকে তার থেকে বিদূরীত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত,সেখানে তারা চিরকালের জন্য স্থায়ী হবে,এটাই মহাসাফল্য। (তাগাবুন-৯)
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُوا غَيْرَ سَاعَةٍ كَذَٰلِكَ كَانُوا يُؤْفَكُونَ
যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা শপথ করে বলবে যে,তারা ক্ষণকালের বেশি অবস্থান করেনি;বস্তুত (ইহকালেও) এভাবেই তাদের (সত্য অনুধাবন থেকে) ফিরিয়ে দেওয়া হত। (রূম-৫৫)
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا
যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে (সেদিন তাদের মনে হবে) যেন তারা এতে (পৃথিবীতে) মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রহর অবস্থান করেছে। (নাযিয়াত-৪৬)
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَن لَّمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُونَ بَيْنَهُمْ قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّـهِ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
যেদিন তিনি (আল্লাহ) তাদের সমবেত করবেন সেদিন (তাদের মনে হবে) তারা দিবসের ক্ষণকাল মাত্র অবস্থান করেছিল। তারা একে অপরকে চিনে নেবে,যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না। (ইউনুস-৪৫)
يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِ وَتَظُنُّونَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا
যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন,অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। এবং তোমরা অনুমান করবে যে,সামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে।(ইসরা-৫২)
يَتَخَافَتُونَ بَيْنَهُمْ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا عَشْرًا نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ إِذْ يَقُولُ أَمْثَلُهُمْ طَرِيقَةً إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا يَوْمًا
তারা চুপিসারে পরস্পরে বলাবলি করবেঃ তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে। তারা কি বলে তা আমি ভালোভাবে জানি। তাদের মধ্যে যে,অপেক্ষাকৃত উত্তম পথের অনুসারী সে বলবেঃ তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে।(তোহা-১০৩-১০৪)
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِل لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِّن نَّهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ
অতএব,আপনি সবর করুন,যেমন উচ্চ সাহসী পয়গম্বরগণ সবর করেছেন এবং ওদের বিষয়ে তড়িঘড়ি করবেন না। ওদেরকে যে বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হত,তা যেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে,সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দিনের এক মুহুর্তের বেশী পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটা সুস্পষ্ট অবগতি। এখন তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে,যারা পাপাচারী সম্প্রদায়।(আহক্বাফ-৩৫)
প্রভুর বিচারব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ এবং পারস্পরিক সম্পর্কোচ্ছেদ :
ঐ জগতে সকল বাস্তবতা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হবে এবং প্রভুর শাসন ব্যবস্থা ও রাজত্ব চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে আর সৃষ্টির উপর এমন আতংকের ছায়া নেমে আসবে যে,কারোই উচ্চবাচ্য করার কোন সামর্থ্য থাকবে না । প্রত্যেকেই নিজ নিজ অদৃষ্টের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে এবং এমনকি সন্তানরা পিতা-মাতা থেকে,নিকটজন ও আত্মীয়-স্বজন পরস্পর থেকে পলায়ন করবে । মূলত: আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হবে এবং পার্থিবলাভ ও শয়তানী মানদণ্ডের ভিত্তিতে যে সকল বন্ধন স্থাপিত হয়েছিল,সে সকল সম্পর্ক শত্রুতায় পরিণত হবে । ইতিপূর্বে কৃত অপরাধের জন্যে অনুতাপ ও অনুশোচনায় হৃদয় আবিষ্ট হবে ।
وَبَرَزُوا لِلَّـهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّـهِ مِن شَيْءٍ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّـهُ لَهَدَيْنَاكُمْ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ
(কিয়ামত দিবসে) তারা সকলেই আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে,তখন দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা যারা অহংকার করেছিল তাদের বলবে,‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম,এখন তোমরা কি আল্লাহর শাস্তি হতে আমাদের কিছুমাত্র রক্ষা করতে পার?’ তারা বলবে,‘যদি আল্লাহ আমাদের পথ প্রদর্শন করতেন,তবে আমরাও তোমাদের পথ প্রদর্শন করতাম। আমরা অধৈর্য হই অথবা ধৈর্যধারণ করি- আমাদের জন্য সমান;আমাদের (শাস্তি হতে) অব্যাহতি নেই।’’’ (ইব্রাহীম-২১)
وَحُصِّلَ مَا فِي الصُّدُورِ
এবং অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে?(আল আদিয়াত-১০)
يَوْمَ تُبْلَى السَّرَائِرُ
সেইদিন লুকোনো সব-কিছুকে প্রকাশ করা হবে;।(আত ত্বারিক-৯)
لَّقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَـٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ
(তাকে বলা হবে,)‘নিঃসন্দেহে তুমি এ (দিন) সম্পর্কে উদাসীন ছিলে,আমরা এখন তোমার সম্মুখ হতে তোমার পর্দা অপসারিত করেছি,আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর হয়েছে। (ক্বাফ-২২)
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَىٰ مِنكُمْ خَافِيَةٌ
সেইদিন তোমাদের অনাবৃত করা হবে,কোনো গোপন বিষয় তোমাদের থেকে গোপন থাকবে না।(আল হাক্বাহ-১৮)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّـهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَيُمْسِكُ السَّمَاءَ أَن تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ إِنَّ اللَّـهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
তুমি কি লক্ষ্য করনি যে,ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে আল্লাহ সেগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তরণীকেও যা তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে চলাচল করে;এবং তিনিই আকাশকে স্থির রেখেছেন,যা তাঁর অনুজ্ঞা ভিন্ন ভূপৃষ্ঠে ভেঙ্গে পড়তে পারে না। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অতিশয় সদয়,অনন্ত করুণাময়। (হাজ্জ-৫৬)
الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَـٰنِ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى الْكَافِرِينَ عَسِيرًا
সার্বভৌমত্ব সেইদিন সত্যি-সত্যি পরম করুণাময়ের। আর অবিশ্বাসীদের জন্য সেই দিনটি হবে বড় কঠিন! (ফুরকান-২৬)
يَوْمَ هُم بَارِزُونَ لَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّـهِ مِنْهُمْ شَيْءٌ لِّمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّـهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
যেদিন তাদের সব কিছু প্রকাশ হয়ে পড়বে,আল্লাহ্র কাছে তাদের সন্বন্ধে কিছুই গোপন থাকবে না। “আজকের দিনে কার রাজত্ব?’” একক সার্বভৌম কর্তৃত্বশীল আল্লাহ্র।’’(গফির-১৬)
يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّـهِ
সেইদিন যেদিন কেউ কারও জন্যে কোনো-কিছু করার সামর্থ্য রাখবে না। আর সেইদিনের কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর।(ইনফিতার-১৯)
يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ
যখন সে-দিনটি আসবে তখন কোনো সত্ত্বাই তাঁর অনুমতি ব্যতীত কথা বলতে পারবে না,কাজে-কাজেই তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য আর কেউ ভাগ্যবান।(হুদ-১০৫)
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَـٰنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
সেই দিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে,যার কথা এদিক-সেদিক হবে না এবং দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সব শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু গুঞ্জন ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।(তোহা-১০৮)
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَقَالَ صَوَابًا
যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন,সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে।(নাবা-৩৮)
يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ (৩৪) وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ (৩৫) وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ (৩৬) لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে,তার মাতা,তার পিতা,তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে,যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।(আবাসা-৩৪-৩৭)
يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ
যে দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না।(শুয়ারা-৮৮)
وَلَا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا (১০)بَصَّرُونَهُمْ يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِي مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ بِبَنِيهِ (১১) وَصَاحِبَتِهِ وَأَخِيهِ (১২) وَفَصِيلَتِهِ الَّتِي تُؤْوِيهِ (১৩) وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنجِيهِ
বন্ধু বন্ধুর খবর নিবে না। যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পনস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে,তার স্ত্রীকে,তার ভ্রাতাকে,তার গোষ্ঠীকে,যারা তাকে আশ্রয় দিত।এবং পৃথিবীর সবকিছুকে,অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।(মায়ারিজ-(১০-১৪))
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِي وَالِدٌ عَن وَلَدِهِ وَلَا مَوْلُودٌ هُوَ جَازٍ عَن وَالِدِهِ شَيْئًا ۚ إِنَّ وَعْدَ اللَّـهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِاللَّـهِ الْغَرُورُ
হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে,যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব,পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।(লুকমান -৩৩।)
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ
অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক।(বাকারা-১৬৬)
فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ
অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে,সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্নীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।(মু’মিনুন-১০১।)
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে,তবে খোদাভীরুরা নয়।(যুখরূফ-৬৭)
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّـهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوا يَا حَسْرَتَنَا عَلَىٰ مَا فَرَّطْنَا فِيهَا وَهُمْ يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَىٰ ظُهُورِهِمْ ۚ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ
নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত,যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি,যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে,তারা বলবেঃ হায় আফসোস,এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তার স্বীয় বোঝা স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ,তারা যে বোঝা বহন করবে,তা নিকৃষ্টতর বোঝা।(আনআম-৩১)
وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ ۗ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বস্তুতঃ যদি প্রত্যেক গোনাহগারের কাছে এত পরিমাণ থাকে যা আছে সমগ্র যমীনের মাঝে,আর অবশ্যই যদি সেগুলো নিজের মুক্তির বিনিময়ে দিতে চাইবে আর গোপনে গোপনে অনুতাপ করবে,যখন আযাব দেখবে। বস্তুতঃ তাদের জন্য সিদ্ধান্ত হবে ন্যায়সঙ্গত এবং তাদের উপর জুলম হবে না।(ইউনুস-৫৪)
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিন যখন সব ব্যাপারের মীমাংসা হয়ে যাবে। এখন তারা অনবধানতায় আছে এবং তারা বিশ্বাস স্থাপন করছে না।(মারিয়াম-৩৯)
এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে যুক্তি আপনিই বলে উঠবে যে ,দুনিয়ার মানুষের পরিণাম সম্পর্কে যত ধারণা রয়েছে,তার মধ্যে এ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে যুক্তিসংগত এবং এর ভিতরে অযৌক্তিক অথবা অসম্ভব কিছুই নেই।
নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) যখন একে সত্য বলে বর্ণনা করে গেছেন এবং এর সবকিছুই আমাদের জন্য কল্যাণকর ,তখন বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে এর উপর প্রত্যয় পোষণ করা এবং বিনা যুক্তিতে এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না করা