আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মালয়েশিয়ার সেলাঞ্জুর প্রদেশ কর্তৃপক্ষ বিগত বছরগুলোর ন্যায় মহররম মাসে আযাদারী অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় আহলে বাইত (আ.) এর ২ শতাধিক অনুসারীকে আটক করেছে।
ওয়াহাবি চিন্তাধারায় প্রভাবিত সেলাঞ্জুর প্রদেশের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর এবার শুধু ধর্ম স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং এদেশে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের অধিকারেও হস্তক্ষেপ করেছে।
৯ মহররম দিবাগত রাতে (শবে আশুরা) ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের স্মরণে শোক পালনে ব্যস্ত ইরাকি ছাত্র এবং তাদের পরিবারের উপর চড়াও হয় মালয়েশিয়া পুলিশ। ঐ শোক মজলিশ থেকে পুলিশ উপস্থিত সকল ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় ঐ স্থানে ২ শতাধিক ইরাকি আযাদারী করছিলেন।
সেলাঞ্জুর প্রদেশের ‘সারদাঙ্গ’ এলাকায় ইরাকিদের ঐ আয়োজন পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। ঐ স্থান থাকে পিএইচডি ও মাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত ইরাকি ছাত্রদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য
এ পদক্ষেপের বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছে না সেলাঞ্জুর প্রদেশের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর (JAIS) ও প্রাদেশিক পুলিশ। উভয়ই এর জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে!
সেলাঞ্জুরের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক হারেস কাসিম জানিয়েছেন, বিষয়টি পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত। অতএব, আমরা এরচে বেশী ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। পুলিশও ইরাকিদেরকে আটকের বিষয়ে তারা কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। তারা বলছে যে, ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে তাদেরকে আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না!
ইরাকের কড়া প্রতিবাদ
আশুরা বিরোধী এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, মালয়েশিয়ায় আযাদারিতে ব্যস্ত ইরাকি ছাত্রদেরকে আটকের বিষয়টি তারা হাল্কাভাবে নেবে না। ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ‘আহমাদ মাহজুব’ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরাকি নাগরিকদেরকে আটকের বিষয়টি ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের গোচরে দিয়েছে ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোন স্পষ্ট দলীল ও প্রমাণ ছাড়া অন্য কোন দেশে ইরাকি নাগরিকের আটক হওয়ার বিষয়টিকে বরদশত করবে না তারা।
তিনি বলেন: ‘এ পদক্ষেপ ইরাক ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কে চীড় ধরাবে, অথচ আমরা সর্বদাই সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আগ্রহী’।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই ঐ আযাদারির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এ কথা উল্লেখ করে নাজাফে আশরাফের জুমআর খতিব ইমাম হুসাইন (আ.) এর শোক মজলিশে অংশগ্রহণের অভিযোগ ২০০ ইরাকি ছাত্রকে আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন কোবাঞ্চি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অমানবিক এবং নিঃসন্দেহে এর পেছনে ওয়াহাবিদের হাত রয়েছে। অনতি বিলম্বে ছাত্রদেরকে মুক্তি দিতে হবে।
কিছু কিছু গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে জানা গেছে, ইরাক সরকারের চাপ প্রয়োগের ফলে আটককৃত ছাত্রদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আমাদের হাতে এখনো এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আসেনি।
প্রসঙ্গত, সেলাঞ্জুর প্রদেশে ইমাম হুসাইন (আ.) এর আযাদারী ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ২০১০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর একই প্রদেশের ‘সেরি গোম্বাক’ এলাকায় অবস্থিত ইমাম আলী ইবনে মুসা আর-রেজা (আ.) মাদ্রাসাতে আয়োজিত শোক মজলিশেও হামলা চালায় পুলিশ। ঐ হামলায় মালয়েশিয় আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম ‘হাজি মুহাম্মাদ কামেল যুহাইরি বিন আব্দুল আযিয’ এবং ঐ ইমামবাড়িতে মহররম মাসে তাবলিগের জন্য আগত ইরানি আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ‘মুহসেন রাদমার্দ’কে আটক করা হয়।
২০১৫ সালের ২২শে অক্টোবর কুয়ালালামপুরের ইমাম রেজা (আ.) ইমামবাড়িতে আয়োজিত আযাদারীর অনুষ্ঠানে হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় তারা শোক অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়ে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাধারণ পরিষদের মালয়েশিয় সদস্য হুজ্জাতুল ইসলাম কামেল যুহাইরিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সেলাঞ্জুর প্রদেশের ধর্মীয় পুলিশ গতবছরও ৯ মহররম দিবাগত রাতে (১১ অক্টোবর ২০১৬) একটি আযাদারীর অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সেখান থেকে ১৫ জনকে আটক করে। উস্তাদ যুহাইরিকে এবার নিয়ে মোট তৃতীয়বারের মত আটক করে কুয়ালালামপুরের ‘শাহ আলম’ এলাকায় অবস্থিত ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তরের (JAIS) প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বলাবাহুল্য, ৪০ লক্ষ জনবসতির সেলাঞ্জুর (সেলাঞ্জুর দারুল এহসান) প্রদেশ মালয়েশিয়ার ১৩টি প্রদেশের অন্যতম। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরও এ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। মালয়েশিয়ার অন্য প্রদেশগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের বিষয়ে স্বাধীনতা থাকলেও সেলাঞ্জুর প্রদেশের ধর্ম বিষয় অধিদপ্তর আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদেরকে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে বাধা দিয়ে থাকে।#