আবনা ডেস্কঃ মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চিকেই সব কিছুর জন্য দায়ী করেছেন এক রোহিঙ্গা শরণার্থী।
এক খোলা চিঠিতে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রো মাইয়ু আলী সু চিকে দায়ী করেছেন।
২৬ বছর বয়সী এই যুবক লেখক হতে চান। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন প্রিয় পাঠাগার। কিন্তু সেনাদের দেয়া আগুনে সব হারিয়েছেন। এখন ঠাঁই পেয়েছেন কুতুপালংয়ের এক আশ্রয় ক্যাম্পে।
আলজাজিরার মাধ্যমে এক খোলা চিঠি দেন তার একসময়ের প্রিয় নেত্রী অং সান সু চিকে।
পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল চিঠিটির সারবস্তু-
আমার যখন জন্ম হয়, ওই বছরই আপনি নোবেল পুরস্কার পান। আমরা রোহিঙ্গারা কত খুশি হয়েছিলাম তা ভাষায় বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
কক্সবাজারের এই শরণার্থী ক্যাম্পে যারা আমরা রাখাইন থেকে এসেছি, আমাদের সবাই আনন্দে ভাসছিলাম আপনার বিজয়ে। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতাম।
আমরা ভেবেছি- দীর্ঘদিন সামরিক জান্তার হাতে নিষ্পেষিত হওয়ার পর আপনার শান্তিতে নোবেল বিজয় আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
আপনার দলের সদস্য যখন রাখাইন পরিদর্শন করে, তখন আমার দাদা ছাগল-গরু জবেহ করে সবাইকে খাওয়াইছে।
আপনার নোবেল বিজয়ের পর দীর্ঘদিন গত হয়েছে। আপনি গৃহবন্দি থেকে মুক্ত হয়েছেন। দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন হয়েছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনে আপনি বিজয়ী হয়েছেন। আমরা ভেবেছি আমাদের দুঃখের দিন বুঝি ফুরাল।
কিন্তু গত ৭ বছরে আমাদের ওপর চালানো ধর্ষণ, গণহত্যা, জাতিগত দমনপীড়ন কি একটুও কমেছে?
আপনার প্রশাসনের নির্দেশে কয়েক মাস পরেই শুরু হয় নতুন করে দমনপীড়ন। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ শুরু হয় রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে।
১ সেপ্টেম্বর আমি ও বাবা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। তিন দিন দুই রাতের অবিচ্ছিন্ন পথ পেরিয়ে আশ্রয় নিই কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
আমি শুনেছি- আমার বাড়িটিসহ পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি এ জন্য সু চিকেই দায়ী করছি। তাকে আমার পাঠাগার পুড়িয়ে দেয়ার জন্যও দায়ী করছি।
আমি সবসময় একজন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। এ জন্য নেলসন ম্যান্ডেলাসহ বিভিন্ন লেখকের বই সংগ্রহে রাখতাম। সু চি আপনিই দায়ী আমার স্বপ্ন ও আশা আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার জন্য।
সব কিছু হারিয়ে আমি এখন বাংলাদেশের একটি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন- কেন আপনি একটি বারের জন্যও রাখাইনে পরিদর্শনে যাননি। আপনি কি আমাদের অবস্থা সম্পর্কে একবারও ভেবেছেন।
রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি- এটি আমাদের পীড়িত করে না। আমাদের পীড়িত হয়, যখন আমাদের শুনতে হয়- আমরা সু চির মিয়ানমারের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি।
আপনি যে পথ বেছে নিয়েছেন তা আজ সবার কাছে পরিষ্কার। সবাই দেখছে- আপনার নাম হবে সামরিক জান্তাসমর্থিত। যাদের কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন।
২৬ বছর বয়সী এই যুবক লেখক হতে চান। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন প্রিয় পাঠাগার। কিন্তু সেনাদের দেয়া আগুনে সব হারিয়েছেন। এখন ঠাঁই পেয়েছেন কুতুপালংয়ের এক আশ্রয় ক্যাম্পে। আলজাজিরার মাধ্যমে এক খোলা চিঠি দেন তার একসময়ের প্রিয় নেত্রী অং সান সু চিকে।