সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে, মূর্খতা প্রদর্শন করে চলেছেন তা দেখে আমরা যেন শত্রুতদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র থেকে গাফিল না হই এবং বিষয়টিকে যেন ক্ষুদ্র জ্ঞান না করি। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আমাদেরকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা গত বুধবার (১৮ অক্টোবর ২০১৭) সকালে ইরানের শত শত মেধাবী যুবকদের মাঝে বক্তৃতাকালে মেধাবী যুবকদেরকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো বলে আখ্যায়িত করেছেন। বড় শয়তানের প্রতারণা ও ধোকার বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন: রাজনৈতিক ও সাংবাদিক সমাজ পরমাণু সমঝোতার প্রসঙ্গে ৭টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সংযোজন: ইরানের সাথে মার্কিন সরকারের শত্রুতা বিপ্লবের শুরু থেকেই। ঐ সময় না পরমাণু কর্মসূচীর কোন কথা ছিল, না ক্ষেপণাত্র তৈরির, আর না মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে মাথা ঘামানোর বিষয়। কিন্তু মার্কিনীরা বুঝতে পেরেছিল, ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের মাধ্যমে তারা ‘অনুগত ও বহুমুখী ফলপ্রসু’ একটি দেশকে হাতছাড়া করেছে। বিশ্বের জনতা ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে তাদের (জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে) আদর্শ হিসেবে মেনে নেওয়ার বিষয়টি তাদেরকে নিরাশ করেছে এবং তাদের ক্রোধের কারণ হয়েছে।
তিনি বলেন: ইরানি জাতি গত ৪০ বছরে এটা প্রমাণ করতে পেরেছে যে, তারা পরাশক্তিগুলোকে ভয় পায় না। এটাও প্রমাণ করেছে যে, পরাশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অসম্ভব কিছু নয় এবং বিভিন্ন চাপ ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্রমাগত উন্নতিতে পৌঁছুনো সম্ভব।
ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও সামরিক খাতে ইরানের সাফল্য শত্রুদেরও বাহবা কুড়িয়েছে এবং তাদের আশ্চর্যের কারণ হয়েছে –এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: কয়েক বছর আগে এ প্রসঙ্গে জায়নবাদি এক জেনারেলের লেখা একটি প্রবন্ধ এ বাস্তবতার জ্বলন্ত প্রমাণ।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন: ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনর্থক কথাবার্তার উত্তর দিতে আমি মেধাবীদের এ সুন্দর ও উপকারী সভার সময় নষ্ট করবো না’। তবে এটা বলা প্রয়োজন যে, সবাইকে শত্রু সম্পর্কে পরিচিতি অর্জনের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা যে জাতি নিজের শত্রুকে চিহ্নিত করতে না পেরে তাকে বন্ধু ও নিরপেক্ষ জ্ঞান করে, সে হুমকি ও বিপদের মুখে পড়ে।
তিনি বলেন: আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) নাহজুল বালাগাহ’তে বলেছেন, ‘আমি ঘুমন্ত নই এবং আমি বুঝি যে আমার চারপাশে কি ঘটছে’। ইরানি জাতি ও দেশের কর্মকর্তারাও যেন ঘুমিয়ে পড়ে গাফিলতির শিকার না হয়। কেননা এমতাবস্থায় আমাদের উপর আতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন: তারা চায়, দৃঢ় আকিদার অধিকারী ও বিপ্লবী ইরানকে ৫০ বছর পিছিয়ে নিতে। অবশ্য এটা জানা কথা যে, এমনটি কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু তারা তাদের পশ্চাদপদতার কারণে এ বাস্তবতা অনুধাবনে অক্ষম। আর এ কারণেই তারা হিসেবে ভুল করে ইরানি জাতির কাছে বার বার পরাজয় বরণ করেছে।
ইমাম খোমেনি (রহ.) এর ঐতিহাসিক বাণী উদ্ধৃত করে আমেরিকাকে ‘শয়তান-এ বোজোর্গ’ তথা বড় শয়তান আখ্যায়িত করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন: মার্কিন সরকার, আন্তর্জাতিক জায়নবাদের দালাল, স্বাধীন জাতিসমূহের শত্রু, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বেশিরভাগ যুদ্ধের সাথে তারা জড়িত। তারা জোঁকের মত বিভিন্ন জাতির সর্বস্ব শুষে নিচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ‘দায়েশ স্বয়ং আমেরিকার সৃষ্টি’ শীর্ষক ট্রাম্পের মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও দায়েশের ভয়ংকর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা আইআরজিসি’র বিরুদ্ধে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বক্তব্য রাখবে এবং চিৎকার-চেচামেচি করবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাওয়া মার্কিন কর্তৃপক্ষের রাগান্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আমেরিকার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রকে ধূলিস্যাৎ করেছে।
তিনি বলেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে, মূর্খতা প্রদর্শন করে চলেছেন তা দেখে আমরা যেন শত্রুতদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র থেকে গাফিল না হই এবং বিষয়টিকে যেন ক্ষুদ্র জ্ঞান না করি। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আমাদেরকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন: সামরিক যুদ্ধ সংঘটিত হবে না। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর গুরুত্ব যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। অতএব, আমাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন: আমি বহুবার এ কথা বলেছি যে, বৈদেশিক বিনিয়োগের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। কিন্তু দেশের অর্থনীতি এমন কোন ভীতের সাথে যেন সম্পৃক্ত না থাকে যে, ট্রাম্পের মত লোকের চিৎকারে তা প্রকম্পিত হয়। ইরানের অর্থনীতি অবশ্যই ‘শক্তিশালী ভীত এবং অভ্যন্তরিন সক্ষমতার’ উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরমাণু চুক্তির বিষয়ে শত্রু এ কথা বলতো যে, যদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তবে শত্রুতা শেষ হয়ে যাবে। আমরা সমঝোতা করেছি কিন্তু শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ‘যদি ওমুক ইস্যুতে সমঝোতা না করি তবে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে’ এ জাতীয় কোন বিষয় উত্থাপন করাটা উচৎ নয়, মূলতঃ শত্রুরা এটাই চায়। আমরা চাই শত্রুদের এ সকল হুমকির বিষয়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের কল্যাণ সম্পর্কে নিজেরাই চিন্তা করতে এবং শত্রুদের থেকে আমাদের কল্যাণের বিষয়ে কথা গ্রহণ না করতে।
তার সংযোজন: ঐ (যুদ্ধের) দিনগুলোতে সাদ্দাম ও তার পশ্চিমা মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে অরক্ষিত ছিল তেহরান। দেশের যুবসমাজ এ সমস্যার সমাধানে শূণ্য থেকে পরিকল্পনা শুরু করেছিল এবং পর্যায়ক্রমে এমন সক্ষমতায় পৌঁছেছে যে, শত্রুরা তাদের বিপরীতে আমাদের সক্ষমতাকে দেখে থেমে যেতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন: ইউরোপীয়রা, পরমাণু সমঝোতা তাদের এবং আমেরিকার স্বার্থসিদ্ধ এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সমঝোতা চুক্তি ছিঁড়ে ফেলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার বিরোধিতা করেছে। এ ধরনের অবস্থান গ্রহণ কাঙ্খিত কিন্তু যথেষ্ট নয়। যতক্ষণ না আমাদের প্রতিপক্ষ সেটাকে ছিঁড়ে না ফেলছে আমরাও সেটাকে ছিঁড়বো না। কিন্তু যদি তারা সেটাকে ছিঁড়ে ফেলে তবে আমরা তা টুকরো টুকরো করবো।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন: যাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তারা ইরানকে ২ বা ৩ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইরানের একান্ত ব্যক্তিগত এ সকল বিষয়ের সাথে আপনাদের সম্পর্ক কি?