বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

চল্লিশ বছর পর আবার...

আবনা ডেস্কঃ চার দশক আগেও একবার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন রোহিঙ্গা ফজল আহমেদ। সেবার পালানোর কারণ ছিলো সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর তৎকালীন মিয়ানমারের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর চালানো নিপীড়ন এবং নিষ্ঠুরতা। যার তীব্রতা সইতে না পেরে পিতামাতার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ছোট্ট শিশু ফজল আহমেদ। সময়টা ছিলো ১৯৭৮ সাল। আট মাস পর বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে স¤পাদিত হওয়া এক শরনার্থী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের আওতায় পরিবারের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হয় ফজল আহমেদ। তবে ফিরে গিয়ে যে খুব সুখকর অভিজ্ঞতা তার পরিবার পেয়েছিলেন এমনটাও নয়।
ফিরে যাবার পর বৌদ্ধ উগ্রপন্থিরা তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিত। সেবার ঐ প্রত্যাবাসন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত যায় আরো দু’লাখ রোহিঙ্গা। যারা সবাই নৃশংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশে। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৪০ বছর। সময়ের পরিক্রমায় সেই ছোট্ট শিশু ফজল এরই মধ্যে বড় হয়ে বিয়ে করেছেন। হয়েছেন ৬টি ফুটফুটে সন্তানের জনক। স্ত্রী সন্তান নিয়ে মিয়ানমারের এই সহজ সরল কৃষকের মন্দ কাটছিল না। কিন্তু হঠাৎ আবার দুর্ভাগ্যের কালমেঘ ঘনিয়ে আসে ফজল আহমেদ এবং তার মতো লাখো রোহিঙ্গার জীবনে। চল্লিশ বছর পর হতবাক বিস্ময়ে ফজল আহমেদ লক্ষ্য করলেন, তিনি ঠিক সেই চল্লিশ বছর আগের বিষাদময় অতীতে ফিরে গেছেন। না, তিনি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছেন না। তিনি দেখছেন নির্মম বাস্তবতার নিষ্ঠুরতা। যার ব্যাপ্তি আগেরবারের চেয়েও বেশি। একদিন ভোরে নামাজের প্রস্তুতি নেবার সময় তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন, পাশের গ্রামের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বলছে। তার সঙ্গে ঘন ঘন বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। ফজলের পরিবার ও প্রতিবেশিরা বিপদের আঁচ পেয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রকেট লঞ্চার নিক্ষেপ করে রোহিঙ্গাদের সমস্ত ঘরবাড়ি এবং মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। ছোট ছোট বাঁশের ঘরগুলোতেও পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখায় জ্বলতে থাকে রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার সমস্ত অবলম্বন। শুধু জ্বালাও-পোড়াও করেই ক্ষান্ত থাকে নি সেনাবাহিনী। তারা মহিলাদের গণধর্ষণ করে, ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেয় ছোট ছোট নি®পাপ রোহিঙ্গা শিশুর। পরিকল্পিত জাতিগত নিধন বলে ইতিমধ্যে আখ্যায়িত হওয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাদের উপর সাম্প্রতিককালে চালানো এই সহিংসতার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। যাদের অধিকাংশের কাছে এই নিষ্ঠুরতা বয়ে এনেছে ভয়াবহ দুর্ভোগের বার্তা। তবে এক জীবনে এই অবিকল ভয়াবহতা দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যক্ষ করা ফজল আহমেদের যন্ত্রণার কাছে অন্যদের দুঃখ ¤‌ান হয়ে যায়। তার মতো প্রায় দশ লাখ আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ। দারিদ্রপিড়ীত এবং জনবহুল এই দেশটির পক্ষে আশ্রয় নেয়া বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব না। তাই বাংলাদেশ মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে। দেশ বিদেশের কূটনৈতিক চাপে পড়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে যে, মিয়ানমার তার পালিয়ে যাওয়া বৈধ রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেবে। তবে ফজল আহমেদের মতে, যে নারকীয় বর্বরতা রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকার চালিয়েছে, তাতে এ সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না যে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। তাদের বিশ্বাস, মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদের জীবনে আবার নির্যাতনের খড়গ নেমে আসবে। ভাবতে পারেন- কতটা ভয়াবহতার মুখোমুখি হলে একটা দেশের নাগরিকেরা তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে অনিহাবোধ করে?- প্রশ্ন রাখেন ফজল আহমেদ। যার সম্বল বলতে এই মুহুর্তে এক পৃথিবী বেদনা ছাড়া আর কিছু নেই।


0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পরীক্ষার খাতায় মায়ের গল্প লিখে ...
মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ...
দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিনের ...
বিশ্ব কুদস দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ...
ইসলাম বিদ্বেষীরা শিয়া-সুন্নি ...
প্রাণভিক্ষার আলোচনা করতে ছেলেকে ...
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহযোগিতা ...
ইরানের ইসলামী বিপ্লব মুসলমান ...
ক্যামেরুনে আত্মঘাতী বোমায় নিহত ...
সৃষ্টি জগত নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে ...

 
user comment