বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

বুকামালে ফ্রন্ট লাইনে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল সুলায়মানি: নাসরুল্লাহ

বুকামালে ফ্রন্ট লাইনে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল সুলায়মানি: নাসরুল্লাহ

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত সোমবার (২০ নভেম্বর) লেবানন ও সিরিয়ার বিভিন্ন ইস্যুর উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যের কিছু অংশ আবনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: অন্য বিষয়ে কথা বলার আগে আমি মহানবি (স.) এর ওফাত উপলক্ষে বিশ্বের সকল মুসলমানদের উদ্দেশ্যে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাদের সকলকে মহানবি (স.) এর প্রকৃত অনুসারী এবং ঐশী ধর্ম ইসলামের প্রকৃত রক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন।

তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে, ইরান-ইরাক সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, প্রেসিডেন্ট, মারজায়ে তাকলিদগণ, ইরানি পার্লামেন্ট, ইরানের জনগণ বিশেষতঃ কেরমানশাহ প্রদেশের জনগণের প্রতি শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে ইরানের আপামর জনতার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোর জন্য আদর্শ হতে পারে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য।

ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে দু’দেশের সৈন্যদের দায়েশ বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়ে ইরাক ও সিরিয়া ইস্যুতে হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেন: আমরা গত সপ্তাহে ইরাকের রাভে শহরে (দায়েশের সর্বশেষ ঘাঁটি) ইরাকি বাহিনীর বিজয়ের সংবাদ শুনেছি। ইরাক সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশটির কোন শহর বর্তমানে দায়েশিদের দখলে নেই।

রাভে শহরের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভকে বৃহৎ বিজয় বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ইরাকি সৈন্যরা সিরিয়া সীমান্তে পৌঁছেছে। এর মধ্য দিয়ে দায়েশ একটি সামরিক মুভমেন্ট হিসেবে সিরিয়া ও ইরাকে পরাজিত হয়েছে। আমরা তাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের অপেক্ষায় আছি। ঐ দিনের অপেক্ষায় রয়েছি, যেদিন ইরাক সরকার দায়েশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণা করবে, আর সেদিন দূরে নয়।

সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: ইরাকে দায়েশ ষড়যন্ত্রের শুরুর পর প্রথম থেকেই আমরা আমাদের ইরাকি ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে হিজবুল্লাহর কয়েকজন কমান্ডারকে ইরাকে প্রেরণ করেছিলাম। যাদের কয়েকজন শহীদ এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইরাকি ভাইদের সাথে পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে কথা বলবো যে, যদি ইরাকে হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের উপস্থিতির আবশ্যকতা না থাকে তবে তাদেরকে অন্য কোন স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেব। এ সিদ্ধান্তের সাথে আরবলীগের বিবৃতির কোন সম্পর্ক নেই। এ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণ হচ্ছে যে, ইরাকে দায়েশের উপস্থিতি না থাকাতে তাদের ইরাকে অবস্থানের কোন অর্থ হয় না।

দায়েশের সাথে যে কয়টি স্থানে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বুকামাল অন্যতম। শহরটিতে ছিল ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে দায়েশের সর্বশেষ ঘাঁটি। বর্তমানে সিরিয়ার অংশ সিরিয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে এবং ইরাকের অংশ ইরাকি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বলা হচ্ছে যে, এ বিজয়ের মাধ্যমে সিরিয়াকে খণ্ড খণ্ড করার যে নীলনকশা আকা হয়েছিল তা বাস্তবে নস্যাৎ হয়ে গেল।

হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেন: বুকামালে বিজয়ের মাধ্যমে দায়েশ সরকারের পতন ঘটবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠি দায়েশ নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। যে সরকার দায়েশ গঠন করেছিল তা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও দায়েশের সদস্য ও সহযোগীরা সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চল অবস্থান করছে।

তিনি বলেন: সিরিয়া ও ইরাক দায়েশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের উচিত এ বিষয়ে একটু চিন্তা করা যে, দায়েশকে শক্তিশালী করার নেপথ্যে কাদের ভূমিকা ছিল? আর কারা এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মোকাবিলা করেছে এবং এ পথে শহীদ দান করেছে?!

 

*বুকামাল অভিযানে রাশিয়াকে আমেরিকার হুমকি

সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: আল-বুকামাল শহরে দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে মার্কিনীরা দায়েশকে আকাশ পথে সহযোগিতা করেছে। দায়েশ বিরোধী জোট গঠনের দাবীদার মার্কিনীরা এ অঞ্চলে দায়েশের বিরুদ্ধে কোন হামলা তো চালায়নি বরং রাশিয়াকে হুমকি দিয়েছিল যে, এ অঞ্চলে দায়েশের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে ফুরাতের আশেপাশে অবস্থানরত সিরিয় বাহিনীর উপর হামলা চালানো হবে। এছাড়া সিরিয় বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দায়েশকে সরবরাহ করেছিল মার্কিনীরা।

তিনি বলেন: মার্কিন হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করে দায়েশের প্রভাবশালী নেতাদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এ ঘটনা কয়েকটি স্থানেই ঘটেছে। আল-বুকামালকে যেকোন মূল্যে দায়েশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, এ লক্ষ্যে মার্কিনীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। আর এ কারণেই দায়েশকে তাদের এতসব সহযোগিতা।

তিনি বলেন: দায়েশকে পরাজিত করতে ৩০ বছর সময় লাগবে বলে মার্কিনীরা দাবী করেছিল। মার্কিনীদের সব হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণ করে প্রতিরোধ আন্দোলন মাত্র কয়েক বছরে দায়েশকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় যে, মার্কিনীদের মিত্র এর্দোগান প্রকাশ্যে এ কথা স্বীকার করেছিলেন ‘মার্কিনীরা দায়েশকে সহযোগিতা করছে’। আমরা এ বিষয়ে এর্দোগানের এ কথাটুকু উল্লেখ করাকেই যথেষ্ট মনে করছি।

 

*ইরানের জনগণ ও জেনারেল সুলাইমানির প্রতি কৃতজ্ঞতা

হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেন: আল-বুকামালে বিজয়ে আমরা সিরিয় বাহিনী, প্রতিরোধ আন্দোলনের সৈন্য, ফাতিমিয়্যুন ও যানাবিয়্যুন বাহিনী এবং ইরানের কুদস ব্রিগেডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর শহীদদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জেনারেল কাসেম সুলায়মানির প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি অনেক অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দায়েশ বিরোধী সর্বশেষ কঠিন যুদ্ধগুলোতে তিনি আল-বুকামালে ফ্রন্ট লাইনে উপস্থিত থেকে সৈন্যদেরকে পরিচালনা করেছেন। পিতার ইন্তেকালের ঘটনায় তিনি ইরানে ফিরে গেলেও পূনরায় বুকামালে ফিরে এসেছেন। এ কারণে অবশ্যই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, জেনারেল সুলায়মানি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও জনগণের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ যে, মধ্যপ্রাচ্যের এ কঠিন সংকটের মুহূর্তে তারা এ অঞ্চলের জনগণের পাশে ছিলেন। কিছু কিছু আরব দেশের মন্ত্রীদের মত ইরানিদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন: দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় যেন সন্ত্রাসী এ গোষ্ঠির উপর থেকে আমাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে না দেয়। আমাদের জানা উচিত, মার্কিনীরা চেষ্টা করবে দায়েশের মধ্যে নতুন মন্ত্র ফুঁকে দিতে, যাতে তারা ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পায়।

 

*আরব লীগের বৈঠকের বিবৃতি প্রসঙ্গে

আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন: তারা ব্যালিস্টিক মিসাইল সরবরাহের জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছেন। যেসকল মন্ত্রীরা এ বিবৃতিকে সত্যায়িত করেছেন, তারা কি সত্যায়নের সময় আদৌ এ অভিযোগের স্বপক্ষে উপযুক্ত কোন যুক্তি জানতে চেয়েছেন? এটা বোকামীপূর্ণ ও মূল্যহীন কথা। তাদের সকলের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই, আমরা ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত ও ইরাক এক কথায় কোন আরব দেশে অস্ত্র পাঠাইনি। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনকে ‘কুরনিট’ মডেলের ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল দিয়েছি। যারাই আমাদেরকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত করতে চায় তারা নিজেরাই এ অভিযোগে অভিযুক্ত। সিরিয়া যুদ্ধে আমরা দায়েশের মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রগুলো পাঠিয়েছি।

তার সংযোজন: বিবৃতিতে দ্বিতীয় যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা হল, সৌদি আরব ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেবাননের উদ্দেশ্যে বলেছেন, যদি হিজবুল্লাহর বিষয়টি সমাধান না করেন, তবে হিজবুল্লাহর স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ঐ সকল ব্যক্তি ও জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, লেবাননের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে দখলদার ইসরাইল। লেবাননের মুক্তির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে প্রতিরোধ আন্দোলন আর প্রতিরোধ আন্দোলনের মূলমন্ত্র হচ্ছে হিজবুল্লাহ।

তিনি বলেন: জুবেইর ও খালেদকে উদ্দেশ্য করে বলছি, ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের অস্ত্র লেবাননে স্থিতিশীলতার নেপথ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কে লেবাননের বিপক্ষে ইসরাইলকে সহযোগিতা দেয়?? আপনারা এবং আপনাদের অস্ত্রভাণ্ডার। লেবাননে স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকার নেপথ্যে রয়েছে হিজবুল্লাহর অস্ত্র এবং দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তাই। যদি লেবাননকে সত্যিই সাহায্য করার ইচ্ছা থাকে তবে এদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকে তাকফিরিদেরকে প্রেরণ এবং ইসরাইলকে লেবাননের উপর হামলার বিষয়ে উস্কানি দেওয়া বন্ধ করুন।

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেন: যারা কায়রো বৈঠকে অংশ নিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার একটি প্রশ্ন রয়েছে; ইয়েমেন কি আরব দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এদেশের জনগণ কি আরব নয়? সৌদি জঙ্গি বিমানগুলো প্রতিনিয়তই ইয়েমেনের উপর বোম বর্ষণ করে চলেছে। আরবদের ধর্ম ও নীতি কি এ কাজের অনুমোদন দেয়? কেন আরব বিশ্ব এ বিষয়ে নিরব? সৌদি আরবকে কি তারা ভয় পায়?

তিনি বলেন: যে সকল ক্ষেপণাস্ত্র ইয়েমেনিদের পক্ষ থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তা ইয়েমেনিদেরই তৈরি। অতএব, তারা এ বিষয়টি অনুধাবন করতে অক্ষম যে ইয়েমেনিরা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারে এবং সেগুলো যুদ্ধে ব্যবহারও করতে পারে।

তিনি আরব লীগের হিজবুল্লাহ বিরোধী বিবৃতির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গ্রুপের স্পষ্ট অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন: ফিলিস্তিনীরা তাদের অধিকারকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আরব বিশ্ব ও আমেরিকার পক্ষ থেকে চাপের সম্মুখীন। আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে হিজবুল্লাহ বিরোধী বিবৃতির বিরুদ্ধে তিনি লেবানন ও ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।#

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্তিফাদার ...
আবনা : ইয়েমেন আগ্রাসীদের ...
সিরিয়া- লেবানন অভিন্ন সীমান্তে ...
বাহরাইনে ইমাম হোসাইন (আ.)এর ...
পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ খ্রিস্টান ...
মোরায় কক্সবাজারে দুই শতাধিক ...
ক্যান্সার দিবস : যে লক্ষণগুলো ...
আনসারুল্লাহ'র দখলে সৌদি আরবের ...
২৮০ জন শরণার্থীকে সমুদ্রে ...
সন্ত্রাসবাদ রুখতে ঐক্যবদ্ধ ...

 
user comment