বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার্মার সেনা কর্মকর্তা !

বনা ডেস্ক: বার্মার একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এখন অবস্থান করছেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে । সেনাবাহিনীর জেনারেল পদ মর্যাদার এ কর্মকর্তা একজন রোহিঙ্গা মুসলমান । চলতি বছর আগস্টের শেষ সপ্তাহে আরাকান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বার্মিজ বাহিনী অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তিনি ।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে গেলে এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাত হয় বয়োজৈষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ওমর হাকিমের সাথে । কুতুপালং নতুন ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকেন তিনি । ১৯৪৯ সালে মংডুর খিলাদং গ্রামে জন্ম নেন ওমর হাকিম । তার বাবা ওই এলাকার জমিদার আব্দুল লতিফ ।
কুতুপালং পুরনো ক্যাম্পে প্রবেশ পথে এক দোকানে চা পান করতে করতে ওমর হাকিমের মুখ থেকে শুনা হয় তার জীবনের বাস্তব গল্প ।
ইংরেজি ও রোহিঙ্গা মিশ্রিত ভাষায় ওমর হাকিম জানান, তার বার্মিজ নাম ছিল চিংহ্লা অং । ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের রাজত্বকালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । তখনও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়নি । সংসদ ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন ।
সত্তরের দশকে পদোন্নতি পেয়ে ইয়াঙ্গুন চলে যান ওমর হাকিম । সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান । কর্তৃপক্ষের হয়ে লন্ডনের স্টামপোর্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পরমাণু, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে মাষ্ট্রার্স করেন ।
তিনি বলেন, “ব্যাচম্যাটরা আমাকে ওমর খান হিসেবে জানেন । বাহিনী ও পড়ালেখা দু’টাতে দক্ষ হওয়ায় একজন সিপাহী থেকে আমি ধাপে ধাপে জেনারেল পদ মর্যাদা লাভ করি ।”
তিনি আরো বলেন, “ বর্তমান সেনা প্রধান মিন অংহ্লাইং ছিল আমার জুনিয়র ব্যাচের । সে আমাকে খুব শ্রদ্ধা করতো” ।
১৯৮২ সালে নতুন আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর রোহিঙ্গাদেরকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয় । সেসময় নিজেদের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রতিবাদী রোহিঙ্গাদের সাথে ছিলেন ওমর খানও । ফলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় । ওমর খান পালিয়ে যান থাইল্যান্ডে । সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় সংসার পাতেন।
২০০০ সনের শুরুর দিকে গোপনে তিনি দেশে ফিরে আসেন । স্বদেশে ফিরতে পেরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন । গ্রামের বাড়িতে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটান । কিন্তু সে আনন্দ আর রইলনা ।
মাস তিনেক আগে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে বর্বরতা চালায় । এসময় প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে যায় । ওমর হাকিমও তার পরিবার পরিজনের সাথে বাংলাদেশ ছুটে যান । আশ্রয় নেন পলিথিনের তাবুতে । ক্যাম্পে এখন মানবেতর দিন পার করছেন তিনি ।
ওমর হাকিম বলেন: 'দেশ মানে মা । একসময় এ মাকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলাম । কিন্তু বর্বর বৌদ্ধরা বৈষম্যনীতি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সকল প্রকার অধিকার হরণ করে নেয় । অন্যায়ভাবে শাসন ও শোষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তোলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে'।
তিনি বলেন, ‘যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, আজ সে দেশের নাগরিকই নাকি আমি নই ! এ কেমন বিচার?'
রিপোর্ট : হাসান হাফিজ


0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সিরিয়া- লেবানন অভিন্ন সীমান্তে ...
বাহরাইনে ইমাম হোসাইন (আ.)এর ...
পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ খ্রিস্টান ...
মোরায় কক্সবাজারে দুই শতাধিক ...
ক্যান্সার দিবস : যে লক্ষণগুলো ...
আনসারুল্লাহ'র দখলে সৌদি আরবের ...
২৮০ জন শরণার্থীকে সমুদ্রে ...
সন্ত্রাসবাদ রুখতে ঐক্যবদ্ধ ...
মিলাদুন্নবী, জুমাতুল বিদা সহ ১৭ ...
সেনা নিহতের কথা স্বীকার করল সৌদি ...

 
user comment