বাঙ্গালী
Saturday 28th of December 2024
0
نفر 0

আল কোরআনের অলৌকিকতা (৫ম পর্ব)

আল কোরআনের অলৌকিকতা (৫ম পর্ব)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) মদীনায় হিজরত করার পর কোরআনের অনেক আয়াত নাজেল হয়েছে। মদীনার সার্বিক পরিস্থিতি ও জনগণের অবস্থা ছিল মক্কার চেয়ে ভিন্ন। এ শহরে মুসলমানরা ধীরে ধীরে একটি শক্তিতে পরিণত হয়। আহলে কিতাব ও মুনাফেকরাও এ শহরে বসবাস করত। তাই এখানেও ঘটেছে দ্বন্দ্ব ও শত্রুতাপূর্ণ অনেক ঘটনা। মদীনার পরিস্থিতি মক্কার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের বা নতুন ধরণের হওয়ায় মাদানী সূরাকে বিষয়বস্তু ও বৈশিষ্ট্যের আলোকে মক্কী সূরা থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। যেমন, মাদানী সূরাগুলোর কোনো কোনো আয়াতে কাফের ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে বিশ্বনবী(সা.)‘র চিন্তাগত যুদ্ধ এবং তাদের সাথে মুসলমানদের সশস্ত্র যুদ্ধের কথা এসেছে। এসব সূরায় মুনাফিকদের কোনো কোনো ষড়যন্ত্র ফাঁস এবং রাসূল (সা.) ও মুনাফিকদের মধ্যে সংঘটিত কিছু ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।জীবনের নানা ক্ষেত্রে মানুষের জন্য যেসব জীবন-বিধান ও দিক-নির্দেশনা জরুরি তার বেশিরভাগই দেখা যায় মাদানী সূরায়। মাদানী সূরাগুলো সাধারণত বড় বা দীর্ঘ।
আল্লামা তাবাতাবায়ি’র মতে কোরআনের আয়াতের বিষয়বস্তু এবং এসব বিষয়ের সাথে হিজরতের আগের ও পরের পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখা হলে সেগুলো মক্কী না মাদানী সূরা তা বোঝা যায়।
কোরআন বিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক জনাব হাশেমজাদেহ হারিসি’র মতে যেসব সূরার প্রথমে” হে মানুষ বা মানব, বা হে বনি আদম বা আদমের বংশধর” শীর্ষক সম্বোধন রয়েছে সেসব সূরা সাধারণত মক্কী সূরা। কারণ, এই যুগে মক্কার জনগণ মুসলমান হয়নি। আর যেসব সূরা ” হে ঈমানদারগণ” শীর্ষক সম্বোধন দিয়ে শুরু হয়েছে সেগুলো মাদানী সূরা। কোরআনের সূরার বা অধ্যায়ের বিন্যাস অন্যান্য বই পুস্তকের বিন্যাসের চেয়ে ভিন্ন। কোরআন নিজেই তার অধ্যায়গুলোর বিন্যাস সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছে। সূরা আসরার ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
“আমি কোরআনকে যতি চিহ্নসহ আলাদা আলাদাভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ করেছি।”
কোরআনের রয়েছে ১১৪টি সূরা বা অধ্যায় এবং ত্রিশটি সমান খণ্ড। এ খণ্ড গুলোকে “পারা” বা “যুজ”ও বলা হয়।
“সূরা” শব্দের নানা অর্থ রয়েছে। যেমন, মর্যাদা, উচ্চতর ঘাঁটি, কোনো কিছুর অংশ, সুদৃঢ় দূর্গ, শত্রুর হাত থেকে শহর রক্ষার উঁচু দেয়াল ইত্যাদি। এসব অর্থের আলোকে বলা যায় পবিত্র কোরআনের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা এবং অত্যন্ত উঁচু অবস্থান। সূরার অন্য অর্থ অনুযায়ী কোরআন সুরক্ষিত ও তা কখনও বিকৃত হবে না। সূরা তওবা ছাড়া কোরআনের সব সূরা শুরু হয়েছে ” বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” শীর্ষক বাক্য দিয়ে যার অর্থ: “আল্লাহরনামেশুরুকরছিযিনিপরমকরুণাময়,অতি দয়ালু।”
কেবল ১৪টি সূরা ছাড়া রাসূল (সা.)’র নবুওয়্যাত শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন উপলক্ষ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যায়ক্রমে বা ধীরে ধীরে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও সূরাগুলো নাজেল হয়েছে। কেবল ১৪টি সূরা একই সময়ে নাজেল হয়েছিল। রাসূল (সা.)’র নির্দেশে বিভিন্ন আয়াতকে একসাথে যুক্ত করে সূরার রূপ দেয়া হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রা.)’র সূত্রে “মুসনাদে আহমদ” শীর্ষকহাদীস বইয়ে এসেছে,
” রাসূল (সা.)’র কাছে চলমান প্রক্রিয়ায় ওহী নাজেল হত। যখনই কোরআনের কিছু অংশ বা সুনির্দিষ্ট কোনো আয়াত নাজেল হত তখন রাসূল (সা.) লেখকদের ডেকে আনাতেন এবং তাদের বলতেন, এ আয়াতকে সেই সূরার সাথে যুক্ত কর যেখানে ওমুক বিষয়বস্তুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।”
আয়াত শব্দের অর্থ চিহ্ন বা আলামত। এসব আলামত আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ ও তাঁর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এবং একইসাথে বিশ্বনবী (সা.)’র রেসালতেরও প্রমাণ বা সত্যতা তুলে ধরে। কোরআনে রাত ও দিনের পার্থক্য, চাঁদ ও সূর্য, পৃথিবীর উদ্ভব বা সৃষ্টি, বৃষ্টি বর্ষণ, বিভিন্ন ধরণের বাতাসের বিচিত্র প্রবাহ, মেঘমালা, মানুষের বিভিন্ন ভাষা এবং তাদের চেহারা ও রংয়ের পার্থক্য প্রভৃতিকে “আয়াত” বা “চিহ্ন” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কোরআন হযরত সালেহ (আ.)’র উট, হযরত মূসা (আ.)’র লাঠি, হযরত ঈসা (আ.)’র জন্ম এবং নূহের কিশতিসহ অন্যান্য কিছু মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনাকে “আয়াত” হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্য কথায়  “আয়াত” হচ্ছে মহান আল্লাহর ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও অলৌকিকতার নিদর্শন এবং এসবের মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য শিক্ষা ও সতর্কবাণী।
পবিত্র কোরআনের প্রত্যেক সূরার রয়েছে পৃথক নাম। এ প্রসঙ্গে আল্লামা তাবাতাবায়ি লিখেছেন, সূরাগুলোর নামকরণ অনেক সময় সূরায় উল্লেখিত বিষয় বা ঘটনার নামে করা হয়েছে। যেমন, সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান। কখনও কখনও সূরার প্রথম আয়াত দিয়ে সূরার পরিচয় তুলে ধরা হয়। যেমন, সূরা ক্বাদরকে সূরা”ইন্নাআনযালনা”ওবলাহয়।কোরআনে সূরার অবস্থানের আলোকেও কোনো কোনো সূরার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।যেমন, সূরা হামদ। এ সূরা কোরআনের শুরুতে থাকায় একে ফাতিহাতুলকিতাব বা সূরাফাতেহাও বলা হয়। কোরআনের বহু সূরার বর্তমান নাম বিশ্বনবী (সা.)’র যুগেই ওই নামে প্রচলিত ও পরিচিত হয়েছিল। কোরআন বিশেষজ্ঞদের মতে কোরআনের প্রত্যেক সূরাই মহান আল্লাহর মোজেজা বা নিদর্শন। প্রত্যেক সূরার রয়েছে নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র বক্তব্য এবং উপস্থাপনার আলাদা রীতি বা স্টাইল। যেমন, সূরা ইউসুফে হযরত ইউসুফ (আ.)’রজীবনীতুলেধরা হয়েছে। সূরা ইব্রাহিমে স্থান পেয়েছে এ মহান নবীর সাথে সম্পর্কিত ঘটনা ও বক্তব্য।
কোরআনের সূরাগুলো পড়তে গিয়ে কেউ একঘেয়েমি অনুভব করে না। নতুন নতুন বিষয়বস্তু পাঠককে আরো বেশি আনন্দিত ও অনুসন্ধিৎসু করে। ফলে পাঠক আরো বেশি আয়াত ও সূরা পাঠের জন্য আগ্রহী হন।
ইংরেজ চিন্তাবিদ কেইন্ট/ কিনেট গ্রিক মনে করেন কোরআনের সূরা ও শব্দগুলোর রয়েছে চুম্বকের মত আকর্ষন-শক্তি এবং এ মহাগ্রন্থের সহজ শব্দমালা, নানা রকম বিশেষণ, ব্যাখ্যা, উপমা ও শপথ কোরআনের সূরাগুলোকে করেছে সমৃদ্ধ ও অনন্য। তার মতে ইউরোপীয় অনুবাদকরা তাদের অনুবাদে কোরআনের শব্দগুলোর আসল রূপ বা প্রখরতা এবং আসল ধারা ও ওজন ধরে রাখার যত চেষ্টাই করুন না কেন তা কখনও আসল শব্দগুলোর মত প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল ও আকর্ষনীয় হয় না, ঠিক যেমন কাগজ বা প্লাস্টিকের ফুল কখনও আসল ফুলের মত মানুষকে সুগন্ধ ও আনন্দ দিতে পারেনা।
পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর শেষ প্রেরিত পুরুষ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র অন্তরে নাজেল হওয়া মহান আল্লাহর প্রত্যাদেশের একটি সংকলন। মানবজাতির জন্য প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অফুরন্ত উৎস এ মহাগ্রন্থ। পোলান্ডের প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ কাজিমারস্কি বলেছেন, “কোরআন এক আকর্ষণীয় সংকলন। কারণ, এতে রয়েছে নৈতিকতা, সুশীল ও সভ্য সমাজের রীতি-নীতি, জ্ঞান ও রাজনীতি, সুসংবাদ ও সতর্কবাণী।“ফরাসি প্রাচ্যবিদ ব্রাটলি সেন্ট হিলার বলেছেন, “আমরা কোরআনের ভাষার আভিজাত্য ও অলঙ্কারিক সৌন্দর্য এবং দাউদ (আ.)’র ধর্মীয় স্তুতি বা সঙ্গীতগুলোর সৌন্দর্য ও অনুবাদের সুবাদে বুঝতে পারি। কিন্তু ইহুদিদের জন্য রচিত দাউদ (আ.)’রধর্মীয় স্তুতি বা সঙ্গীতগুলোয় কোনো রাষ্ট্রীয় বিধান বা সামাজিক বিধি-বিধান নেই। কিন্তু এটা কেবল কোরআনেরই বিশেষ রীতি বা স্টাইল যে মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় এতে স্থান পেয়েছে এবং এসবের রয়েছে বিভিন্ন কল্যাণ ও প্রভাব বা উপকারিতা। এই কোরআন একদিকে ধর্মীয় স্তুতি বা সঙ্গীত ও আল্লাহর প্রশংসার বই এবং এর পাশাপাশি এতে রয়েছে জীবন-যাপনের নীতিমালা, সামাজিক বিধি-বিধান, উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা। এ ছাড়াও রয়েছে জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নির্দেশনা,ন্যায় বিচার কামীতার পথ ও রীতিএবং শিক্ষনীয় নানা বিতর্ক ও ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনাও এ গ্রন্থের কিছু বিষয়।”
পবিত্র কোরআনের সৌন্দর্য্যে অভিভূত অনেক মনীষী বা বিশেষজ্ঞ অনেক কথা বলেছেন নিজস্ব ক্ষমতা ও উপলব্ধির আলোকে। কিন্তু যিনি কোরআনের স্রস্টা ও সব জ্ঞানের অধিকারী, সেই মহান আল্লাহও কোরআনের পরিচয়, নাম ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন এ মহাগ্রন্থের মধ্যেই। আর এসব পরিচয়ই কোরআনের শ্রেষ্ঠ পরিচয় এবং সম্পূর্ণ যথাযথ পরিচয়।যেমন,সূরা নিসার ১৭৪ নম্বর আয়াতে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে মানবকুল! তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট দলিল বা সনদ পৌঁছে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো অবতীর্ণ করেছি।” সূরা মায়েদার ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: “হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ।”
অন্য কথায় পবিত্র কোরআন অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলা মানুষের পথের দিশারি। মিথ্যার নিকষ অন্ধকার আর কালিমার দূর্ভেদ্য জঞ্জাল এবং সত্য ও মিথ্যার তালগোল পাকিয়ে ফেলা ধুম্রজালের মধ্যে নিরেট সত্যের আলো তুলে ধরে আল কোরআন।
পবিত্র কোরআনকে উজ্জ্বল আলো বলার অর্থ এতে তুলে ধরা জ্ঞানে কোনো অস্পষ্টতা নেই এবং এ মহাগ্রন্থ মানুষকে চিন্তাগত অন্ধকার ও নৈতিক আঁধার বা রোগ থেকে মুক্ত করে। আল কোরআন মানুষকে সঠিক ও সরল পথে তথা আলোর পথে পরিচালিত করে। এ প্রসঙ্গে সূরা ইব্রাহিমের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।”
আলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এটি মানুষকে তাপ যোগায় এবং প্রাণ সঞ্চার করে ও তাকে সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে নিয়ে যায়। এ জন্যই কোরআনে কখনও কখনও পথ-প্রদর্শক বিষয়গুলোকে আলো বলা হয়েছে। যেমন, বুদ্ধিবৃত্তি বা আকল। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, কোরআনে “আকল” ও “নুর” শব্দের সংখ্যা সমান।
পবিত্র কোরআনের নামগুলোতেও রয়েছে অলৌকিকতার ছোঁয়া। এ মহাগ্রন্থের নামগুলোর মধ্যে কোরআন নামটি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। সেই ওহী নাজেলের প্রথম দিকেই মহান আল্লাহ এ মহাগ্রন্থের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সূরা বুরুজের ২১-২২ নম্বর আয়াতে বলেছেন: “বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।”সর্বশেষ ঐশী গ্রন্হ কোরআনে “কোরআন” শব্দটি ৬৮ বার এসেছে। কখনও কখনও এ নামের সাথে বা পাশে হাকিম তথা প্রজ্ঞাময়, মুবিন বা সুস্পষ্ট, মজিদ বা সম্মানিত বা মহান, কারিম বা অভিজাত বা মহান, আজিম বা উচ্চ প্রভৃতি শব্দও যুক্ত হয়েছে কোরআন শরীফে। তাই কোরআন যে পড়ার জন্য, জানার জন্য এবং নিজেকে গড়ার জন্য সবচেয়ে সেরা বই এতে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
পবিত্র কোরআনের আরেকটি বিখ্যাত নাম “ফুরক্বান”। এর অর্থ সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী। কোরআনে বদর যুদ্ধের দিনটিকে “ইয়াওমুল ফুরক্বান” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, এ দিনে অংশীবাদী ও বিশ্বাসী বা মুমিনদের শিবির বা ফ্রন্ট আলাদা হয়ে গিয়েছিল। কোরআনের বিখ্যাত মুফাসসির আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ অমলী লিখেছেন, ” ফুরক্বান সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যের মানদণ্ড। এর রয়েছে বিশেষ ও সাধারণ প্রভাব। সাধারণ বা অভিন্ন প্রভাব হল, ফুরক্বান মানব জাতির সবাইকে সুপথ দেখায়। আর বিশেষ প্রভাব হল, এ মহাগ্রন্থ বাস্তবতা বা সত্যকে গভীরভাবে বোঝার ও দূরদর্শিতা অর্জনের ক্ষমতা দান করে। কোরআনের প্রতি ভালবাসা ও এর জ্ঞানের প্রভাব মানুষের মনে বাস্তবতার মিষ্টি স্বাদকে এমন প্রত্যক্ষভাবে আস্বাদন করায় যে এর ফলে মানুষ পাপের কদর্যতা এবং পবিত্রতা ও খোদাভীতির সুগন্ধও অনুভব করতে পারে।” মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে “তিবিয়ান” বা সবকিছু বর্ণনাকারী বলেও উল্লেখ করেছেন। যেমন, সূরা নাহলের ৮৯ নম্বর আয়াতে এসেছে:
“সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।”
পবিত্র কোরআনে রয়েছে একত্ববাদের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বর্ণনা, রয়েছে মানব-পরিচিতি এবং মানুষের সৌভাগ্যের জন্য তুলে ধরেছে ব্যাখ্যাসহ শ্রেষ্ঠ নীতিমালা। অন্য কথায় মানুষের সৌভাগ্যের জন্য যা যা দরকার তার সবই তুলে ধরা হয়েছে এ মহাগ্রন্থে সবচেয়ে সুন্দর ভাষায় ও যথাযথভাবে। ত্রুটিবিহীন এ মহাগ্রন্থ সম্পর্কে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) বলেছেন,” মানুষের অন্তরের জন্য কোরআন ছাড়া অন্য কোনো ঔজ্জ্বল্য বা দীপ্তি নেই।”
মহান আল্লাহ কোরআনকে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের মানদণ্ড বা দাড়িপাল্লা হিসেবে মানব জাতির কাছে উপহার দিয়েছেন। চিন্তাগত সব ধরণের বিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়ার মিটার হল এ মহাগ্রন্থ।
পবিত্র কোরআনের অন্য একটি নাম হল “বাশির” ও “নাজির”।এর অর্থ ” সুসংবাদদাতা” ও “সতর্ককারী”। কোরআন এ দুই পদ্ধতিতে মানুষকে ভাল কাজের উৎসাহ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরতে বা লোভ-লালসা, হিংসা, কাম, ক্রোধ প্রভৃতি রিপুকে সংযত করতে ব্যর্থ মানুষ যে কঠোর শাস্তি পাবে এবং সৎকর্মশীল মানুষ যে চিরন্তন সৌভাগ্যের অধিকারী হবে তা কোরআন মানুষকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়।
পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজেল করা সর্বশেষ গ্রন্থ এবং ইসলামের চিরস্থায়ী মোজেজা। মহান আল্লাহ নিজেই সূরা নিসার ১৬৬ নম্বর আয়াতেবলেছেন, “আল্লাহ আপনার (মুহাম্মাদ- সা.)’রকাছে যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন,সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।”
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্রস্টা বা প্রভুর সান্নিধ্য-পিয়াসী। বিশ্ব জগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পবিত্র নাম ও স্মরণ বিশ্বের সাহিত্য-জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি অক্ষয়, চিরঞ্জিব, প্রজ্ঞাময় ও সর্বশক্তিমান সত্তা। আসলে সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো মহান আল্লাহরই পরিচয়। কোরআনের অনেক বাক্যে মহান আল্লাহর সুন্দর কিছু নাম ও তাঁর পরিচয়ের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এ মহাগ্রন্থে এসেছে, মহান আল্লাহ মানুষের শাহরগ বা তাদের ঘাড়ের মূল রগের চেয়েও কাছে রয়েছেন। কোরআনের শুরুতেই রয়েছে মহান আল্লাহর পরম করুণা ও দয়ার পরিচয়সূচক নাম। মহান আল্লাহর মহিমান্বিত ও গৌরবময় গুণের কথা এসেছে সূরা ফাতিহায়। শ্রেষ্ঠ সব গুণের অধিকারী মহান আল্লাহ এবং একমাত্র তিনিই সব ধরণের ত্রুটি ও অভাব থেকে মুক্ত।
মহান আল্লাহ সব ধরণের অক্ষমতার উর্ধ্বে সর্বশক্তিমান সত্তা। তিনিই সবকিছুর উৎস। তিনি অনাদি, তিনি অনন্ত, সব কিছুই তাঁর ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু একমাত্র আল্লাহই অনির্ভরশীল অস্তিত্ব। তাঁর নেয়ামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্ব জগতের সর্বত্র। এসবই তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের প্রকাশ। তিনিই সৃষ্টিকুলকে পরিপূর্ণতার দিকে পরিচালিত করেন। মহান আল্লাহ অসীম ও অক্ষয় দয়া আর করুণার অধিকারী। তিনিই বিশ্ব জগতের প্রকৃত মালিক ও কর্তা। সূরা আলে ইমরানের ১৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ” আল্লাহ আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মালিক।”কোরআন-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ মহাগ্রন্থের সর্বত্র আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করা যায়।তিনি যখনই কোনো কিছু করতে ইচ্ছে করেন তখনই তা হয়ে যায়। তিনি যা চান না তা ঘটানোর সাধ্য কারো নেই। বিশ্ব জগতের সব কিছুর ওপর আল্লাহর কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম প্রমাণ হল পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা। স্বয়ং মহান আল্লাহ সূরা তাকভীরের ২৬-২৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন: “অতএব, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?এটা তো কেবল বিশ্বাবাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা পথে চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।”
মহান আল্লাহ এসব বাক্যের মাধ্যমে মানুষকে পূর্ণতার পথ ও সুন্দর গুণাবলীর দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। আল্লাহর ইচ্ছাই যে সবচেয়ে বড় শক্তি ও চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারক তার উপলব্ধি মানুষকে পাপ বা ভুল-ত্রুটি থেকে বিরত রাখে। বিশ্ব জগত ও এর বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনাই মহান আল্লাহর অস্তিত্বের বড় সাক্ষ্য। আল্লাহ এ মহাসত্য প্রমাণের জন্য নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে মানুষের চিন্তাশক্তিকে জাগিয়ে তোলেন। যেমন, সূরা ইব্রাহিমের ১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তাদের পয়গম্বরগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের স্রষ্টা?”
সূরা তুরের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?”
মানুষের জন্ম-রহস্য ও মার্তৃগর্ভে সন্তানের আদিকোষ বা ভ্রুণের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে, আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বিস্ময়কর নানা দিক, গাছপালার প্রবৃদ্ধি এবং প্রকৃতির পরতে পরতে থাকা আরো অনেক দিক নিয়ে কোরআনের অনেক আয়াত মহান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
তাফসিরে তানতাভির ভাষ্য অনুযায়ী মহান আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোরআনে ৭৫০টি আয়াত রয়েছে। এসব আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে সৃষ্টিকুলের অস্তিত্ব। মানুষের মধ্যে কিছু বিচিত্র শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা মহান আল্লাহর মোকাবেলায় অক্ষম ও শক্তিহীন।
মুসলিম দার্শনিকরা বলেন, তারা পবিত্র কোরআন থেকেই অকাট্য যুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আর কোরআন আল্লাহকে জানার জ্ঞান মানুষের কাছে তুলে ধরে এবং এসব জ্ঞান মানুষকে সৃষ্টিজগত সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলে ও এভাবে স্রস্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর বিভিন্ন গুণবাচক নাম মানুষকে অক্ষয় এই শক্তির প্রেমে মাতোয়ারা করে। এসব গুণবাচক নামের আকর্ষণ মানুষকে মহৎ গুণের অফুরন্ত উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়।
মহান আল্লাহ অশেষ দয়ালু। তাঁর এ দয়াবাচক গুণ আমাদের এ শিক্ষা দেয় যে আমরাও যেন সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়াদ্র ও ক্ষমাশীল হই। আর এভাবেই আমরা আল্লাহর দয়া ও করুণার প্রত্যাশা করতে পারি। সমগ্র সৃষ্টিকুলের অস্তিত্বই মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহ পবিত্র ও সুন্দর। তাই আমাদেরকেও সব দিক থেকে সুন্দর ও পবিত্র হতে হবে এবং সব কলুষতা, পাপ ও অন্যায় থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সুন্দর করতে হবে আমাদের ভেতর ও বাইরকে।
সূরা হাশরের ২২ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ”
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।
তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্নশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র।
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।”
মহান আল্লাহর এত সুন্দর বর্ণনা দেয়া মুহাম্মদ (সাঃ)’র মত একজন নিরক্ষর ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে সম্ভব? তাই কোরআন বিশ্বনবী (সাঃ)’র শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী মোজেজা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহর পবিত্রতা সংক্রান্ত প্রায় ১৫টি আয়াত রয়েছে। মহানআল্লাহর মধ্যে নেই কোন দুর্বলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও উদাসীন হওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ। তিনি কখনও ক্লান্ত, শ্রান্ত ও তন্দ্রামগ্ন হন না।
মহান আল্লাহ অনন্ত-অসীম, প্রেমময়, বিচার দিনের মালিক। তিনি অন্তর্যামী। তিনি গোপন ও তিনি প্রকাশ্য। গভীর অন্ধকারে কালো পাথরের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র কালো পিপড়ার গতিবিধি, কিংবা অনু-পরমাণুর মত ক্ষুদ্র অস্তিত্বের চলাফেরাও তাঁর দৃষ্টি থেকে আড়াল নয়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন।
মহান আল্লাহর পরিকল্পনা দৃশ্যাতীত, বিশাল তাঁর সাম্রাজ্য, তাঁর কর্তৃত্ব সর্বত্রব্যাপী, একমাত্র তাঁর শক্তিই বিজয়ী এবং তাঁর সীমানা থেকে পালানোঅসম্ভব। মোটকথা আল্লাহর সাথে তুলনা করার মত কিছুর অস্তিত্ব নেই, তাঁর প্রবল পরাক্রমের কাছে সব কিছু অসহায়, তাঁর ইচ্ছাই চূড়ান্ত এবং শ্রেষ্ঠ বলতে যা কিছু আছে সবই তাঁর গুণ মাত্র ও সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য।
সব সৃষ্টিই আল্লাহর প্রশংসা করে। তাই মহান আল্লাহও মানুষকে তাঁর প্রশংসা করার এবং বিশেষ করে সকাল সন্ধ্যায় তাঁকে স্মরণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআন এমন এক মহাগ্রন্থ যার কোনো সমতুল্য বা নজির নেই। কারণ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সব ধরণের গুণের ক্ষেত্রে অসীম শক্তির অধিকারী সর্বশক্তিমান আল্লাহই এ গ্রন্থের রচয়িতা। কোরআনের বাণী বিশ্বজনীন ও চিরন্তন এবং মানুষের জন্য সবচেয়ে সরল ও শ্রেষ্ঠ পথের সন্ধান দেয়। সূরা নিসার নয় নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল।”
প্রতিটি সৃষ্টিই পূর্ণতাকামী। মানুষও সৌভাগ্য ও পূর্ণতাকামী। পূর্ণতার পথে মানুষের অগ্রগতির কাঠামোর সাথে উদ্ভিদের অংকুরোদগম ও প্রবৃদ্ধির তুলনা করা যায়। একটি সামান্য বীজ পরিবর্তনের নানা পর্যায় অতিক্রম করে এক সময় পরিণত হয় বিশাল বৃক্ষে বা ফল শোভিত উদ্ভিদে।
সব সৃষ্টির মত মানব সৃষ্টিরও রয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য। কোরআনের সূরা ত্বাহার ৫০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
“মূসা বললেনঃ আমাদের পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার উপযুক্ত আকৃতি (বা যা যা প্রয়োজন ছিল তা) দান করেছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।”এভাবে আল্লাহ মানুষকে প্রাকৃতিকভাবেই পুর্ণতার দিকে এগিয়ে নেন।
কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহ মানুষকে শরিয়তের মাধ্যমেও সুপথ দেখান। মহান আল্লাহ নবী-রাসুল ও ধর্মগ্রন্থ পাঠিয়ে তাদেরকে মানব-সৃষ্টির চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে তথা পরিপূর্ণতা ও সৌভাগ্যের দিকে পরিচালিত করেন। সূরা আম্বিয়ার ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন।”কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী মানুষকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এমনসব নীতিমালা এবং মূল্যবোধ মেনে চলতে হবে যা মানুষের প্রকৃতি বা ফিতরাতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও একইসাথে নবী-রাসূলও মানুষকে সেসব নীতি ও মূল্যবোধ মনে চলতে বলেছেন। মানুষের প্রকৃত মানবীয় বা প্রকৃতিগত চাহিদা হল এটা যে তারা খেয়ালি প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রেখে বিবেক বা আকল ব্যবহার করে এগিয়ে যাবেন এবং অন্যদিকে তাদের থাকতে হবে জীবনের যথাযথ ও সুশৃঙ্খল কর্মসূচি। মহান আল্লাহ মানুষের প্রকৃত চাহিদা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। তাই তিনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র মাধ্যমে মানুষের জন্য আদর্শ জীবনের মডেল বা সারবস্তু তুলে ধরেছেন পবিত্র কোরআনে। মানুষের চিন্তাগত, মনোস্তাত্তিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে বক্তব্য দেখা যায় এ মহাগ্রন্থে।
মানুষের মনের মধ্যে যে সব সময়ই ভাল ও মন্দ বা ন্যায় ও অন্যায়কামী প্রবণতার সংঘাত ঘটছে তাও স্মরণ করিয়ে দেয় কোরআন। এ সংঘাতে যে প্রবণতা জোরদার হয় সে প্রবণতারই দাস বা অনুগত হয়ে পড়ে মানুষ। মানুষের ষড় রিপুর মত প্রবৃত্তির সাথে সম্পর্কিত দিকগুলো যেমন, কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা ইত্যাদি তাকে বিপথগামী হতে ও ভোগবাদী হতে কুমন্ত্রণা দেয়। অন্যদিকে মানুষের বিবেক তাকে অশোভনীয় আচরণ থেকে বিরত রাখে। মানুষের কুপ্রবৃত্তির তাড়না বা কুমন্ত্রণাকে দমনের সূক্ষ্ম পথগুলো দেখানো হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এভাবে সর্বশেষ আসমানি কিতাব মানুষকে সর্বোত্তম পথ দেখায়।
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এ মহাগ্রন্থে মানুষ সৃষ্টির নানা ধাপ বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।”(মুমিনুন ১৪ নম্বর আয়াতের অংশ বিশেষ।)
সূরা হিজরের ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি নিজের রুহ থেকে মানুষের মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। তাই মানুষই বিশ্বে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য।
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী মানুষের রয়েছে তৌহিদবাদী ও পবিত্র প্রকৃতি। পূর্ণতার সব দিকই রয়েছে মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায়। কোরআন তার কর্মসূচি ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে মহান আল্লাহ, সত্য ও ন্যায়ের দিকে পরিচালিত করে। সূরা আহক্বাফের ত্রিশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
“তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে।”
মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষ। কিন্তু তিনি তো বিনা উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেননি। তাই মানুষের জীবনের লক্ষ্য কি হওয়া উচিত তা তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন এবং তা তিনি জানিয়েও দিয়েছেন। অস্তিত্ব দাতা ও মহান লক্ষ্যের নির্দেশক সেই আল্লাহকে আমরা যদি বিশ্বদৃষ্টি ও সংস্কৃতি থেকে বাদ দেই তাহলে আমরা কখনও জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাব না। এ অবস্থায় আমাদের জীবন হবে লক্ষ্যহীন বা নাবিকহীন জাহাজের মত। তাই আমাদের জীবনের সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা উচিত মহান আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সমর্পণ ও তাঁরই দেখানো উন্নত লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ও এভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
আমাদের মনের গহীনে খোদাপ্রেমের আকুতিকে গভীর সযন্তে লালন করতে হবে, কারণ খোদাপ্রেম মানুষকে করে আশাবাদি এবং এরই ছায়াতলে মানুষ নিরাপত্তা ও প্রশান্তির মাধুর্য আস্বাদন করে। আর এ জন্যই কোরআনে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহর স্মরণই মানুষকে দেয় প্রশান্তি।
পবিত্র কোরআন মানব জীবনের সব ক্ষেত্রেরই পথ-প্রদর্শক। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যার বিধান দেয়া হয়নি এ মহাগ্রন্থে। হেদায়াত বা সুপথ বলতে কোরআন জীবনের সব ক্ষেত্রেরই পথ-নির্দেশনাকে বোঝায়। এভাবে কোরআন জীবনের সব ক্ষেত্রে যোগ্য মানুষ গড়ে তুলতে চায় এবং মানুষের সুপ্ত বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রতিভার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটিয়ে তাকে সৌভাগ্যের চরম শিখরে তুলে আনতে চায়। তাই জীবনে নৈতিকতার চরম উৎকর্ষ ঘটাতে কোরঅনের শরণাপন্ন হওয়া প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরি।
সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বোঝার জন্য আল্লাহর ভয় এবং ঈমান জরুরি। জীবনের সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতিমালা নির্ধারণের জন্য মানুষকে খোদাভীরু ও ঈমানদার হতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা আনফালে বলা হয়েছে:
“হে ঈমানদাররা, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা বা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করে দেবেনএবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন।”
কিন্তু মানুষ যদি অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির পথে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তার ভুলের মাত্রা বাড়তেই থাকে এবং হৃদয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় সে এক সময় আল্লাহকেও অস্বীকার করে বসে। সূরা রূমের ১০ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“অতঃপর যারা মন্দ কাজ করত, তাদের পরিণাম হয়েছে মন্দ। কারণ, তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলত এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।”
সুপথ ও বিভ্রান্তির বিষয়টি কোনে উঁচু স্থান থেকে গভীর খাদে বা নিচে পড়ে যাওয়ার মত বিষয়ের সমতুল্য। পতনের সীমানা থেকে আপনি যত দূরে থাকবেন ততই বিভ্রান্তির বা পতনের ভয় কম থাকবে, আর যতই পতনের সীমানার কাছে যাবেন ততই বিভ্রান্তির বা পতনের আশঙ্কা জোরদার হবে। তাই হেদায়াত বা সুপথ-দেখানো মহাগ্রন্থ কোরআনই হওয়া উচিত আমাদের জীবনের আদর্শ।
পবিত্র কোরআন মানুষের সত্যিকারের সৌভাগ্য ও সুপথ দেখানোর সর্বশেষ ঐশী বা খোদায়ী মহাগ্রন্থ। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই মহান আল্লাহর ন্যায়বিচারের আলোকে তারা সবচেয়ে ভালো পথের দিক-নির্দেশনা পাওয়ার অধিকার রাখে। মানুষের মধ্যে বিবেক ও বুদ্ধিবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সুপথ লাভের জন্য তা যথেষ্ট নয়। কোরআনের আয়াত বা বাণী মানুষকে জরুরি বিষয়ে চিন্তাভাবনার খোরাক জোগায়। দূরদর্শী মানুষ কোরআনের বাণীর আলোয় কাঙ্ক্ষিত জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। এ মহাগ্রন্থ মানুষকে অন্ধকার পথগুলো থেকে দেয়মুক্তির দিশা । পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ১৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ ( কোরআন) এর মাধ্যমে তাদেরকে নিরাপত্তার পথ দেখান এবং তাদেরকে নিজ নির্দেশের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন”। পবিত্র কোরআন মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেছে তা বিশেষজ্ঞদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরআনে ব্যবহৃত এসব পদ্ধতির মধ্যে কাহিনী
বা অতীতের ইতিহাস, উপমা বা রূপক বর্ণনা, যুক্তি, শপথ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উপদেশ ও শিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মনে গল্প ও কাহিনীর অসাধারণ প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন মনোস্তাত্তিকরা। গল্প বা কাহিনী পরোক্ষভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে এবং বদলে দেয় মানুষকে। গল্প বা কাহিনী মানুষের মনে বেশি রেখাপাত করে এবং সাধারণ বর্ণনার চেয়ে কাহিনীমূলক বর্ণনা বেশি মনে থাকে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত কাহিনী, নবী-রাসুলের জীবনীও নানা ইতিহাস সংক্রান্ত বর্ণনা এ মহাগ্রন্থের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তোলার ও তাদের সচেতন করার ক্ষেত্রে এসব কাহিনী বা ইতিহাস সবচেয়ে উপযুক্ত বা মোক্ষম পন্থা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। সূরা ইউসুফের ১১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে বহু শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে এসব কাহিনীতে রয়েছেঅতীতের আসমানী গ্রন্থগুলোর বক্তব্যের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ, রহমত ও হেদায়েত বা সুপথ।”
সূরা আনয়ামের ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“বলে দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতপর দেখ, মিথ্যা আরোপ কারীদের পরিণাম কি হয়েছে?
মানুষের সাহিত্য কর্মে দেখা যায় গল্প বা কাহিনী যত বেশি কাল্পনিক হয় ততই তা তাদেরকে বেশি প্রভাবিত করে। কিন্তু কোরআনে বর্ণিত কাহিনী বা গল্পগুলো এ রকমনয়। কোরআনের কাহিনীগুলো সত্য বা বাস্তবতা-ভিত্তিক। কল্পনা ও কিংবদন্তীর কোনো স্থান নেই কোরআনের কাহিনীগুলোয়। আর এ জন্যই হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কিত চিত্তাকর্ষক ঘটনা বর্ণনার পর ওই ঘটনা এবং কোরআনের অন্যান্য কাহিনী সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন, “এসব মিথ্যা কাহিনী বা গল্প নয়, (বরং ঐশী প্রত্যাদেশ)কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে এসব কাহিনীতে রয়েছে অতীতের আসমানী গ্রন্থগুলোর বক্তব্যের সমর্থন।”
কোরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো এমনই শিক্ষনীয় যে উন্নত মনের ও পরিশুদ্ধ মানুষ গড়ে তোলার জন্য এসব শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ কিভাবে সৌভাগ্যের উচ্চ শিখরে বা পূর্ণতার পানে এগিয়ে যেতে পারে এবং কিভাবে অধঃপতন ও বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে তা কোরআনের ঘটনা ও কাহিনীগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাষায়এবং চমৎকার ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছে। কোরআন মানুষের প্রকৃতিগত সৌন্দর্য্য ও বাস্তব মূল্যবোধগুলোর এক সুন্দর চিত্রকল্প ও অনন্য আদর্শ। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর প্রতিনিধি মানুষ প্রতিনিধিত্বের সর্বোচ্চ মর্যাদায় যেমন আসীন হতে পারে তেমনি প্রবৃত্তি-পূজার কারণে বিভ্রান্তি ও আত্মহননের গভীর খাদে নিজেকে চিরতরে বিলীন করতে পারে।
এভাবে কোরআনের কাহিনীগুলো মানুষকে বাস্তববাদী হওয়ার শিক্ষা দেয় যাতে তারা বাহ্যিক চাকচিক্যতাকে গুরুত্ব না দিয়ে জীবনের গভীর অর্থ ও উচ্চতর লক্ষ্য-অভিসারী হয়।
কোরআন কত সূক্ষ্মদর্শিতা দেখিয়ে ও কত সুন্দরভাবে হযরত ইব্রাহিম (আ.)’র কাহিনী বর্ণনা করেছে।আকাশ ও দিগন্তের দিকে তাকিয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) মহান আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য ও অশেষ গৌরবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেছেন। তার নিখুঁত পর্যবেক্ষণের ফলাফলও তিনি ঘোষণা করেছেন মানুষের কাছে এই মর্মে যে একমাত্র আল্লাহই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য যিনি আকাশ ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতের পরিচালনা তাঁরই হাতে রয়েছে।
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আত্মিক সৌন্দর্য্য রয়েছে কেবলই মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান, আধ্যাত্মিকতাও নৈতিকতার মধ্যে। কারণ এসবের অনুপস্থিতি মানুষকে অশ্লীলতা ও ধ্বংসের দিকে টেনে নেয়। ফেরাউন, নমরুদ ও নবী-রাসূলের শত্রুদের পরিণতির কাহিনী এ শিক্ষাই তুলে ধরেছে। কোরআনে বর্ণিত এসব ঐতিহাসিক ঘটনা বা কাহিনীগুলো পড়ে শ্রেষ্ঠ বা আদর্শ মানুষ কারা ছিলেন ও কিভাবে সুপথ বেছে নেয়া যায় তা জানতে পারেন পাঠকরা।
হযরত ঈসমাইল (আ.)’র মত একজন নওজোয়ান কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয় তার কাহিনী কোরআন পাঠকদের ঈমানকে চাঙ্গা করে। একই মহাগ্রন্থ তুলে ধরেছে ধৈর্য্য ও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে হযরত ইয়াকুব (আ.)’র ঘটনা। পবিত্রতা ও পুত: পবিত্র চরিত্রের দৃষ্টান্ত ও প্রজ্ঞা আর জ্ঞানের মহিমায় প্রজ্জ্বোল চরিত্র হিসেবে কোরআন তুলে ধরেছে হযরত ইউসুফ (আ.)কে। এভাবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এ বইয়ের প্রতিটি কাহিনী ও ঘটনার বর্ণনা মানুষকে সুপথ দেখায়। উল্লেখ্য কোরআন এসব ঘটনার কেবল শিক্ষনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোই তুলে ধরে। ঘটনা বা কাহিনীর খুটিনাটি বা অগুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো স্থান পায়নি এ মহাগ্রন্থে।কারণ, কোরআন ইতিহাস ও গল্পের বই নয় যে বর্ণনার ঘনঘটায় কাহিনী বর্ণনার আসল উদ্দেশ্য পাঠকের দৃষ্টি থেকে হারিয়ে যায়।
কোরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলোয় কোনো ধরণের ভারসাম্যহীনতা, অশালীনতা ও অশোভনীয়তা দেখা যায় না এবং নেই কোনো ভুল-ভ্রান্তি বা মিথ্যার অস্তিত্ব।
অতীতের ধর্মগ্রন্থগুলো যেমন ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে পড়ে অনির্ভরযোগ্য ও মনগড়া কিসসা-কাহিনীর গল্পের বইয়ে রূপান্তরিত হয়েছে কোরআনের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তাই কোরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলোও এ মহাগ্রন্থের অন্যতম মোজেজা বা অলৌকিকত্বের উজ্জ্বল নিদর্শন। কাহিনী বর্ণনার অনন্যরীতিগুলো কোরআনের কাহিনীগুলোকে দিয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য, আকর্ষণ, অভিনবত্ব, ঔজ্জ্বল্যও আভিজাত্য।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

২০তম দিনে গড়িয়েছে পাকিস্তানি ...
ইসলামী ঐক্য : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মহান আল্লাহ মানুষের কাছ থেকে ...
যুগের ইমাম সংক্রান্ত হাদীসের ওপর ...
ইসলাম ধর্ম, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৫ম পর্ব)
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সংকট
নামাজ : নিরবচ্ছিন্ন পবিত্রতা ও ...

 
user comment