রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
صلوا كما رأيتموني أصلي
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।” (বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১,আল-মাদানী প্রকাশনী)
আজ পর্যন্ত কোন হাদীস বা ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়নি যে নবী (সা.) জামাতবদ্ধ হয়ে তারাবীর নামাজ আদায় করেছেন বা করার কোন নির্দেশ দিয়েছেন।
মুলতঃ জামায়াতবদ্ধ হয়ে 'তারাবী নামায'আদায়ের ব্যাপারটি দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরের (রা.) ব্যাক্তিগত মত (ইজতিহাদ_ “independent reasoning”) আর তাই আহলে সুন্নাতের গ্রন্থসমূহে একে ‘বিদ’আতে হাসানাহ’ বা ‘সূন্দর বিদ’আত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর বিদ’আত হচ্ছে ওই সমস্ত মত,বস্তু বা কর্মপ্রনালী যার অনুরূপ কোনকিছু রাসূল (সা) এর যুগে বর্তমান ছিলোনা বা ছিলো বলে সর্বসম্মত কোনো প্রমান পাওয়া যায়না। মূলতঃ ‘তারাবী’ বলতে কোনো নামাজের নাম ও হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায়না। তারাবী শব্দ টি, 'তারাবিহাতুন' শব্দের বহুবচন,এর মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থঃ আরাম বা বিশ্রাম। এই নামায অতি দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করা হয়। তবে প্রতি চার রাকাত আদায়ের পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বসা হয়। তাই একে তারাবীহ্ বা আরামদায়ক নামায বলা হয়।
আসলে এটা হযরত ওমরের (রা.)সুন্নাত । এটা নবীর (সা.)যুগে তো ছিলইনা হযরত আবু বকরের (রা.)যুগে এমনকি ওমরের (রা.)শাসনামলের প্রথম দিকেও ছিল না। রমজান মাসের এই নামাযের স্বপক্ষে কোরআন হাদীস ও ইতিহাসে কোন দলীল নেই । রাসূর (সা.)এর আমলের বিরুদ্ধে তার কথা দলীল হতে পারে না। আল্লাহর কিতাব,রাসূলের সুন্নাত,সাহাবীদের কথা এবং মুসলমানদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে,কারও কথা রাসূলের সুন্নাতের সমান হতে পারে না। সে যত বড়ই হোক না কেন? কারও কথা টেনে এনে রাসূলের সুন্নাতের বিরুদ্ধে দাড় করা যাবে না। ইমাম শাফেই (র.) বলেনঃ
أجمع المسلمون على أن من استبانت له سنة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يحل له أن يدعها لقول أحد
মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে কারও কাছে রাসূলের সুন্নাত সুস্পষ্ট হয়ে যাওযার পর তা ছেড়ে দিয়ে অন্যের কথা গ্রহণ করা জায়েয নয়। ‘সুন্নাত'হলো রাসূল (স) এর বাস্তব কর্মনীতি,আর 'হাদীস'বলতে রাসূল (স.) এর কাজ ছাড়াও কথা ও সমর্থন বুঝায়।
যারা নবীর (সা.) উম্মত তারা নবীর সুন্নাত অনুসরণ করবে এটাই তো প্রত্যেকটা ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আবশ্যক কর্তব্য ।
নিম্নে প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীস গ্রন্থ থেকে কয়েক টি হাদীস উল্লেখ করছিঃ
(১) ‘’একদিন রমজানে রাসুলুল্লাহ(সা) গভীর রাতে গৃহ থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করেন, কিছুসংখক পুরুষ তাঁর (সা) পিছনে নামাজ আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে দ্বিতীয় রাতে লোকেরা আরো অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি(সা) সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর (সা) সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রাসুল(সা) বের হয়ে সালাত আদায় করেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লির (সংখ্যা এতো বেশী হলো যে) সংকুলান হলোনা, কিন্তু রাসুল(সা) (ওই সময়) আর বের না হয়ে ফযরের নামাজের জন্য বেড়িয়ে আসলেন এবং নামাজ শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেনঃ ‘শোন, তোমাদের গতরাতের অবস্থান আমার অজানা ছিলোনা, কিন্তু আমি এ নামাজ তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করেছি বিধায় বের হইনি। কেননা তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়তে। রাসুল(সা) এর ওফাত হলো আর এই ব্যাপার টি এভাবেই থেকে যায়।‘’
[সুত্রঃ বুখারি, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খন্ড, পঞ্চম সংসকরন, হাদীস নম্বর- ১৮৮৫, পৃষ্ঠা-২৯২।]
(১) ‘‘ইবনে শিহাব (যুহরি) (রঃ) বলেন, ‘’রাসুলুল্লাহ(সা)-এর ওফাতের পরও তারাবির অবস্থা এরুপ ই ছিলো। আবু বকর সিদ্দিক(রা)-এর খিলাফত কালে এবং উমর ইবনে খাত্তাব(রা) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও (তারাবির) অবস্থা অনুরুপ ই ছিলো’’
[সুত্র-মুয়াত্তা, ইমাম মালিক(রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম খন্ড, পঞ্চম সংস্করন, রমযানের নামাজ অধ্যায়, হাদিস নম্বর-২, পৃষ্ঠা-১৭০।]
(৩) ‘‘আব্দুর রহমান ইবনে আব্দিল কারিয়্যু (রঃ) বলেছেনঃ ‘আমি মাহে রমজানে উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর সহিত মসজিদে গমন করিয়াছি, সেখানে গিয়া দেখি লোকজন বিভিন্য দলে বিভক্ত। কেউ একা নামায পড়িতেছেন। আবার কেউবা নামায পড়িতেছেন, কিন্তু তাঁর ইমামতিতে একদল লোক ও নামায আদায় করিতেছেন। এই দৃশ্য দেখিয়া উমর(রাঃ) বলিলেনঃ ‘আমি মনে করি যে, কতইনা ভালো হইত যদি এই মুসল্লিগন কে একজন ক্বারীর সহিত একত্র করিয়া দেওয়া হইত।‘ অতঃপর তিনি উবাই ইবনে কা’ব (রা) –এর ইমামতিতে একত্র করিয়া দিলেন।‘ আব্দুর রহমা বলেনঃ ‘দ্বিতীয় রাতেও আমি তাহার সহিত মসজিদে গমন করিলাম। তখন লোকজন তাহাদের ক্বারীর ইক্তিদায় নামায পড়িতেছিলেন। উমর (রা) ইহা অবলোকন করিয়া বলিলেনঃ ‘ইহা অতি চমৎকার বিদ;আত বা নতূন পদ্বতি।‘’
[সুত্রঃ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খন্ড, পঞ্চম সংস্করন, ১৮৮৩ নম্বর হাদীস, পৃষ্ঠা নম্বর-২৯২। মুয়াত্তা, ইমাম মালিক(র), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম খন্ড, পঞ্চম সংস্করন, রমজানের নামায অধ্যায়, হাদীস নম্বর-৩।]
মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন,যে এই মাসে নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন,যে একটি ফরজ নামাজ আদায় করবে তাকে অন্য মাসের সত্তুরটি ওয়াজিব নামাজ আদায়ের সওয়াব দান করবেন ৷
এ পবিত্র মাসে অবশ্যই আমাদেরকে বেশী বেশী ইবাদত বান্দেগী করতে হবে তাই বলে এমন কোন পদ্ধতিতে নয় যা নবী নিজেও করেননি বা করতেও বলেননি।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পবিত্র রমজানের ফজিলত,গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,পবিত্র রমজান মাস দয়া,কল্যাণ ও ক্ষমার মাস ৷ এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস ৷ এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন,এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান ৷রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস তথা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর দস্তরখান আমাদের জন্যে উন্মুক্ত ৷ তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন। এ মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুণগান বা জিকিরের সমতুল্য;এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য,এ মাসে তোমাদের সৎকাজ এবং প্রার্থনা বা দোয়াগুলো কবুল করা হবে ৷ তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা করো যে,তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন ৷গুনাহর জন্যে অনুতপ্ত হও ও তওবা কর এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্যে হাত উপরে তোলো,কারণ নামাজের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়,এ সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান,এ সময় কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন,কেউ তাঁকে ডাকলে তিনি জবাব দেন,কেউ কাকুতি-মিনতি করলে তার কাকুতি মিনতি তিনি গ্রহণ করেন ৷কেননা পবিত্র কোরআনে সুরা গাফিরের ৫৯ নম্বর আয়াতে তিনি নিজেই বলেছেন,
ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
তোমরা আমাকে ডাক,আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো,নিশ্চয় যারা আমার আমার ইবাদত হতে বিমুখ,তারা লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে৷"#আল-হাসানাইন