বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল

দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল



আমাদের সমাজে ধনী ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণীর মানুষ বাস করে। ধনীরা তাদের অবস্থানকে মজবুত করার জন্য যেমন বেশী বেশী ধন-সম্পদ লাভের চেষ্টা করে; তেমনি দরিদ্ররা তাদের দুঃখ-কষ্ট দুর করার জন্য ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী হয়। কিন্তু এটা পরীক্ষিত সত্য যে,বেশী ধনসম্পদ থাকলেই মানুষ সুখী হতে পারে না। কারণ অতিরিক্ত ধন-সম্পদ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। অপরদিকে অতিরিক্ত দারিদ্র্যও মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ইসলাম সবসময় মানুষের দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করে। অভাব মোকাবেলার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল। তিনি তার পুত্র হানাফিয়াকে বলেন, হে আমার পুত্র! আমি তোমার দরিদ্রতার কারণে ভয় পাই। কারণ দরিদ্রতা মানুষের ধর্মকে অপূর্ণ করে এবং মন মানসিকতাকে বিচলিত করে দেয়।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল (সা.) নিজেও সাহাবীদের দুঃখ-কষ্ট দুর করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন। তবে ধনসম্পদ যাতে মানুষের ঈমান ধ্বংসের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে রাসূলে খোদা খুবই খেয়াল রাখতেন। তিনি বলতেন, “কারো ধন-সম্পদ যদি কম কিংবা প্রয়োজন মত থাকে তবে তা সেই ব্যক্তির অঢেল সম্পদের চেয়ে ভাল- যা তার মন মানসিকতাকে ব্যস্ত করে রাখে এবং তাকে গাফেল করে দেয়।”

অতিরিক্ত ধন-সম্পদ কিভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সে সম্পর্কে আমরা দু’টি ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করব।

একঃ সা'দ নামে আহলে সুফফার একজন সদস্য ছিল। (যেসব সাহাবীর জীবন ধারণের জন্য কোন অর্থ সম্পদ ছিল না এবং যারা সাধারণত মসজিদেই দিনযাপন করতো তাদেরকে ‘আহলে সুফফা’ বলা হতো।)

আহলে সুফফার সদস্যদের মধ্যে সা'দ খুব গরিব ছিল বলে অত্যন্ত কষ্ট করে জীবন যাপন করতো। রাসূল (সা.) তার দুঃখ-কষ্ট দেখে নিজেও কষ্ট পেতেন। একদিন তিনি সা'দকে বললেন, যদি হাতে কিছু আসে তাহলে অবশ্যই তোমার অভাব দূর করার চেষ্টা করবো।

কিন্তু অনেক দিন অতিবাহিত হলেও রাসূলের কাছে তেমন কিছু না আসায় তিনি দুঃখ পেলেন। এ অবস্থায় একদিন আল্লাহর হুকুমে হযরত জিবরাইল (আ.) দু’টি দিরহাম নিয়ে রাসূলের কাছে এলেন।

জিবরাইল (আ.) রাসূলে খোদাকে বললেন,সা’দের কারণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন। আপনি এই দিরহামগুলো সা'দকে দিয়ে বলুন, সে যেন ব্যবসা করে।

রাসূল (সা.) দিরহাম দু’টি নিয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। বের হয়েই দেখতে পেলেন সা’দ রাসূলের জন্য অপেক্ষা করছে। সা’দকে দেখে রাসূলে-খোদা বললেন, তুমি কি ব্যবসা করতে পারবে? সা’দ বললো, খোদার কসম! আমার কাছে এমন কোন সম্পদ নেই যা দিয়ে ব্যবসা করবো। রাসূল (সা.) তাকে দিরহাম দু’টি দিয়ে বললেন, এটা নিয়ে আল্লাহ পথে থেকে ব্যবসা কর।

সা'দ হাসিমুখে দিরহাম দু’টি নিল। তারপর রাসূলের সঙ্গে মসজিদে গেল। নামাজ পড়ার পর নবীজি সাদকে বললেন, ওঠো! এবার রিজিকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো।"

রাসূলের নির্দেশে সা'দ মসজিদ থেকে বের হয়ে পড়লো। এরপর সে ব্যবসা শুরু করলো। বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো, সে যে ব্যবসাতেই হাত দিতো তাতেই অনেক লাভ হতো। অল্প দিনের মধ্যেই সে অনেক ধনসম্পদের অধিকারী হলো। ব্যবসার জন্য মসজিদের পাশেই একটি জায়গা বেছে নিল এবং বেচাকেনায় মশগুল হয়ে গেল।

একদিন রাসূল (সা.) দেখতে পেলেন যে, মসজিদে আযান হবার পরও সা'দ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছে। নামাজের জন্য তৈরী হবার কোন লক্ষণই তার মধ্যে দেখা গেল না! রাসূল (সা.) এ দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট পেলেন। তিনি সা'দকে বললেন, সা'দ! দুনিয়ার প্রতি মোহ তোমাকে নামাজ থেকে দূরে সরিয়ে দিল!

রাসূলের কথা শুনে সা'দ বললো, আমি কি করবো? আমি আমার ধনসম্পদ নষ্ট করে ফেলবো নাকি? একটু থেমে সে আবার বললো- যাদের কাছে আমি জিনিসপত্র বিক্রি করেছি তাদের টাকা বুঝে নিতে হবে। আর যাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনেছি তাদের পাওনাও পরিশোধ করতে হবে। এসব করতে গেলে নামাজে অংশ নেব কিভাবে?

সা'দের এমন জবাব শুনে রাসূল (সা.) খুব কষ্ট পেলেন। এ সময় হযরত জিবরাইল (আ.) রাসূলের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, সা'দের ব্যবহারে আপনি যে কষ্ট পেয়েছেন, তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লক্ষ্য করেছেন। এবার আপনি বলুন, সাদের কোন অবস্থাকে আপনি পছন্দ করেন-তার আগের অবস্থা না বর্তমান অবস্থা? রাসূলে খোদা বললেন, আমি তার আগের অবস্থাকে পছন্দ করি। কারণ বর্তমান অবস্থার মধ্যে দুনিয়া আছে কিন্তু দ্বীন নেই।

এরপর জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি যদি তাই চান তাহলে সাদকে যে দুই দিরহাম আপনি দিয়েছিলেন, তা ফেরত নিন। তাহলে সে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। জিবরাইল চলে যাবার পর রাসূল (সা) সাদকে বললেন, তুমি আমার কাছ থেকে যে দু’টি দিরহাম নিয়েছিলে তা কি ফেরত দেবে না? সাদ বললো, দুই দিরহাম কেন, তার পরিবর্তে আমি দুইশ দিরহাম দিতেও রাজি আছি।

রাসূল বললেন, ২০০ দিরহামের দরকার নেই,তুমি আমার কাছ থেকে যে দিরহামগুলো নিয়েছিলে সেগুলোই ফেরত দাও। সাদ আর কোন কথা না বলে, ঐ দিরহাম দু’টিই রাসূলকে ফেরত দিল। রাসূল (সা) দিরহামগুলো নিয়ে যাবার সাথে সাথেই আল্লাহ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তার ব্যবসায় ক্ষতি হতে লাগলো এবং একসময় সে আগের মতোই দরিদ্র হয়ে গেল।

দুইঃ  সা’লাবাহ নামে এক সাহাবী ছিল । সেও এক সময় দারিদ্র্য ছিল এবং ব্যবসা করতো । যখনই তার ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেল, তখন সে ব্যস্ততার মসজিদে নামাজ পড়তে আসতো না। এমনকি যখন রাসূল (সা.) তার কাছ থেকে যাকাত আদায় করার জন্য লোক পাঠালেন, সে যাকাত দিতেও রাজি হলো না। বরং সে বলল, আমি কি ইহুদী নাকি নাসারা যে, আমার কাছ থেকে কর নিতে এসেছো ?

অথচ এই লোকটি একসময় ভাল মুসলমান ছিল। আল্লাহর দরবারে সে শপথ করে বলেছিল যে, যদি আল্লাহ আমাকে ধন-সম্পদ দান করেন, তবে আমি তা বঞ্চিত ও দরিদ্র ব্যক্তিদের সাহায্যে ব্যয় করবো। কিন্তু যখনই আল্লাহ তাকে ধনসম্পদ দিলেন তখনই সে নিজের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মহান আল্লাহ সূরা তাওবার ৭৫ ও ৭৬ নম্বর আয়াত নাজিল করেন। এতে বলা হয়েছে :  "তাদের মধ্যে এমনও কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল যে, যদি তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের ধন্য করেন, তাহলে আমরা দান করবো এবং সৎ হয়ে যাবে। কিন্তু যখন আল্লাহ তাদের বিত্তশালী করলেন তখন তারা কার্পণ্য করতে লাগলো এবং নিজেদের অঙ্গীকার থেকে এমনভাবে পিছটান দিল যে, তার কোন পরোয়াই করলো না।"

এ আয়াত থেকে এ বিষয়টিই প্রতিয়মান হয় যে, ধনসম্পদ মানুষকে দ্বীন থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। তবে এটাও সত্য যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে এমন অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন,এমনকি বর্তমানেও অনেক ধনী মানুষ আছেন যারা সৎপথে অর্থ উপার্জন করেছেন এবং তাদের ধন-সম্পদকে আল্লাহর পথেই ব্যয় করেছেন। তারা নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হবেন। তবে রাসূল (সা.) যেহেতু দারিদ্র্যকেই বেশী পছন্দ করতেন তাই আমরাও দরিদ্রদের ভালবাসবো, সবসময় চেষ্টা করবো তাদের পাশে দাঁড়াতে।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
‘ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিপ্লবই ...
ফিলিস্তিনি বালিকা
পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...
ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে কখনও ...
নেয়ামতের হাত ছড়া হওয়ার কারন
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম

 
user comment