বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

খলীফা হারুনের সাথে ইমাম মূসা কাযেমের (আ.) জ্ঞানগর্ভ বিতর্ক ও কথোপকথন

খলীফা হারুনের সাথে ইমাম মূসা কাযেমের (আ.) জ্ঞানগর্ভ বিতর্ক ও কথোপকথন

আমাদের ইমামগণ ঐশী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, ফলে যে কোন প্রশ্নই তাদেরকে করা হতো তার সঠিক, পূর্ণ ও প্রশ্নকারীর বোধগম্যতার আলোকে জবাব দিতেন । যে কেউ এমন কি শত্রুরাও যদি ইমামগণের সাথে জ্ঞানগর্ভ ও তত্ত্বীয় আলোচনায় বসত, স্বীয় অক্ষমতাকে স্বীকার করার পাশাপাশি তাঁদের বিস্তৃত চিন্তা শক্তি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর পূর্ণ দখলের কথা অকপটে স্বীকার করত ।

হারুনুর রশিদ ইমাম কাযেম (আ.)-কে মদীনা থেকে বাগদাদ নিয়ে আসল এবং তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলো । হারুন : অনেকদিন যাবৎ ভাবছি আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করব, যা আমার মনে জেগেছে । আজোবধি কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি । আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনি কখনোই মিথ্যা বলেন না । আমার প্রশ্নের সঠিক ও সত্য জবাব প্রদান করুন!

ইমাম : যদি আমাকে বাক স্বাধীনতা দাও, তবে তোমার প্রশ্ন সম্পর্কে আমি যা জানি, তা তোমাকে অবহিত করব ।

হারুন : আপনি স্বাধীন । আপনার যা বলার মুক্তভাবে ব্যক্ত করতে পারেন... ।

যাহোক আমার প্রথম প্রশ্ন হলো : কেন আপনি এবং জনগণ বিশ্বাস করেন যে, আপনারা আবু তালিবের সন্তানরা, আমরা আব্বাসের সন্তানদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন । অথচ আমরা এবং আপনারা একই বৃক্ষের অংশ ।

আবু তালিব ও আব্বাস উভয়েই মহানবী (সা.)-এর চাচা ছিলেন এবং আত্মীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।

ইমাম : আমরা তোমাদের চেয়ে মহানবী (সা.)-এর বেশী নিকটবর্তী ।

হারুন : কিরূপে?

ইমাম : যেহেতু আমাদের পিতা আবু তালিব ও মহানবী (সা.)-এর পিতা পরস্পর আপন ভাই (পিতা ও মাতা একই) ছিলেন কিন্তু আব্বাস আপন ভাই ছিলেন না (কেবলমাত্র মাতৃকূল থেকে) ।

হারুন : অন্য প্রশ্ন : কেন আপনারা দাবী করেন যে, আপনারা মহানবী (সা.) থেকে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবেন, অথচ আমরা জানি যে, যখন নবী (সা.) পরলোক গমন করেছেন, তখন তার চাচা আব্বাস (আমাদের পিতা) জীবিত ছিলেন । কিন্তু অপর চাচা আবু তালিব (আপনাদের পিতা) জীবিত ছিলেন না । আর এটা সকলের জানা যে, যতক্ষণ পর্যন্ত চাচা জীবিত আছেন, চাচার সন্তানের নিকট উত্তরাধিকার পৌঁছে না ।

ইমাম : আমি স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারি তো? হারুন : আলোচনার শুরুতেই আমি বলেছি, মতামত ব্যক্ত করার ব্যাপারে আপনি স্বাধীন ।

ইমাম : ইমাম আলী (আ.) বলেন : সন্তানের উপস্থিতিতে, পিতা, মাতা ও স্বামী, স্ত্রী ব্যতীত কেউ উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে না । আর সন্তান থাকলে চাচার উত্তরাধিকার লাভের ব্যাপারটি কোরআনে কিংবা রেওয়ায়েতে প্রমাণিত হয়নি । অতএব, যারা চাচাকে পিতার নিয়মের অন্তর্ভূক্ত করে, নিজ থেকেই বলে এবং তাদের কথার কোন ভিত্তি নেই । (অতএব, নবীকন্যা যাহরা (আ.)-এর উপস্থিতিতে তাঁর চাচা আব্বাসের নিকট উত্তরাধিকার পৌঁছে না) ।

তাছাড়া আলী (আ.)-এর সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,

اقضاكم علىّ

আলী তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট বিচারক । ওমর ইবনে খাত্তাব থেকেও বর্ণিত হয়েছে :

علىّ اقضانا

আলী আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক : এ বাক্যটি হলো সামগ্রিক তাৎপর্যবহ যা হযরত আলীর জন্য প্রমাণিত হয়েছে । কারণ, সকল প্রকারের বিদ্যা যেগুলোর মাধ্যমে স্বীয় সাহাবীগণকে প্রশংসা করেছেন যেমন : কোরআনের জ্ঞান, আহকামের জ্ঞানও সর্ব বিষয়ে জ্ঞান ইত্যাদি সবকিছুই ইসলামী বিচারের তাৎপর্যে নিহিত রয়েছে । যখন বলা হবে আলী (আ.) বিচারকার্যে সকলের চেয়ে উৎকৃষ্ট, তবে তার অর্থ হবে, তিনি সর্বপ্রকার জ্ঞানেই সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ।

(অতএব, ইমাম আলীর এ উক্তি যে, সন্তানের বর্তমানে চাচা উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে না তা চূড়ান্ত দলিল রূপে পরিগণিত হবে । সুতরাং একে গ্রহণ করা উচিৎ, না কি যে মত বলে : চাচা আইনগত ভাবে পিতার স্থানে । কারণ, নবী (সা.)-এর বক্তব্য অনুসারে, আলী (আ.) দীনের আহকাম সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা বেশি জ্ঞাত) ।

হারুন : অপর প্রশ্ন ।

কেন আপনারা মানুষকে অনুমতি দেন আপনাদেরকে রাসূল (সা.)-এর সাথে সম্পর্কিত করতে এবং এ কথা বলতে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সন্তান । অথচ আপনারা হলেন আলীর সন্তান । কারণ, প্রত্যেককেই তার পিতার সাথে সম্পর্কিত করা হয় (মাতার সাথে নয়) । আর মহানবী (সা.) হলেন আপনাদের নানা ।

ইমাম : যদি মহানবী (সা.) জীবিত হয়ে তোমার কন্যাকে বিয়ে করতে চান, তবে তুমি কি তোমার কন্যাকে তাঁর সাথে বিয়ে দিবে?

হারুন : সুবহানাল্লাহ, কেন দেব না । বরং ঐ অবস্থায় আরব, অনারব এবং কোরাইশদের সকলের উপর গর্ববোধ করব । ইমাম : কিন্তু নবী (সা.) জীবিত হলে আমার কন্যার জন্য প্রস্তাব দিবেন না, কিংবা আমিও দিব না ।

হারুন : কেন?

ইমাম : কারণ, তিনি আমার পিতা (যদিও মাতৃদিক থেকে ) কিন্তু তোমার পিতা নন । (অতএব, নিজেকে আল্লাহর রাসূলের সন্তান বলে মনে করতে পারি) ।

হারুন : তাহলে কেন আপনারা নিজেদেরকে রাসূলের বংশধর বলে মনে করেন । অথচ বংশ পিতৃকুল থেকে নির্ধারিত হয়, মাতৃকুল থেকে নয় ।

ইমাম : আমাকে এ প্রশ্নের জবাব প্রদান থেকে অব্যাহতি দাও ।

হারুন : না, আপনাকে জবাব দিতে হবে; আর সেই সাথে কোরআন থেকে দলিল বর্ণনা করুন.. ।

ইমাম :   

ومن ذرّيّته داود وسليمان و وايّوب ويوسف و مو سي وهارون وكذلك نجزي المحسنين و زكريّا و يحيي و عيسي

তাহার(ইবরাহীম) বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকেও, আর এভাবে সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি এবং যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা .. ।

এখন তোমাকে প্রশ্ন করব : এ আয়াতে যে, ঈসা (আ.) ইবারহীম (আ.)-এর বংশ বলে পরিগণিত হয়েছে, তা কি পিতৃকুল থেকে, না মাতৃকুল থেকে?

হারুন : কোরআনের দলিল মোতাবেক ঈসা (আ.)-এর কোন পিতা ছিলেন না ।

ইমাম : তাহলে মাতৃকুল থেকেই বংশধর বলে পরিগণিত হয়েছে । আমরাও আমাদের মাতা ফাতেমার (আল্লাহ তাঁর উপর শান্তি বর্ষণ করুন) দিক থেকে রাসূলের বংশধর বলে পরিগণিত হই ।

অন্য একটি আয়াত পড়ব কি?

হারুন : পড়ুন!

ইমাম : মোবাহেলার আয়াতটি পড়ব : 

فمن حاجّك فيه من بعد ماجائك من العلم فقل تعالوا ندع ابنائنا و ابنئكم و نسائنا و نسائكم و انفسنا وانفسكم ثمّ نبتهل فنجعل لعنة الله علي الكاذبين

“তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে তোমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়, তাকে বল; আস, আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারিগণকে ও তোমাদের নারিগণকে, আমাদের নিজ দিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে; অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত ।”

কেউই এরূপ দাবী করেনি যে, মহানবী (সা.) নাজরানের নাসারাদের সাথে মোবাহেলা করার জন্য আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন ব্যতীত অন্য কাউকে নিজের সঙ্গী করেছেন । অতএব, উল্লিখিত আয়াতে আব না’য়ানার (আমাদের পুত্রগণ) দৃষ্টান্ত হলেন ইমাম হাসান (আ.) ও হোসাইন (আ.), যদি ও তারা মাতৃ দিক থেকে রাসূলের সাথে সম্পর্কিত এবং তাঁর কন্যার সন্তান ।

হারুন : আমার নিকট কিছু চাইবেন কি?

ইমাম : না, আমার নিজের গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে চাই ।

হারুন : এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখব ... । (উয়ুনু আখবারুর রেযা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮১, ইহতিজাজে তাবারসী, পৃ. ২১১-২১৩, বিহারুল আনওয়ার, ৪৮তম খণ্ড, পৃ. ১২৫-১২৯। )

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...
ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে কখনও ...
নেয়ামতের হাত ছড়া হওয়ার কারন
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম
কুরআনের দৃষ্টিতে নবী-রাসূলগণ
আল কুরআনের দৃষ্টিতে মানব জীবনের ...
রমজানে দোয়া ও মোনাজাত
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...

 
user comment