বিত্র নগরী জেরুজালেমে বায়তুল মোকাদ্দাস অবস্থিত। বায়তুল মোকাদ্দাসের মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কাছে অতি পবিত্র। এই মসজিদের কারণে বায়তুল মোকাদ্দাসকে সংক্ষেপে আল-কুদ্স শরীফও বলা হয়। ঐতিহাসিকভাবে আল-কুদ্সের মর্যাদা অপরিসীম। এ জায়গাকে কেন্দ্র করে অনেক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে। বায়তুল মোকাদ্দাস বিখ্যাত নবী হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সোলাইমান (আ.)-এর রাজধানী ছিল। হযরত সোলাইমান (আ.) কর্তৃক নির্মিত গম্বুজবিশিষ্ট সেই বিখ্যাত মসজিদ এখনও মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে আছে। এই মসজিদ মুসলমানদের কাছে আর একটি দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ-এর সময় এই মসজিদে এসে সকল নবী-রাসূলকে নিয়ে নামায পড়েছিলেন এবং এখান থেকেই স্বর্গীয় বাহন বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ শুরু করেছিলেন।
ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কিবলা করে নামায আদায় করতেন। দীর্ঘ তের বছর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস। এর কারণ ছিল তখনও পর্যন্ত মক্কার কাবা কাফেরদের দখলে ছিল। কাবার ভেতরে ৩৬০টি মূর্তি বসানো ছিল। আল্লাহর ঘরকে তারা অনাচারে পরিপূর্ণ করে রেখেছিল।
মদীনায় হিজরত করার পর মুসলমানরা ইহুদিদের সাথে একটি রাষ্ট্রে বাস করতে থাকে। ইহুদিরা মুসলমানদের এই বলে উত্যক্ত করতে থাকে যে, তাদের ধর্মকেই মুসলমানরা অনুসরণ করছে। কারণ, জেরুজালেমকে মুসলমানরা কিবলা বানিয়ে নামায পড়ে।
এ কথা জানতে পেরে মহানবী (সা.) খুব দুঃখ পেলেন। তিনি বিমর্ষ চিত্তে আল্লাহকে স্মরণ করেন। প্রায় সময় প্রভুর কাছ থেকে কোনো সান্ত্বনা বাণীর অপেক্ষায় থাকেন।
দ্বিতীয় হিজরিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীর মনঃকষ্ট দূর করার সিদ্ধান্ত নিলেন। একদিন মহানবী বনি সালিমের মসজিদে জোহরের নামায পড়ছিলেন। দুই রাকাত পড়ার পর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ.) এসে মহানবীর দুই হাত ধরে তাঁকে কাবার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। তখন থেকেই কাবা মুসলমানদের কিবলায় পরিণত হলো।
এই ঘটনা ছিল ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তখন থেকেই মুসলমানদের মাঝে একটি আত্মবিশ্বাস জেগে উঠেছিল এবং খুব শীঘ্রই যে মক্কা মুসলমানদের হবে এই ঘটনা তারও ইঙ্গিত বহন করছিল।
অনেকে এই কিবলা পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার জবাবে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নির্বোধ লোকেরা বলবে যে, তারা এ যাবৎ যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বল, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।’ সূরা বাকারা : ১৪৪
‘আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করি। সুতরাং তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ কর। অতএব, তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরাও।’ সূরা বাকারা : ১৪৪
উপরিউক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায়, বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে মুখ ফেরানোতে আল্লাহরই ইচ্ছা কার্যকর ছিল এবং কোনো বিশেষ দিককে তিনি প্রাধান্য না দিয়ে বলেছেন, সকল দিকই তাঁর দিক। কাজেই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তনের মাঝে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া কাবাকেই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য চিরস্থায়ী কিবলা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। বায়তুল মোকাদ্দাসের ব্যাপারটি ছিল সাময়িক।
কিবলা পরিবর্তন হলেও বায়তুল মোকাদ্দাসের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে এতটুকু কমে যায়নি। মক্কা, মদীনার পরেই আল-কুদ্স মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থান। তাই ইহুদি দখলদারদের হাত থেকে আল-কুদ্স মুক্ত করার লক্ষ্যেই ইমাম খোমেইনী (রহ.) প্রতি রমযানের শেষ জুমআর দিন বিশ্বব্যাপী আল-কুদ্স দিবস পালনের জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। (কাউসার বিডি)