ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিচিতি
চতুর্থ হিজরির ৩ শাবান মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দুহিতা হযরত ফাতেমা (আ.)-এর কোলে জন্মগ্রহণ করে এক পুত্রসন্তান।১ যাঁর জন্ম কেবল বিস্ময়কর ও অসাধারণই ছিল না,তাঁর গোটা জীবনকাল ও গৌরবময় শাহাদাত ছিল অশেষ রহস্যে পরিপূর্ণ। তাঁর মাতা যদি সক্ষম হতেন তাহলে তাঁকে দুধ পান করাতেন। ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর নানা রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর জিহ্বা ও আঙ্গুল চুষেই পরিতৃপ্ত হতেন,শান্ত হয়ে যেতেন।২
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হুসাইনকে কাঁধে বসাতেন এবং বলতেন : ‘এ বালক ও তার ভাই দুনিয়ায় আমার দু’টি সুগন্ধী ফুল (রায়হান)।’৩ তিনি বারবার বলতেন : ‘হুসাইন আমা থেকে,আর আমি হুসাইন থেকে।’৪ আরও বলতেন : ‘এরা দু’ভাই আমার আহলে বাইতের মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়।’৫ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁদের সম্পর্কে বলতেন : ‘হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।’৬
ইমাম হুসাইন (আ.) ইসলামের মহাবিদ্যালয়ে অর্থাৎ যে গৃহে জিবরীল (আ.) আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হতেন সেখানেই মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কোলে এবং হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের সান্নিধ্যে ও মা ফাতেমা যাহরার পবিত্র আঁচলের ছায়াতলে বড় হন। তাঁর শিক্ষার উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তরে উত্তীর্ণ হন এ বিশ্ববিদ্যালয়েই। তাঁরই সহপাঠীবৃন্দ,যেমন হযরত সালমান ফারসি,হযরত মিকদাদ,হযরত আবু যার,হযরত ইবনে আব্বাস প্রমুখ তাঁর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন,কিন্তু মর্যাদার দিক থেকে তাঁর চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। যেমনটা আমরা জানি যে,ইবনে আব্বাস তাঁর নেতৃত্বে চলাকে নিজের জন্য গৌরবের কারণ বলে মনে করতেন এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতেন।৭ হযরত আবু হুরায়রা তাঁর পবিত্র পদধূলি নিজের জামা দিয়ে মুছেছেন এবং এ কাজের জন্য গর্বও করেছেন।৮ তিনি বর্ণনা করেছেন : ‘আমি স্বচক্ষে দেখেছি যে,হুসাইন তার দু’পা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বুকের ওপরে রেখেছিল। আর রাসূল তাঁর জিহ্বায় চুমু দিচ্ছিলেন ও বলছিলেন : اللهم احبه فانی احبه‘হে আল্লাহ্! একে তুমি ভালবাস। কেননা,আমি একে ভালবাসি।’৯
ইমাম হুসাইন (আ.) হযরত আবু বকরের খেলাফতকালে যদিও মাত্র দশ বছরের এক বালক ছিলেন,তদুপরি বুজুর্গ সাহাবীবৃন্দের ফতোয়া ও জ্ঞান শিক্ষার আসরে অংশগ্রহণ করতেন।১০ সাহাবীবর্গ তাঁকে নিজেদের জায়গায় এনে বসাতেন এবং তাঁর প্রতি এতটা শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন যা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর কিম্বা আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের প্রতি করতেন না। ইমাম হুসাইন (আ.) এমন এক গৃহে বেড়ে ওঠেন যে গৃহের অধিবাসীবৃন্দ (আহলে বাইত অর্থাৎ মহানবীর গৃহের অধিবাসী) সর্বস্ব ধর্মের পথে উৎসর্গ করতেন এবং এ পথে তাঁদের কোন রকম কার্পণ্য বা ভণ্ডামি ছিল না।
ইবনে আসাকির তাঁর তারীখে কাবীর গ্রন্থে,আহমাদ ইবনে সুলায়মান তাঁর ইকদুল লিয়ালী গ্রন্থে,মুবাররাদ তাঁর কিতাবে কামিল-এ,ফাখরুদ্দীন রাযী তাঁর তাফসীরে و علم آدم الاسماء (এবং আদমকে শিক্ষা দিলেন নামসমূহ)-এ আয়াতের ব্যাখ্যায়,মুহসিনুল হুসাইনী তাঁর লাওয়ায়িজুল আশজান গ্রন্থে,ইবনে কুতাইবা তাঁর উয়ুনুল আখবার গ্রন্থে,ইয়াকুত মুস্তাওসী তাঁর আল-জাওয়ায়িব গ্রন্থে ইমাম হুসাইন (আ.)- এর বদান্যতা ও দানশীলতার শত শত কাহিনী বর্ণনা করেছেন,যেগুলো আগেকার দিনে মানুষের মুখে মুখে উদাহরণ হিসাবে উচ্চারিত হত। ইমাম হুসাইন (আ.) পূর্ণতা ও পবিত্রতার এমন চরম শিখরে পৌঁছেছিলেন যে,মুবাহালার সেই অগ্নি পরীক্ষায় নাসারাদের বিরুদ্ধে তিনি দ্যুতিময় চেহারা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিশ্বের সকল ঐতিহাসিকের অকপট স্বীকারোক্তি মোতাবেক ইমাম হুসাইন (আ.) জ্ঞান,সংযমশীলতা,সত্যনিষ্ঠতা,সাহসিকতা,পরোপকার,দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর সময়ের মুসলমানদের মাঝে হুজ্জাত (দলিল-প্রমাণ) ও আদর্শের প্রতীক ছিলেন। সকলের আশ্রয়স্থলও ছিলেন তিনি। যেমনটা ‘আল হাসান ওয়াল হুসাইন’গ্রন্থে লেখা হয়েছে : ‘সবদিক বিচারে তিনি তাঁর নানা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সবচেয়ে বেশি সদৃশ ছিলেন।’১১
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর নিকট থেকে অনেক প্রসিদ্ধ দোয়া,অগণিত কারামাত ও অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর প্রতি ভক্তদের নিরন্তর দরূদ,ভালবাসার প্রেমাশ্রু,অশেষ ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রেরিত হয়ে আসছে। প্রতিদিন অসংখ্য মুসলমান তাঁর মাযারকে যিয়ারত করছে,সেই পবিত্র নাম মুসলমানদের অন্তরে চির জাগরুক রয়েছে। এক কথায় তিনি অশেষ ও অফুরন্ত বন্দনা ও প্রশংসায় অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মনে হয় ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর নিজের পরিচয় তাঁর শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্তে এ একটি বাক্যের মাধ্যমেই সবচেয়ে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন : ‘হে আল্লাহ্! তুমি জান যে,এরপর জমিনের বুকে তোমার নবী-দুহিতার কোন পুত্রই আর রইল না।’
বনি উমাইয়্যার পরিচয়
আরবের কোন গোত্রই বনি উমাইয়্যার মত স্বার্থপর ও অহঙ্কারী ছিল না। এ গোত্র বেড়েই উঠেছিল উগ্র স্বভাব,স্বার্থান্বেষী মনোবৃত্তি,বিলাসিতা ও আনন্দ-ফূর্তির কুশিক্ষা নিয়ে। জাহেলী যুগে এরা ছিল অর্থসম্পদ,শাসনক্ষমতা ও পদমর্যাদার কাঙ্গাল। ইসলামের আগমনের পর দীর্ঘ একুশ বছর এ গোত্র ইসলামের প্রধান ও প্রকাশ্য শত্রু বলে গণ্য হয়েছে এবং ইসলামকে ধ্বংসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মক্কা বিজয়ের পর এ গোত্র পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করলে রাসূল (সা.) তাদের ‘তোলাকা’(মুক্ত যুদ্ধবন্দী) বলে ঘোষণা করেন। আবু সুফিয়ান ছিল এ গোত্রের প্রধান। তাদের পূর্বোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের কথা চিন্তা করে মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে আবু সুফিয়ানের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এমন কোন কিছু করতে হযরত আব্বাস রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে পরামর্শ দিয়েছিলেন। রাসূল পরে তার গৃহকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেন। আর বনি উমাইয়্যার অর্থসম্পদের প্রতি মোহ থাকার কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) গনীমতের মাল থেকে তাদেরকে অধিক হারে দান করতেন। উদাহরণস্বরূপ মক্কা বিজয়ের পর যেসব লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের অন্যতম আবু সুফিয়ানের পুত্র মু‘আবিয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গনীমত,যেগুলো নতুন মুসলমান ও দুর্বল ঈমানদারদের অন্তর জয় করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল অর্থাৎ ‘মুয়াল্লাফাতি কুলুবিহিম’-এর অংশ ছিল তা হতে একশ’উট এবং বিপুল পরিমাণ রূপা প্রদান করা হয়। পরে তিনি মদীনায় গমন করেন এবং দুই বছরের কিছু বেশি সময় রাসূলের সাহচর্য লাভ করেন।১২
মানবের সুন্দর ও উন্নত চারিত্রিক গুণাবলির কোন কিছুই এ গোত্রের লোকদের মধ্যে ছিল না। ইসলামের আবির্ভাবের পরও তারা দুনিয়াবী ফায়দা নেই এমন কোন কাজে আত্মনিয়োগ করতে রাজি ছিল না। ইসলাম তাদের কাছে একটাই অর্থ বহন করত। আর তা হল বনি উমাইয়্যার ওপর বনি হাশিমের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার এবং রাসূলের নবুওয়াতকেও তারা এ দৃষ্টিতেই দেখত। ইসলামের ইতিহাসে এ কথার পক্ষে অনেক সাক্ষ্য রয়েছে। যখন আবু সুফিয়ান হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিজয় ও মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তার প্রত্যক্ষ করে তখন হযরত আব্বাস (রা.)-কে বলে : ‘তোমার ভাতিজার রাজত্ব তো বিশাল রূপ ধারণ করেছে!’তাই প্রথম থেকেই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল এ কর্তৃত্বকে ছিনিয়ে এনে নিজেদের হস্তগত করা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বনি উমাইয়্যার নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তিকে কোন প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত করতেন না। কিন্তু রাসূলের ওফাতের পর দামেশক বিজিত হলে বনি উমাইয়্যা প্রশাসনিক পদ লাভ করে। দ্বিতীয় খলিফার সময় দীর্ঘ প্রায় দশ বছর মু‘আবিয়া দামেশকের গভর্নর থাকায় তাঁর জন্য বনি উমাইয়্যাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। হযরত উসমানের বার বছরের শাসনকালে তিনি আরও স্বাধীনতা লাভ করেন। কিন্তু যখন খেলাফত হযরত আলী (আ.)-এর হাতে আসে,তখন বনি উমাইয়্যা দীর্ঘদিনের প্রতিহিংসার আগুন প্রজ্বলন করে এবং হযরত ওসমানের রক্তের দোহাই দিয়ে ফেতনা ছড়াতে থাকে। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মুহাজির ও আনসারদের ঐকমত্যে নির্বাচিত খলিফা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পটভূমি রচনা করে। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পবিত্র কুরআনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ও কুটচালের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে সরল মুসলমানদের সামনে বৈধ বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালায় এবং সফলও হয়। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে আলী (আ.)-এর পক্ষ থেকে নিয়োজিত গভর্নর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী-সাথীদের হত্যার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেমন তাঁর নিযুক্ত মিশরের গভর্নর মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে একটি মৃত গাধার চামড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে ও পুড়িয়ে এবং অপর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মালিক আশতারকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।১৩
একদিকে বনি উমাইয়্যারা নিজেদের প্রভাব জোরদার করার জন্য ধোঁকাবাজি,মিথ্যাচার আর খেয়ানতের মাধ্যমে দুর্বল ঈমানের অধিকারী গোত্রপতিদের খরিদ করতে থাকে। অন্যদিকে যিয়াদ ইবনে আবিহ,বুশর ইবনে আরতত প্রমুখের ন্যায় নিষ্ঠুর ব্যক্তিকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয় যারা যে কোন ধরনের অত্যাচার ও নিপীড়নকে বৈধ জ্ঞান করত। প্রখ্যাত মুতাযিলী পণ্ডিত ইবনে আবিল হাদীদ নাহজুল বালাগার ব্যাখ্যা গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে লিখেছেন : ‘মু‘আবিয়া যিয়াদ ইবনে আবিহকে কুফা ও বসরার গভর্নর নিযুক্ত করে। সে যেহেতু হযরত আলী (আ.)-এর বন্ধুদের ভালভাবে চিনত,তাই তাদের এক-একজনকে ধরে হত্যা করত,তাদের চোখ উৎপাটন করে ফেলত এবং তাদের হাত-পা কেটে ফেলত।’তার এ জুলুম তার থেকে দূরে অবস্থানকারী হেজাজের জনগণকেও আতংকগ্রস্ত করে রেখেছিল। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই মাইসামে তাম্মার,রুশাইদ হুজাইর,হুজর ইবনে আদি এবং আমর ইবনে হীমাক এর ন্যায় নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত নীতিবান মানুষকে হত্যা করা হয়। এভাবেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভকে তাদের বুকের মধ্যে বন্দী করে এবং আতংক ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বনি উমাইয়্যা মানুষের জীবনকে ওষ্ঠাগত করে তোলে।
উমাইয়্যা আমলের জনজীবনের চিত্র
উমাইয়্যা আমলে সাধারণ জনজীবন,বিশেষ করে শাম ও মিশরের জনসাধারণের নৈতিকতার এত বেশি স্খলন হয় যে,বিখ্যাত ঐতিহাসিক মাসউদী এভাবে তার চিত্র তুলে ধরেন : ‘তারা কোন অসঙ্গত কাজ থেকেই বিরত থাকত না,সঙ্গত ও সুন্দর বলে কিছুই তাদের সামনে মূল্য পেত না,তাদের যাতায়াত মক্তব ও পাঠশালার পরিবর্তে ছিল খেয়ালী যাদুকর ও মিথ্যা কাহিনীকারদের আখড়ায়। যদি কোন সমাবেশ ঘটত তবে সেটা ছিল হয় কাউকে চাবুক মারার অনুষ্ঠান অথবা কাউকে ফাঁসিতে ঝুলানোর অনুষ্ঠান। অকাজ-কুকাজেই তাদের ছিল সমস্ত অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ। আর সাধারণভাবে কুকাজকে সুকাজের সাথে এক করে দেখা হত। দীনদারকে কাফের বানাতে তাদের কোনই দ্বিধা ছিল না। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় যে বলা হয়েছে : এমন নড়বড়ে মানুষ যাদের ঈমান ছিল না,আবার বে-দীনও না। ঝুলন্ত ডালের মত,যা বাতাস যেদিক থেকে আসে,সেদিকেই দুলে যায়।’
ইমাম হুসাইন (আ.) তৎকালীন জনগণের নৈতিক অধঃপতনের প্রতি ইশারা করেছেন এভাবে :
والله لخذل فیکم المعروف و قد شجت علیه عروقکم و توارت علیه اصولکم
‘আল্লাহর কসম! হে জনগণ! যা কিছু উত্তম ও সঙ্গত তা তোমাদের মাঝে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়েছে,আর তোমাদের জীবনের শিকড় গেড়েছে সেই লাঞ্ছনার ভূমিতলে।’১৪
অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়েছিল যে,যখন উমাইয়্যা শাসনের পতন ঘটে ও আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস সাফফাহ্ শামের ক্ষমতা দখল করে,তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে আলী,শাম বাহিনীর নেতৃস্থানীয়দের ধরে সাফফাহর কাছে নিয়ে যায়। সে সময়ে তারা সকলে মিলে কসম করে বলতে থাকে যে,তারা বনি উমাইয়্যা ব্যতীত কাউকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইত (পরিবারের সদস্য) হিসাবে চিনত না!১৫
ইতিহাসের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে,বনি উমাইয়্যা কীভাবে জনসাধারণের অজ্ঞতা ও মূর্খতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। তাদের অজ্ঞতা দিয়েই তাদের শোষণ করেছে এবং মিথ্যা,অপবাদ,আর বনি উমাইয়্যার নামে জাল হাদীস বানিয়ে আপামর জনসাধারণকে বোকা বানিয়েছে,তাদের আবেগ-অনুভূতিকে আহলে বাইতের বিরুদ্ধে ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দীন রক্ষায় যাঁরা সত্যিকার আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলেছে। নিঃসন্দেহে সেদিন যদি উমাইয়্যা যুগের আলেম ও খতীবরা জনগণকে আলী (আ.) এর বিরুদ্ধে অভিসম্পাত বর্ষণ করার বুলি না শিখিয়ে ইসলামের সঠিক হুকুম- আহকাম ও দীনের দর্শন শিক্ষা দিত,তাহলে মানুষ এভাবে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে বাদ দিয়ে বনি উমাইয়্যাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইত বলে চিনত না,কিম্বা আলীর অনুসারীদের ‘কাফের’বা ‘জিন্দীক’বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করত না।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর নবী-পরিবারের সদস্যদের বন্দী হয়ে শামে নীত হবার পর যখন এক বৃদ্ধ অবগত হয় যে,বন্দী হয়ে আসা লোকগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তান,তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কারণ,তার ধারণাও ছিল না যে,মহানবী (সা.)-এর কোন সন্তান বেঁচে রয়েছেন। হয়ত এ কারণেই ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ইয়াযীদের দরবারে ভাষণ দানকালে সর্বপ্রথমে নিজের বংশ-পরিচয় তুলে ধরেছিলেন।
ইয়াযীদের পরিচয়
ইয়াযীদ জন্ম নেয় কলুষপূর্ণ এক পরিবেশে। তার মা ‘মেইসুন’১৬ ছিল ইয়াযদাল কালবির কন্যা। জন্মের পরই ইয়াযীদকে কালব গোত্রের জনৈক খ্রিস্টান নারীর কাছে সোপর্দ করা হয়। তার লালন-পালনকারীরা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানত না এবং তারা অশ্লীলতা ও নোংরামিতে অভ্যস্ত ছিল। অর্থাৎ নষ্টামি ও ধর্মবিবর্জিত এক পরিবারে সে লালিত-পালিত হয়।
তারা ইয়াযীদকে খ্রিস্টান রসম-রেওয়াজ অনুযায়ী লালন-পালন করে এবং মরু রীতি-নীতিতে অভ্যস্ত করে তোলে। ইয়াযীদের কুকুর নিয়ে খেলা,জুয়া,মদ্যপান,সহিংসতা,স্বার্থপরতা,স্বেচ্ছাচারিতা,বেপরোয়াভাব,হত্যা,রক্তপাত,নারী-আসক্তি ইত্যাদি মানব চরিত্রের জন্য কলঙ্কজনক আরও অনেক কু-অভ্যাসের কথা সেদিন কারও অজানা ছিল না। ইয়াযীদের মুখ থেকে মদের গন্ধ নাকে আসা অবস্থায় একদা ইমাম হুসাইনের সম্মুখে এ কবিতা আবৃত্তি থেকে তার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় :
الا یاصاح للعجب دعوتک ذا و لم تجب
الی الفتیات و الشهوات و الصاهباء و الطرب!
অর্থ : বন্ধু হে! আশ্চর্য হই যে,আমি তোমাকে ভোগ-বিলাস,মেলামেশা,আর উদগ্র বক্ষের কন্যাদের সাথে ফূর্তি করতে এবং নাফ্সের কামনা-বাসনা পূরণ ও নেশাকর মদ্যপান এবং নাচ-গানের প্রতি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি,অথচ তুমি তা গ্রহণ করছ না?১৭
ইমাম হুসাইন (আ.) মুহূর্তেই সেখান থেকে উঠে চলে যান এবং বলেন : ‘হে মু‘আবিয়ার পুত্র! এ সব কাজ তোমারই সাজে।’
মূলত মু‘আবিয়ার পুত্র ইয়াযীদের এভাবে লালন-পালন ছিল সাহাবায়ে কেরাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনসারগণের ছেলেমেয়েদের লালন-পালন পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীত। অথচ এ অধঃপতন সত্ত্বেও মু‘আবিয়া তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে শামের জনগণের কাছ থেকে ইয়াযীদের জন্য বাইয়াত আদায় করেন।১৮
ইয়াযীদ তার মনোভাব প্রকাশে কোন রাখঢাক রাখত না। সে প্রকাশ্যে এভাবে কবিতা আওড়াত :
لیت اشیاخی ببدر شهدوا وقعه الخررج من دمع الاسل
لعبت هاشم بالملک فلا خبر جاء ولا وحی نزل
অর্থ : হায়! যদি আমার পিতৃপুরুষরা বদরের ভূমি থেকে উঠে আসত এবং এ খাযরাজের (কুফার) ঘটনা দেখত! বনি হাশিম (মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধররা) তো রাজত্ব নিয়েই খেলেছে;আসলে না কোন খবর এসেছে,আর না কোন ওহী নাযিল হয়েছে!১৯
যা হোক অদ্যাবধি কোন নীতিবান ঐতিহাসিকের সন্ধান পাওয়া যায় না,যিনি ইয়াযীদের কোন গুণের কথা লিখে থাকবেন।
ইয়াযীদকে খলিফা নির্বাচনের পদক্ষেপ
আমীর মু‘আবিয়া ৫৯ হিজরিতে প্রথমে ঘরোয়া পরিবেশে ইয়াযীদের পক্ষে সমর্থন আদায় ও তা জাতীয়ভাবে উত্থাপন করার চেষ্টা চালান। এমনই এক ঘরোয়া পরিবেশে প্রথম যখন আমীর মু‘আবিয়া ইয়াযীদের খেলাফতের কথা উত্থাপন করেন,তখন তার উচ্ছিষ্ট ভোগীদের মধ্য থেকে একে একে যাহ্হাক ইবনে কায়েস ফেহী,আবদুর রহমান ইবনে ওসমান,আবদুল্লাহ্ ইবনে মুসআদাহ্,ছওর ইবনে মুআন এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে এসাম আশআরী মুখস্ত করা কথা ইয়াযীদের খেলাফতের সমর্থনে বলতে লাগল। তাদের বক্তব্যের সারমর্ম ছিল : যেহেতু খেলাফতের পদে ইয়াযীদের চেয়ে যোগ্যতর আর কেউ নেই,কাজেই হে আমীর (মু‘আবিয়া)! ইয়াযীদকেই যুবরাজ ঘোষণা করুন। এটাই ভেদাভেদ ও মতপার্থক্যের থেকে উত্তম কাজ।২০ কিন্তু এ বৈঠকে আহনাফ ইবনে কায়েসও ছিলেন। তিনি আরবের একজন বিজ্ঞ ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তখন বলে উঠলেন : ‘হে আমীর! জনগণ ভাল ও মন্দ সম্পর্কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বয়স তো পার হয়ে গেছে। আপনি নিজে ভালভাবে জানেন যে,আপনার পরে খেলাফত কার প্রাপ্য। যারা ইয়াযীদকে যুবরাজ করার ব্যাপারে আপনাকে উস্কে দিচ্ছে,তাতে আপনি গর্বিত হবেন না। আপনি অবগত যে,যতদিন হুসাইন জীবিত থাকবেন,ততদিন এটা মেনে নেবে না।’আহনাফ পুনর্বার বলেন : ‘হে মু‘আবিয়া! আপনি নিজেই জানেন যে,আপনি যুদ্ধের মাধ্যমে ইরাক জয় করেননি। ইমাম হাসানের সাথে আপনার যে সন্ধি হয়েছিল তার একটি শর্ত ছিল যে,আপনার পরে কাউকেই মুসলমানদের খলিফা বানাবার অধিকার আপনার থাকবে না। খেলাফত তাঁর হাতেই তুলে দেবেন। আল্লাহর কসম! যদি এক চুল পরিমাণও বিচ্যুত হন তাহলে তাঁর আস্তিনের নিচে হাতসমূহ দেখতে পাবেন যেগুলো তাঁর বাইয়াতে আবদ্ধ এবং তাঁকে যে কোন প্রকার সাহায্য করতে প্রস্তুত। সেদিন যে তলোয়ারসমূহ সিফফিনের ময়দানে আলীর জন্য আপনার বিরুদ্ধে শান দেওয়া হয়েছিল,সেগুলো এখনও তাদের কাঁধে ঝুলানো আছে এবং আপনার বিরুদ্ধে ঘৃণায় যেসব অন্তর সেদিন পূর্ণ ছিল,আজও তা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবহমান রয়েছে...।’ কিন্তু দুঃখজনক হল সেদিনের বৈঠক শেষ হয় জনাব মু‘আবিয়ার অনুচর যাহ্হাকের এ কথার মাধ্যমে যে,মত প্রকাশের অধিকার শুধু উমাইয়্যা বংশের লোকদেরই রয়েছে। ইরাকবাসীর কোন কথা বলার অনুমতি নেই। তাদের নিঃশ্বাসকে তাদের বুকের ভেতরেই দাফন করতে হবে...।২১ মু‘আবিয়া আহনাফের কথা উপেক্ষা করে ইয়াযীদকে যুবরাজ হিসাবে ঘোষণা করলেন। এভাবেই তিনি খেলাফতকে রাজতন্ত্রে পরিণত করেন এবং একে তাঁর বংশের জন্য উত্তরাধিকারের বিষয়ে পরিণত করেন। শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্র মতে,মু‘আবিয়া ক্ষমতাকে তাঁর বংশগত করার লক্ষ্যে যারা খেলাফতের দাবিদার হতে পারে তাদের ওপর কঠোরতা আরোপ শুরু করেন।২২
ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাতের কিছুদিন অতিবাহিত না হতেই আমীর মু‘আবিয়া শামের জনগণের নিকট থেকে ইয়াযীদের খেলাফতের নামে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এরপর মদীনায় মারওয়ান ইবনে হাকামের কাছে চিঠি লিখে নির্দেশ দেন মদীনার নেতৃবৃন্দের কাছ থেকেও বাইয়াত আদায় করতে।২৩ মারওয়ান যখন দেখল হেজাজের লোকেরা ইয়াযীদের বাইয়াত করছে না তখন সে তা মু‘আবিয়াকে লিখে পাঠায়। আমীর মু‘আবিয়া তৎক্ষণাৎ মারওয়ানের স্থলে সা’দ ইবনে আসকে নিয়োগ করে। এবার সে মু‘আবিয়ার নির্দেশ পালনে তৎপর হয়। কিন্তু জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বনি উমাইয়্যা ছাড়া আর কেউ বাইয়াত করল না।২৪
তখন মু‘আবিয়া ইয়াযীদের আনুগত্য মেনে নেয়ার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস,আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর,আবদুল্লাহ ইবনে জাফর এবং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর নিকট চিঠি পাঠান। কিন্তু তাঁরা সকলেই বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন মু‘আবিয়া হজ্ব ও ওমরার অজুহাতে উমাইয়্যা গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে সশস্ত্র লোকজনের প্রহরায় হেজাজে আসেন। সেখানে আনসার ও মুহাজিরদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ও তাঁদের সন্তানদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং নিজের অযোগ্য পুত্রকে যুবরাজ বানাবার ঘোষণা দেন।২৫
তথ্যসূত্র :
১. যাখায়িরুল উকবা,পৃ. ১১৮
২.তাহযিবুত তাহযিব,ইবনে হাজার,২য় খণ্ড;মাজমাউল হায়সামি,৯ম খণ্ড;কানযুল উম্মাল,৭ম খণ্ড (এ মর্মে ভাবার্থ বর্ণিত হয়েছে)
৩.আল আদাব মিন সহীহ বুখারী;সহীহ তিরমিযী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০৬;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,২য় খণ্ড;মুসনাদে আবি দাউদ,৮ম খণ্ড
৪.কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ২২১;সহীহ তিরমিযী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০৬;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৩য় খণ্ড;হিলইয়াতু আবু নাঈম,৫ম খণ্ড;তারিখে বাগদাদ,৯ম খণ্ড;তাহযিবুত তাহযীব,ইবনে হাজার,৩য় খণ্ড;সহীহ ইবনে মাজাহ;মুস্তাদরাকুস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড;হিলইয়াতুল আউলিয়া,আবু নাঈম,৪র্থ খণ্ড
৫.সহীহ তিরমিযী,২য় খণ্ড;ফায়যুল কাদীর,১ম খণ্ড;মাজমাউল হায়সামি,৯ম খণ্ড
৬.সহীহ তিরমিযী,২য় খণ্ড;সহীহ ইবনে মাজাহ,ফাযায়েলে আসহাবুন নবী অধ্যায়;বুখারী ফি আদাবুল মুফরাদ
৭.আস সায়েরুল আউয়াল,আবদুল বাকি নাঈম আল আযহারী,মিশর থেকে মূদ্রিত।
৮.আস সায়েরুল আউয়াল গ্রন্থে তারিখে ইবনে আসাকির এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৯.আল ইস্তিয়াব,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৪;আদাবুল মুফরাদ;বুখারী;আল ইসাবাহ্,ইবনে হাজার আসকালানী,২য় খণ্ড;কানযুল উম্মাল,৭ম খণ্ড,পৃ. ১০৪
১০.আস সায়েরুল আউয়াল,আবদুল বাকি নাঈম আল আযহারী,মিশর থেকে মূদ্রিত
১১.সহীহ বুখারী,বাদউল খালক অধ্যায়;সহীহ তিরমিযী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০৭;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,৩য় খণ্ড,পৃ ২৬১;কানযুল উম্মাল,৭ম খণ্ড,পৃ. ১১০;মাজমাউ হায়সামি,৯ম খণ্ড
১২.আত্-তামবিহ্ ওয়াল্ আশরাফ,পৃ. ২৮২-২৮৩;মাকতাবাতু খাইয়াত প্রকাশনী,বৈরুত,১৯৬৫
১৩.তারীখে ইয়াকুবী,২য় খণ্ড
১৪.তুহাফুল উকুল,পৃ. ২৪১
১৫.মুরুজুয যাহাব,৩য় খণ্ড
১৬.নাসেখুত তাওয়ারীখ,হযরত সাজ্জাদ (আ.)-এর জীবনী পর্ব,৩য় খণ্ড,পৃ. ২৪-২৬
১৭.প্রাগুক্ত,(এ অংশটুকু ইবনে আসীরের সূত্র থেকে বর্ণনা করা হয়েছে)
১৮.সুয়ূতী তাঁর তারীখুল খুলাফা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,মু‘আবিয়া জোর খাটিয়ে ইয়াযীদের জন্য বাইয়াত আদায় করেন।
১৯.ফায্ল খারাযমী,২য় খণ্ড,পৃ. ৫৯
২০.মু‘আবিয়া কর্তৃক ইয়াযীদকে যুবরাজ ঘোষণার কাহিনী ঐতিহাসিক মাসউদী তাঁর মুরুজুয যাহাব গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
২১.উল্লেখ্য,আহনাফ ইবনে কায়েস ইরাকের অধিবাসী ছিলেন।
২২.George Jordac, Tragedy of Karbala.
২৩.নাসেখুত তাওয়ারীখ
২৪.প্রাগুক্ত
২৫.প্রাগুক্ত
(সূত্র: প্রত্যাশা, বর্ষ ১,সংখ্যা ৩)