বাংলা অভিধানে ‘বিজ্ঞান’ মানে ‘অপরোক্ষ জ্ঞান’, ‘বিশেষ জ্ঞান’. তত্ত্বজ্ঞান’ ইত্যাদি। কিন্তু পশ্চিমা বস্তুবাদী সংস্কৃতির প্রভাবে ‘বিজ্ঞান’ পরিভাষাটি নতুন এক তাৎপর্য পরিগ্রহণ করেছে। তা হচ্ছে, ‘বিজ্ঞান’ বলতে সাধারণভাবে বস্তুসংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান বা পরীক্ষাযোগ্য বিজ্ঞানকেই বুঝানো হয়।
বস্তুবিজ্ঞান নিঃসন্দেহে মানবসমাজের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়, তবে তার বিচরণক্ষেত্র বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বস্তু নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং বস্তুধর্ম উদ্ঘাটন করে তা মানুষের স্বার্থে কাজে লাগানোই বস্তুবিজ্ঞান ও বস্তুবিজ্ঞানীর কাজ। যা বস্তু নয় তা নিয়ে বস্তুবিজ্ঞান বা বস্তুবিজ্ঞানীর কিছুই করার নেই। বস্তুবিজ্ঞানী যদি নিজ কর্মক্ষেত্রের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন এবং এর বাইরের বিষয়ে মতামত প্রদান থেকে বিরত থাকেন তো তা-ই হবে সঙ্গত ও যথার্থ কর্মনীতি। কারণ, বস্তু-উর্ধ কোনো বিষয়ে মতামত প্রদান করা তাঁর কাজ নয়; তাঁর পক্ষে তা সম্ভবও নয়। অতএব, বস্তুবহির্ভূত কোনো অস্তিত্বের সম্ভাবনা অস্বীকার করা নেহায়েতই অবৈজ্ঞানিক কাজ। কেননা, বস্তুবিজ্ঞানী তাঁর গবেষণাগারে বস্তু নিয়েই গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন; অবস্তুগত অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তাঁর গবেষণাগারে সম্ভব নয়। বিশ্বলোকের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা‘আলা বস্তুগত সত্তা নন। ফেরেশতারাও তা-ই। তেমনি মানুয়ের নাফ্স্ বা ব্যক্তিসত্তাও অবস্তুগত সত্তা। তাই এর কোনোটাই বস্তুবিজ্ঞানের গবেষণাগারে পরীক্ষাযোগ্য বিষয় নয়। বস্তুবিজ্ঞানী তাঁর গবেষণাগারে পরীক্ষা করে যেমন এ সবের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম নন, তেমনি তাঁর পরীক্ষার আওতাবহির্ভূত বিধায় এ সবের অস্তিত্ব অস্বীকার করাও হবে তাঁর জন্য অজ্ঞতার পরিচায়ক। ‘আমি যা জানি না, যা আমার আওতায় নেই বা যা আমার গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে পারছি না তার অস্তিত্ব নেই’ - এরূপ দাবী করার চেয়ে অজ্ঞতাপ্রসূত ও অবৈজ্ঞানিক দাবী আর কিছূই হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বস্তুবাদী বস্তুবিজ্ঞানীরা এ অজ্ঞতাপ্রসূত অবৈজ্ঞানিক দাবী করে বসেছেন।
এখানে একটি বিষয়ে গভীরভাবে তলিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। তা হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার-উদ্ভাবনসমূহ ভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। তাই দেখা যায়, আজ এক বিজ্ঞানী কোনো বিষয়ে যে অভিমত ব্যক্ত করছেন, কাল অপর এক বিজ্ঞানী এসে তা খণ্ডন করছেন। দ্বিতীয় বিষয়টি এই যে, কতক বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানবাদী হবার দাবীদার লোক এমন বিষয়েও মতামত ব্যক্ত করছেন যা তাঁদের বিশেষজ্ঞত্বের ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত নয়, অথবা তা পরীক্ষিত নয় (বা পরীক্ষা করা আদৌ সম্ভব নয়), বরং তাঁদের মতামত নেহায়েতই ধারণা-কল্পনার ওপর ভিত্তিশীল। যেমন: ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। পানির অণু যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সৃষ্টিলোকের সূচনা ও অগ্রগতি এবং প্রজাতিসমূহের উৎপত্তি সম্পর্কে ডারউইন যা বলেছেন তা গবেষণাগারে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। অতএব, স্বয়ং বস্তুবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই এরূপ একটি তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক তত্ত্বরূপে পরিগণিত হতে পারে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও এরূপ একটি কাল্পনিক তত্ত্বকে দীর্ঘদিন যাবত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। প্রজাতিসমূহের মধ্যে ক্রোমোজমের অনতিক্রম্য দেয়ালসম পার্থক্য লক্ষ্য করে অনেক বস্তুবিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের অসারতা ও ভিত্তিহীনতা স্বীকার করে নিলেও এখনো তাঁদের একাংশ সহ তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক লোকেরা এ তত্ত্বকে অভ্রান্ত বলে মনে করে।
বস্তুতঃ সৃষ্টিলোকের উৎস এবং মানুষের বস্তুদেহে নিহিত তার অবস্তুগত ব্যক্তিসত্তা বস্তুবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হতে পারে না, বরং তা বিচারবুদ্ধির আলোচ্য বিষয়। বিচারবুদ্ধি এরূপ অবস্তুগত অস্তিত্বকে স্বীকার বা অস্বীকার করার এক্তিয়ার রাখে, কিন্তু বস্তুবিজ্ঞান তা রাখে না। অন্যদিকে বিচারবুদ্ধির বিশ্লেষণে বিশ্বলোকের অবস্তুগত উৎস অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় - যে উৎস সীমাহীন প্রাণ, শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী। তাই বস্তুবিজ্ঞানীদের উচিত তাঁদের বিশেষজ্ঞত্বের আওতাবহির্ভূত এ বিষয়ে বিচারবুদ্ধির রায়কেই মেনে নেয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, কূপের ব্যাঙ কর্তৃক সমুদ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করার ন্যায় কতক বস্তুবিজ্ঞানী বস্তু-উর্ধ অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর সাধারণ মানুষের এক বিরাট অংশ অজ্ঞতাবশতঃ তাঁদের ধারণাকেই গ্রহণ করে বসে আছে।
যদিও বিতর্কিত বিষয়ে বিচারবুদ্ধির রায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই, তথাপি বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণার দ্বারা মন-মগযের ওপর সৃষ্ট ভ্রান্তির পর্দা ভেদ করে অনেকের পক্ষেই তা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। অবশ্য স্বয়ং বস্তুবিজ্ঞান থেকে অবস্তুগত অস্তিত্বের প্রমাণের অনুকূলে কোনো আলোকের সন্ধান পেলে তা হয়তো তাদের মন-মগযের ওপরকার অন্ধকার পর্দাকে ছিন্ন করতে সক্ষম হতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে এরূপ আলোর সন্ধানলাভ সম্ভব হয়েছে যদিও বস্তুবাদীরা তা তলিয়ে দেখার অবকাশ পায় নি বা তা চায় নি।
বস্তুবিজ্ঞান তার গবেষণাগারে আল্লাহ্ তা‘আলার বা মানুষের বস্তুদেহ জুড়ে বিরাজমান তার অবস্তুগত ব্যক্তিসত্তার অস্তিত্ব থাকা বা না-থাকা কোনোটাই প্রমাণ করতে সক্ষম নয়। তবে বস্তুবিজ্ঞান এমন কতক অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা হাছ্বিল করেছে যা বস্তু নয়। কারণ, তাতে বস্তুর সংজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। আর এসব অস্তিত্ব ‘বস্তু ছাড়া কোনো অস্তিত্ব না থাকা’র ধারণাকে মিথ্যা বলে প্রমাণিত করে ।
বস্তুর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, বস্তুর তিনটি মাত্রা (Dimension) আছে, তা হচ্ছে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও বেধ। বস্তুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা জায়গা দখল করে। মাধ্যাকর্ষণের আওতায় এলে ওযনের অধিকারী হওয়াও বস্তুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যে কোনো বস্তুর ক্ষুদ্রতম একক অণু এতোই ক্ষুদ্র যে, তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, বেধ, আয়তন ও ওযন কোন যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যেহেতু ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সংখ্যক অণু একত্রিত হলে তা পরিমাপ করা সম্ভব হয় সেহেতু প্রতিটি অণুতেই যে এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা সপ্রমাণিত। কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতায় এমন কতক অস্তিত্ব রয়েছে যার ক্ষেত্রে বস্তুর সংজ্ঞা প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রয়েছে আগুন, আলো, তাপ, বিদ্যুত, চৌম্বক ক্ষেত্র ইত্যাদি। অবশ্য এগুলোর প্রতিটিরই নিজস্ব ও স্বাতন্ত্র্যবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু এগুলোকে বস্তুর সংজ্ঞার আওতায় আনা সম্ভব নয়। আমরা এখন এ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবো।
এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমাদেরকে বস্তুর বস্তুবিজ্ঞান-স্বীকৃত আরো দু’টি বৈশিষ্ট্য বা বস্তুধর্মের কথা উল্লেখ করতে হয়। একটি হচ্ছে এই যে, কোনো বস্তু যখন কোনো জায়গা দখল করে তখন তা সেখানে পূর্ব থেকে বিদ্যমান বস্তুকে হটিয়ে দেয়। অর্থাৎ যে স্থানে একটি বস্তু-অণু অবস্থান করছে তাকে সরিয়ে না দিয়ে সেই একই স্থানে একই সময় আরেকটি বস্তু-অণু অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে এই যে, বস্তু রূপ পরিবর্তন করতে পারে (যেমন: কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থা ধারণ করতে পারে) এবং বিশ্লিষ্ট হতে পারে (যেমন: পানির অণু বিশ্লিষ্ট হয়ে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের অণুতে পরিণত হতে পারে), কিন্তু, বস্তুবিজ্ঞানীদের মতে, বস্তু অস্তিত্বহীন হয়েও যেতে পারে না বা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না। [অবশ্য কথিত এই সর্বশেষ বৈশিষ্ট্যটি বিতর্কের উর্ধে নয়। বরং সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার অনুযায়ী যে কোনো বস্তুর প্রতিবস্তু (anti-matter) হতে পারে যা ঐ বস্তুকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং নিজেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করছি তাতে বস্তুকে এ পর্যায়ে অবিনাশী ধরে নেয়াতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া প্রতিবস্তু আবিষ্কৃত হলেও অনস্তিত্ব থেকে নতুন বস্তুর আবির্ভাবকে বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা অসম্ভবই গণ্য করেন। কারণ, তা না হলে তাঁদেরকে বস্তুর পিছনে নিহিত অবস্তুগত স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিতে হবে।]
এখন আমরা ইতিপূর্বে মানুষের অভিজ্ঞতার আওতাধীন যে ক’টি অবস্তুগত অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছি তার মধ্য থেকে কয়েকটির অবস্থা বিশ্লেষণ করে সে সবের অবস্তুত্ব প্রমাণ করবো।
আলো কোনো বস্তু নয়। কারণ, আলোর বা তার ক্ষুদ্রতম এককের দৈর্ঘ, প্রস্থ ও বেধ নেই। তা তার চলার পথ থেকে অন্য বস্তুকে হটিয়ে দেয় না। তার ওযন নেই এবং তা বস্তু থেকে উদ্ভূত হলেও বস্তুর বিশ্লিষ্ট রূপ বা কোনো বস্তুর গঠন-উপাদানসমূহের অন্যতম উপাদান নয়। তেমনি তা বিশ্লিষ্ট হয়ে অন্যান্য উপাদানে পরিণত হয় না, বরং নিঃশেষ হয়ে যায়। অন্য কথায়, অস্তিত্ব লাভ করে ও অস্তিত্ব হারায়। বিদ্যুতের অবস্থাও তা-ই।
পানির তিনটি রূপ আছে: কঠিন, তরল ও বায়বীয় এবং পানির অণু বিশ্লেষণ করলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন অণু পাওয়া যায়। পানি না আলো বা বিদ্যুতে রূপান্তরিত হতে সক্ষম, না তাকে বিশ্লেষণ করলে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের পাশাপাশি তৃতীয় উপাদান হিসেবে আলো বা বিদ্যুত পাওয়া যাবে। কিন্তু জলীয় বাষ্প থেকে সৃষ্ট মেঘের মধ্যে যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া ঘটে তার ফলে বিদ্যুত এবং সে বিদ্যুত থেকে আলো সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন হলো, কোন্ বস্তু আলো বা বিদ্যুতে রূপান্তরিত হলো? নিশ্চয় জলীয় বাস্পের কণা আলো বা বিদ্যুতে রূপান্তরিত হতে পারে নি। অন্যদিকে আলো কাঁচের দেয়াল ভেদ করে যাবার সময় কাঁচের বস্তুকণাকে হটিয়ে দেয় না। কিছু সময়ের জন্য হলেও আলো তার চলার পথে কাঁচের বস্তুকণার সাথে অভিন্ন স্থান-কালে অবস্থান করে। অন্যদিকে অনেক বস্তু আলো শুষে নেয়, কিন্তু ঐ বস্তুকে বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে ‘আলো’কে পাওয়া যায় না। এর অর্থ হচ্ছে, আলো তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।
বিদ্যুতপ্রবাহের বিষয়টি আরো বিস্ময়কর। কোনো একটি বিদ্যুতকেন্দ্রে বিদ্যুত উৎপাদিত হয় এবং তারের মধ্য দিয়ে বহু দূরে গিয়ে তা আলো ও তাপ প্রদান করে। তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতপ্রবাহ কীভাবে যায়? নলের মধ্য দিয়ে পানির প্রবাহ যাবার ন্যায় কি? মোটেই নয়। বিদ্যুতপ্রবাহ তারের বস্তুকণাগুলোকে অপসারণ করে পথ চলে না, তারের ওপর দিয়েও যায় না। আবরণবিহীন তারের মধ্য দিয়েও বিদ্যুত স্থানান্তরিত করা যায়, কিন্তু প্রবাহিত বিদ্যুতের মাত্রার তুলনায় তারটি খুবই সরু না হলে তারটি থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে না, বা তা থেকে তাপ ছড়িয়ে পড়ে না। তাহলে এ বিদ্যুতের স্বরূপ কী? তা কি পদার্থ? তার মধ্যে কি পদার্থের বৈশিষ্ট্য আছে? না, নেই।
আলো ও বিদ্যুত পদার্থের প্রতিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন হয় - এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু যা উৎপন্ন হলো তাতে পদার্থের বৈশিষ্ট্য নেই। তবে কি তা অস্তিত্বমান নয়?
কোনো কোনো প্রতিক্রিয়ার ফলের (result) প্রকৃত অস্তিত্ব (real existence) থাকা-নাথাকা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। যেমন: পানির ওপরে বায়ুর আঘাতে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় আসলে কি তার কোনো অস্তিত্ব আছে? অর্থাৎ বায়ু ও পানিকে বাদ দিলে তরঙ্গের কোনো অস্তিত্ব আছে কি? এটা একটা বিতর্কিত ব্যাপার যার ফয়সালা আমাদের অত্র আলোচনার জন্যে অপরিহার্য নয়। অবশ্য তরঙ্গকে অস্তিত্ব বিবেচনাকারী ও অনস্তিত্ব বিবেচনাকারী দুই মতের মাঝামাঝি একটি তৃতীয় মত অনুযায়ী এটি এক ধরনের ‘আপেক্ষিক অস্তিত্ব’ (relative existence) বা ‘পরনির্ভরশীল অস্তিত্ব’ যার অস্তিত্ব পানি ও বায়ুর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আলো ও বিদ্যুত এ ধরনের কোনো আপেক্ষিক অস্তিত্ব নয়, বরং তার প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে। কারণ, বস্তুর প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হলেও উৎপত্তিস্থলের বাইরেও তার অস্তিত্ব অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মেঘে সৃষ্ট বিদ্যুতের আলো মেঘের বাইরে বহু নীচে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে; উর্ধে কতদূর যায় তা জানা নেই। একইভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ তার উৎপত্তিস্থল ও গন্তব্যস্থলের মাঝখানেও অস্তিত্বমান। কিন্তু আলো ও বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব আপেক্ষিক বা নির্ভরশীল অস্তিত্ব না হলেও, বরং প্রকৃত অস্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও, তাতে বস্তুর বৈশিষ্ট্য নেই।
চৌম্বক ক্ষেত্রের বিষয়টি আরো বেশী প্রণিধানযোগ্য। আলো তো প্রবহমান অস্তিত্ব যা স্থির থাকে না। কিন্তু চৌম্বক ক্ষেত্র চুম্বকের চারদিকে স্থির। বস্তুতঃ চৌম্বক ক্ষেত্র একটি শক্তি যা চুম্বক থেকে উৎসারিত হলেও চুম্বকের বাইরে স্থিরভাবে অবস্থান করে থাকে এবং তাতে বস্তুর কোনো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান নেই। এমনকি চুম্বক ও তার ক্ষেত্রের মাঝে আড়াল সৃষ্টি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা কাজ করতে সক্ষম। একটি চুম্বক ও তার ক্ষেত্রের মাঝখানে একটি কাগজ রাখা হলেও কোনো লোহার টুকরা (যেমন: আলপিন) ঐ ক্ষেত্রের আওতায় এলে তা ছুটে এসে কাগজে ঠেকে যাবে এবং তার সাথেই লেগে বা ঝুলে থাকবে। চুম্বক প্রাকৃতিকই হোক বা বৈদ্যুতিকই হোক, চৌম্বক ক্ষেত্র যে একটা শক্তি এবং তার যে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে অথচ তাতে বস্তুর ধর্ম নেই - এটা অনস্বীকার্য।
[প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আলো ও শক্তির সংজ্ঞা এবং এতদুভয়ের ‘ধর্ম’ সম্পর্কে বস্তুবিজ্ঞানীগণ এখনো কোনো অভিন্ন মতে উপনীত হতে পারেন নি। এমনকি আলোর গতিকে ইতিপূর্বে ধ্রুব মনে করা হলেও ইদানীং সে ধারণাও পাল্টে গেছে। বিশেষ করে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পদার্থবিজ্ঞানের অনেক বিধিকেই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।]
আমাদের এ আলোচনা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, ‘অস্তিত্ব’ মানে শুধু বস্তুগত অস্তিত্ব নয়, বরং অবস্তুগত অস্তিত্বও আমাদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে। অবশ্য এসব অস্তিত্বের পরস্পরের মধ্যে গুণগত, বৈশিষ্ট্যগত ও মাত্রাগত পার্থক্য রয়েছে। তবে বস্তুলোকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় আমরা এগুলোকে ‘বস্তুসদৃশ অবস্তুগত অস্তিত্ব’ বলে অভিহিত করতে পারি।
এবার আমরা প্রাণীকুল, বিশেষতঃ মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট অবস্তুগত অস্তিত্বের দিকে দৃষ্টি দেবো যা বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষসহ প্রতিটি প্রাণশীল ও সজীব অস্তিত্বেরই বস্তুদেহ ছাড়াও একটি আলোকময় অবস্তুগত দেহ রয়েছে। কিরলিয়ান ফটোগ্রাফিতে এ ধরনের আলোর দেহের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী ক্রাস্নোর্দা শহরের তুখোর বিদ্যুতবিজ্ঞানী সেমিওন্ দাভিদোভিচ্ কিরলিয়ান ১৯৩৯ সালে এক বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে আবিষ্কার করেন যে, প্রতিটি জীবিত শরীর এবং তার যে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা অংশ থেকে এক ধরনের আলোকরশ্মি বের হয়ে থাকে। তিনি ও মিসেস কিরলিয়ান এর ছবি তুলতে সক্ষম হন। তাঁরা আরো প্রমাণ করেন যে, এই আলো অসুস্থতা ও মৃত্যুর পূর্বাভাস দিতে পারে। তা হচ্ছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে ধরা না পড়লেও, যার শরীরে রোগের উপাদান প্রবেশ করেছে ও শীঘ্রই সে রোগাক্রান্ত হতে বা মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছে তার শরীর থেকে বহির্গত আলো ম্লান হয়ে থাকে।
কিরলিয়ান দম্পতি ছাড়াও মার্কিন মহিলা সাইকিক এলিন গ্যারেটও মানুষসহ সকল প্রাণীর দেহের চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন আলোর আভা লক্ষ্য করেন। এর আগে খৃস্টীয় ১৯০০ অব্দের প্রথম দিকে লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালের ড. ওয়াল্টার কিলনার্ লক্ষ্য করেন যে, ডিসাইয়ানিন ডাই রঞ্জিত কাঁচের ভিতর দিয়ে তাকালে মানুষের দেহের চারপাশে উজ্জ্বল আলোর একটা আভা দেখতে পাওয়া যায়। শরীরের চারপাশে ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার জায়গা জুড়ে এ আভা মেঘের মতো ভাসছে। এছাড়া এক শতাব্দীকাল পূর্বে বিখ্যাত জার্মান রসায়নবিদ ব্যারোন্ ভন্ রিচেনবাখ্ গবেষণা করে বলেছিলেন যে, মানুষ, গাছপালা ও পশুপাখীর শরীর থেকে এক ধরনের জ্যোতি বের হয়। বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে সোভিয়েত বিজ্ঞানী ড. আলেকজান্ডার গুরভিচ আবিষ্কার করেন যে, জীবন্ত সব কিছু থেকেই এক ধরনের শক্তি আলোর আকারে বের হয় যা দেখা যায় না। তিনি প্রমাণ করেন যে, পিয়াযের একটি শিকড় কীভাবে দূর থেকে অন্য একটি শিকড়ে আলো বিকিরণ করে তার কোষসংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। (কিরলিয়ান ফটোগ্রাফি: কবির আশরাফ, রহস্য পত্রিকা, জুন ১৯৮৫ - Psychic Discoveries Behind the Iron Curtain গ্রন্থ অবলম্বনে)
এ থেকে কারো মনে হতে পারে যে, উক্ত বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার বোধ হয় স্রেফ বিশেষ ধরনের আলো যা সাধারণভাবে চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা শরীর থেকে নির্গত নেহায়েত আলোমাত্র নয় যা অনবরত বেরোচ্ছে ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য আলোর ন্যায় হারিয়ে যাচ্ছে। বরং এটা হচ্ছে এক ধরনের স্থির আলো যা শরীরকে ঘিরে অবস্থান করছে যদিও তার কিছুটা রশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ এটা শরীর থেকে নির্গত আলোমাত্র নয়, বরং এ হচ্ছে শরীরকে ঘিরে বা শরীর জুড়ে এক আলোর শরীর। কেননা “র্কিলিয়ান ফটোগ্রাফি প্রমাণ করেছে যে, মানুষের হাত বা পা কেটে ফেললেও তার আলোর হাত বা পা সেখানে রয়ে যায়।” (প্রাগুক্ত সূত্র)
এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কিরলিয়ান দম্পতি যা আবিষ্কার করেন তা শরীর থেকে নির্গত আলো নয়, বরং তা হচ্ছে আলোর শরীর। আরো অনেক বিজ্ঞানী এ ধারণা সমর্থন করেছেন।
“অনেক গবেষণার পর ইনুশিন্, গ্রিশ্চেংকো ও অন্য কয়েক জন রুশ বিজ্ঞানী সিদ্ধান্তে আসেন যে, সমস্ত জীবন্ত প্রাণীরই রয়েছে একটি দ্বিতীয় শরীর বা প্রতিদেহ (counter-body) যা সম্পূর্ণ বায়বীয়, ইথারীয় ও আলোকময়। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন Biological Plasma body; এটাই হচ্ছে আসল শরীর যার মধ্য দিয়ে ‘প্রাণ’ বা জীবনীশক্তি চলাচল করে। যে সমস্ত ভারতীয় যোগী দাবী করেন যে, তাঁরা নিজের শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারেন, সম্ভবতঃ তাঁদের এই আলোর দেহটিই ‘ভৌত শরীর’ থেকে বের হয়ে যায়। তাঁদের ইচ্ছা মতো সেটা আবার দেহে ফেরত আসে।” (প্রাগুক্ত সূত্র)
বলা বাহুল্য যে, এটা আলোমাত্র হলে দেহের কর্তিত অঙ্গের শূন্যস্থানে আলোর অঙ্গ থাকতো না। অতএব, এটা যে, একটি অবস্তুগত দেহ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষের বস্তুগত দেহের অভ্যন্তরে বা দেহকে ঘিরে বা দেহজুড়ে কি কেবল এই একটিমাত্র অবস্তুগত আলোর দেহ রয়েছে, নাকি আরো কোনো অস্তিত্ব রয়েছে যা র্কিলিয়ান ফটোগ্রাফিতেও ধরা পড়ে নি? এরূপ থাকাটাই স্বাভাবিক। আর যদি না-ই থাকে তো বলতে হবে যে, এই আলোর দেহটাই মানুষের প্রাণ বা প্রাণের কারণ।
এখানে স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন মনে করি যে, আমরা ইতিপূর্বে যে সব অবস্তুগত অস্তিত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করেছি অর্থাৎ আগুন, শক্তি, আলো, বিদ্যুত ও চৌম্বক ক্ষেত্র, সেগুলো অবস্তুগত অস্তিত্ব হলেও প্রাণ বা প্রাণের বাহক নয়। কিন্তু কিরলিয়ান দম্পতি যা আবিষ্কার করলেন তা হচ্ছে প্রাণ বা প্রাণের বাহক। অর্থাৎ পর্যায় ও মর্যাদাগত দিক থেকে এটি উচ্চতর অবস্তুগত অস্তিত্ব। এমতাবস্থায় অনুরূপ উচ্চতর অবস্তুগত অস্তিত্ব, যেমন: জিন্ ও ফেরেশতার অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব বলার কোনো উপায় নেই, যদিও আরো উচ্চতর হবার কারণে তাকে বস্তুবিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়।
এ পর্যায়ে এসে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রতিটি ধর্মই মানবদেহে অবস্তুগত সত্তার অস্তিত্বের কথা বলেছে। দর্শন ও ‘ইরফান্ (তাছ্বাওউফ্)ও তা-ই বলে। তবে এরূপ অবস্তুগত সত্তার সংখ্যা ও স্বরূপ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে মানুষ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে সৃষ্ট। কিন্তু ইসলামী সূত্রে মানুষের দেহে একাধিক অবস্তুগত অস্তিত্ব থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। ইসলামী সূত্রে বস্তুদেহ (জিসম্ - body) ছাড়াও একটি ‘সদৃশ দেহ’ (জিসমে মিছালী), প্রাণ (হায়াত্- life), মানবিক চেতনা (রূহ্) ও নাফ্স্ (ব্যক্তিসত্তা-self)-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ এখানে যরূরী নয়। সংক্ষেপে বলা যেতে পারে যে, প্রাণ সম্ভবতঃ তা-ই যা সর্বাবস্থায় শরীরের ন্যূনতম সক্রিয়তা চালু রাখে এবং মৃত্যুতে তার বিলয় ঘটে; রূহ্ হচ্ছে মানবিক চেতনাশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি যা রোগজীবাণুর মধ্যে নেই; আর নাফ্স্ হচ্ছে সেই ব্যক্তিসত্তা যা তিলে তিলে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে এবং ভাল বা মন্দ গুণের বা উভয় গুণের অধিকারী হয়। আর জিসমে মিছালী বা সদৃশ দেহ হচ্ছে তা-ই বস্তুদেহের মৃত্যুর পরে ব্যক্তির রূহ্ ও নাফ্স্ যাকে আশ্রয় করে পুনরুত্থানপূর্ব অন্তর্বর্তী জগতে অবস্থান করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক মুসলিম দার্শনিক জিসমে মিছালী বা সদৃশ দেহকে এক ধরনের সূক্ষ্ম পদার্থ (ماده لطيف)-এর দ্বারা সৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তা পদার্থ বা বস্তুর সংজ্ঞায় পড়ে না সেহেতু তাঁরা একে ‘সূক্ষ্ম অস্তিত্ব’ (وجود لطيف) নামে অভিহিত করেছেন যা অস্তিত্বের স্তরগত বিচারে বস্তুর কাছাকাছি হলেও বস্তু নয়। সে হিসেবে ‘অস্তিত্ব’ তিন ধরনের: বস্তুগত অস্তিত্ব (وجود ماده), সূ² অস্তিত্ব (وجود لطيف) ও অবস্তুগত অস্তিত্ব (وجود مجرد)। অবশ্য এই তিন ধরনের অস্তিত্বের প্রতিটি ভাগেরই বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং উচ্চতর ও নিম্নতর পর্যায় রয়েছে।
অত্র আলোচনার উপসংহারে বলতে চাই যে, বস্তুবিজ্ঞানের অভিজ্ঞতায়ও আমরা কতক অবস্তুগত সূক্ষ্ম অস্তিত্বের প্রমাণ পাই যার মধ্যে স্তর ও পর্যায়ভেদ রয়েছে - যার কোনো কোনোটি বস্তুর খুবই কাছাকাছি (যেমন: আগুন), কোনো কোনোটি বস্তুর বৈশিষ্ট্য থেকে খুবই দূরে (যেমন: চৌম্বক ক্ষেত্র) এবং কোনো কোনোটি তার চেয়েও উন্নততর ও প্রাণশীল (যেমন: মানুষের আলোর শরীর)। এমতাবস্থায় আরো উচ্চতর বস্তু-উর্ধ অস্তিত্ব, যেমন: জিন, রূহ্ ও ফেরেশতার অস্তিত্ব থাকার জোর সম্ভাবনা স্বীকার করতে হয়। সর্বোপরি সকল প্রকার বস্তু ও বস্তুসদৃশতার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত অবস্তুগত অপরিহার্য সত্তা এক মহাজ্ঞানময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই।
মানবিক বিচারবুদ্ধি আত্মা বা নাফ্স্ ও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অকাট্যভাবে প্রমাণ করার পরেও জীবন ও জগতের উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানের নামে বস্তুবাদীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত কাল্পনিক ব্যাখ্যা যাদের বিচারবুদ্ধির সামনে অন্ধত্বের দেয়াল সৃষ্টি করায় তারা বিচারবুদ্ধির রায় উপেক্ষা করে অবস্তুগত অস্তিত্ব অস্বীকার করে চলেছে, তাদের অন্ধত্বের দেয়াল চুরমার করে দেয়ার জন্য বস্তুবিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা থেকে পেশকৃত আমাদের প্রমাণসমূহই যথেষ্ট হওয়া উচিত। এরপরও যদি কেউ বস্তু ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্ব অস্বীকার করেই চলে তো তাদের প্রসঙ্গে বলতে হয়: যার চোখে ছানি পড়েছে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া যায়, কিন্তু যার চোখই উৎপাটিত হয়েছে তাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়ার উপায় নেই।
(নুর হোসেন মজিদী লিখিত জিবন জিজ্ঞাসা গ্রন্থ থেকে সংকলিত)