শিয়া বিশ্বের বিশিষ্ট মারজা বলেছেন: ওয়াহাবীরা ইসলাম ও শিয়া মাযহাবের সর্বনিকৃষ্ট শত্রু। কেননা তারা তাদের তাকফির (অন্যান্যদেরকে কাফের বলা) নামক আইনের মাধ্যমে অন্যান্য সকল মাযহাবের অনুসারীদেরকে কাফের এবং শুধুমাত্র নিজেদেরকে মুসলমান বলে জ্ঞান করে।
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনার রিপোর্ট: হযরত আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে কোম শহরের অবস্থিত ইমাম খোমেনী (রহ.) শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘আল মোস্তফা (স.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে’ অধ্যয়নরত বিদেশী ছাত্রদের নতুন শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেছেন: যে সকল ছাত্র এত দূরের পথ পাড়ী দিয়ে জামেয়াতুল মোস্তাফায় (আল মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ে) নাম নিবন্ধন করেছে তাদের উচিত তাদের এ সফরের মূল উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করা। আমার দৃষ্টিতে তাদের মূল অভিসন্ধি হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে চেনা এবং নিজের সমাজকে ইসলাম সম্পর্কে পরিচিত করে তোলা। সুতরাং আমাদের উচিত প্রথমে নিজেদেরকে গঠন করা এবং অবগত করা। যাতে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারি, বিশেষতঃ এ কারণে যে, অনেক দেশে ধর্ম সম্পর্কে কথা বলা ও আলাপ-আলোচনা করা নিষিদ্ধ।
আয়াতুল্লাহ সুবহানী ছাত্রদেরকে তাদের দেশে তাবলিগ (ধর্ম প্রচারের) করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন: অন্যান্য আহবানকারী যে ইসলামের প্রচার করছে যদি তোমরাও সেই ইসলামের প্রচার করো তবে তোমার দেশের জনগণ তাতে তুষ্ট হবে না। সুতরাং কিতাব (কুরআন), সুন্নত এবং বুদ্ধিবৃত্তি হতে প্রকৃত ইসলামকে চিনো যাতে পরবর্তীতে নিজের সমাজকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হও।
ফিকহে আকবারকে প্রাধান্য দাও
শিয়া বিশ্বের এ বিশিষ্ট মারজা বলেন: ফিকহে আকবার হচ্ছে আক্বায়েদ তথা আকিদাগত বিষয়াদি। যা উত্তমরূপে শিক্ষা লাভ করতে হবে এবং সেগুলোর প্রচার ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন: তিনটি দল আমাদের বিপরীতে অবস্থান করছে; একটি দল যারা বুদ্ধিবৃত্তি ভিত্তিক এবং দর্শন শাস্ত্রের উপর জ্ঞান রাখে, এদের সাথে যুক্তির মাধ্যমে কথা বলতে হবে এবং ইসলামের যুক্তিকে তাদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। সুতরাং ছাত্রদের কথাবার্তার ধরণ এতটাই উচ্চ হতে হবে যাতে এ ধরণের ব্যক্তিদের কর্তৃক সৃষ্ট সমস্যার জবাব দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন: যারা বলে বুদ্ধিবৃত্তি (আকল) কে সরিয়ে দিতে হবে এবং যারা শুধুমাত্র নাকল (বর্ণনা)কে আঁকড়ে ধরেছে, তারা কুরআন বিরোধী কথা বলে। আমাদের উচিত মহান আল্লাহর কিতাব, মহানবী (স.) এর সুন্নত ও মুসলমানদের ইজমার উপর আস্থাশীল হওয়া।
ছাত্রদের উচিত চলমান সময়ের সাথে পরিচিত থাকা –এ কথা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ সুবহানী বলেন: এখানে দর্শনে আলোচ্য সময়ের কথা বলা হয়নি। সময় হচ্ছে মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির উপর ছেয়ে থাকা পরিবেশ ও পরিস্থিতিতেকে বুঝায়। ধর্মীয় ছাত্রদের উচিত আঞ্চলিক ঘটমান সকল পরিস্থিতির সম্পর্ক অবগত থাকা, এরূপ করলে তাদের কলম এবং মেম্বর মানুষকে প্রভাবিত করতে পারবে।
তিনি বলেন: বিশ্ব ও নিজের দেশ এবং সমাজকে চিনো, যাতে এর উপর প্রভাব ফেলতে পারো। এছাড়া সুফিবাদ, ও ওয়াহাবিয়্যাত… এর ন্যায় অন্যান্য (বিভ্রান্ত) চিন্তাধারা সম্পর্কে অবগতি লাভ করতে হবে, যাতে তাদের (ভ্রান্ত) আক্বিদা বিশ্বাসের মোকাবেলা করা যায়।
শিয়া বিশ্বের এ মারজা বলেন: ইমাম খোমেনী (রহ.) এর বিপ্লব সফল হয়েছিল তার কারণ হল, তার মধ্যে একনিষ্ঠতা ছিল, তিনি আল্লাহর জন্য কাজ করতেন এবং স্থান ও কাল সম্পর্কে পরিচিত হয়ে যুবক সমাজকে প্রভাবিত করতেন। এমনটি না হলে এ বিপ্লব সফল হত না, কেননা এর পূর্বেও অনেক বিপ্লব শুরু হয়েছে কিন্তু তা সফল হয়নি।
তিনি বলেন: জামেয়াতুল মুস্তাফা (স.) ইসলামি বিপ্লবের একটি ফল স্বরূপ। ইসলামি বিপ্লবের পূর্বে হাওযা ইলমিয়া’তে (উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ভয়ে ৫ থেকে ১০ জন ছাত্র পড়াশুনা করত। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের বরকতে এ সংস্থা বর্তমানে ১০ হাজার ছাত্রকে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ সুবহানী বক্তৃতার শেষে বলেন: ওয়াহাবীরা ইসলাম ও শিয়া মাযহাবের সর্বনিকৃষ্ট শত্রু। তারা তাদের তাকফিরী আইনের মাধ্যমে ইসলামের সকল মাযহাবকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে এবং শুধুমাত্র নিজেদেরকে মুসলমান বলে জ্ঞান করে। তারা ধারণা করে যে, কুফর এবং ঈমানের মানদণ্ড তাদের হাতে। তারা তাকফির ও সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ইসলামের মানহানী ঘটিয়েছে এবং ঘটাচ্ছে।
তিনি বলেন: এটাই কি ধর্ম যা তারা তাবলিগ করছে –এ কথা বলে বিশ্বের জনগণ ইসলাম ধর্ম হতে দূরে সরে যাচ্ছে। যে ক্ষতি তারা (ওয়াহাবীরা) ইসলাম ধর্মের করেছে অন্য কেউ এমন ক্ষতি করেনি। তোমাদের উচিত যুক্তির মাধ্যমে তাদের আকিদা সম্পর্কে পরিচিত হওয়া যাতে সেগুলোর জবাব দিতে পারো।#